সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেন ভয়ংকর ট্রলের শিকার হচ্ছেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি
Published: 12th, May 2025 GMT
পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে ভারত—দেশটির পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি গত শনিবার এক সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে এ খবর জানিয়েছিলেন। পরদিন থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভয়ংকর ট্রলের শিকার হচ্ছেন তিনি ও তাঁর পরিবার।
এই পরিস্থিতিতে পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি ও তাঁর পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে ভারতের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সংগঠন আইএএস। তাঁরা বিক্রম মিশ্রির প্রতি সংহতি প্রকাশ করে বলেছেন, তিনি ‘অন্যায়ভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণের’ শিকার হচ্ছেন।
আইএএসের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে বলা হয়, ‘সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ওপর অন্যায়ভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণ অত্যন্ত দুঃখজনক। রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের মর্যাদা রক্ষায় আমরা আমাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছি।’
ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিস (আইপিএস) থেকেও বিক্রম মিশ্রির ওপর ব্যক্তিগত আক্রমণের নিন্দা জানানো হয়েছে। এক্সে এক পোস্টে আইপিএস বলেছে, আইপিএস স্পষ্ট ভাষায় পররাষ্ট্রসচিব শ্রী বিক্রম মিশ্রি এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে দুঃখজনক ব্যক্তিগত আক্রমণের নিন্দা জানায়। নিজেদের কর্তব্যের প্রতি নিষ্ঠাবান প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এমন অন্যায় আক্রমণ সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য।
দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার খবর জানানোর পর বিক্রম মিশ্রির ব্যক্তিগত এক্স অ্যাকাউন্টের মন্তব্যের ঘর অশ্লীল ও আক্রমণাত্মক মন্তব্যে ভরে ওঠে। বেশির ভাগ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী পাকিস্তানের সঙ্গে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে উপনীত হওয়ার জন্য তাঁকে দায়ী করে মন্তব্য করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা এমনকি বিক্রম মিশ্রির মেয়েকে নিয়েও অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন। এর পর থেকে এই ভারতীয় কর্মকর্তা তাঁর পাবলিক অ্যাকাউন্ট ‘লক’ করে রেখেছেন।আরও পড়ুনভারতও নিশ্চিত করল, দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত১০ মে ২০২৫ব্যবহারকারীরা এমনকি বিক্রম মিশ্রির মেয়েকে নিয়েও অবমাননাকর মন্তব্য করেন। এর পর থেকে এই ভারতীয় কর্মকর্তা তাঁর পাবলিক অ্যাকাউন্ট ‘লক’ করে রেখেছেন।
নিখিল ভারত মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের (এআইএমআইএম) প্রধান এবং ভারতের লোকসভার সদস্য আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এ বিষয়ে এক্সে এক পোস্টে লিখেছেন, ‘এটি মনে রাখা জরুরি, আমাদের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা কার্যনির্বাহী বিভাগের অধীনে কাজ করেন এবং কার্যনির্বাহী বা যেকোনো রাজনৈতিক নেতৃত্ব, যাঁরা ওতান-ই-আজিজ পরিচালনা করছেন, তাঁদের নেওয়া সিদ্ধান্তের জন্য প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দায়ী করা উচিত নয়।’
কংগ্রেস নেতা শচীন পাইলটও পররাষ্ট্রসচিব এবং তাঁর পরিবারকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রল করার ঘটনার সমালোচনা করেছেন।
‘এটি মনে রাখা জরুরি যে আমাদের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা কার্যনির্বাহী বিভাগের অধীনে কাজ করেন এবং কার্যনির্বাহী বা যেকোনো রাজনৈতিক নেতৃত্ব, যাঁরা ওতান-ই-আজিজ পরিচালনা করছেন, তাঁদের নেওয়া সিদ্ধান্তের জন্য প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দায়ী করা উচিত না।’আসাদউদ্দিন ওয়াইসি, এআইএমআইএম প্রধান এবং ভারতের লোকসভার সদস্যএক্সে এক পোস্টে শচীন পাইলট লিখেছেন, ‘আমাদের পেশাদার কূটনীতিক এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের লক্ষ্যবস্তু করা অগ্রহণযোগ্য। তাঁরা দেশসেবায় নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেন।’
আরও কয়েকজন পার্লামেন্ট সদস্য ও শীর্ষস্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রির প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন এবং তাঁকে ট্রল করা ব্যক্তিদের সমালোচনা করেছেন।
আরও পড়ুনযুদ্ধবিরতি বারবার লঙ্ঘন করছে পাকিস্তান: ভারত১০ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এক প স ট র পর ব র কর ছ ন আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
এনবিআরে তালা, সেবা বিঘ্নিত
সংস্কার নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অচলাবস্থার নিরসন হয়নি; বরং পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে। সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নিজেদের প্রধান কার্যালয়ে কলমবিরতি পালন শুরু করেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পৌনে ১২টার দিকে এনবিআর প্রাঙ্গণে সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি) ও পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত হন। এ সময় এনবিআর প্রশাসনের পক্ষ থেকে এনবিআর ফটকগুলোতে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়।
