ব্র্যাক ব্যাংক: ৯ লাখ গ্রাহকের স্মার্ট ব্যাংকিং অভিজ্ঞতায় অনন্য
Published: 15th, May 2025 GMT
ব্র্যাক ব্যাংকের ডিজিটাল ব্যাংকিং অ্যাপ ‘আস্থা’ ৯ লাখেরও বেশি গ্রাহককে সেবা দিচ্ছে। এটি ব্র্যাক ব্যাংকের জন্য এক অনন্য মাইলফলক।
২০২১ সালে যাত্রা শুরু করা আস্থা অ্যাপ ডিজাইন করা হয়েছিল বাংলাদেশের মানুষের বৈচিত্র্যময় লাইফস্টাইল ও আর্থিক প্রয়োজন পূরণ করার লক্ষ্য নিয়ে। বর্তমানে এই অ্যাপটি বাংলাদেশের ব্যাংকিং জগতে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল ও পছন্দের ডিজিটাল ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্ম, যেখানে গ্রাহক নির্বিঘ্ন ও নিরাপদে উপভোগ করতে পারছেন নানাবিধ ব্যাংকিং সেবা।
শুধু ২০২৫ সালের মার্চ মাসেই আস্থা অ্যাপে প্রায় ১৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। বাংলাদেশের ব্যাংকিং ইন্ডাস্ট্রিতে মাসিক অ্যাপভিত্তিক লেনদেনে এটি নতুন বেঞ্চমার্ক। আস্থা অ্যাপ ব্যবহারকারী ৫৩ শতাংশ গ্রাহকেরই বয়স ২১ থেকে ৩৫-এর মধ্যে, যারা ব্যাংকিংয়ে স্বাচ্ছন্দ্য, সুবিধা এবং প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতাকে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।
অন্যদিকে আস্থা অ্যাপের লাইফস্টাইল ফিচার ব্যবহারকারীর ৬১ শতাংশই এই বয়সী তরুণ প্রজন্ম, যাদের কাছে এই অ্যাপটি দৈনন্দিন জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। আস্থা অ্যাপের গ্রাহক নিজেদের ব্যাংকিং লেনদেনের ৭১ ভাগ সম্পন্ন করেন এই অ্যাপের মাধ্যমে। গ্রাহকরা যে ‘মোবাইল ফার্স্ট’ ব্যাংকিং সল্যুশনের দিকে ঝুঁকছেন, এটি তার উদাহরণ।
আস্থা অ্যাপের মাধ্যমে গ্রাহক যে কোনো সময় যে কোনো স্থান থেকে নিজেদের দৈনন্দিন ব্যাংকিং প্রয়োজন পূরণ করতে পারছেন। এই ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবস্থার ফলে গ্রাহকদের এখন আর ব্রাঞ্চে যেতে হচ্ছে না, কিংবা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। এখানে নেই কোনো ট্রানজ্যাকশন ফি। গ্রাহক হাতের নাগালে পাচ্ছেন নিরাপদ ও সুরক্ষিত ব্যাংকিং সেবা।
গ্রাহকদের দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয় পরিকল্পনাও সহজ করেছে আস্থা অ্যাপ। গ্রাহকরা খুব সহজেই আস্থা অ্যাপের মাধ্যমে এফডিআর ও ডিপিএস অ্যাকাউন্ট খোলার পাশাপাশি সেগুলো এনক্যাশও করতে পারছেন এখান থেকে। এছাড়াও, এই অ্যাপের মাধ্যমে গ্রাহকরা পিন জেনারেট কিংবা রিসেট করা, কার্ড সাময়িকভাবে ব্লক করা, এমনকি নমিনির তথ্যও হালনাগাদ করতে পারছেন খুব সহজে।
আস্থা অ্যাপের ‘ক্যাশ-আউট বাই কোড’ ফিচারের মাধ্যমে এটিএম থেকে কার্ড ব্যবহার ছাড়াই খুব সহজে টাকা উত্তোলন করা যায়, যা গ্রাহকদের জন্য উন্মোচন করেছে প্রচলিত এটিএম ট্রানজ্যাকশনের এক আধুনিক বিকল্প ব্যবস্থা। বিকাশ, রকেট এবং ইনস্যুরেন্স পেমেন্টের মতো পৌনঃপুনিক লেনদেনগুলোকে স্ট্যান্ডিং ইনস্ট্রাকশন ফিচারের আওতায় নিয়ে আসা যায়। ফলে, গ্রাহক ভুলে গেলেও বিল পেমেন্ট হয় সময়মতো। বিকাশের ‘পুল মানি’ ফিচারটির মাধ্যমে যোগ হয়েছে আরও বিশেষ সুবিধা। আস্থা অ্যাপের এই সুবিধার ফলে গ্রাহকরা বিকাশ থেকে তাদের ব্র্যাক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট কিংবা ক্রেডিট কার্ডে সরাসরি টাকা ট্রান্সফার করতে পারছেন।
