প্রায় ছয় ঘণ্টা পর রাজধানীর শাহবাগ মোড় থেকে আন্দোলনরত নার্সিং শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ। এরপর রাত আটটার দিকে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ওই মোড় দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়েছে। পুলিশ ব্যারিকেড সরিয়ে নেওয়ার পর নার্সিং শিক্ষার্থীরা সড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে সরে গিয়ে জাতীয় জাদুঘরের সামনের রাস্তায় অবস্থান নেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য তাঁদের ঘিরে রাখেন।

ডিপ্লোমা ইন নার্সিং এবং ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি কোর্সকে ডিগ্রি পাস কোর্সের সমমানের দাবিতে আজ বুধবার বেলা দুইটা থেকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন নার্সিং শিক্ষার্থীরা। ‘ডিপ্লোমা ইন নার্সিং ও মিডওয়াইফারি ডিগ্রি বাস্তবায়ন কমিটি’র ব্যানারে সারা দেশের নার্সিং শিক্ষার্থীরা এ আন্দোলনে অংশ নেন।

দুপুর থেকে প্রায় ছয় ঘণ্টা তাঁদের শাহবাগ মোড় অবরোধ, একই সঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাকরাইল মোড় অবরোধের কারণে এই দুই জায়গা দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে শাহবাগ, বাংলামোটর, ফার্মগেট, কাকরাইলসহ আশপাশের এলাকায় ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। এতে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসীরা। বহু মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় কাটাতে হয়।

সন্ধ্যা ছয়টায় শাহবাগ এলাকায় কথা হয় যাত্রাবাড়ী–মিরপুর পথে চলাচলকারী বিকল্প পরিবহনের চালকের সহকারী কামরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘চার ঘণ্টা ধরে আটকে আছি। যাত্রী সব নেমে গেছে। আজকে দিনটাই লস।’

বেলা একটায় গুলিস্তান থেকে মিরপুরের উদ্দেশে যাত্রা করেন উবারের গাড়িচালক কাউসার। সন্ধ্যা নাগাদ তিনি শাহবাগ এলাকা পার হতে পারেননি। কাউসার প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুপুর থেকে আটকা। খাওয়াদাওয়া করতে পারিনি। যে পথেই যাই, সে পথই বন্ধ।’

আরও পড়ুননার্সিং শিক্ষার্থীদের শাহবাগ অবরোধ, আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজট৩ ঘণ্টা আগেশাহবাগ অবরোধের কারণ নিয়ে যা বললেন শিক্ষার্থীরা

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বুধবার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমবেত হন তাঁরা। তখন বেলা একটার মধ্যে দাবি মানতে বিএনএমসিকে (বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল) সময়সীমা বেঁধে দেন তাঁরা। দাবি না মানায় পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বেলা দুইটার দিকে শাহবাগ অবরোধ করেন।

বিষয়টি নিয়ে তিন দফায় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে জানিয়ে আবু বকর সিদ্দিক নামের একজন নার্সিং শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলেন, ‘তারা আমাদের সঙ্গে শুধু প্রহসন করে যাচ্ছে। আজকে না কালকে, কালকে না পরশু। এরকমভাবে তো চলতে পারে না।’

রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নিয়ে আছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে গুরুত্বপূর্ণ ওই মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র শ হব গ অবর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপির সার্চ কমিটিতে আ.লীগের সুবিধাভোগী

সাতক্ষীরার শ্যামনগরে সদস্য নবায়ন কার্যক্রমের শুরুতেই ধাক্কা খেয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। সম্প্রতি উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে গঠিত সার্চ কমিটিতে বিতর্কিত নেতাদের জায়গা করে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন তৃণমূলের নেতারা। তাদের অভিযোগ, এসব কমিটিতে সদস্য নবায়নের দায়িত্ব পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে গণঅভ্যুত্থানবিরোধী লোকও রয়েছেন। রয়েছেন আওয়ামী লীগের সময়ে নানাভাবে সুবিধা পাওয়া নেতারা। এমনকি অনেকের বিরুদ্ধে ৫ আগস্টের পর সম্পত্তি দখল বিষয়েও তথ্য রয়েছে। 

বিএনপির কয়েক নেতাকর্মীর ভাষ্য, বিতর্কিত নেতাদের কারণে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মী নিয়ে কমিটি গঠন প্রক্রিয়া বাধার মুখে পড়েছে। দ্রুতই এ বিষয়ে জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা। 

বিএনপি সূত্র জানায়, গত ৬ ফেব্রুয়ারি শ্যামনগর উপজেলা বিএনপি ও শ্যামনগর পৌর বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। তখন উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব ছিলেন যথাক্রমে সোলাইমান কবির ও গোলাম আলম আলমগীর। পৌর কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব ছিলেন যথাক্রমে শেখ লিয়াকত আলী বাবু ও শামসুদ্দোহা টুটুল।

নতুন করে কমিটি গঠনের জন্য তাসকিন আহমেদ চিশতীকে প্রধান করে ২৩ এপ্রিল সংসদীয় আসনের সাংগঠনিক (উপজেলা) কমিটি গঠিত হয়। তাঁর নেতৃত্বে উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি গঠনের জন্য ৪ মে সার্চ কমিটি গঠিত হয়।

উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন সার্চ কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন আবুল কাশেম। তাঁর বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সংসদ সদস্যের পক্ষে লাঠি হাতে ভোটকেন্দ্র পাহারা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করে ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মিয়ারাজ হোসেন বলেন, আবুল কাশেম সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও ছাত্রলীগ নেতা নাজমুল হুদা রিপনের এজেন্ট ছিলেন। 

এ বিষয়ে আবুল কাশেমের দাবি, ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জাবের মোড়লের নির্দেশে কিছু সময়ের জন্য কেন্দ্র পাহারায় বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। এমন বক্তব্য বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে জানা যায়, সপ্তাহ দুয়েক আগে জাবের মোড়ল মারা গেছেন। 

একই ইউনিয়নের সার্চ কমিটির সদস্য নুর ইসলামের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে। দলীয় সূত্র জানায়, ৫ আগস্টের পর তিনি কৃষ্ণা রানী মণ্ডল নামে এক নারীর ওপর নানাভাবে অত্যাচার চালিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া প্রদীপ মণ্ডল নামে এক ব্যক্তির জমি দখল করে তিনি পাকা ভবন তৈরি করেছেন। এমন বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে নুর ইসলামের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে বুধবার তিনি সমকালের কাছে দাবি করেন, ইতোমধ্যে অনেক বিষয় মীমাংসা হয়ে গেছে। প্রদীপ মণ্ডলের জমির বিষয়ও কিছুদিনের মধ্যে মীমাংসা করে নেবেন। 

শ্যামনগর পৌরসভার বাদঘাটা ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আমিনুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনেছেন একই ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নুর ইসলাম। তিনি বলেন, অভ্যুত্থানের পর ১৭ আগস্ট আওয়ামী লীগের উপজেলা চেয়ারম্যান সাঈদ-উজ জামানকে পাহারা দিয়ে উপজেলা পরিষদে নিয়ে যান আমিনুর রহমান। এমনকি চেয়ারম্যানকে নির্দিষ্ট চেয়ারে বসিয়ে ছবি উঠিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেন। একই সঙ্গে তিনি (আমিনুর) আস্থা না হারাতে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকের প্রতিও আহ্বান জানান। 

বিএনপির বর্ষীয়ান নেতা নুর ইসলামের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের শাসনামলে আমিনুরের বিরুদ্ধে একটি মামলাও হয়নি। তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের এমপি জগলুল হায়দার ও তাঁর ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জহুরুল হায়দারের ছায়াসঙ্গী। তাঁকেও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সার্চ কমিটিতে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় দুঃসময়ে বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতাকর্মী ক্ষুব্ধ।

এ বিষয়ে কাউন্সিলর আমিনুর রহমানের দাবি, ‘আমি চেয়ারম্যানকে নিয়ে যাইনি। সেখানে একটা সালিশ চলছিল বলে সাবেক সেনাসদস্য রেজাউল ভাইয়ের সঙ্গে গিয়েছিলাম।’ তিনি ফেসবুকে নিজে থেকে কোনো ছবি দেননি উল্লেখ করে বলেন, অন্য কেউ সেই ছবি তুলে ফেসবুকে দিয়েছিল। 

সবচেয়ে বড় অভিযোগটি শ্যামনগর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে সদস্য নবায়ন কার্যক্রমের প্রথম ফরমটিই পূরণ করেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের বিরোধিতার অভিযোগ করেছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক সোলায়মান কবির। তিনি বলেন, সরকার পতনের প্রাক্কালে ৩১ জুলাই উপজেলা পরিষদের হলরুমে ‘সন্ত্রাসবাদ ও নাশকতা প্রতিরোধ কমিটি’র সভা হয়। এতে উপস্থিত হয়ে আব্দুল ওয়াহেদ ঘোষণা দেন, শ্যামনগরে আন্দোলনের প্রভাব পড়তে দেওয়া হবে না। সদস্য নবায়ন ও সার্চ কমিটিতে তাঁকে (ওয়াহেদ) জায়গা দেওয়ায় নেতাকর্মী হতাশ। এমন ধারা চলতে থাকলে বিএনপির রাজনীতির প্রতি সাধারণ মানুষের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

আব্দুল ওয়াহেদ অবশ্য সমকালের কাছে দাবি করেন, ৩১ জুলাইয়ের সন্ত্রাসবাদ ও নাশকতা প্রতিরোধ কমিটির সভায় উপস্থিত ছিলেন না। বরং অনেক আগে একটি সভায় উপস্থিত হয়ে বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অত্যাচার-নির্যাতনের প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। ওই সভায় অংশগ্রহণের ছবি ও রেজুলেশনে থাকা সইয়ের উল্লেখ করলে আব্দুল ওয়াহেদ বিষয়টি এড়িয়ে যান। 

এসব অভিযোগ বিষয়ে বক্তব্য জানতে দলের শ্যামনগর উপজেলার সাংগঠনিক টিমের প্রধান তাসকিন আহমেদ চিশতীর মোবাইল ফোনে দফায় দফায় কল দিলেও ধরেননি। সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবু জাহিদ ডাবলু বলেন, যাদের বিরুদ্ধে গুরুতর ও বেশি অভিযোগ ছিল, ইতোমধ্যে তাদের অনেককে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছেন। এগুলো যাচাই-বাছাই শেষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