সব ঠিক থাকলে ব্রাজিল জাতীয় দলের কোচ হচ্ছেন কার্লো আনচেলত্তি। ২৫ মে রিয়াল মাদ্রিদের লিগ মৌসুম শেষে সেলেসাওদের দায়িত্ব নিতে পারেন তিনি। এমনকি রোববার রাতের এল ক্লাসিকো ম্যাচের পরই আসতে পারে ঘোষণা।

তবে ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জয়ী কিংবদন্তি ডিফেন্ডার কাফু মনে করেন, ২০২৬ বিশ্বকাপের জন্য আনচেলত্তিকে দায়িত্ব দেওয়া ভালো সিদ্ধান্ত হবে না। কারণ ইতালিয়ান এই কোচ ইউরোপে খেলা ব্রাজিলের কিছু ফুটবলার ছাড়া কাউকে তেমন চেনেন না। ব্রাজিলের ফুটবল সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা নেই তার।

কাফু মনে করেন, আনচেলত্তিকে বরং ২০৩০ বিশ্বকাপের জন্য দায়িত্ব দেওয়া যায় এবং সেটা ২০২৬ বিশ্বকাপের পরই। সাবেক রোমা ও এসি মিলান এই ডিফেন্ডারের মতে, ব্রাজিলের ডাগ আউটে দাঁড়ানোর জন্য নিজ দেশেই এখনো ভালো কোচ আছেন। এর মধ্যে তিনি রজারিও ছেনি ও রেনাতো গাউচুর নাম উল্লেখ করেন।

কে এই ছেনি এবং গাউচু: ব্রাজিলের ২০০২ বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য ছিলেন ছেনি। তিনি দিদার বিকল্প গোলরক্ষক ছিলেন। বিশ্বকাপে ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। জাতীয় দলের হয়ে ৯ বছরের ক্যারিয়ারে খেলেছেন ১৭ ম্যাচ। তবে সাও পাওলোয় ২২ বছর কাটানো এই গোলরক্ষক ১২০৯ ম্যাচ খেলেছেন। গোলরক্ষক হয়েও গোল করেছেন ১২৯টি।

রেনাতো গাউচু ফুটবল ক্যারিয়ারের প্রায় পুরো সময় ব্রাজিলের লিগে কাটিয়েছেন। ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলতেন। এক মৌসুম রোমায় ৩৩ ম্যাচ খেলে ৪ গোল করেন। বাকি ১৮ মৌসুম ব্রাজিলের লিগে প্রায় সাড়ে পাঁচশ ম্যাচ খেলে ১৮০ গোল তার নামের পাশে। ১৯৮৩-৯৩ পর্যন্ত ব্রাজিল জাতীয় দলে ৪১ ম্যাচ খেলে ৫ গোল করেছেন।

কোচ হিসেবে ছেনি: ছেনি অবসরের এক বছর পর সাও পাওলোর কোচ হিসেবে নতুন ক্যারিয়ার শুরু করেন। কিন্তু সাও পাওলো ব্রাজিল কাপ, ব্রাজিল লিগ ও কোপা সাউথ আমেরিকা থেকে অবনমন হয়ে যাওয়ায় ছাঁটাই হন। ২০১৮ সালে পুনরায় কোচিংয়ে ফেরেন সিরি বি’র দল ফোর্তালেজার দায়িত্ব নিয়ে। দলটিকে শীর্ষ লিগে ফেরান। পরের বছরের আগস্টে ক্রুজেইরোর দায়িত্ব নিয়ে ঠিক দেড় মাস পর খেলোয়াড়দের সঙ্গে সম্পর্ক অবনতির কারণে চাকরিচ্যুত হন।

ছেনি ২০২০ সালে ফ্লামেঙ্গোর দায়িত্ব নেন। ওই বছর সিরি ‘এ’ জেতেন। তবে চুক্তির মেয়াদ এক বছর হওয়ার আগেই চাকরি হারান। ২০২১ সালে পুনরায় সাও পাওলোর কোচ হন ছেনি। হার্নান ক্রেসপোর জায়গায় দায়িত্ব নিয়ে পাউলেস্তা ও কোপা সাউথ আমেরিকার ফাইনালে হেরে যান। চাকরিও হারান। ২০২৩ সালে তিনি বাহিয়ার ডাগ আউটে দাঁড়িয়ে এখনো কাজ করে যাচ্ছেন। তবে বাহিয়াকে জেতাতে পারেননি কোন শিরোপা।

কোচ হিসেবে গাউচু: হাঁটুর ইনজুরি কাটিয়ে মাঠে ফিরতে না পারায় খেলোয়াড় গাউচু ১৯৯৬ সালে ফ্লুমিনেন্সের অন্তবর্তীকালীন কোচের দায়িত্ব নেন। তখন ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘ফ্লুমিনেন্স অবনমনে গেলে উলঙ্গ হয়ে সমুদ্র সৈতকে হাঁটব।’ ফ্লুমিনেন্সের অবনমন এড়াতে পারেনি। বিরতি দিয়ে ২০০২ ও ২০০৩ সালে পুনরায় ফ্লুমিনেন্সে ফিরলেও কিছু জিততে পারেননি তিনি।