আস্থা অ্যাপে অ্যাকাউন্ট খোলার প্রক্রিয়া সহজ এবং সুবিন্যস্ত। গ্রাহকরা অ্যাকাউন্ট নম্বর, ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড নম্বর, কিংবা ডিপিএস নম্বরের মাধ্যমেই এখানে সাইন-আপ করতে পারেন। এ কারণে এই প্রক্রিয়াটি সবার কাছেই সহজবোধ্য। এই অ্যাপের মাধ্যমে ইকেওয়াইসি-ভিত্তিক অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। কার্ড এবং লোনের আবেদনও এখান থেকে সহজেই করা সম্ভব। এছাড়াও আস্থা অ্যাপে ব্র্যাক ব্যাংকের সকল এটিএম বুথ, ব্রাঞ্চ এবং মার্চেন্ট লোকেশন বের করা যায়, যা বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
গ্রাহকদের আর্থিক সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনায়ও আস্থা অ্যাপ ভূমিকা রাখছে। এই অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্ট, ট্যাক্স সার্টিফিকেট, চেকবুক কনফার্মেশন মুহূর্তেই পাওয়া যায়। এতে আছে পজিটিভ পে, যা এসএমই গ্রাহক, স্যালারি অ্যাকাউন্ট হোল্ডার এবং স্বনির্ভর পেশাজীবীদের জন্য জরুরি এক ফিচার। আস্থা অ্যাপের বিল পেমেন্টের ঝামেলাহীন প্রক্রিয়ায় সহজেই ইউটিলিটি বিল এবং সরকারি বিভিন্ন পেমেন্টসহ ভূমি করের মতো পেমেন্টও করা যায়। এসব সুবিধা দেশের একজন একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গ্রাহকদের দেয় বাড়তি সুবিধা।
ব্র্যাক ব্যাংকের আস্থা অ্যাপ সম্পর্কে ব্যাংকটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও সেলিম রেজা ফরহাদ হোসেন বলেন, “আস্থা শুধু একটি অ্যাপই নয়, এটি বাংলাদেশের কোটি মানুষের স্মার্ট ভবিষ্যতের এক নতুন দুয়ার। এই অ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত গতিতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এটি উদ্ভাবন, গ্রাহক-কেন্দ্রিকতা এবং সহজ ব্যাংকিংয়ের প্রসারে আমাদের ব্যক্ত করা প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, স্বাচ্ছন্দ্যময়, নিরাপদ, সহজ ও স্মার্ট ব্যাংকিং সুবিধার মাধ্যমে আস্থা বাংলাদেশের মানুষের ব্যাংকিং অভিজ্ঞতাকে বদলে দেবে।”
তারা//
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অ য ক উন ট গ র হকদ র ব যবহ র গ র হকর গ র হক ল নদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
১০-১২ বছরের মধ্যে নগদ অর্থবিহীন বাংলাদেশ সম্ভব: ব্রেট কিংয়ের ভবিষ্যদ্বাণী
শুধু নগদ অর্থের লেনদেনের মাধ্যমে কখনোই দেশের সব মানুষকে ব্যাংকিং সেবায় আনা যাবে না; বরং মোবাইলভিত্তিক ডিজিটাল আর্থিক সেবা ও ডিজিটাল পরিচয়ভিত্তিক অবকাঠামো গড়ে তুলতে পারলে বাংলাদেশ খুব দ্রুতই নগদ অর্থ–নির্ভরতা কাটিয়ে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে বড় অগ্রগতি অর্জন করতে পারবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ব্যাংকার্স মিট ২০২৫-এ এসব কথা বলেন বিশ্বখ্যাত ফিনটেক বিশেষজ্ঞ ও ভবিষ্যৎবিদ ব্রেট কিং। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তিনি।
ব্রেট কিং আরও বলেন, বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতের উচ্চমাত্রায় খেলাপি ঋণ (এনপিএল) ও প্রশাসনিক নানা সংকট মোকাবিলায় প্রযুক্তিনির্ভর অবকাঠামো গড়ে তোলা জরুরি।
দেশে প্রথমবারের মতো ব্যাংকার্স মিট অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক ফিনটেক প্রতিষ্ঠান ফিলপস লিমিটেড। এতে সহযোগিতা করে সিটি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক ও এবি ব্যাংক।
ব্যাংকার্স মিটে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নেতারাসহ জ্যেষ্ঠ নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ভবিষ্যৎমুখী ডিজিটাল ব্যাংকিং নিয়ে আলোচনা হয়।
অনুষ্ঠানের প্রশ্নোত্তর পর্বে ব্রেট কিং বলেন, চীন ২০১২ সালে বাংলাদেশের মতোই ছিল নগদ অর্থনির্ভর অর্থনীতির দেশ। এখন দেশটিতে খুচরা লেনদেনে নগদ অর্থের ব্যবহার ১ শতাংশের কম। বাংলাদেশও চাইলে একই পরিবর্তন ১০-১২ বছরের মধ্যে সম্ভব। তবে এ জন্য ইন্টারনেট ও মোবাইল নেটওয়ার্কের মানোন্নয়ন, কম দামে স্মার্টফোনের প্রাপ্যতা ও ডিজিটাল অবকাঠামোতে বিনিয়োগকে তিনি প্রধান শর্ত হিসেবে উল্লেখ করেন।
ব্রেট কিং বলেন, কেবল নগদ লেনদেন করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক (এআই) অর্থনীতি গড়ে তোলা সম্ভব নয়। নগদ অর্থ দিয়ে কেউ ডেটা সেন্টারের সার্ভারের সময় কিনতে পারবে না, ড্রোন ওড়াতে পারবে না কিংবা স্বয়ংক্রিয় বৈদ্যুতিক যান চালাতে পারবে না।
ডিজিটাল রূপান্তরের কৌশল নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে ব্রেট কিং বলেন, বড় ব্যাংকগুলোকে প্রযুক্তিনির্ভর কোম্পানিতে রূপান্তরিত হতে হবে। অথবা আলাদা ডিজিটাল ব্যাংক চালু করে সেখান থেকে ধীরে ধীরে গ্রাহক স্থানান্তর করতে হবে।
সিঙ্গাপুরের ডিবিএস ব্যাংকের উদাহরণ দিয়ে ব্রেট কিং বলেন, প্রতিষ্ঠানটি বোর্ড থেকে শুরু করে মাঠপর্যায়ের কর্মী পর্যন্ত সবার মধ্যে উদ্ভাবনের সংস্কৃতি গড়ে তুলে সফলভাবে ডিজিটাল রূপান্তর ঘটিয়েছে।
ব্যাংকিং খাতে প্রতারণা রোধে প্রযুক্তির ভূমিকা কতটুকু, এমন প্রশ্নের জবাবে ব্রেট কিং বলেন, বর্তমান সময়ে ৮০ শতাংশ জালিয়াতি ঘটে সামাজিক প্রকৌশল বা পুরোনো প্রমাণীকরণ পদ্ধতির দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে। ব্যক্তির স্বাক্ষরকে (সিগনেচার) ১০০ বছর ধরে নিরাপদ মনে করা হয় না। অথচ এখনো এটিকে নিরাপত্তা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাঁর মতে, বায়োমেট্রিক প্রমাণীকরণ ও উন্নত এআইভিত্তিক প্রতারণা শনাক্তকরণ প্রযুক্তিই ভবিষ্যতের সমাধান।
