বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো বন্ধে পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে সরকার। এগুলোর ওয়েবসাইট, ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক, টেলিগ্রাম, এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্ট ‘ব্লক’ করতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) চিঠি দেওয়া হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার বিটিআরসিকে এ-সংক্রান্ত চিঠি দেয় জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি। বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি-বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।

আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এসব সংগঠনের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে গত সোমবার প্রজ্ঞাপন জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জারি করা প্রজ্ঞাপনে আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গ-সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের যেকোনো ধরনের প্রকাশনা, গণমাধ্যম, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেকোনো ধরনের প্রচারণা, মিছিল, সভা-সমাবেশ, সম্মেলন আয়োজনসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ অনুযায়ী এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

একই দিনে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি ও বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ, তার অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোতে থাকা অ্যাকাউন্টের লিংক ‘ব্লক’ করার জন্য সরকারের সিদ্ধান্ত ও আইনের বিষয় উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট প্ল্যাটফর্মগুলোকে দ্রুতই চিঠি দেওয়া হবে।

সাইবার পরিসরে আওয়ামী লীগসহ এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়ে গত রোববার ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব প্রথম আলোকে বলেছিলেন, প্রজ্ঞাপন জারির পর এই রেফারেন্সে বিটিআরসির মাধ্যমে তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর অ্যাকাউন্ট ব্লক করার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোকে চিঠি দেওয়া হবে।

তবে সরকারের হাতে সবকিছু বন্ধ করার ক্ষমতা নেই জানিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব প্রথম আলোকে বলেছিলেন, সরকার শুধু ওয়েবসাইট ব্লক করতে পারে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কনটেন্ট (আধেয়) সরানো, পেজ বা অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, তথ্য চেয়ে বিভিন্ন দেশের সরকারগুলো ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা ও আরেক টেক জায়ান্ট গুগলের কাছে নিয়মিত অনুরোধ করে থাকে। এসব প্ল্যাটফর্ম বলে থাকে, তারা নিজস্ব নির্দেশিকা ও নীতি লঙ্ঘন করে কি না, তা পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।

মেটার স্বচ্ছতা প্রতিবেদনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, প্ল্যাটফর্মটি ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বিটিআরসির অনুরোধে বাংলাদেশে ২ হাজার ৯৪০টি আইটেমে প্রবেশাধিকার সীমিত করেছে।
অন্যদিকে গুগলের স্বচ্ছতা প্রতিবেদনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে কনটেন্ট সরানোর জন্য ৪৯০টি অনুরোধ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫ হাজার ৮২৭টি আইটেম ছিল। সবচেয়ে বেশি ৩৩৭টি অনুরোধ ছিল প্রথম ৬ মাসে। প্রথম ৬ মাসে গুগল ৬৮ দশমিক ২ শতাংশ ক্ষেত্রে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। পরের ৬ মাসে ৪৫ দশমিক ৮ শতাংশ ক্ষেত্রে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প ল য টফর ম অ য ক উন ট ব ট আরস ব যবস থ অন র ধ প রথম সহয গ সরক র আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমাদের শাহবাগে গিয়ে কথা বলতে হবে কেন’, প্রশ্ন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদের

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে গত কয়েক দিন শাহবাগে যে আন্দোলন হয়েছে, সেই আন্দোলনে বিএনপির অংশ না নেওয়া প্রসঙ্গে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘আমরা শাহবাগে কেন যাব? আমাদের দাবি তো আমরা মাননীয় প্রধান উপদেষ্টাকে দীর্ঘ কয়েক মাস আগেই লিখিত ও মৌখিকভাবে দিয়েছি। আমরা বিভিন্ন সেমিনার–সিম্পোজিয়ামে বলেছি, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বলেছি। আমাদের শাহবাগে গিয়ে কথা বলতে হবে কেন?’

আজ রোববার সকালে রাজধানীর মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আলোচনা সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ এ কথা বলেন। তবে বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান তিনি।

গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিচারের আওতায় আনার জন্য কয়েক মাস আগে বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে লিখিতভাবে প্রস্তাব দিয়েছিল, এ কথা জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘তখন মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা যদি বিষয়টি আমলে নিতেন, তাহলে হয়তো গতকাল বা তার আগের দিন এই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে সরকারকে পড়তে হতো না।’ তিনি বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নজির আছে, যেসব ফ্যাসিবাদী দল গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দায়ী হয়, দল হিসেবে তাদের বিচারিক প্রক্রিয়ায় এনে সেই দলকে নিষিদ্ধ করা হয়।

