ইয়ামাল বাচ্চা নয়—বললেন বার্সেলোনা কোচ
Published: 12th, May 2025 GMT
লা লিগার ট্রফি এখন বার্সেলোনার হাতে তুলে দেওয়াই যায়। বাকি তিন ম্যাচ থেকে দরকার মাত্র ২ পয়েন্ট। সে জন্য মাঠে নামাও জরুরি নয়। মঙ্গলবার রিয়াল মাদ্রিদ নিজেদের ম্যাচে মায়োর্কার সঙ্গে না জিতলেই ২০২৪–২৫ লা লিগায় আনুষ্ঠানিকভাবে চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে বার্সেলোনা।
কাতালান ক্লাবটির ২৮তম লিগ ট্রফি হাতের নাগালে এসেছে গতকাল রাতে এল ক্লাসিকোয় রিয়ালকে হারিয়ে দেওয়ায়। ৭ গোলের জমজমাট লড়াইয়ে বার্সার ৪–৩ ব্যবধানের জয়ে বড় অবদান লামিনে ইয়ামালের। গোল বেশি করেননি—মাত্র একটি। তবে পুরো ৯০ মিনিট রিয়াল মাদ্রিদকে চাপে রেখে দলকে ভরসা জুগিয়ে গেছেন ১৭ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড। ম্যাচের পর বার্সেলোনা কোচ হান্সি ফ্লিক বলেছেন, বয়স কম হলেও ইয়ামালের বড় কিছু করার সামর্থ্য আছে।
গতকাল রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে শুরুতেই দুই গোলে পিছিয়ে পড়েছিল বার্সেলোনা। পরে এরিক গার্সিয়া এক গোল শোধ করার পর ৩২ মিনিটে ইয়ামালই দুর্দান্ত এক গোলে সমতা ফিরিয়েছেন। ম্যাচে বার্সেলোনা শট লক্ষ্যে রাখতে পেরেছে ৯টি, এর মধ্যে ৫টিই ইয়ামালের। দুই দল মিলিয়ে ম্যাচের সবচেয়ে বেশি ৪টি ড্রিবলও বার্সার এই বিস্ময়বালকের।
এখনো আঠারো না হওয়া ইয়ামাল বার্সার জন্য অনেক বেশিই দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখছেন কি না, এ প্রশ্নে ফ্লিক বলেছেন, ‘সে বাচ্চা নয়। সে ভালো করছে। ভালো করার আত্মবিশ্বাসটা তার মধ্যে আছে; যেকোনো কিছু করতে পারার বিশ্বাস.
বার্সেলোনার ৪–৩ ব্যবধানের জয়ে ইয়ামালের ভূমিকা তুলে ধরে বার্সেলোনা কোচ বলেন, ‘ওর গোলই আমাদের ম্যাচে ফিরিয়েছে। খুবই গুরুত্বপূর্ণ গোল ছিল। ১৭ বছর বয়সে এমন কিছু সত্যিই উঁচু মানের। তার কাছ থেকে আমরা এমনই চাই।’
এল ক্লাসিকো জিতে লিগ নাগালে আনার আগের ম্যাচেই ইন্টার মিলানের কাছে ৪–৩ ব্যবধানে হেরে চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছে বার্সেলোনা। ম্যাচের পর এ নিয়ে কথা বলেছেন ইয়ামালই, ‘এই জয়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল; বিশেষ করে চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচটির পর, যেটা আমরা ভুলেও গিয়েছি।’
লা লিগা নিশ্চিত হলে এ বছর স্পেনের ঘরোয়া ট্রেবল জিতবে বার্সেলোনা। স্প্যানিশ সুপার কাপ ও কোপা দেল রে—দুটিতেই রিয়ালকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছেন ইয়ামালরা।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রোহিঙ্গাদের সিম দিতে চায় সরকার
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বৈধভাবে সিম পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে তাদের অনেকের কাছেই বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের বিভিন্ন মোবাইল ফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের সিম রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে নিরাপত্তা প্রশ্নে উদ্বেগ রয়েছে সরকারের। এ পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বৈধভাবে সিম ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার কথা ভাবছে অন্তর্বর্তী সরকার।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসেই রোহিঙ্গাদের সিম ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে অপারেটরদের সঙ্গে বৈঠকও হয়েছে।
মিয়ানমারে অত্যাচারের শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। দেশে এখন ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে। তাদের সিম ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে সেখানে অবৈধভাবে দুই দেশেরই সিম ব্যবহার হচ্ছে। রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরকেন্দ্রিক বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী অবৈধভাবে দেশি অপারেটরের সিম ব্যবহার করে এবং মিয়ানমারের সিম ব্যবহারের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালে রোহিঙ্গাদের সিম দেওয়ার চিন্তা করে তৎকালীন সরকার। সে সময় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন টেলিটক সিম ব্যবহারের আলোচনা হয়েছিল। যদিও পরে বিষয়টি আর এগোয়নি।
