করোনাকালীন প্রণোদনার ঋণের নামে রাষ্ট্রের ৪০৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ব্যবসায়ী, ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা, পরিচালনা পর্ষদে থাকা সিকদার পরিবারের চার সদস্যসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার দুদক রাজধানীর সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-১–এ মামলাটি দায়ের করেন দুদকের উপপরিচালক রামপ্রসাদ মণ্ডল।

দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো.

আক্তার হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রেডিয়াম কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের নামে প্রায় ৪০৪ কোটি টাকার ঋণ করোনাকালীন প্রণোদনার আওতায় ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে নেওয়া হয়। কিন্তু এই ঋণের বিপরীতে প্রকল্প বাস্তবায়ন কিংবা উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পরিকল্পিতভাবে অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগের তথ্য পাওয়া গেছে।

মামলায় আসামি করা হয়েছে ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মোহসিন ও মঈন উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরীকে। তাঁরা যথাক্রমে সাদ মুসা হোমটেক্স অ্যান্ড ক্লদিং লিমিটেড এবং রেডিয়াম কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তাঁদের সঙ্গে ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক ও বর্তমান একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও পরিচালকদেরও আসামি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী মোশতাক আহমেদ, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম বুলবুল, সাবেক পরিচালক মনোয়ারা সিকদার, পারভীন হক সিকদার, খলিলুর রহমান, রন হক সিকদার, রিক হক সিকদার, জাকারিয়া তাহের, মাবরুর হোসেন, মো. নায়মুজ্জামান ভূইয়া মুক্তা ও মোয়াজ্জেম হোসেন। এ ছাড়া ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা মো. একরামুল হক, মো. হাবিবুর রহমান ও মোহাম্মদ আবু রাশেদ নওয়াবকেও আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, রেডিয়াম কম্পোজিটের নামে নেওয়া ঋণের অর্থের বড় অংশ সরিয়ে ফেলা হয় সাদ মুসা গ্রুপভুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। ওই অর্থের মাধ্যমে রাজধানীর গুলশান, বনানী, মহাখালী, উত্তরা, ধানমন্ডি ও মতিঝিল এলাকায় বিভিন্ন বাণিজ্যিক স্থাপনা কেনা হয়। অর্থের উৎস, মালিকানা ও ব্যবহার গোপন রেখে করা হয় অর্থ পাচার।

দুদক বলেছে, এই ঋণ অনুমোদন ও বিতরণের সময় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যথাযথ যাচাই-বাছাই করেনি। এমনকি আবেদনপত্র দাখিলের মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে এত বড় অঙ্কের ঋণ ছাড় করা হয়, যা অভাবনীয়। তদন্তে আরও উঠে এসেছে, এ ধরনের ঋণ প্রদানের পেছনে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সরাসরি প্রভাব ছিল।

আরও পড়ুনরন হক শিকদার ও আরিফ হাসানের বিরুদ্ধে মামলা০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র চ লক ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

শিশু হাফসা হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ, আরেক আসামি গ্রেপ্তার

পাবনা পৌর সদরের উত্তর শালগাড়িয়া সরদারপাড়া এলাকায় ৯ বছরের শিশু শিক্ষার্থী হাফসা হত্যার ঘটনায় সোমবার (১৭ নভেম্বর) দায়ের করা মামলায় আরো এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে মামলার নামীয় তিন আসামিকেই গ্রেপ্তার হলো।

গ্রেপ্তাররা হলেন, পাবনা পৌর সদরের উত্তর শালগাড়িয়া সরদারপাড়া মহল্লার টিপু সরদারের ছেলে সাব্বির সরদার (২৬), ছবেদ আলীর ছেলে রমজান আলী (৩০) ও খালেক সরদারের ছেলে পান্না সরদার (২৮)। এদের মধ্যে সাব্বির ও রমজানকে রবিবার এবং পান্নাকে সোমবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

আরো পড়ুন:

‘আবর্জনার মতো লাগে’ বলে অর্ধশত বকুলগাছ কাটা সেই ব্যক্তি গ্রেপ্তার

বরগুনায় নাশকতার অভিযোগে ৩ আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার 

এদিকে, শিশু হাফসাকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্য করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ।

পাবনা সদর থানার ওসি (অপারেশন) সঞ্জয় কুমার সাহা এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, নিহত হাফসার মা রিতু খাতুন বাদী হয়ে সোমবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় তিনজন নামীয়সহ অজ্ঞাতনামা আরো অনেককে আসামি করা হয়েছে।

তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার দুপুরে পাবনা টেক্সটাইল কলেজ এলাকা থেকে অভিযুক্ত পান্না সরদারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে মামলার প্রধান অভিযুক্ত নামীয় তিন আসামিকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

এদিকে, শিশু হাফসা হত্যার প্রতিবাদে ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী।

সোমবার (১৬ নভেম্বর) সকালে উত্তর শালগাড়িয়া সরদারপাড়া থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে জেলা প্রশাসক কর্যালয়ের সামনে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে তারা। সেখানে নিহত শিশু শিক্ষার্থী হাফসার স্বজন ও এলাকাবাসী বক্তব্য দেন।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে তারা মিছিল নিয়ে শহরের প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভ শেষে তারা আসামিদের গ্রেপ্তার করতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন। অন্যত্থায় আরো কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ারি দেন।

এ সময় প্রায় ১ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে সদর থানার ওসি আব্দুস সালাম ঘটনাস্থলে গিয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেন বিক্ষোভকারীরা।

এর আগে, শনিবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে শিশু হাফসাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তার সন্ধান চেয়ে এলাকায় মাইকিং করা হয়। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে প্রায় ২ ঘণ্টা পর রাত ৮টার দিকে বাড়ির পেছনের জঙ্গলের ভেতর পাটিতে মোড়ানো কাদা মাখা অবস্থায় হাফসার মরদেহ পাওয়া যায়।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় রাতেই সন্দেহভাজন হিসেবে রমজান ও সাব্বির নামের দুইজনকে আটক করা হয়।

নিহত হাফসা সদর উপজেলার মালঞ্চি ইউনিয়নের কামারগাঁও গ্রামের প্রবাসী হাফিজুর রহমানের মেয়ে এবং স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিল।

হাফসার নানার বাড়ির পাশের বাগানটি দীর্ঘদিন ধরে বখাটে, মাদকসেবী ও জুয়ারুদের আড্ডাস্থল ছিল বলে জানায় স্থানীয়রা। তারা এ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পাবনা সদর থানার ওসি (অপারেশন) সঞ্জয় কুমার সাহা বলেন, “মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদনে শিশু হাফসাকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। ধর্ষণের পর তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। এছাড়া পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতিয়মান হয়েছে।”

ঢাকা/শাহীন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