বুধবার (৭ মে) ভোর রাতে ভারত হামলা চালায় পাকিস্তানে। সেদিন গোটা দক্ষিণ এশিয়ার মনোযোগ ছিল যুদ্ধের দিকে। টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানাতে এই দিনটাকেই বেছে নিয়েছিলেন রোহিত শর্মা। সাদা পোষাকে ভারতের জার্সি গায়ে আর খেলবেন না রোহিত।

সাবেক ইংল্যান্ড ক্রিকেটার মাইকেল আথারটন মনে করেন, রোহিত সম্ভবত বুঝতে পেরেছিলেন যে তিনি ভারতের টেস্ট দল থেকে বাদ পড়তে পারেন। তাই কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার আগেই তিনি লাল বলের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এই ঘোষণা এলো ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শুরুর মাত্র এক মাস আগে।

টেস্টে রোহিতের ওপর অধিনায়ক ও ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রচণ্ড চাপ ছিল। বিশেষ করে ভারতের সাম্প্রতিক টেস্ট পারফরম্যান্সের কারণেই এই চাপ আরও বাড়ে।

এই প্রসঙ্গে আথারটন বলেন, “গুজব ছিল যে দলে রোহিতের জায়গা অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে। তিনি বুঝে গিয়েছিলেন যে ইংল্যান্ড সিরিজে হয়তো দলে রাখা হবে না তাঁকে। হয়ত সেই কারণেই অবসর নিলেন। অবসরটা পুরোপুরি তার নিজের সিদ্ধান্ত ছিল, নাকি কিছু আঁচ করেছিলেন? আমরা শুধু অনুমান করতে পারি, কিন্তু এই খবরটা মোটেই চমকপ্রদ ছিল না।”

তিনি আরও বলেন, “ম্যাচ হারলে এবং রান না করলে সেটা যে কোনো অধিনায়কের জন্য কঠিন পরিস্থিতি। রোহিতের অধিনায়কত্বে ভারত শেষ ছয়টি ম্যাচের মধ্যে পাঁচটিতে হেরেছে।”

রোহিতের আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্যারিয়ার এক দশকেরও বেশি সময়জুড়ে বিস্তৃত ছিল। তবে টেস্ট দলে নিয়মিত হতে তার অনেক সময় লেগেছিল। আথারটন বলেন, “ওয়ানডে ক্রিকেটে তিনি সর্বকালের অন্যতম সেরা ওপেনার হিসেবে স্মরণীয় থাকবেন, কিন্তু তার টেস্ট ক্যারিয়ারটা কিছুটা অদ্ভুত ছিল। তিনি ক্যারিয়ারে দুই ভাগে খেলেছেন বলা চলে। প্রথমে দীর্ঘ সময় দলেরবাহিরে ছিলেন, পরে নিয়মিত হয়ে ওঠেন।”

রোহিত শর্মা ৬৭টি টেস্টে ৪,৩০১ রান করেছেন, গড় ৪০.

৫৮। রয়েছে ১২টি সেঞ্চুরি ও ১৮টি হাফ-সেঞ্চুরি। আথারটনের ভাষায়, “এটি একটি ভালো রেকর্ড, তবে অসাধারণ নয়।”

ঢাকা/নাভিদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

৬৪ বছরের রেজাউল করিম ফ্রিল্যান্সার

রাজধানীর নিউ ইস্কাটন এলাকার বাসিন্দা শেখ রেজাউল করিমের বয়স ৬৪ বছর। নিয়ম করে প্রতিদিন অন্তত দুই ঘণ্টা কাটান রমনা পার্কে। ৭ থেকে ১০ কিলোমিটার হাঁটেন অথবা দৌড়ান। অবসরে গান শোনেন। এই রুটিনেই অভ্যস্ত তিনি। দেখে মনে হবে একজন সুখী মানুষ। এই বয়সে তাঁর অবসর যাপন করার কথা। কিন্তু কাজকর্মে এখনো ব্যস্ত থাকেন তিনি। কাজটি অবশ্য তরুণদের। তিনি এই বয়সে মুক্ত পেশাজীবী বা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করছেন।

শেখ রেজাউল করিমের জীবনের গল্পটাই এক বিস্ময়। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে বসে তিনি নিজের গল্প শোনান।

