ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩৬ জন, ভর্তি ২
Published: 14th, May 2025 GMT
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) অন্তত ৩৬ জন শিক্ষার্থী ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁদের অধিকাংশই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি আছেন দুজন। আজ বুধবার ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের নিবন্ধন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এর আগে তিন দফা দাবিতে লংমার্চ করে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে রওনা হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা। দুপুর সাড়ে ১২টার পর কাকরাইল মসজিদের সামনে লংমার্চে বাধা দেয় পুলিশ।
এ সময় আন্দোলনকারীরা পুলিশের দেওয়া ব্যারিকেড ভেঙে যমুনার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তখন পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। একপর্যায়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করে।
ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের কাউন্টার সূত্র জানায়, ওই ঘটনার পর চিকিৎসার জন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৩৮ জন শিক্ষার্থী টোকেন সংগ্রহ করেন। তাঁদের মধ্যে দুজন এখনো চিকিৎসাধীন।
আহত শিক্ষার্থীরা হলেন রফিক, শফিক, ওমর ফারুক, আরিফ আসলাম, রেদোয়ান, আসিফ, রহমান, আকিব, আবদুর রহমান, জীবন, হানিফ, জিসানুল, মাহতাব লিমন, মেহেদী, মুজাহিদ, অর্থিব, আপেল, রায়হান, ফারুক হোসেন, আবু বকর, নিউটন ইসলাম, মাহিদ, রাসেল, গৌরব, আবদুল মান্নান, জিসান, নাহিদ, জুয়েল, মোহন, সোহানুর রহমান, মাসুমা, সংগ্রাম, বাইতুল, রাজু, সুমন, রাজিব, আকাশ ও সুবর্ণ আস সাইফ।
আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী মাহতাব লিমন এবং পরিসংখ্যান বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী সুবর্ণ আস সাইফ হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো.
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করেই অনুমোদন করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করার দাবিতে কিছুদিন ধরে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা।
ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ দুপুর পৌনে ১২টার দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাত্তরের গণহত্যা ভাস্কর্য চত্বরের সামনে থেকে লংমার্চ শুরু করেন শিক্ষাক–শিক্ষার্থীরা। এতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল, ছাত্র অধিকার পরিষদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্রশিবির, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারাও অংশ নেন।
আরও পড়ুনপুলিশের লাঠিপেটা–কাঁদানে গ্যাস, যমুনা অভিমুখে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারীদের লংমার্চ ছত্রভঙ্গ৬ ঘণ্টা আগেউৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মূল্যস্ফীতিতে খাদ্যবহির্ভূত সেবা ও আমদানি পণ্যের প্রভাব বেড়েছে
দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি এখনো ৯ শতাংশের ওপরে। তবে মূল্যস্ফীতি আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে। এর কারণ, গত কয়েক মাসে শাকসবজি ও কিছু মসলাজাতীয় পণ্যের দাম কম ছিল। তবে আমদানিনির্ভর খাদ্যবহির্ভূত পণ্য ও সেবা খাতে আগের তুলনায় ব্যয় বেড়েছে। এ কারণে কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে মূল্যস্ফীতি কমেনি। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতিতে সেবা ও আমদানি খাতের প্রভাব বেড়েছে।
মূল্যস্ফীতির কার্যকারণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের করা সর্বশেষ এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে দেশে মূল্যস্ফীতি ও মজুরির পরিবর্তনের প্রধান কারণগুলো বিশ্লেষণ করা হয়েছে। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি কীভাবে ও কেন বাড়ছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে চলতি অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ) সময়ের তথ্য পর্যালোচনা করা হয়েছে। এতে বলা হয়, গত জানুয়ারি থেকে মার্চে দেশে যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে, তার অর্ধেকের বেশি হয়েছে প্রধান কিছু পণ্যের দাম বাড়ার কারণে। যদিও এ সময় সার্বিকভাবে খাদ্যপণ্যের দাম কিছুটা সহনীয় ছিল, তবে ভুগিয়েছে জ্বালানির দাম।
গত বছরের ডিসেম্বরের সঙ্গে চলতি বছরের মার্চ মাসের দামের পার্থক্য পর্যালোচনা করে প্রতিবেদনে বলা হয়, এ সময়ে দেশে শাকসবজি, মাছ, কাঁচা মাংস ও ডিমের মতো পচনশীল পণ্যের দামে তেমন পরিবর্তন হয়নি। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি অপরিবর্তিত বা স্থিতিশীল ছিল। অন্যদিকে ডিসেম্বরের তুলনায় মার্চে তেল, আটা, ডাল, চিনি প্রভৃতি অপচনশীল পণ্যের সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছিল। এ ছাড়া আমদানিনির্ভর বেশ কিছু খাদ্যপণ্যের দামও এ সময় কম ছিল।