২০০৫-২০০৭ পর্যন্ত ভাস্কো দা গামায় কোচিং করান গাউচু। ২০০৭ সালের এপ্রিলে আরেকবার ফ্লুমিনেন্সে ফিরে ব্রাজিলিয়ান কাপ জেতেন। যা তার কোচিং ক্যারিয়ারের প্রথম শিরোপা। তবে ইকুয়েডেরিয়ান ক্লাবের কাছে কোপা লিবার্তোদোসের ফাইনালে হারে তার দল। ২০০৮ সালে ভাস্কো দা গামায় ফেরেন গাউচু। অবনমনে নেমে যায় ক্লাবটি। ২০০৯ সালে চতুর্থবারের মতো ফ্লুমিনেন্সে ফেরেন এবং বাজে ফলের কারণে ছাঁটাই হন।

গাউচু ২০১০ ও ২০১৩ সালে গ্রেমিওর কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ভালো করতে পারেননি একবারও। গ্রেমিওতে প্রথমবারে তিনি কোপা সাউথ আমেরিকার দ্বিতীয় রাউন্ড পার করতে ব্যর্থ হন। ব্রাজিলিয়ান লিগে চারে শেষ করে গ্রেমিও। কোপা লিবার্তোদোসে শেষ ষোলো থেকে বিদায় নেয় তার দল। এরপরও ২০১১ সালের ব্রাজিলিয়ান লিগের কিছু ম্যাচে দায়িত্ব পালন করলেও ফলাফল ভালো হয়নি।

২০২৩ সালে পঞ্চমবারের মতো ফ্লুমিনেন্স তাকে কোচের দায়িত্ব দেয়। ওইবার পাঁচ মাস পরে চাকরি হারান তিনি। বর্তমানে ফ্লুমিন্সে ষষ্ঠবারের মতো কোচ নিয়োগ পেয়ে কাজ করছেন তিনি। তার দল লিগ টেবিলে পাঁচে আছে। মধ্যে ২০২২ সালে গ্রেমিওর দায়িত্ব নিয়ে দুই বছরে দুটি ক্যাম্পেওনাতো গাউচো জেতেন এবং ২০২৩ মৌসুমে গ্রেমিওকে লিগে দুইয়ে শেষ করান।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব র জ ল ফ টবল ব শ বক প র র মত

এছাড়াও পড়ুন:

পাল্টা শুল্ক ও এনবিআরে কর্মবিরতির কারণে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে ১২%

বিদায়ী ২০২৪–২৫ অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিক এপ্রিল–জুনে দেশ থেকে ৯১১ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এ রপ্তানি তার আগের জানুয়ারি–মার্চ প্রান্তিকের তুলনায় ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ কম। তৈরি পোশাক রপ্তানি কমে যাওয়ার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তাদের কর্মবিরতিকে দায়ী করা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে।

তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। এতে বলা হয়েছে, গত এপ্রিল–জুন প্রান্তিকে তৈরি পোশাক খাত বেশ কিছু গুরুতর সমস্যার মুখোমুখি হয়। এর মধ্যে ছিল বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও বাণিজ্য নীতির পরিবর্তন, যা ওই প্রান্তিকের রপ্তানি দক্ষতাকে দুর্বল করে দেয়। নীতিগত পরিবর্তনের মধ্যে অন্যতম ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ (পরে কমে হয়েছে ২০ শতাংশ) পাল্টা শুল্ক আরোপ। তখন পর্যন্ত সেটি কার্যকর না হলেও তা ক্রয়াদেশ স্থগিত ও অনিশ্চয়তা বাড়িয়ে দিয়েছিল।

মার্কিন প্রশাসন গত ৩১ জুলাই অন্য অনেক দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশি পণ্যেও পাল্টা শুল্কের হার সংশোধন করে। এবারে বাংলাদেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক কমে ২০ শতাংশ হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে পাল্টা শুল্ক কার্যকর হয়েছে। তাতে বাংলাদেশ প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় সুবিধাজনক অবস্থায় আছে। কারণ, এ বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের মূল প্রতিযোগী ভিয়েতনামের পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশ। অন্যদিকে ভারতের ওপর পাল্টা শুল্ক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশ। আর চীনের শুল্ক এখন পর্যন্ত ৩০ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এনবিআরের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের ধর্মঘটের কারণে শুল্কায়ন প্রক্রিয়ায় দেরি হয়, যা পণ্যের চালান প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে। সময়মতো পণ্য পাঠানোকে উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যাহত করে। এদিকে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রতিকূল পরিস্থিতি, দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদন ব্যয় ও রপ্তানি বাজারের বৈচিত্র্যহীনতা ইত্যাদি কারণে রপ্তানির গতি শ্লথ হয়ে পড়ে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধর্মঘটের কারণে শুল্কায়ন প্রক্রিয়ায় দেরি হয়, যা পণ্যের চালান প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে। এতে পণ্য পাঠানো ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়। আবার বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রতিকূল পরিস্থিতি, উৎপাদন ব্যয় ও বাজারের বৈচিত্র্যহীনতা রপ্তানির গতি শ্লথ করে দেয়।

