পরিচালক ও সাবেক এমডিসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে দুদকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ সাউথইস্ট ব্যাংকের
Published: 13th, May 2025 GMT
সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান পরিচালক আলমগীর কবির, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম কামাল হোসেন, সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট (এসএভিপি) জেসমিন সুলতানাসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অন্য দুই অভিযুক্ত হচ্ছেন ই এম পাওয়ার লিমিটেড ও প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধি ওয়াহেদ আলী। ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ অভিযোগ করা হয়। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইন ও বিধিবিধান লঙ্ঘন এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ব্যাংকের সাড়ে সাত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনের পর সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট (এসইভিপি) খোরশেদ আলম চৌধুরী ৬ মে এই অভিযোগ দায়ের করেছেন। সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান পরিচালকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যাংকের অভিযোগ দায়েরের ঘটনা দেশের ব্যাংক খাতে বিরল। আলমগীর কবির নানা কৌশলে টানা ২০ বছর ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন। এই সময়ে ব্যাংকটিতে তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় নানা অনিয়ম সংঘটিত হয় এবং তাঁর পরিবারও এ রকম সুবিধাভোগী বলে অভিযোগ রয়েছে।
এর আগে ৪ মে সাউথইস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নুরুদ্দিন মো.
ব্যাংকের অভিযোগে বলা হয়, পাঁচ আসামি পূর্বপরিকল্পিতভাবে পারস্পরিক যোগসাজশে অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষ তথা পরিচালনা পর্ষদের পূর্বানুমোদন ছাড়াই ইএম পাওয়ার লিমিটেডের মতো অখ্যাত একটি কোম্পানির প্লেসমেন্ট শেয়ার কেনা হয়। এ ক্ষেত্রে কোম্পানি আইন ও শেয়ারবাজার–সংক্রান্ত বিধিবিধান ও নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে চুক্তি করা হয়েছে। চুক্তি করার আগে ব্যাংকের নিরীক্ষা পদ্ধতিরও যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি। চুক্তিতে আইপিওতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আগে ১০ শতাংশ হারে লভ্যাংশ দেওয়ার শর্ত ছিল। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৯ সালের জুন থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ৫ বছরে বিনিয়োগকৃত মূল টাকার ওপর ১০ শতাংশ হারে লভ্যাংশ বাবদ মোট সাড়ে ৭ কোটি টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও তা পাওয়া যায়নি। আসামিরা প্রতারণা করে ও পূর্বপরিকল্পিতভাবে পারস্পরিক যোগসাজশে সাড়ে সাত কোটি টাকা ব্যাংককে না দিয়ে নিজেরা অর্থ আত্মসাৎ করেন। তাঁরা ২০২৩ ও ২০২৪ সালে বিনিয়োগ করা ২২ কোটি ৫০ লাখ কোটি টাকা ফেরত দিলেও লভ্যাংশের ওই টাকা আত্মসাৎ করেন। কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে কোনো আবেদনই করেনি। এ জন্য বিষয়টি তদন্ত করে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দুদককে অনুরোধ করেছে সাউথইস্ট ব্যাংক।
ব্যাংকটির অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে উঠে এসেছে, ব্যাংকের কেনাকাটা, সংস্কার ও প্রচারের নামে বড় অঙ্কের অর্থ তছরুপ হয়েছে। পাশাপাশি ব্যাংকটিতে নিয়োগ, তহবিল ব্যবহার এবং ঋণের ক্ষেত্রেও নানা ধরনের অনিয়ম হয়েছে। এসব অনিয়মে অভিযুক্ত তিন কর্মকর্তা ইতিমধ্যে পদত্যাগ করেছেন। তাঁরা হলেন ওয়ারেস উল মতিন, মোহাম্মদ তানভীর রহমান ও এ কে এম নাজমুল হায়দার। এর মধ্যে ওয়ারেস উল মতিন ব্যাংকের সাতটি বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। মোহাম্মদ তানভীর রহমান ছিলেন করপোরেট অ্যাফেয়ার্স ও করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি (সিএসআর) বিভাগের প্রধান। এ কে এম নাজমুল হায়দার ছিলেন কোম্পানি সচিব।
ব্যাংকটিতে যখন এসব অনিয়ম হয়েছে, তখন চেয়ারম্যান ছিলেন আলমগীর কবির। সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের দায়ে বড় অঙ্কের জরিমানার পরও তিনি ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকেন। পরবর্তীকালে চেয়ারম্যান পদ ছাড়লেও পরিচালক পদে বহাল ছিলেন তিনি।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেপ্টেম্বর মাসে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে বদল আসে। ২০ বছর পর আবারও ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ফেরেন এম এ কাশেম। তিনি ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। আলমগীর কবির ২০০৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত টানা ২০ বছর এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন।
এদিকে ঋণখেলাপির তথ্য গোপন করে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তিন প্রার্থীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেয় সাউথইস্ট ব্যাংক। ওই তিন নেতা হলেন সাবের হোসেন চৌধুরী, মোরশেদ আলম ও মামুনুর রশিদ কিরণ। গত বছরের ৭ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে তাঁরা সবাই সংসদ সদস্য হন। এ ছাড়া আরেক আওয়ামী লীগ নেতা বেঙ্গল ব্যাংকের পরিচালক প্রকৌশলী আবু নোমান হাওলাদারের খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন রাখে সাউথইস্ট ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক এক পরিদর্শনে এসব অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স উথইস ট ব য ক র পর
এছাড়াও পড়ুন:
ঋতুপর্ণাকে বিসিবির বাড়ি উপহার
বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের তারকা ঋতুপর্ণা চাকমাকে একটি বাড়ি নির্মাণ করে দেবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। শনিবার বোর্ডের সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিসিবির সভা শেষে বেরিয়ে এ খবর জানান, পরিচালক ইফতেখার রহমান। এর মধ্যেই প্রকৌশলীর মাধ্যমে বাড়িটির নকশা ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য কিছু চূড়ান্ত হয়েছে এবং তা বিসিবির কাছে পাঠিয়েছে ঋতুপর্ণার পরিবার।
রাঙামাটি জেলার কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের মঘাছড়ি গ্রামে বাঁশের বেড়ার একটি বাড়িতে মাকে নিয়ে থাকেন ঋতুপর্ণা। ছোটবেলায় বাবাকে হারানো এই ফুটবলার তার একমাত্র ছোট ভাইকেও হারান বছর তিনেক আগে। বড় তিন বোনের বিয়ে হয়েছে। ২০২৪ সাফ জয়ের পর স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে বাড়ি করার জন্য জমি পেয়েছিলেন এই ফুটবলার। সেই জমিতেই এবার বিসিবি ঋতুপর্ণাকে বাড়ি বানিয়ে দেবে।
আরো পড়ুন:
গামিনি মোহ কাটিয়ে হেমিংয়ে বুঁদ
অখণ্ড অবসরে লম্বা সময় ‘যুদ্ধের’ প্রস্তুতি
গত মাসে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে। এশিয়ান কাপের মূল পর্বে জায়গা করে নিয়েছে। বাছাইপর্বে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ছিল দুর্বার। যার অন্যতম রূপকার ছিলেন ঋতুপর্ণা। এর আগে তার গোলে ২০২৪ সালে বাংলাদেশ জিতেছিল সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। আসরের সেরা ফুটবালের পুরস্কার জিতেছিলেন এই ফরোয়ার্ডই।
ঢাকা/ইয়াসিন