এর পর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেননি, বের হতেও দেননি। ফলে আন্দোলনকারীদের একাংশ ভেতরে আটকে পড়ে। আরেক অংশ প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেয়। দুপুর ১২টার পর থেকে এনবিআরে কার্যত কোনো কাজ হয়নি।
‘খোলাখুলি আলাপ করেছি এবং এই সমস্যার সমাধান তাড়াতাড়ি হবে। আগামী সপ্তাহে আরও একটি সভা করব। তখন চূড়ান্তভাবে বিষয়টি সমাধান করব।’সালেহউদ্দিন আহমেদ, অর্থ উপদেষ্টাসারা দেশে রাজস্ব সংগ্রহ করে এনবিআর। মূলত তাদের সংগৃহীত রাজস্ব দিয়ে সরকার চলে। এনবিআরের কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটলে দেশের বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হয়। প্রভাব পড়ে অর্থনীতিতে। সরকারের এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি সংস্থায় ১২ মের পর থেকে এমন আন্দোলন চলছে। এর সূত্রপাত এনবিআরের সংস্কারে সরকারি উদ্যোগকে কেন্দ্র করে।
এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত করে রাজস্বনীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি বিভাগ করে গত ১২ মে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। উদ্দেশ্য হলো, করহার নির্ধারণের মতো নীতিগত কাজ এবং কর আদায়ের কাজ পৃথক রাখা। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের একটি শর্ত ছিল রাজস্বনীতি ও আদায়ের কাজে আলাদা সংস্থা করা।
এনবিআরের কর্মকর্তারা দুটি বিভাগ করা নিয়ে তেমন আপত্তি করছেন না। তবে তাঁরা মূলত ওই দুই বিভাগে পদায়নের ক্ষেত্রে রাজস্ব খাতের কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার চাইছেন। সরকার উপযুক্ত ব্যক্তিদের নিয়োগের কথা বলছে, যার মাধ্যমে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিয়োগ করা যায়।
এনবিআরের কর্মকর্তারা বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানের পদত্যাগও দাবি করছেন। তাঁদের অভিযোগ, চেয়ারম্যান সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করেননি এবং এতে সংকট তৈরি হয়েছে।
ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) কার্যালয়ে গতকাল আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, আন্দোলনে রাজস্ব আদায় কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘যেকোনো ধরনের সংস্কার করি, আইন করি বা আন্দোলন ও সংগ্রাম করি, সবই যেন আমাদের নিজেদের জন্য না হয়ে দেশের জন্য হয়।’
সারা দিন যা হলো২২ জুন থেকে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দিনে তিন-চার ঘণ্টা কলমবিরতি পালন করে আসছেন। গতকাল দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ও রপ্তানি ব্যতীত কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের এনবিআরসহ সারা দেশের সব দপ্তরে অবস্থান কর্মসূচি ও কলমবিরতি কর্মসূচি ছিল। এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ের সামনে গিয়ে গতকাল দেখা গেছে, এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধান ফটকের সামনে বসে এনবিআরের চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে স্লোগান দিচ্ছেন। এনবিআরের যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতেও স্লোগান দিচ্ছিলেন তাঁরা। এভাবে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে।
কার্যালয়ের সামনে ছিলেন সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি) ও পুলিশ সদস্যরা। কার্যালয়ের প্রবেশপথে তালা ঝুলছিল। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এনবিআর ভবনে ঢুকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভবন থেকে সরিয়ে দেন। পুরো ভবন খালি করা হয়। পাশাপাশি কর্মসূচি পালনের সুবিধার্থে ভাড়া করা চেয়ার, ম্যাট্রেস (জাজিম) নিয়ে সরিয়ে নেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
সারা দেশের শুল্ক-কর কার্যালয়েও গতকাল দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কলমবিরতি কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়নি।
এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এই আন্দোলন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। গতকাল বিকেল চারটার দিকে এনবিআরের সামনের রাস্তায় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ সংবাদ সম্মেলন করে। এতে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানকে অপসারণের জন্য আজ শুক্রবার পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। তা না হলে আগামীকাল শনিবার থেকে এনবিআরসহ সারা দেশের শুল্ক ও কর কার্যালয়ে লাগাতার ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা আসে।
সংবাদ সম্মেলনে সারা দেশের শুল্ক-কর কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঢাকামুখী ‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার বলেন, ‘এ মুহূর্তে এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ ছাড়া সংস্কারের আর কোনো পথ খোলা নেই। আমরা এনবিআর সংস্কারের পক্ষে। তবে তা সব পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে হতে হবে। নিপীড়নমূলক বদলির আদেশ বাতিল করতে হবে।’
এনবিআরের অচলাবস্থা নিরসনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। পাশাপাশি কর্মকর্তাদের বদলি আদেশ প্রত্যাহার ও রাজস্ব সংস্কার সমন্বয় কমিটি পুর্নগঠনের দাবিও করা হয়।
