দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য নিহত হওয়ার ঘটনায় রাত আটটার পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধসহ সাতটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বুধবার সন্ধ্যায় নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য জানিয়েছেন।

বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে এক সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান আসিফ মাহমুদ।

বৈঠকে নেওয়া অন্য সিদ্ধান্তগুলো হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেট স্থায়ীভাবে বন্ধ করা; উদ্যানে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ, মাদক ব্যবসা বন্ধ ও পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা, নিয়মিত মনিটরিং ও অভিযানের জন্য সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিয়ে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে একটি কমিটি গঠন; উদ্যানে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা ও ক্লোজড সার্কিট (সিসিটিভি) ক্যামেরা স্থাপন এবং সেগুলোর নিয়মিত মনিটরিং করা; উদ্যানে একটি ডেডিকেটেড পুলিশ বক্স স্থাপন এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও রমনা পার্কের মতো সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা চালু করা।

অবিলম্বে এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে জানিয়ে আসিফ মাহমুদ বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে এক আতঙ্কের স্থান থেকে ধীরে ধীরে একটি নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক স্থানে রূপান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় সরকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে সাম্য হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনাটি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা হবে।

আরও পড়ুনশাহরিয়ার হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিলেন প্রত্যক্ষদর্শী বন্ধু৩ ঘণ্টা আগে

মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চের পাশে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার। তিনি স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরে নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলে ছাত্রদলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। তারা অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে পদক্ষেপ নিতে অন্তর্বর্তী সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

বিনয়ী, প্রতিবাদী সাম্যের হত্যা মানতে পারছে না কেউ

দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারানো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য (২৫) ছিলেন সদা বিনয়ী। সিরাজগঞ্জের বেলকুচির সড়াতৈল মধ্যপাড়া গ্রামের সন্তান সাম্যর পরিবারেরই এলাকায় ঝামেলায় জড়ানোর রেকর্ড নেই। এমন ভদ্র ছেলে হত্যার শিকার হতে পারেন– তা মানতেই পারছেন না গ্রামবাসী। 

বন্ধু-পরিচিতজনের কথা– নম্র হলেও যে কোনো অন্যায়ের প্রতিবাদে সাম্য থাকতেন এগিয়ে। তাঁর এই গুণের কথা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াও। 

গতকাল বুধবার এক ফেসবুক পোস্টে আসিফ মাহমুদ লেখেন, ‘২০১৯ সালের দিকে ক্যাম্পাসে গেস্টরুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে কিংবা শিক্ষার্থীদের যে কোনো যৌক্তিক দাবির আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে যেসব মুখ সবসময় দেখা যেত, সাম্য তাদের একজন। মশিউর আমিন শুভ আর Shahriar Alam Shämmo– এই দু’জন সবসময় একসাথে আসতো। প্রথম বর্ষ থেকেই সাম্য ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী এবং অসম্ভব ভদ্র একজন ছেলে। সেই ছোট ভাই সাম্য আজ আর আমাদের মাঝে নেই– এটা মেনে নেওয়া সত্যিই কষ্টকর।’

ঢাবির শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র সাম্য ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক। গত মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতর দিয়ে মোটরসাইকেলে হলে ফেরার পথে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে আহত হন সাম্য। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় সাম্যের বড় ভাই শহিদুল আলম সৈকতের মামলায় গতকাল তিন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এদিকে গণমাধ্যমে সাম্যর মৃত্যুর খবর জেনে সকাল থেকেই তাঁর বেলকুচি উপজেলার সড়াতৈল গ্রামের বাড়িতে ভিড় করেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা। বুধবার দুপুরে সরেজমিন সাম্যর গ্রামের বাড়িতে দেখা যায়, আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীর ভিড়। তাদের সবারই আফসোস– এমন একটি ছেলে অকালে ঝরে গেল!

সাম্যর ছোট চাচা কায়সারুল আলম কায়েস জানান, তাঁর বড় ভাই ফারহাদ হোসেনের চার ছেলের মধ্যে সবার ছোট ছিল সাম্য। ভাতিজারা গ্রামে বড় হলেও এখন সবাই থাকে ঢাকায়। ভাই ফরহাদ বিদেশ থেকে ফিরে ব্যবসা সূত্রে ঢাকায় থাকেন। ২০১৫ সালে সাম্যর মা মারা যান।

তিনি বলেন, আমাদের পরিবারের প্রায় সবাই উচ্চশিক্ষিত। আমাদের বংশে উচ্ছৃঙ্খল কোনো সদস্য নেই। আমরা কখনও এলাকায় মারামারি দূরে থাক, কোনো ঝামেলাতেই জড়াইনি। তার পরও সাম্যর মতো নম্র-ভদ্র একটা ছেলে যে হত্যার শিকার হতে পারে, তা মানাই যায় না। আমরা এ হত্যার উপযুক্ত বিচার চাই। 

ওই গ্রামের মামুন বিশ্বাস বলেন, সাম্যদের পরিবারের সবাই উচ্চশিক্ষিত, ঢাকায় থাকেন। ঈদ ও বিশেষ অনুষ্ঠান উপলক্ষে তারা গ্রামে আসেন। সাম্যকে মেধাবী হিসেবে দেখেছি। এলাকার কারও সঙ্গে কোনো ঝামেলার খবর কখনও শুনিনি। এমন মেধাবী একটা ছেলে এভাবে ঝরে যাবে, আমরা কখনও ভাবিনি।

সাম্য হত্যায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে গতকাল বুধবার সিরাজগঞ্জ শহরে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। এতে নেতৃত্ব দেন জেলা ছাত্রদল সভাপতি জুনায়েদ হোসেন সবুজ, সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল কায়েস প্রমুখ।

এদিকে গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রথম জানাজা শেষে সন্ধ্যায় সাম্যর মরদেহ সড়াতৈল গ্রামে নেওয়া হয়। এ সময় স্বজনের আহাজারিতে হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

সাম্যর বড় ভাই আমিনুল ইসলাম সাগর এ সময় বলেন, আমরা তো কারও কখনও ক্ষতি করিনি। এমনকি আমার ভাই তো কারও সঙ্গে কখনও ঝামেলায় জড়ায়নি। তাহলে কেন এভাবে তাকে অকালে প্রাণ হারাতে হলো।

সম্পর্কিত নিবন্ধ