জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। এনআইডি সার্ভারে লগইনের (প্রবেশ) সময় ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) না আসায় এই সমস্যা হচ্ছে।
ওটিপি না আসায় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের কর্মকর্তারা এনআইডি সার্ভারে প্রবেশ করতে পারছেন না। তাই সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিঘ্ন ঘটছে।
আজ মঙ্গলবার বেলা ১টার দিকে ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ সিস্টেম ম্যানেজার (কারিগরি-এনআইডি) মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘ঘণ্টা দু-একের মধ্যে ওটিপি সার্ভিস সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’
এর আগে আজ বেলা ১২টার দিকে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর সাংবাদিকদের বলেন, এনআইডি সার্ভারে লগইন করার জন্য ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দেওয়ার পর একটি ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ডের (ওটিপি) প্রয়োজন হয়। সেই ওটিপি না আসার কারণে ইসির কর্মকর্তারা সার্ভারে প্রবেশ করতে পারছেন না। তবে ছবি তোলা, বায়োমেট্রিক গ্রহণের কার্যক্রম চলমান আছে। ওটিপি সমস্যার সমাধান হলে সব কার্যক্রম আবার শুরু হবে।
এ এস এম হুমায়ুন কবীর আরও বলেন, ‘আমাদের সার্ভার বন্ধ নয়। আমরা এনআইডি কার্যক্রম পরিচালনা করার একটি ওটিপি সার্ভিস কিনেছি। সেটি যাদের কাছে থেকে নিয়েছি, তাদের সিস্টেমে একটা সমস্যা হয়েছে। তারা সেটি মেরামত করছে। মেরামত হয়ে গেলে চালু হয়ে যাবে।’
বর্তমানে দেশের প্রায় সাড়ে ১২ কোটি নাগরিকের ব্যক্তিগত বিভিন্ন তথ্য রয়েছে এনআইডি সার্ভারে। ১৮৬টি সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ইসি থেকে এনআইডি সেবা নিয়ে থাকে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আর্কটিকের জীবাশ্মে ডাইনোসর যুগের সমুদ্রবাসী সরীসৃপের সন্ধান
পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বিধ্বংসী বিলুপ্তির কারণে ডাইনোসররা বহু কোটি বছর আগে হারিয়ে যায়। এরপর কীভাবে প্রাণের প্রত্যাবর্তন ঘটেছিল, তা বুঝতে বিজ্ঞানীরা নতুন কিছু আবিষ্কার করেছেন। গবেষকেরা আর্কটিকের স্পিটসবার্গেন দ্বীপ থেকে ৩০ হাজারের বেশি জীবাশ্মের সন্ধান পেয়েছেন। এই জীবাশ্ম পুরোনো পৃথিবীর অনেক তথ্য সামনে তুলে ধরছে।
প্রায় ২৪ কোটি ৯০ লাখ বছর আগে এই প্রাণীরা বাস করত। আর্কটিকে পাওয়া জীবাশ্মের মধ্যে রয়েছে প্রাচীন সামুদ্রিক সরীসৃপ, উভচর প্রাণী, অস্থিবিশিষ্ট মাছ ও হাঙরের দাঁত, হাড় ও অন্যান্য দেহাবশেষ। এই আবিষ্কার থেকে জানা গেছে, ডাইনোসর যুগের প্রারম্ভে ভয়ংকর বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও গণবিলুপ্তির পরপরই স্থলচর প্রাণীরা দ্রুত সমুদ্রের জীবনযাত্রার সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে শুরু করে।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বিভিন্ন জীবাশ্ম প্রথম আবিষ্কৃত হয় ২০১৫ সালে। সেগুলো খনন, পরিষ্কার, বিশ্লেষণ, শনাক্তকরণ ও বিস্তারিত পরীক্ষার জন্য বিজ্ঞানীদের প্রায় এক দশক সময় লেগে যায়। নরওয়ের অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক ইতিহাস জাদুঘর ও স্টকহোমের সুইডিশ মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্টরি থেকে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান বিশেষজ্ঞদের একটি দল সম্প্রতি এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছে। গবেষণাপত্রটি সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
স্পিটসবার্গেন দ্বীপটি স্ভালবার্ড দ্বীপপুঞ্জের অংশ। এটি ডাইনোসর যুগের প্রথম দিকের জীবাশ্মের জন্য সুপরিচিত। এই দেহাবশেষ এমন শিলাস্তরে পাওয়া গেছে যা একসময় বিশাল প্যানথালাসা মহাসাগরের কাছাকাছি কাদাভরা সমুদ্রতল ছিল। বিভিন্ন জীবাশ্ম স্থলচর প্রাণীর সমুদ্রের জীবন শুরু করার প্রথম পর্যায়কে তুলে ধরছে।
সে সময় বিবর্তনীয় পরিবর্তন ঘটেছিল পার্মিয়ান-ট্রায়াসিক বিলুপ্তি নামক ঘটনার পর। সে ঘটনা প্রায় ২৫ কোটি ২০ লাখ বছর আগে ঘটেছিল। ‘দ্য গ্রেট ডায়িং’ বা ‘সবচেয়ে বড় মৃত্যু’ নামে পরিচিত সেই ঘটনায় প্যানজিয়া মহাদেশ ভাঙার সময় বিশাল আগ্নেয়গিরির উদ্গিরণ ঘটে। এর ফলে মহাসাগরে অক্সিজেন হ্রাস, অম্লতা বৃদ্ধি ও চরম উষ্ণতার সৃষ্টি হয়। এর ফলে ৯০ শতাংশের বেশি সামুদ্রিক প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যায় তখন।
দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, সেই ঘটনার পর সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে প্রায় আশি লাখ বছর সময় লেগেছিল। এরপর উভচর ও সরীসৃপ প্রাণীরা ধীরে ধীরে গভীর সমুদ্রে চলে যায়। স্পিটসবার্গেনে আবিষ্কৃত জীবাশ্ম সেই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করছে। সেখানে দেখা যায়, পাহাড়ের ঢালে একটি দৃশ্যমান বোনবেড বা জীবাশ্মসমৃদ্ধ স্তর, যা অল্প সময়ের মধ্যেই তৈরি হয়েছিল। স্তরভিত্তিক গবেষণা থেকে দেখা যায়, এর বয়স প্রায় ২৪ কোটি ৯০ লাখ বছর। গণবিলুপ্তির মাত্র ৩০ লাখ বছর পরের সময়ে তৈরি হয় সেই বোনবেড।
গবেষণার অংশ হিসেবে, প্রায় ৩৬ বর্গমিটার এলাকা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ৮০০ কিলোগ্রামের বেশি উপাদান উদ্ধার হয়। এর মধ্যে ছোট মাছের আঁশ, হাঙরের দাঁত, বড় সামুদ্রিক সরীসৃপের হাড় ও ফসিল হয়ে যাওয়া মলের সন্ধান মিলেছে। এই সব আবিষ্কার ইঙ্গিত দেয়, সেখানে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র নিয়ে আগে যা ভাবা হয়েছিল, তার চেয়ে অনেক দ্রুত পুনর্গঠিত হয় সবকিছু। প্রাথমিক সময়ের মধ্যেই জটিল খাদ্যশৃঙ্খল গঠিত হয়। দ্রুতই বিভিন্ন শিকারি সরীসৃপ ও উভচর প্রাণী সাগরে সক্রিয় হয়।
সূত্র: এনডিটিভি