সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, তার ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান, তাদের পরিবারের সদস্য ও স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের নামে ৯৪টি কোম্পানিতে থাকা শেয়ার ও ১০৭টি বিও হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত। বিও হিসাবসমূহের মধ্যে ২৮টি সালমান এফ রহমানের কোম্পানির মালিকানাধীন এবং ৭৯টি তার ব্যক্তি মালিকানাধীন। 

অপরদিকে, যশোর-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদারের ২৬টি স্থাবর সম্পত্তি ও তিনটি গাড়ি জব্দ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি তার ৩ লাখ ১৫ হাজার শেয়ারসহ ১৬টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধেরও আদেশ দেওয়া হয়েছে। শাহীন চাকলাদারের স্ত্রী ফারহানা জাহান মালার ১ লাখ ১০ হাজার শেয়ার ও তিনটি গাড়ি জব্দ করা হয়েছে। 

বুধবার (৭ মে) ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

আরো পড়ুন:

শেখ হাসিনাকে বৃহস্পতিবার দুদ‌কে তলব

যশোর বিআরটিএ কার্যালয়ে দুদকের অভিযান, দালাল গ্রেপ্তার 

দুদকের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন সালমান এফ রহমান পরিবারের হিসাব অবরুদ্ধ চেয়ে আবেদন করেন।

আবেদনে বলা হয়, সালমান এফ রহমান এবং অন্যান্যদের বিরুদ্ধে প্লেসমেন্ট শেয়ার কারসাজি ও প্রতারণার মাধ্যমে শেয়ার হোল্ডারদের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট, অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করে আত্মসাতসহ টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে। অনুসন্ধানকালে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট সালমান এফ রহমান, তার পরিবারের সদস্য, ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও অন্যান্যদের নামে কোম্পানিসমূহের শেয়ার ও বিও হিসাবসমূহের তথ্য পাওয়া যায়।

দুদক জানায়, তারা এ সব কোম্পানির শেয়ার ও বিও হিসাবসমূহ হস্তান্তর, স্থানান্তর বা রূপান্তর করার চেষ্টা করছেন। এতে সফল হলে, এই অনুসন্ধানের ধারাবাহিকতায় মামলা দায়ের, আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল, আদালত কর্তৃক বিচার শেষে সাজার অংশ হিসেবে অপরাধলব্ধ আয় হতে অর্জিত সম্পত্তি সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্তকরণসহ সব উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হবে। সুষ্ঠু অনুসন্ধান ও ন্যায় বিচারের জন্য সালমান এফ রহমান, তার পরিবারের সদস্য এবং তার সহযোগীদের মালিকানা শেয়ার ও বিও হিসাবসমূহ অবরুদ্ধ করা আবশ্যক।

যশোর-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার 

দুদকের সহকারী পরিচালক আল আমিন সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার এবং তার স্ত্রীর জমি, গাড়ি, ব্যাংক হিসাব, শেয়ার অবরুদ্ধের পৃথক দুইটি আবেদন করেন। 

আবেদনে বলা হয়, মামলার এজাহার নামীয় আসামি শাহীন চাকলাদারের বিরুদ্ধে উপজেলা চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে নিজের ক্ষমতার অপপ্যবহার করে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে তার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৪২ কোটি ৪৬ লাখ ৬৪ হাজার ৬২৩ টাকা মূল্যের সম্পদের মালিকানা অসাধু উপায়ে অর্জন করে দখলে রেখেছেন। 

২৯টি ব্যাংক হিসাবে জ্ঞাতআয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৩৪১ কোটি ৬১ লাখ ৬৬ হাজার ৩৬৫ টাকা অস্বাভাবিক লেনদেনের মাধ্যমে অপরাধলব্ধ অবৈধ অর্থ হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তর করায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। শাহীন চাকলাদারের নামে অর্জিত স্থাবর/অস্থাবর সম্পদ হস্তান্তর/স্থানান্তর/দলিল সম্পাদন বা অন্য কোনো পন্থায় মালিকানা পরিবর্তন/হস্তান্তরের সম্ভবনা রয়েছে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামি শাহীন চাকলাদার নামে অর্জিত স্থাবর সম্পদ ক্রোক এবং অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করা আবশ্যক।