গত ১২ মে এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি বিভাগ করার অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এর পর থেকে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সব পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে প্রায় দুই মাস আন্দোলন করেন। ২৮ ও ২৯ জুন সারা দেশে কাজ বন্ধ করে দেন তাঁরা। এরপর ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতায় তাঁরা আন্দোলন প্রত্যাহার করেন। এরপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করে এনবিআর কর্তৃপক্ষ। গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতি ও শাটডাউন কর্মসূচি পালনের কারণে যে অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নিরূপণে আন্তমন্ত্রণালয়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

মূল্য সংযোজন কমেছে

বিদায়ী ২০২৪–২৫ অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিকে (এপ্রিল–জুন) তৈরি পোশাক রপ্তানিতে মূল্য সংযোজন কিছুটা কমেছে। এই প্রান্তিকে দেশ থেকে মোট ৯১১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে ৩৯৪ কোটি ডলারের কাঁচামাল আমদানি হয়। তার মানে মূল্য সংযোজন দাঁড়িয়েছে ৫৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। তার আগের প্রান্তিকে মূল্য সংযোজন ছিল ৫৮ দশমিক ৯০ শতাংশ।

প্রসঙ্গত, পোশাক রপ্তানি থেকে তুলা, সুতা, কাপড় ও সরঞ্জামের আমদানি ব্যয় বাদ দিয়ে নিট রপ্তানি বা মূল্য সংযোজন হিসাব করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আবার অনেকে প্রকৃত রপ্তানি আয়কে পোশাক খাতের মূল্য সংযোজন হিসেবেও অভিহিত করে থাকেন।

গত ২০২২–২৩ ও ২০২৩–২৪ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি বাড়িয়ে দেখিয়েছিল রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। তখন রপ্তানির পাশাপাশি মূল্য সংযোজনও কৃত্রিমভাবে বেড়ে গিয়েছিল। পরিসংখ্যানের গরমিলের বিষয়টি গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সামনে আনে। এরপর রপ্তানির পরিসংখ্যান সংশোধন হয়। তাতে গত দুই অর্থবছরের সাত প্রান্তিকে পোশাক খাতে মূল্য সংযোজন কমে যায়।

রপ্তানি আয় বাড়িয়ে দেখানোর কারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর–ডিসেম্বর) তৈরি পোশাক রপ্তানিতে মূল্য সংযোজন একলাফে ৫৯ থেকে বেড়ে ৬৭ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। তারপরের পাঁচ প্রান্তিকে মূল্য সংযোজন আরও বেড়ে ৭০ থেকে ৭২ শতাংশের মধ্যে ছিল। যদিও সংশোধনের পর দেখা যায়, ওই অর্থবছরের জানুয়ারি-মার্চ ও এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে মূল্য সংযোজন কমে ৬২ শতাংশে নেমেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চার প্রান্তিকে মূল্য সংযোজন কমে সাড়ে ৫৭ থেকে সাড়ে ৬১ শতাংশ হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিদায়ী অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক জুলাই–সেপ্টেম্বরে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে মূল্য সংযোজন ছিল ৫৭ শতাংশ। পরের প্রান্তিকে, অর্থাৎ অক্টোবর–ডিসেম্বরে সেটি বেড়ে ৬১ শতাংশে উন্নীত হয়। তারপরের দুই প্রান্তিকে মূল্য সংযোজন কমে হয় যথাক্রমে ৫৮ দশমিক ৯০ ও ৫৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাউজানে দেড় শ বছরের পুরোনো পুকুর ভরাট, জনপ্রতিনিধিসহ ৫ জন কারাগারে
  • গাজায় উড়োজাহাজ থেকে ফেলা ত্রাণের বাক্সের নিচে চাপা পড়ে কিশোর নিহত
  • জিরো ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল আইনত দণ্ডনীয়: এনবিআর
  • তরুণীর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে বৃদ্ধ হারালেন ১২ কোটি টাকা
  • পাল্টা শুল্ক ও এনবিআরে কর্মবিরতির কারণে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে ১২%
  • চীন সফর বাতিল করে অক্টোবর ও নভেম্বরে যাদের মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা
  • অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্ণ আজ