দেরিতে হলেও অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আইনি, সাংবিধানিক ও বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করার ঘোষণা দেওয়ার পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘তবে আমরা বলব যে অন্তর্বর্তী সরকার যেন বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের পরামর্শ এবং দেশ ও জনগণের পক্ষে আমাদের দলের বিভিন্ন রকমের বক্তব্যগুলো যথাসময়ে আমলে নেন। সরকার ও দেশ পরিচালনায় আমরা সব সময় অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করব। যেহেতু সারা বাংলাদেশে মানুষ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ভোটাধিকার প্রয়োগ করার জন্য উদ্‌গ্রীব হয়ে আছে, এ বিষয়ে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা যেন খুব শিগগির একটা রোডম্যাপ দেন। না হলে হয়তো এ রকম বিব্রতকর পরিস্থিতি আবারও সৃষ্টি হতে পারে।’

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়ে বিএনপির অবস্থান জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন রকমের রাজনৈতিক কার্যকলাপ যাতে বন্ধ রাখা যায়, নিষিদ্ধ করা যায়, সে জন্য আরও একটি পদক্ষেপ সরকার নিতে যাচ্ছে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে। আমার মনে হয়, সে জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটু সংশোধনী আনতে হবে। এরপর বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের (আওয়ামী লীগ) রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড যে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো, সেটাকে আমরা স্বাগত জানাই।’

আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল হিসেবে এখন পৃথিবী বা দেশের মানুষ স্বীকৃতি দেয় কি না, সেই প্রশ্নও তোলেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একটি ফ্যাসিবাদী শক্তি। তারা একটি মাফিয়া শক্তিতে পরিণত হয়েছিল। বাংলাদেশের মানুষের ওপর দীর্ঘদিন ফ্যাসিবাদ ও মাফিয়াতন্ত্রের চর্চা করেছে আওয়ামী লীগ। অত্যাচার-নিপীড়ন ও গণহত্যার মধ্য দিয়ে তারা তাদের পরিসমাপ্তি ও নিজেদের রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটিয়েছে। এরপর তো আওয়ামী লীগ ‘ইজ নো মোর আ পলিটিক্যাল পার্টি’। এটা একটা মাফিয়া পার্টি ও ফ্যাসিবাদী দল। সুতরাং রাজনৈতিক দলের তকমা দিতে চাই না। আওয়ামী লীগের ডিএনএতেই গণতন্ত্র নেই।

এর আগে মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে সংবিধান সংস্কারে নাগরিক জোটের সাত প্রস্তাব নিয়ে ‘নাগরিক কোয়ালিশন’ আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানেও বক্তব্য দেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ। সেখানে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধন করে কোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দেওয়ার বিধান যুক্ত করাকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের বিচারের পথ খুলেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কালকে একটা ঐতিহাসিক ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেছে। আমি অন্তর্বর্তী সরকারের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই।’

আওয়ামী লীগের বিচারের জন্য সংশোধিত আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করতে আইন উপদেষ্টার প্রতি অনুরোধ জানান বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, ‘যেন ন্যাশনালি ও ইন্টারন্যাশনালি বলতে না পারে যে সুষ্ঠভাবে বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি। সেই বদনাম যেন আমাদের না হয়।’

সভার শুরুতে বক্তব্য দেন আলোকচিত্রী ও নাগরিক কোয়ালিশনের সহ–আহ্বায়ক শহিদুল আলম। এ সময় নাগরিক জোটের সাত প্রস্তাব তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ মোহাম্মদ শাহান। আর প্রস্তাবগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, তা তুলে ধরেন লেখক জিয়া হাসান।

আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন, জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, দলটির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুল ইসলাম মাসুদ, এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা, গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফেসবুক-ইউটিউবসহ আ. লীগের প্ল্যাটফর্ম বন্ধে বিটিআরসিকে চিঠি
  • সাম্যের মৃত্যুতে মর্মাহত ঢাবি প্রশাসন  
  • ঢাবিতে বৈদ্যুতিক শাটল গাড়ি চালু
  • ফাজিল পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাসের হার ৯৩ শতাংশ
  • হঠাৎ ছুটিতে পাকিস্তানের হাইকমিশনার
  • ঢাবি উপাচার্যের সঙ্গে সিআইসিজি প্রধানের সাক্ষাৎ
  • চীনের নানজিং ইউনিভার্সিটির সঙ্গে ঢাবির সমঝোতা
  • কানাইঘাট উপজেলা বিএনপি সভাপতিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ
  • ‘আমাদের শাহবাগে গিয়ে কথা বলতে হবে কেন’, প্রশ্ন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদের