নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনকে লক্ষ্য করে বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেশের ১১০ নাগরিক। গতকাল সোমবার এক বিবৃতিতে তারা বলেন, সরকারকে এ বিষয়ে অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে এবং কমিশনকে সমর্থন ও সুরক্ষা দিতে হবে। বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে ১১টি সংস্কার কমিশন করে। এর মধ্যে গত ১৯ এপ্রিল নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়, যেখানে ৪৩৩টি সুপারিশ রয়েছে। প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পরই এসব সুপারিশ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। কথা ওঠে নারী কমিশন নিয়েও। ইসলামপন্থিদের অন্যতম প্ল্যাটফর্ম হেফাজতে ইসলাম নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে। জামায়াতে ইসলামীও কমিশনের প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে।

এমন অবস্থায় সংবাদমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে ১১০ নাগরিক বলেন, নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে আদর্শিক অবস্থানসহ জনমনে ভিন্নমত থাকতে পারে। তবে সেসব বিষয়ে গঠনমূলক আলোচনা ও বিতর্কের সুযোগ রয়েছে। তা না করে বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন সম্পূর্ণ বাতিলের দাবি শুধু অযৌক্তিক নয়, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মনে হওয়াও স্বাভাবিক।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, নারীর প্রতি অপমানসূচক, বিদ্বেষমূলক, অকথ্য ভাষায় গালাগাল এবং ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি তাদের এবং সাধারণভাবে নারীদের ওপর সহিংসতার উস্কানিও দেওয়া হচ্ছে। আমরা এ ধরনের বিবেচনাবর্জিত দাবি ও প্রতিবেদনকে কেন্দ্র করে কমিশনের সদস্য এবং নারীর প্রতি অযাচিত আক্রমণের তীব্র প্রতিবাদ জানাই।
কয়েকটি দাবি তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, কমিশন ও তাদের প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যানের আহ্বান আমরা নাকচ করছি। আমরা আশা করছি, কমিশনের দেওয়া সুপারিশগুলোর ওপরে বিস্তারিত ও গঠনমূলক আলোচনা করে একটি ঐকমত্যে পৌঁছানোর প্রক্রিয়া শুরু করার দিকে সরকারের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এই প্রক্রিয়ায় আমরা বিশেষজ্ঞ, গবেষক, শিক্ষক ও সুধী সমাজের অন্যদের গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করি।

বিবৃতিতে সই করা নাগরিকদের মধ্যে রয়েছেন সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড.

পারভীন হাসান, নাগরিক কোয়ালিশনের যুগ্ম আহ্বায়ক আইরিন খান, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন, নারীপক্ষের সভানেত্রী গীতা দাস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং ফেলো ও প্রযুক্তিবিদ সাবহানাজ রশীদ দিয়া, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক সেলিম রায়হান, ড. ইমরান মতিন, অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, আলোকচিত্রী শহীদুল আলম, প্রকাশক মাহ্‌রুখ মহিউদ্দীন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক স্নিগ্ধা রেজওয়ানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তাহমিনা খানম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শরমিন্দ নীলোর্মি, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফিরদৌস আজিম, ড. সাকিব মাহমুদ, ড. মির্জা হাসান, সৈয়দা সেলিনা আজিজ, স্পেস ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মোশফেক আরা শিমুল, সাংবাদিক রাফিয়া তামান্না, অ্যাক্টিভিস্ট লাবণী মণ্ডল, কাজলী সেহরীন ইসলাম, ফেরদৌস আরা রুমী, ফেরদৌস আরা বেগম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচ্যকলা বিভাগের শিক্ষক দীপ্তি দত্ত, গণিতবিদ নাফিসা রায়হানা, মনজুরুল মাহমুদ ধ্রুব ও সাংবাদিক সুস্মিতা পৃথা।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক আগাম ভোট, তরুণেরা কেন আগাম ভোট দিচ্ছেন

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক নগরের মেয়র নির্বাচন সামনে রেখে ৭ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ আগাম ভোট দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বাদে অন্য কোনো নির্বাচনে নিউইয়র্কে এটাই সর্বোচ্চ আগাম ভোট পড়ার ঘটনা। আগামীকাল ৪ নভেম্বর নিউইয়র্ক নগরে মেয়র পদে ভোট গ্রহণ হতে যাচ্ছে।

