পাকিস্তানের আক্রমণের যোগ্য জবাব দেওয়া হয়েছে, তাদের দাবি ভুয়া: ভারত
Published: 10th, May 2025 GMT
ভারতীয় সেনাঘাঁটি ও বেসামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে পাকিস্তানের চালানো আক্রমণের যোগ্য জবাব দেওয়া হয়েছে বলে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। আজ শনিবার সকালে পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, পাকিস্তানের হামলার জবাবে ভারত আক্রমণ চালিয়েছে রফিকি, মুরিদ, চাকওয়ালা, নূর খান, সুক্কুর, চুনিয়া, পসরুর ও শিয়ালকোটের বিমান ও সেনাঘাঁটিতে। এ হামলায় পাকিস্তানের প্রভূত ক্ষতি হয়েছে।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, এ আক্রমণ চালানোর সময় সাধারণ নাগরিকদের যাতে ক্ষতি না হয়, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া হয়েছিল।
আজ শনিবার বেলা ১১টা নাগাদ এ সংবাদ সম্মেলন করেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি, উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং ও কর্নেল সোফিয়া কুরেশি।
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সোফিয়া দাবি করেন, আজ শনিবার ভোরে প্রথম আক্রমণ চালায় পাকিস্তান। শুক্রবার রাত ১টা ৪০ মিনিটের দিকে তারা পশ্চিম সীমান্তের বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও যুদ্ধবিমান থেকে আক্রমণ চালায়। উধমপুর, ভাটিন্ডা, ভূজ, পাঠানকোটের বায়ুসেনাঘাঁটিগুলো ছিল সেই আক্রমণের লক্ষ্য। মোট ২৬টি এলাকায় আক্রমণ চালানো হলেও ভারতীয় সেনাবাহিনী অধিকাংশ হামলা নিষ্ক্রিয় করেছে।
তবে সোফিয়া বলেন, পাকিস্তানের হামলায় আদমপুর, ভাটিন্ডা ও উধমপুরে সামান্য কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ব্রিফিংয়ে দাবি করা হয়, শ্রীনগর, অবন্তিপুরা, উধমপুরসহ কিছু এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনী হাসপাতাল ও বেসামরিক মানুষের ঘরবাড়ি লক্ষ্য করে আক্রমণ চালিয়েছে।
পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি বলেন, হামলায় রাজৌরির অতিরিক্ত জেলা কমিশনার রাজ কুমার থাপা এবং আরও দুজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
ভারত সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, নিয়ন্ত্রণরেখা ও আন্তর্জাতিক সীমান্ত বরাবর পাকিস্তান তার সেনাবাহিনীর বহর বাড়িয়েছে। পাকিস্তান ইচ্ছা করে ধর্মীয় স্থানের ওপরেও আক্রমণ চালাচ্ছে, যাতে ভারতে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি হয়।
বিক্রম মিশ্রি ব্রিফিংয়ে দাবি করেন, পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে নানা ভুয়া প্রচার চালানো হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতেও চলছে সেই মিথ্যা প্রচার। যেমন তারা নাকি রাজস্থানের সুরতগড় ও হরিয়ানার সিরসায় বিমানবাহিনীর ঘাঁটি গুড়িয়ে দিয়েছে। উত্তর প্রদেশের আজমগড়ের সেনাঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। আদমপুরে এস–৪০০–এর ঘাঁটি তছনছ করে দিয়েছে। এমনকি এ প্রচারও চালানো হয়েছে, ভারত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে আফগানিস্তানেও।
বিক্রম মিশ্রি আরও দাবি করেন, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে করা প্রতিটি দাবিই ভুয়া, অসত্য। পাকিস্তানের এই মিথ্যা প্রচারের প্রমাণে সংবাদ সম্মেলনে ওই সব সেনা ও বিমানবাহিনীর ঘাঁটি, তার রানওয়ের ছবিও প্রকাশ করা হয়। প্রতিটি ছবিই আজ শনিবার সকালে তোলা।
একই সঙ্গে পাকিস্তানি বিমান ও সেনাঘাঁটির ওপর ভারতীয় আক্রমণের ভিডিও দেখানো হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: লক ষ য
এছাড়াও পড়ুন:
সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য একে অপরকে দুষছে ভারত-পাকিস্তান
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কমানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের আহ্বানের মধ্যেই দেশ দুটি উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য একে-অপরকে দোষারোপ করেছে। বৃহস্পতিবার ভারতের সেনাবাহিনী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতশাসিত কাশ্মীরের উধমপুর এবং পাঞ্জাবের পাঠানকোটের তিনটি সামরিক স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে হামলা চালানোর অভিযোগ করেছে।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভারতের এই অভিযোগ নাকচ করে বলেছেন, ভারতশাসিত কাশ্মীরে কোনো হামলার দায় তার দেশের নয়। তিনি বলেন, পাকিস্তান যখন হামলা চালাবে, তখন তা সারা বিশ্ব জেনে যাবে। খবর-বিবিসি
ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছে, ওইসব হামলার ফলে তাদের কোনোরকম ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। হামলাগুলো নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করছে, জম্মু, পাঠানকোট আর উধমপুরে সামরিক ঘাঁটির ওপরে পাকিস্তানের দিক থেকে ড্রোন আর ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করা হয়েছিল। এসব হামলা রুখে দেওয়া গেছে। কোনো জানমালের ক্ষতি হয়নি।
মঙ্গলবার রাতভর অভিযানের পর ভারত আরও বলেছে, তারা পাকিস্তান এবং পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের ৯টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা চালিয়েছে।
অন্যদিকে পাকিস্তান বলেছে, তারা ৬টি স্থানে আঘাত হেনেছে এবং পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান এবং ২৫টি ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত করেছে। তবে এ ব্যাপারে ভারত কোনো মন্তব্য করেনি।
পাকিস্তান জানিয়েছে, বুধবার সকাল থেকে পাকিস্তান এবং পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরে বিমান হামলা এবং নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর গুলিবর্ষণে ৩১ জন নিহত এবং ৫৭ জন আহত হয়েছে।
এদিকে ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তাদের সীমান্তে পাকিস্তানের দিক থেকে আসা গুলিতে কমপক্ষে ১৬ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে।
ভারত বলছে, তাদের প্রাথমিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলাটি ছিল গত মাসে পেহেলগামে ভারতীয় পর্যটকদের ওপর এক জঙ্গি হামলার প্রতিশোধ। ইসলামাবাদ ওই হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে।
ভারতশাসিত কাশ্মীর কয়েক দশক ধরে চলমান বিদ্রোহের সাক্ষী, যেখানে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই কাশ্মীরের সম্পূর্ণ মালিকানা দাবি করে।
এদিকে রয়টার্স জানিয়েছে, বৃহস্পতিবারও দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার খবর পাওয়া গেছে। একে অপরের বিরুদ্ধে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অভিযোগ এনেছে ইসলামাবাদ ও নয়াদিল্লি। এ দিন রাতেই একাধিক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে।