উচ্চ লবণ সহিষ্ণু গমের নতুন জাত ‘জিএইউ গম ১’ উদ্ভাবন করেছে গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (গাকৃবি) কৃষিতত্ত্ব বিভাগ। উচ্চ লবণাক্ততা সহনশীলতার দিক থেকে দেশে এটিই প্রথম উদ্ভাবন।

সম্প্রতি কৃষিতত্ত্ব বিভাগের দু'জন কৃষি বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এম. ময়নুল হক এবং অধ্যাপক ড. মো. মসিউল ইসলামের নেতৃত্বে গবেষণার মাধ্যমে উদ্ভাবিত হয়েছে।

বুধবার (২ জুলাই) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আব্বাস উদ্দিন বিষয়টি জানিয়েছেন।

আরো পড়ুন:

কালীগঞ্জে পশুর চামড়া প্রক্রিয়াজাতের ১৫ টন লবণ বিতরণ

জাপানিজদের স্বাস্থ্য ভালো থাকার দুই কারণ

জানা গেছে, প্রিমিয়াম কোয়ালিটির গমের এ জাতটি লবণাক্ততা সহনশীল, উচ্চফলনশীল ও অধিক প্রোটিন সমৃদ্ধ। অপার সম্ভাবনাময় জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে গাকৃবির মোট উদ্ভাবিত জাতের সংখ্যা ৯১টিতে পৌঁছিয়েছে, যা বাংলাদেশের কৃষিতে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।

দীর্ঘদিন গবেষণা ও ফলন পরীক্ষার পর ২০২১ থেকে ২০২৩ সালে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে কৃষকের মাঠে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে লবণাক্ততা সহিষ্ণু ও উচ্চ ফলনশীল হিসেবে প্রমাণিত হয়। পরবর্তীতে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির সার্বিক তত্ত্বাবধানে দেশের ছয়টি স্থানে মাঠ মূল্যায়নে প্রস্তাবিত ফলন পরীক্ষায় সন্তোষজনক ফলাফলের সুপারিশের প্রেক্ষিতে জাতীয় বীজ বোর্ড গত ১৭জুন জিএইউ গম ১ এর ছাড়পত্র দেয়।

এ গমে বিদ্যমান অধিক প্রোটিন শরীর গঠন ও মেরামত, শক্তি সরবরাহ, ইমিউন সিস্টেমের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে রোগ প্রতিরোধে অধিক সহায়তা করে থাকে। অনাদিকে, পর্যাপ্ত পরিমাণ গ্লটেনিন থাকায় এটি উচ্চ প্রোটিন ও লো ফ্যাট হওয়ায় সহজে শরীরে শোষিত হতে পারে। ডিইউএস এর ১৩টি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট সম্বলিত ল্যাব টেস্টে প্রমাণিত হয়েছে এটি সাধারণ গম থেকে গুণমানে ভিন্ন।

জিএইউ গম ১ এর দানা তামাটে, চকচকে এবং তুলনামূলক কম সময়ের মধ্যে পরিপক্ক হয়। আমন মৌসুমে ধান কাটার পর বীজ বপন করলে ৯৫ থেকে ১০০ দিনে পরিপক্ক হয়ে ওঠে। ফলে অল্প সময়ে অধিক ফলন পেয়ে কৃষকরা লাভবান হতে পারেন।

অন্যদিকে, এ গমের গাছের আকার বড়, কাণ্ড মোটা ও গুটির সংখ্যা বেশি হওয়ায় এটি থেকে অধিক পরিমাণ গম পাওয়া যায়। ফলে গবাদি পশুর খাদ্য চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। উৎকৃষ্টমানের এ জাতের ফলন হেক্টর প্রতি স্বাভাবিক মাটিতে ৪.

৫ টন এবং লবণাক্ত মাটিতে ৩.৭৫ টন ফলন পাওয়া সম্ভব।

এটি লবণ সহনশীল হওয়ায় মানব শরীরে সোডিয়াম ক্লোরাইডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে কার্যকরভাবে পানি ও পুষ্টি শোষণ করতে পারে। এছাড়া জলবায়ু সহনশীলতা ও রোগ-পোকা প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকায় এটি দেশের বৈচিত্র্যময় পরিবেশে চাষের জন্য উপযোগী ও লাভজনক একটি জাত। 

জাতটির উদ্ভাবক অধ্যাপক ড. মো. মসিউল ইসলাম বলেন, “জিএইউ গম ১’ উদ্ভাবন আমাদের দীর্ঘদিনের গবেষণা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতার ফল। দেশের উপকূলীয় অঞ্চল ও লবণাক্ত এলাকায় ফসল উৎপাদনের যে সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যেই আমরা এই গমের জাতটি উদ্ভাবনে কাজ শুরু করি।”

তিনি বলেন, “এই জাতটি লবণাক্ত পরিবেশেও টিকে থাকতে পারে এবং তুলনামূলকভাবে অধিক ফলন দেয়, যা কৃষকের জন্য খুবই লাভজনক। আশা করি, ‘জিএইউ গম ১' দ্রুত মাঠ পর্যায়ে বিস্তার লাভ করবে এবং দেশের বিভিন্ন লবণাক্ত অঞ্চলে গম চাষে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।”