তবে এ সময়ে মূল্যস্ফীতিতে আমদানিনির্ভর খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের অবদান বেড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গ্যাস, ডিজেলসহ বিভিন্ন জ্বালানি পণ্য; মোবাইল, ল্যাপটপের মতো ইলেকট্রনিক পণ্য, বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য প্রভৃতি। এর সঙ্গে মূল্যস্ফীতিতে বেড়েছে সেবা খাতের অবদানও। বাসাভাড়া, শিক্ষা, চিকিৎসা ব্যয় প্রভৃতি হলো সেবা খাতের খরচ। অর্থাৎ এ ধরনের ব্যয় ডিসেম্বরের তুলনায় মার্চে বেড়েছে। অর্থনীতিবিদেরা বলেন, সেবা খাতের খরচ বাড়লে তা দীর্ঘ মেয়াদে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়িয়ে দেয়। কারণ, সেবা খাতে দাম একবার বাড়লে সহজে আর কমে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি অর্থবছরের শুরুতে, অর্থাৎ গত বছরের জুলাই মাসের দিকে দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে গত এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থায় পৌঁছায়। এর পেছনে মূল কারণ ছিল খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি। এরপর গত জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে মূল্যস্ফীতি কমে সাড়ে ৯ শতাংশ হয়েছে। এ সময় দেশে শীত মৌসুম থাকায় শাকসবজির সরবরাহ ভালো ছিল। এ ছাড়া রমজানের কারণে ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, মসলাসহ বেশ কয়েকটি পণ্য আমদানিতে সরকার শুল্ক ছাড় দেয়। মূলত এসব কারণে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। যদিও গত রমজানের পরে ভোজ্যতেল, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির দাম বেড়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতির পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছে তিন ধরনের পণ্য। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে মাছ, মাংস ও ডিমের মতো প্রোটিনজাত খাবার। এরপর চাল, আটার মতো খাদ্যশস্য এবং তৃতীয়ত শাকসবজির দাম। গত মার্চে শাকসবজির দাম কিছুটা কম ছিল; তবে বেশি ছিল মাছ-মাংসের দাম। খাদ্য মূল্যস্ফীতির সূচকেও এর প্রভাব দেখা গেছে। ২০২৪ সালে দেশে ভোজ্যতেলের দাম মোটামুটি স্থিতিশীল ছিল। তবে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে ভোজ্যতেলের দাম আবার বাড়তে থাকায় তা মূল্যস্ফীতি বাড়িয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতির প্রধান চলক ছিল জ্বালানির দাম। তবে গত বছরের জুলাই মাস থেকে এটি কমতে শুরু করেছে। গত বছরের মার্চে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতিতে জ্বালানির অবদান ছিল ২৬ শতাংশ, যা চলতি বছরের মার্চে কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১ শতাংশে।
সামনের দিনগুলোতে দেশে মূল্যস্ফীতি কেমন হবে, সেটি নিয়ে গত এপ্রিলে সর্বশেষ পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। তাদের পূর্বাভাসও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। এডিবি তাদের এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুকে বলেছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের গড় মূল্যস্ফীতি থাকবে প্রায় ১০ শতাংশের কাছাকাছি। তবে বছরের শেষ নাগাদ মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমতে পারে। আর আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি আরও কমবে। অনুকূল আবহাওয়া, বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমা ও কঠোর আর্থিক নীতিকে এর পেছনে কারণ হিসেবে বলা হয়েছে। অন্যদিকে আইএমএফ এপ্রিলে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকে জানায়, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের গড় মূল্যস্ফীতি প্রায় ১০ শতাংশ থাকতে পারে। যদিও পরবর্তী সময়ে সেটি ৫ শতাংশে নেমে আসতে পারে।
এদিকে উচ্চ মূল্যস্ফীতি থাকলেও সাধারণ মানুষের মজুরি সে তুলনায় বাড়েনি। ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে ধারাবাহিকভাবে দেশে মজুরি বৃদ্ধির তুলনায় মূল্যস্ফীতি বেশি থাকছে। ফলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ও প্রকৃত আয় কমেছে। এতে পরিবারের খরচ চালাতে চাপে থাকছেন মানুষেরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি কিছুটা কমেছে। তবে আপাত এ স্বস্তির আড়ালে দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি রয়ে গেছে। বিশেষ করে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি এখনো চাপে রেখেছে ভোক্তাদের।