বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য দেওয়ার প্রতিবাদ ১১০ নাগরিকের
Published: 13th, May 2025 GMT
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনকে লক্ষ্য করে বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেশের ১১০ নাগরিক। গতকাল সোমবার এক বিবৃতিতে তারা বলেন, সরকারকে এ বিষয়ে অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে এবং কমিশনকে সমর্থন ও সুরক্ষা দিতে হবে। বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে ১১টি সংস্কার কমিশন করে। এর মধ্যে গত ১৯ এপ্রিল নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়, যেখানে ৪৩৩টি সুপারিশ রয়েছে। প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পরই এসব সুপারিশ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। কথা ওঠে নারী কমিশন নিয়েও। ইসলামপন্থিদের অন্যতম প্ল্যাটফর্ম হেফাজতে ইসলাম নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে। জামায়াতে ইসলামীও কমিশনের প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে।
এমন অবস্থায় সংবাদমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে ১১০ নাগরিক বলেন, নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে আদর্শিক অবস্থানসহ জনমনে ভিন্নমত থাকতে পারে। তবে সেসব বিষয়ে গঠনমূলক আলোচনা ও বিতর্কের সুযোগ রয়েছে। তা না করে বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন সম্পূর্ণ বাতিলের দাবি শুধু অযৌক্তিক নয়, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মনে হওয়াও স্বাভাবিক।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, নারীর প্রতি অপমানসূচক, বিদ্বেষমূলক, অকথ্য ভাষায় গালাগাল এবং ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি তাদের এবং সাধারণভাবে নারীদের ওপর সহিংসতার উস্কানিও দেওয়া হচ্ছে। আমরা এ ধরনের বিবেচনাবর্জিত দাবি ও প্রতিবেদনকে কেন্দ্র করে কমিশনের সদস্য এবং নারীর প্রতি অযাচিত আক্রমণের তীব্র প্রতিবাদ জানাই।
কয়েকটি দাবি তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, কমিশন ও তাদের প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যানের আহ্বান আমরা নাকচ করছি। আমরা আশা করছি, কমিশনের দেওয়া সুপারিশগুলোর ওপরে বিস্তারিত ও গঠনমূলক আলোচনা করে একটি ঐকমত্যে পৌঁছানোর প্রক্রিয়া শুরু করার দিকে সরকারের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এই প্রক্রিয়ায় আমরা বিশেষজ্ঞ, গবেষক, শিক্ষক ও সুধী সমাজের অন্যদের গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করি।
বিবৃতিতে সই করা নাগরিকদের মধ্যে রয়েছেন সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কুষ্টিয়ায় এবার ২৫০টি মন্দিরে দুর্গাপূজা, বেড়েছে ২২টি মন্ডপ
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে কুষ্টিয়ার মন্ডপগুলোতে চলছে নানা প্রস্ততি। তাই ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পী ও আয়োজকেরা। গত বছরের তুলনায় এ বছর জেলায় বেড়েছে ২২টি পূজা মন্ডপ। সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে প্রশাসন। জেলায় ২৫০টি মন্দিরে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
বিভিন্ন মন্দির ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। আবার কোথাও শুরু হয়েছে রঙের কাজ। আপন মনে প্রতিমাগুলো ফুটিয়ে তুলছেন শিল্পীরা। এখন শেষ সময়ের পূজার প্রস্ততি নিচ্ছেন আয়োজকেরা। দুর্গাপূজা উপলক্ষে সনাতন ধর্মালম্বীদের মাঝে বইছে উৎসবের আমেজ। প্রতিমা শিল্পীরা ৫টি থেকে ১০টি পর্যন্ত প্রতিমা তৈরি করেছেন।
প্রতিমা শিল্পী কুমারেশ দাস ও মৃত্যুঞ্জয় কুমার পাল জানান, শেষ সময়ে প্রতিমা শিল্পীদের বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারে চাহিদাও বেশি।
এদিকে সকলের সহযোগিতায় অনাড়ম্বরভাবে দুর্গোৎসব পালন করতে চান আয়োজকরা।
হরিবাসর সার্বজনীন পূজা মন্দিরের উপদেষ্টা বিপ্রজিৎ বিশ্বাস বলেন, “আশা করছি প্রতিবছরের মতো এবছরও উৎসব মুখর পরিবেশে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। প্রশাসনের সহযোগিতা ও আশ্বাসে আমরা আমাদের পূজার কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছি।”
মিলপাড়া সাবর্জনীন পূজা মন্দিরের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বাপ্পী বাগচী বলেন, “প্রত্যেক ধর্মকে সন্মান জানানো প্রত্যেকটি মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আমাদের উৎসবে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে এলাকার সকলেই আমাদের পাশে থাকেন। আশাকরি এবারও তার ব্যত্যয় হবে না।”
কুষ্টিয়া মহাশ্মশান মন্দিরের পুরোহিত পলাশ চক্রবর্ত্তী বলেন, “আগামী ২১ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবী পক্ষের সূচনা হবে। এরপর ২৮ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠী এবং ২ অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শারদীয়া দুর্গোৎসবের সমাপ্তি ঘটবে। এবার পৃথিবীতে দশভূজার আগমন হবে হাতিতে চড়ে আর কৈলাশে ফিরবেন দোলায়।”
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়ার ৬ উপজেলায় ২৫০ মন্দিরে শারদীয়া দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৮১টি, খোকসা উপজেলায় ৫৯টি, কুমারখালী উপজেলায় ৫৯টি, মিরপুর উপজেলায় ২৮টি, ভেড়ামারা উপজেলায় ১১টি ও দৌলতপুর উপজেলায় ১২টি মন্ডবে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া এ বছর গত বছরের তুলনায় ২২টি মন্ডপে পূজা বেড়েছে।
কুষ্টিয়া জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জয়দেব বিশ্বাস বলেন, “গত বছরের তুলনায় এ বছর ২২টি পূজা বেশি হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশাসনের সাথে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দের বৈঠক হয়েছে। এছাড়া ১৯টি ঝুঁকিপূর্ণ মন্ডপের তালিকা প্রশাসনকে দেওয়া হয়েছে।”
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, “প্রতিটা পূজা মন্দিরে কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে পূজা মন্দিরে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনসহ পুলিশ ও আনসার মোতায়েন করা হবে।”
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন জানান, যার যার ধর্মীয় উৎসব স্বাধীনভাবে ও উৎসব মুখর পরিবেশে পালন করা তাদের অধিকার। কোন প্রোপাগান্ডা ও গুজবে কান দেওয়া যাবে না। বর্তমান সরকারের মবের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে। মব সৃষ্টি করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঢাকা/কাঞ্চন/এস