উপাচার্য অধ্যাপক ড. জিকেএম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “নতুন জিএইউ গমের এ জাতের উদ্ভাবন এটি শুধু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নয়, বরং বাংলাদেশের কৃষি খাতের জন্য একটি বড় অর্জন। আমাদের দেশের উপকূলীয় অঞ্চল ও লবণাক্ত মাটিযুক্ত এলাকায় কৃষি উৎপাদন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে থাকে। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের গবেষকরা নিরলস পরিশ্রম করে এমন একটি জাত উদ্ভাবন করেছেন।”

ঢাকা/রেজাউল/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর লবণ লবণ ক ত সহনশ ল র জন য পর ক ষ আম দ র ফলন প

এছাড়াও পড়ুন:

জলবায়ু সহনশীল কৃষিতে নতুন দিগন্ত: কিনোয়া ও চিয়া সিড চাষে কৃষকের সাফল্য উদযাপন

বাংলাদেশের কৃষি খাতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনার সাক্ষী গত ২৯ জুন। আমাল ফাউন্ডেশন ও ইউএনডিপির যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত LoGIC প্রকল্পের অধীনে, ‘কৃষকের সক্ষমতা উন্নয়ন ও মার্কেট লিংকেজ’ প্রকল্পের বাস্তবায়ন উপলক্ষে এক বিশেষ আয়োজন অনুষ্ঠিত হয় শের-এ- বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলা এ আয়োজনে দেশের কৃষি খাতে জলবায়ু সহনশীলতা ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের একটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়।

গত এক বছরে কুড়িগ্রাম ও বাগেরহাট অঞ্চলের কৃষকদের নিয়ে এই প্রকল্পে প্রশিক্ষণ, পরিকল্পিত চাষাবাদ, উন্নত পরবর্তী সংগ্রহ ব্যবস্থাপনা ও বীজ সংরক্ষণ প্রক্রিয়া চালু করা হয়। এর মাধ্যমে কিনোয়া ও চিয়া সিড—এই দুটি উচ্চমূল্যের ও জলবায়ু সহনশীল ‘সুপার-ক্রপ্স’ উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য এসেছে। কেবল কুড়িগ্রামেই প্রায় ২৮৬০ কেজি কিনোয়া এবং ১৭৬০ কেজি চিয়া সিড উৎপাদন হয়েছে, যার মাধ্যমে কৃষকেরা ৮.৫ লাখ টাকারও বেশি আয় করেছেন।

অনুষ্ঠানে ‘সোয়িং সাস্টেইনেবল ফিউচার উইথ সুপার-ক্রপ্‌স’ শীর্ষক মূল থিমের ওপর ভিত্তি করে দুইটি প্যানেলে আলোচনা হয়, যেখানে অংশগ্রহণ করেন সরকারি প্রতিনিধি, নীতিনির্ধারক, বেসরকারি খাতের নেতৃবৃন্দ ও কৃষি বিশেষজ্ঞরা। প্রথম প্যানেলে আলোচনা হয় ‘কৃষক ও বাজারের মধ্যে সংযোগ শক্তিশালীকরণ: মূল্য শৃঙ্খলা ও বিপণন ব্যবস্থার উন্নয়ন’ নিয়ে। কৃষকদের বাজারে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে বেসরকারি খাতের সঙ্গে পার্টনারশিপ, ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করা হয়।

দ্বিতীয় প্যানেলে ‘উদ্ভাবন থেকে বাস্তব প্রভাব: জলবায়ু সহনশীল কৃষি-বাজার মডেলের সম্প্রসারণ ও স্থায়িত্ব’ শীর্ষক আলোচনায় কৃষি নীতিমালা, বিনিয়োগ সম্ভাবনা ও প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তার মাধ্যমে প্রকল্পটি কীভাবে জাতীয় পর্যায়ে সম্প্রসারণ করা যায় তা নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়।

অনুষ্ঠানটির চেয়ারপার্সন হিসেবে শুভ সূচনা করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের  যুগ্ম সচিব মো. ফজলে আজিম এবং LoGIC প্রকল্পের জাতীয় প্রকল্প পরিচালক। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল লতিফ। এছাড়া বক্তব্য রাখেন ইউএনডিপি ও লজিক প্রজেক্টের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর এ কে এম আজাদ রহমান, শের-এ-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রতিনিধি, আমাল ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক সারাহ জাবীন কৃষ্টি এবং বেনেফিশিয়ারি কৃষকেরা, যারা নিজেদের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও সাফল্য তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠান শেষে প্রশ্নোত্তর পর্ব ও সার্বিক অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে আয়োজন শেষ হয়। এই উদ্যোগের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে, সঠিক প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তিগত সহায়তা ও বাজার সংযোগের মাধ্যমে জলবায়ু সহনশীল কৃষি ব্যবস্থাকে টেকসই ও লাভজনক করা সম্ভব। আমাল ফাউন্ডেশন ও ইউএনডিপির এই যৌথ উদ্যোগ ভবিষ্যতের জন্য একটি কার্যকর ও অনুকরণীয় মডেল হয়ে থাকবে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি


 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে লবণসহিষ্ণু গমের নতুন জাত উদ্ভাবন
  • জলবায়ু সহনশীল কৃষিতে নতুন দিগন্ত: কিনোয়া ও চিয়া সিড চাষে কৃষকের সাফল্য উদযাপন
  • কর্ণফুলী পেপার মিল : পুরোনো শিল্পের নতুন স্বপ্ন