গতকাল রোববার ছিল আগাম ভোট দেওয়ার শেষ দিন। এদিন প্রায় ১ লাখ ৫১ হাজার মানুষ আগাম ভোট দিয়েছেন। নগরের নির্বাচন কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, আগাম ভোট গ্রহণ শুরুর পর থেকে এটি এক দিনে সর্বোচ্চ ভোট পড়ার ঘটনা। তা ছাড়া এদিন ৩৫ বছরের কম বয়সী ভোটারদের উপস্থিতিও বেশি ছিল। এর মধ্য দিয়ে আগাম ভোট দেওয়া ভোটারদের গড় বয়সও কমে এসেছে। গড় বয়স ৫০ বছরে নেমে এসেছে।

আগের সপ্তাহের প্রথম দিকে কম বয়সী ভোটারের উপস্থিতি কম ছিল। ওই সপ্তাহের রোববার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৩৫ বছরের কম বয়সী প্রায় ৮০ হাজার নিউইয়র্কবাসী ভোট দিয়েছিলেন। তবে গত শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত এই সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ৩৫ বছরের কম বয়সী ১ লাখের বেশি ভোটার ভোট দিয়েছেন, যার মধ্যে শুধু গতকাল রোববারই এ বয়সী ভোটারের সংখ্যা ছিল ৪৫ হাজারের বেশি।

আরও পড়ুনমামদানিকে বারাক ওবামার ফোন, করলেন নির্বাচনী প্রচারের প্রশংসা০২ নভেম্বর ২০২৫

নিউইয়র্কে চলতি বছর মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটের সংখ্যা ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত মেয়র নির্বাচনের তুলনায় চারগুণের বেশি। এই নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানি তাঁর দুই প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রু কুমো ও কার্টিস স্লিওয়ার চেয়ে এগিয়ে আছেন।

নিউইয়র্কে চলতি বছর মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটের সংখ্যা ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত মেয়র নির্বাচনের তুলনায় চারগুণের বেশি। এই নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানি তাঁর দুই প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রু কুমো ও কার্টিস স্লিওয়ার চেয়ে এগিয়ে আছেন।

নিউইয়র্কে সর্বপ্রথম মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোট দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয় ২০২১ সালে। ওই নির্বাচনে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার মানুষ আগাম ভোট দিয়েছিলেন। তবে ওই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখা যায়নি। ওই নির্বাচনে এরিক অ্যাডামস তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্লিওয়াকে দ্বিগুণের বেশি ভোটে হারিয়েছিলেন।

অবশ্য চলতি বছর নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোট দেওয়া মানুষের সংখ্যা গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগাম ভোটকে ছাড়াতে পারেনি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ১০ লাখ মানুষ আগাম ভোট দিয়েছিলেন। তবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তুলনায় মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোট দেওয়া মানুষের বয়স তুলনামূলক কম। এটা অবাক করা বিষয়। কারণ, সাধারণত যারা আগাম ভোট দেন তাঁদের গড় বয়স মোট নিবন্ধিতদের গড় বয়সের তুলনায় বেশি হয়ে থাকে।

আরও পড়ুনব্যালটে মামদানি, অদৃশ্য ‘প্রার্থী’ ট্রাম্প১ ঘণ্টা আগে

চলতি বছরের মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটের সংখ্যা ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের তুলনায়ও অনেক বেশি। ওই সময় নিউইয়র্কে প্রায় ৪ লাখ ৩৩ হাজার মানুষ আগাম ভোট দিয়েছিলেন। সে সময় আগাম ভোট দেওয়া ভোটারের অধিকাংশের বয়স ছিল ৫৫ বছরের বেশি।

চলতি বছরের মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটের সংখ্যা ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের তুলনায়ও অনেক বেশি। ওই সময় নিউইয়র্কে প্রায় ৪ লাখ ৩৩ হাজার মানুষ আগাম ভোট দিয়েছিলেন। সে সময় আগাম ভোট দেওয়া ভোটারদের অধিকাংশের বয়স ছিল ৫৫ বছরের বেশি।

গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আগাম ভোট দেওয়া মানুষের গড় বয়স ছিল ৫১ বছর। তবে এবার মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটারদের গড় বয়স আরও কমে ৫০ বছরে নেমেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