ব্রেট কিং ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেন, ২০৪০ সালের মধ্যে বিশ্বের সব প্রধান আর্থিক অবকাঠামো প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে যাবে। যারা সময়মতো ডিজিটাল রূপান্তরে ব্যর্থ হবে, তাদের অনেকেই টিকে থাকতে পারবে না, অনেক ব্যাংক একীভূত বা অধিগৃহীত হবে। ২০৫০ সালের মধ্যে ‘ব্যাংক’ ধারণাটি ১৯৯০ বা ২০০০ দশকের ব্যাংকের সঙ্গে মিলবে না। সবই হবে প্রযুক্তিনির্ভর সেবা কাঠামোর প্রতিষ্ঠান।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিজিটাল মুদ্রা (সিবিডিসি) কেন জনপ্রিয় হচ্ছে না, এমন প্রশ্ন করেন একজন। জবাবে ব্রেট কিং বলেন, স্থানীয় বাজারে খুচরা লেনদেনে সিবিডিসির সাফল্য কম। তবে আন্তসীমান্ত বাণিজ্যে এটি কার্যকর হতে পারে। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বা আঞ্চলিক জোটের সঙ্গে লেনদেনে বাংলাদেশ সিবিডিসির ব্যবহার বাড়াতে পারে বলে পরামর্শ দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী (সিইও) মাসরুর আরেফিন বলেন, বর্তমানে দেশের জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপগুলোর সংখ্যা হাতে গোনা, যা আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ত্বরান্বিত করার জন্য যথেষ্ট নয়।
মাসরুর আরেফিন বলেন, কয়েকটি ব্যাংক ডিজিটালভাবে এগিয়ে থাকলেই চলবে না। সবাইকে একসঙ্গে এগোতে হবে। ব্যাংকিং খাতে আন্তসংযোগ শুধু ট্রেজারি বা পেমেন্ট খাতেই সীমাবদ্ধ নয়, এপিআই শেয়ারিংও এখন বাস্তবতা। যদি সব ব্যাংক সমানভাবে ডিজিটালি অগ্রসর হয়, তবে তা গোটা শিল্পের জন্যই ভালো হবে।
ফিলপসের বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার তুষার হাসান বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গভীর ও দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক তৈরি করা এবং তাদের কৌশলগত লক্ষ্যের সঙ্গে আমাদের সমাধানকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা।’
সমাপনী বক্তব্যে ফিলপসের প্রধান নির্বাহী (সিইও) বিশ্বাস ধাকাল বলেন, ফিলপস উদীয়মান বাজারে বছরের পর বছর সফলতার মাধ্যমে অর্জিত প্রযুক্তি ও পরিচালন দক্ষতার সমন্বয়ে বাংলাদেশে এসেছে। তাঁরা দীর্ঘ মেয়াদে এখানে থাকতে চান। ব্যাংক, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও শিল্পের অংশীদারদের সঙ্গে একযোগে কাজ করে ডিজিটাল রূপান্তরকে এগিয়ে নিতে চান।
অনুষ্ঠানে সিটি ব্যাংক ও এবি ব্যাংকের সঙ্গে নতুন অংশীদারত্বের ঘোষণা দেয় ফিলপস। সিটি ব্যাংকের জন্য এই সহযোগিতার আওতায় তাদের ফ্ল্যাগশিপ সিটি টাচ ডিজিটাল ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্ম সম্পূর্ণভাবে পুনর্গঠন করা হবে। যাতে আরও স্মার্ট ও নিরবচ্ছিন্ন গ্রাহক অভিজ্ঞতা নিশ্চিত হয়। অন্যদিকে এবি ব্যাংকের অংশীদারত্বের মাধ্যমে চালু হবে ডিজিটাল ন্যানো লোন সুবিধা।