এ দিকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বিসিএস (কর) এবং বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারের প্রতিনিধিদের আলোচনার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে ডাকেন। তবে নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টার বেশি সময় পর সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে তাঁরা অর্থ মন্ত্রণালয়ে উপস্থিত হন। সেখানে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে তাঁদের প্রায় আড়াই ঘণ্টা বৈঠক হয়। বৈঠকে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের কেউ যাননি।
এনবিআর ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার গতকাল সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, তাঁদের ওই বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এ ধরনের বৈঠকে আমন্ত্রণ পেলে পরিষদের সবার সঙ্গে আলোচনা করে অংশ নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
এদিকে বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারা (সংস্কার ঐক্য পরিষদ) না এলেও সব সিনিয়র অফিসার, কমিশনাররা এসেছেন। এঁরা সবাই রেসপন্সিবল (দায়িত্বশীল)। যারা আন্দোলন করছে, বেশির ভাগই তাদের অধীনে কাজ করে।’ তিনি বলেন, ‘তাদের সঙ্গে খোলাখুলি আলাপ করেছি এবং এই সমস্যার সমাধান তাড়াতাড়ি হবে। আগামী সপ্তাহে আরও একটি সভা করব। তখন চূড়ান্তভাবে বিষয়টি সমাধান করব।’
শনিবারে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মসূচির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সেটার ব্যাপারে তাঁদের অনুরোধ করা হয়েছে। দেশের স্বার্থে তাঁরা অনুরোধ রাখবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বৈঠক শেষে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, ‘বৈঠকে আমাদের মধ্যে যে ভুল-বোঝাবুঝিগুলো হয়েছে, তা কীভাবে হলো, কোথা থেকে হলো, সেগুলো নিয়ে একটা ধারণা পাওয়া গেছে। আমরা খুবই আশাবাদী যে একটা সুন্দর সমাধান হবে। অর্থ উপদেষ্টাও সেই দিকেই ইঙ্গিত দিয়েছেন। আমাদের সেই লক্ষ্যে কাজ চলছে, আলোচনা চলছে।’
এনবিআর চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘আন্দোলনরত কর্মকর্তারা আলোচনা করছেন। তাঁরা একটা সিদ্ধান্ত দিলে আমরা আশা করি যে আজকের মধ্যে একটা ভালো সমাধান আসবে। ভার্চ্যুয়াল ফোরামে মেসেজ বিনিময়ের মাধ্যমে, টেলিফোনের মাধ্যমে নানাভাবে আলোচনা করা যায়, সেই আলোচনা চলছে।’
বৈঠকে উপস্থিত এনবিআরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, আলোচনায় তেমন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়নি। অর্থ উপদেষ্টা সকলকে অনুরোধ করেন যে, ঐক্য পরিষদ যেন আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেয়। তাহলে সরকার আলোচনা করবে। অন্যথায় সরকার কঠোর হবে।
দেড় মাসে যা হলোঅন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত অক্টোবর মাসে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদের নেতৃত্বে রাজস্ব খাত সংস্কারে পাঁচ সদস্যের পরামর্শক কমিটি গঠন করা হয়। তিন মাসের মধ্যে ওই কমিটি একটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা দেয়। সেখানে রাজস্বনীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি বিভাগ সৃষ্টি করার সুপারিশ করা হয়। মে মাসের শুরুতে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় তা অনুমোদন দেওয়া হয়।
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় গত ১২ মে ‘রাজস্বনীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ ২০২৫’ জারি করে। এর পর থেকেই আন্দোলনে নামেন এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাঁরা সব পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে সংস্কারের দাবি করেন। মে মাসেও কলমবিরতিসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। পরে গত ২৬ মে সরকার ঘোষণা দেয়, আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এনবিআর নিয়ে জারি করা অধ্যাদেশের প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে। সরকারের এই আশ্বাসের ভিত্তিতে আন্দোলন স্থগিত করে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।
পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটির পর ১৯ জুন এনবিআরের ছয়জন সদস্য দিয়ে রাজস্ব সংস্কার সমন্বয় কমিটি নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি সরকারের সঙ্গে রাজস্ব খাতের সংস্কার নিয়ে আলোচনা করবে বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু এই কমিটিতে আন্দোলনকারী এনবিআর ঐক্য পরিষদের কাউকে রাখা হয়নি।
এরপর পরিস্থিতি আবার জটিল হয়। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ আবার আন্দোলনের ডাক দেয়। পাশাপাশি এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবি করে তারা। ২২ জুন থেকে টানা পাঁচ দিন কলমবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘটসহ নানা কর্মসূচি পালন করছেন আন্দোলনকারীরা।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বাণিজ্য, বন্দর ইত্যাদি হলো অর্থনীতির ‘লাইফ লাইন’ (চালিকা শক্তি)। লাইফ লাইন চালু রাখতে কাজ করে এনবিআর। জাতীয় স্বার্থ ও অর্থনীতির দৃষ্টিতে বলা যায়, এনবিআরে অচলাবস্থায় সবাই ক্ষতিগ্রস্ত। তিনি বলেন, এই অচলাবস্থা দূর করতে হবে। আলোচনা ছাড়া সমাধানের পথ নেই।