২০০৩-০৪ সাল। ঢাকায় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশনে চাকরি করতেন শেখ রেজাউল করিম। সীমিত বেতনে সংসারের ব্যয় মেটানো দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছিল। বাড়তি আয়ের আশায় চার-পাঁচ লাখ টাকা জোগাড় করে বিনিয়োগ করেন শেয়ারবাজারে। লভ্যাংশ পুনর্বিনিয়োগ এবং কিছু নতুন বিনিয়োগও করেন। ২০১০ সালের শুরুতে সেই বিনিয়োগ দাঁড়ায় প্রায় ৬০ লাখ টাকায়। ব্রোকারেজ হাউস থেকে ঋণ নিয়ে আরও ১৪ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন রেজাউল করিম। ওই বছরের জুলাই মাসে তাঁর বিনিয়োগের বাজারমূল্য বেড়ে দাঁড়ায় ১ কোটি ১৪ লাখ টাকায়।

মাসে গড়ে লাখ টাকার ওপরে আয় হয় আমার। অবসর জীবনটাকে উপভোগ করি বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে। ফ্রিল্যান্সিং তার মধ্যে একটি। মাসে কত টাকা উপার্জন করছি, এর চেয়ে আমার কাছে সুস্থভাবে বেঁচে থাকাকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়।রেজাউল করিম

নিজেকে সফলতম মানুষদের একজন মনে হচ্ছিল শেখ রেজাউল করিমের। কিন্তু ওই বছরেই তাঁর জীবনে আসে ভয়ংকরতম ধাক্কা। হঠাৎ শেয়ারবাজারে দরপতন শুরু হয়। একই সময়ে জিবিএস রোগে (গুলেন ব্যারি সিনড্রোম) আক্রান্ত হন তাঁর স্ত্রী হাসানাত উন নাহার। এটি স্নায়ুজনিত রোগ, এতে দেহের মাংসপেশি ধীরে ধীরে শক্তি হারিয়ে ফেলে। তাঁর সুস্থ স্বাভাবিক স্ত্রী, মাত্র তিন-চার দিনের মধ্যে পুরোপুরি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়লেন। সব ফেলে ছোটাছুটি শুরু হলো স্ত্রীকে নিয়ে। এর মধ্যে শেয়ারবাজারের পতন আরও বাড়ল। তাঁর বিনিয়োগ কমে প্রায় এক-দশমাংশ হয়ে পড়ে। তখন ঋণ পুনরুদ্ধারের জন্য ‘ফোর্সড সেলের’ (জোরপূর্বক বিক্রি) মাধ্যমে তাঁর সব শেয়ার বিক্রি করে দেয় ব্রোকারেজ হাউস। নিঃস্ব হয়ে পড়েন রেজাউল।

এদিকে সরকারি চাকরি থেকে অবসরের সময়ও এগিয়ে আসতে থাকে। অবসরজীবনে কী করবেন ভেবে ২০১৭ সালে গরুর একটা খামার শুরু করেন নিজ এলাকা বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার শৈলদাহ গ্রামে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তিনি অবসরে যান। আগে থেকেই তাঁর ধ্যানে-জ্ঞানে ছিল খামার। এটি ভবিষ্যতের অবলম্বন হিসেবে ভেবেছিলেন। কিন্তু করোনা মহামারি তাঁর সব পরিকল্পনা এলোমেলো করে দেয়। বড় অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। তিতাস অফিস থেকে ঋণ নিয়েছিলেন ৩০ লাখ টাকা। তাই অবসরে পাওয়া এককালীন টাকা থেকে সেটা কেটে নেওয়া হয়। তখন তিনি ১৪ লাখ টাকার মতো পান।

ল্যাপটপে কাজ করছেন রেজাউল করিম

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৬৪ বছরের রেজাউল করিম ফ্রিল্যান্সার
  • এনবিআরে অবসর, বরখাস্ত, বদলি ও তদন্ত–আতঙ্ক
  • এবার তোপের মুখে এনবিআর, বিব্রত মধ্যস্থতাকারীরা
  • এনবিআরের ৩ সদস্য ও এক কমিশনারকে অবসরে পাঠাল সরকার