বরগুনার তালতলীতে বনের গাছ কেটে জমি দখল করে মাছের ঘের করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, অসাধু বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে দখলদারদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বনের গাছ কেটে জমি দখল করে মাছের ঘের করা হচ্ছে।

বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বড়বগী ইউনিয়নের নিশানবাড়িয়া খেয়াঘাট থেকে শারিকখালী ইউনিয়নের চাউলাপাড়া গ্রাম পর্যন্ত আন্ধারমানিক নদীর কূল ঘেঁষে প্রায় ২০ কিলোমিটারের পুরোটা জুড়ে ছইলা, কেওড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপণ করে বনবিভাগ। 

শ্বাসমূলীয় এসব গাছপালা বড় হয়ে ঘন জঙ্গল সৃষ্টি করেছে। উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জন্য পরিণত হয়েছে নানান প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে সুরক্ষার ‘সবুজ দেয়ালে’।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার শারিকখালী ইউনিয়নের চাউলাপাড়া এলাকায় নদীতীরবর্তী বনের ছইলা, কেওড়া ও নানা প্রজাতির কয়েক শতাধিক চারা গাছ কেটে খননযন্ত্র দিয়ে প্রায় ২ (দুই) একর জমি খনন করে মাছের ঘের করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালী বাবুল মৃধা ও জাকির মৃধা। বন বিভাগের লোকজনের যোগসাজশেই এ কাজগুলো চলছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে।

চাউলাপাড়া এলাকার বাসিন্দা মামুন মিয়া বলেন, “বনের কয়েক হাজার গাছ কেটে বনের জমিতে মাছের ঘের নির্মাণ করছে প্রভাবশালীরা। বন বিভাগকে জানানোর পরেও তারা ব্যবস্থা নেয়নি।” 

একই এলাকার বাসিন্দা অলোক শীল বলেন, “দুর্যোগপ্রবণ এই এলাকা ঘূর্ণিঝড় থেকে বার বার রক্ষা করে এই বনাঞ্চল। কিন্তু দিনের আলোতে বন উজাড় করে ঘের নির্মাণ করছে।”

এ বিষয়ে অভিযুক্ত বাবুল মৃধা ও জাকির মৃধা বলেন, “এটা আমাদের বাড়ির সম্মুখভাগ (মুখসা) এই জমি আমরা বন্দোবস্ত নিয়েছি। এখানে চিংড়ি মাছ চাষ করার জন্য ঘের খনন করতেছি। এখানে বনবিভাগের লোকজন আসছিল তারা দেখে গেছেন।”

ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা’র) তালতলী উপজেলা সমন্বয়ক ও পরিবেশ কর্মী আরিফ রহমান বলেন, “এভাবেই প্রতিনিয়ত আমাদের উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী ধ্বংস ও দখল করছে একশ্রেণির দস্যুরা। এদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত বিচার করা উচিৎ। তাছাড়া উপকূলীয় বনভূমি রক্ষায় প্রশাসনের সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা চালানো প্রয়োজন। বন বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসন কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না এটা সবাই জানে।”

বন বিভাগের তালতলী রেঞ্জ কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান বলেন, “বিষয়টি অবগত হয়ে দখলদারদের নোটিশ করা হয়েছে। দখল করা বনের জমি উদ্ধার ও বন উজাড়কারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে সালমা বলেন, “এলাকার লোকজন অভিযোগ দিয়েছেন। বন বিভাগকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলেছি। প্রতিবেদন পাওয়ার পরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/ইমরান/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বন ব ভ গ ব যবস থ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

কাঠগড়ায় কাঁদলেন এনবিআরের সেই মতিউর, আদালত বললেন, ‘দুদকের জালে এখন হাজার মতিউর’

গত বছরের কোরবানি ঈদের আগে ছেলের ১৫ লাখ টাকায় ছাগল কেনার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর গ্রেপ্তার এনবিআরের সাবেক সদস্য মতিউর রহমানকে আজ আদালতে দেখা গেল ভিন্ন রূপে।

আসামির কাঠগড়ায় একটি বেঞ্চে তিনি বসে ছিলেন। মুখে তাঁর লম্বা দাড়ি। মাস্ক দিয়ে মুখ ঢাকা। মতিউর যে বেঞ্চে বসে ছিলেন, সেই বেঞ্চের এক প্রান্তে বসেছিলেন তাঁর প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ। সময় তখন বেলা ১২টা ১০ মিনিট।

ঢাকার মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন তখন এজলাসে। তিনি দৈনন্দিন মামলার শুনানি গ্রহণ করছিলেন। আদালত কক্ষে দেখা যায়, মতিউর ও লায়লা মৃদু স্বরে নিজেরা কথা বলতে থাকেন। এর ২৩ মিনিট পর মতিউর রহমানদের দুর্নীতির মামলার শুনানি শুরু হয়।

শুরুতে মতিউরের আইনজীবী ওয়াহিদুজ্জামান আদালতকে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আমার মক্কেল মতিউর এবং তাঁর স্ত্রী কয়েক মাস ধরে কারাগারে আছেন। তাঁরা ষড়যন্ত্রের শিকার। জামিন দিলে পলাতক হবেন না।’

আইনজীবীর বক্তব্যের পর মতিউর রহমান নিজেই আদালতে কথা বলার অনুমতি চান। এক পর্যায়ে মতিউর রহমানের আইনজীবীও মতিউরকে কথা বলার সুযোগ দেওয়ার জন্য আদালতের কাছে মৌখিক আবেদন করেন।

আদালত অনুমতি দেওয়ার পর মতিউর আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে কথা বলতে শুরু করেন। মতিউর আদালতকে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আমি কারাগারে থাকা অবস্থায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছি। সেই চিঠিতে আমি জানিয়েছি, কীভাবে আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।’

মতিউর রহমানের এই বক্তব্যের পর আদালত বলেন, ‘যখন এটি আদালতে জমা দেওয়া হবে, তখন আমি পড়ব।’

এ সময় মতিউর রহমান তাঁর হাতে থাকা একটি চিঠি আদালতে জমা দেন।

আদালতের কাছে চিঠিটি জমা দেওয়ার পর মতিউর আদালতকে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, কাস্টমস কর্মকর্তা থাকাকালে একজন সামরিক কর্মকর্তার রোষানলে আমি পড়ি। সেই কর্মকর্তার কর্মকাণ্ড নিয়ে নিয়ে সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে খবর প্রকাশিত হয়েছে।’

হাজতখানা থেকে বের করে আদালতে নেওয়া হচ্ছে এনবিআরের সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমানকে। আজ মঙ্গলবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত চত্বরে

সম্পর্কিত নিবন্ধ