এখন অন্তর্বর্তী সরকার রোহিঙ্গাদের সিম দেওয়ার বিষয়ে ভাবছে। গত সোমবার বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে (বিটিআরসি) চার মোবাইল অপারেটরের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সিম দেওয়ার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিটিআরসি ও অপারেটর সূত্রমতে, ২৫ আগস্ট প্রধান উপদেষ্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের রোহিঙ্গা শিবিরে যাওয়ার কথা। ওই তারিখের মধ্যে প্রাথমিকভাবে কিছু সিম দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে।
যেভাবে সিম দেওয়ার ভাবনাসিম বিক্রির বিদম্যান নীতি অনুযায়ী, ব্যক্তিকে শনাক্তকারী পরিচয়পত্র ও বায়োমেট্রিক প্রয়োজন হয়। যেহেতু রোহিঙ্গাদের সে ধরনের পরিচয়পত্র নেই, তাই তাদের সিম দেওয়ার জন্য বিকল্প উপায় ভাবা হচ্ছে। অপারেটরদের সঙ্গে আলোচনায় বলা হয়, মোবাইল অপারেটররা রোহিঙ্গাদের জন্য একটি ভিন্ন নম্বর সিরিজ রাখবে। জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএনএইচসিআর) কাছে রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন নম্বর রয়েছে। যেটাকে সাধারণত ‘প্রোগ্রেস আইডি’ বলা হয়। সে আইডির বিপরীতে ১৮ বছরের বেশি বয়সীরা সিম পাবেন। ইউএনএইচসিআর সরাসরি এই সিমগুলো পাবে।
সরকারের সঙ্গে চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে ইউএনএইচসিআরের এই ডেটাবেজ সংরক্ষিত থাকবে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) ডেটা সেন্টারে। কিন্তু এই ডেটাবেজ বাংলাদেশ সরকারের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শেষ হতে আগামী নভেম্বর পর্যন্ত সময় লাগবে। সূত্র বলছে, যেহেতু সরকারের লক্ষ্য চলতি মাস, তাই সরকারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের অধীনে রোহিঙ্গাদের পাইলট প্রকল্প হিসেবে প্রথম ধাপে ২৫ আগস্টের মধ্যে ১০ হাজার নম্বর বরাদ্দ দেওয়ার আলোচনা হয়েছে।
অপারেটররা তিন ধরনের প্যাকেজ অফার করবে। এই প্যাকেজের খরচ ও সিমের দাম দেবে ইউএনএইচসিআর বা সরকার। নতুন সিম দেওয়ার পর বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে যেসব অবৈধভাবে সিম চলছে, সেগুলো বন্ধ করে দেবে সরকার।
তবে এসবই আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দাদের শনাক্তকরণ একটি বিষয়। এটা নিশ্চিত না হলে সিম সেখানে দেওয়া যাবে না। সরকারের দিক থেকে এই পরিচয় নিশ্চিতকরণের বিষয়টি নিয়ে কথা চলছে।
অপারেটররা যা বলছেরোহিঙ্গাদের সিম দেওয়ার বিষয়টিকে স্বাগত জানান গ্রামীণফোনের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার (সিসিএও) তানভীর মোহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বৈধভাবে সিম বিক্রয়ের বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই, যা বহু মানুষকে বৈধ উপায়ে সিম ক্রয়ের সুযোগ করে দেবে।’
তবে রবি আজিয়াটার চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বললেন ভিন্ন কথা। তাঁর কথায়, ‘নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে সিম কর বাবদ অপারেটররা ইতিমধ্যে বড় অঙ্কের যে বিনিয়োগ এ খাতে করেছে, সেটি অকার্যকর হয়ে পড়বে।’
রোহিঙ্গাদের জন্য সিমের নিবন্ধনের প্রক্রিয়াটি সহজ করার অনুরোধ জানিয়েছেন বাংলালিংকের হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স তাইমুর রহমান। তিনি বলেন, এই অঞ্চলে মোবাইল নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের সুযোগ প্রদান সুস্থ প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ বজায় রাখতে সহায়তা করবে।
রোহিঙ্গা শিবিরকে একটি বিশেষায়িত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে প্রযুক্তি নীতিমালা পরামর্শক আবু নাজম মো. তানভীর হোসেন বলেন, এখানে মিয়ানমারের নেটওয়ার্কও সক্রিয়। নিরাপত্তার স্বার্থে সরকারকে বাইরের দেশের নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণভাবে বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে। নতুন সিম দেওয়ার আগে আগেরগুলো জব্দ ও নথিভুক্ত করার পরামর্শ দেন তিনি।