অপর আবেদনে বলা হয়, ফারহানা জাহান মালা অসৎ উদ্দেশ্যে স্বামী শাহীন চাকলাদারের সঙ্গে যোগসাজসে জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদের মালিকানা নিজে অসাধু উপায়ে অর্জন করে তা ভোগ দখলে রাখার অপরাধ করায় একটি মামলা করা হয়েছে। ফারহানা জাহান মালার নামে অর্জিত স্থাবর/অস্থাবর সম্পদ হস্তান্তর/স্থানান্তর/দলিল সম্পাদন বা অন্য কোনো পন্থায় মালিকানা পরিবর্তন/হস্তান্তরের সম্ভবনা রয়েছে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামি শাহীন চাকলাদার নামে অর্জিত স্থাবর সম্পদ ক্রোক এবং অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করা আবশ্যক।

ঢাকা/মামুন/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ হ ন চ কল দ র র ব ও হ স বসম হ পর ব র র অবর দ ধ

এছাড়াও পড়ুন:

ছাত্রদলের কমিটিতে হত্যা মামলার আসামি, ছাত্রলীগের কর্মী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের বর্ধিত কমিটি এবং ১৭টি আবাসিক হলের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এসব কমিটিতে পদ পেয়েছেন হত্যা মামলার আসামি এবং ছাত্রলীগ কর্মীরাও। এ ছাড়া ছাত্রদলের রাজনীতিতে যুক্ত না থেকেও পদ পেয়েছেন কেউ কেউ।

গতকাল শুক্রবার ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ৩৭০ সদস্যের বর্ধিত কমিটি ঘোষণা করা হয়। একই দিনে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন (বাবর) ও সদস্যসচিব ওয়াসিম আহমেদ স্বাক্ষরিত পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে ১৭টি আবাসিক হল ও ১টি অনুষদের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর আগে গত ৬ জানুয়ারি ১৭৭ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। সেই হিসাবে কমিটির সদস্যসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৪৭ জনে।

নবগঠিত বর্ধিত কমিটি ও ১৭টি হলের কমিটি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম মোল্লাকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় করা মামলার আসামি (বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কৃত) হামিদুল্লাহ সালমান, রাজু আহমেদ ও মোহাম্মদ রাজন মিয়া ছাত্রদলে পদ পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে হামিদুল্লাহ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল ছাত্রদলের সভাপতি, রাজু শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং রাজন সদস্যপদ পেয়েছেন।

এ বিষয়ে হামিদুল্লাহ সালমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ওই হত্যার সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনোরকম তদন্ত ছাড়াই মবের চাপে তড়িঘড়ি করে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়। এ ঘটনায় আমাকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কারও করেছিল। এখন আমি নিয়মিত শিক্ষার্থী। ওই মামলা এখনো তদন্তাধীন। মামলার সঠিক তদন্ত হলে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হব।’

পদ পেয়েছেন ছাত্রলীগ কর্মীরা

নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, এমন কয়েকজন ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রোকেয়া হলে সভাপতি পদ পেয়েছেন কাজী মৌসুমী আফরোজ। তিনি শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা গেছে তাঁকে। ২১ নম্বর ছাত্র হলে সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়া ফিরোজ আহমেদ এবং একই হলের সহসভাপতি সাইদুর রহমানও ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতেন।

১০ নম্বর হল ছাত্রদলের সভাপতি সাইফ বিন মাহবুব, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হল ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রাকিব মাওলা, বর্ধিত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক পদ পাওয়া মো. শাকুর বাপ্পী, বর্ধিত কমিটির সদস্য শুভজিৎ বিশ্বাস, শাবাব সবুজ অর্ণব, ইমরান আজিজ—তাঁদের সবাইকে বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগের মিছিল-সমাবেশে দেখা গেছে। তবে তাঁরা ছাত্রলীগের কোনো পদে ছিলেন না। এ ছাড়া শহীদ সালাম-বরকত হল ছাত্রদলের সভাপতির পদ পাওয়া সাইদুল ইসলাম ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের একাংশের বিগত কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন।

জাবি ছাত্রদলের ২১ নম্বর হলের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ছাত্রলীগ কর্মী ফিরোজ আহমেদ।ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাঁর ছবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