ঢাকার নগর ভূ-তথ্য সম্পর্কিত অ্যাটলাস তৈরিতে সহায়তা করছে জার্মানি
Published: 16th, May 2025 GMT
জার্মান ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন ঢাকা মহানগর অঞ্চলের নগর ভূ-তথ্য সম্পর্কিত একটি অ্যাটলাস চালু করেছে। এই অ্যাটলাস একটি টেকসই ও জলবায়ু-সহনশীল নগর উন্নয়নের জন্য জার্মানি ও বাংলাদেশের মধ্যে স্থায়ী প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।
ঢাকার জার্মান দূতাবাস বৃহস্পতিবার (১৫ মে) এ কথা জানিয়েছে।
ফেডারেল ইনস্টিটিউট ফর জিওসায়েন্সেস অ্যান্ড ন্যাচারাল রিসোর্সেস (বিজিআর) ও জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ বাংলাদেশ (জিএসবি) ‘জলবায়ু পরিবর্তন সহনশীল নগরায়ণ বাস্তবায়নের জন্য ভূ-তথ্য (জিআইসিইউ)’ শীর্ষক এই প্রযুক্তিগত সহযোগিতা প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই মাইলফলক অর্জন করেছে।
অ্যাটলাসটি ঢাকার প্রমাণ্য-ভিত্তিক নগর পরিকল্পনাকে সহায়তা করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূ-বৈজ্ঞানিক তথ্য সরবরাহ করছে। এই তথ্যগুলোর সরবরাহের মাধ্যমে এটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে, নগর সহনশীলতা জোরদার করতে ও টেকসই উন্নয়নে দিকনির্দেশনা দিতে সহায়তা করছে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত আখিম ট্র্যোস্টার এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বুধবার টেকসই উন্নয়ন, পরিকল্পিত ও জলবায়ু সহনশীল বাংলাদেশের জন্য ভূতত্ত্ব সম্পর্কিত জাতীয় সেমিনারে আনুষ্ঠানিকভাবে অ্যাটলাসটি চালু করেন।
রাষ্ট্রদূত ট্র্যোস্টার জার্মান-বাংলাদেশি উন্নয়ন অংশীদারিত্বের ওপর জোর দিয়ে ভূ-তাত্ত্বিক সচেতনতা ও অবহিতকরণ ও জলবায়ু-সহনশীল নগর পরিকল্পনায় এই অংশীদারিত্বের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
ঢাকা/হাসান/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সহনশ ল র জন য জলব য়
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্প পিছু হটায় কি মন্দার কবল থেকে বাঁচবে যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে স্বপ্রণোদিত মন্দা ও সরবরাহব্যবস্থা ভাঙনের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ট্রাম্প পিছু হটার সিদ্ধান্ত নেন।
সোমবার যুক্তরাষ্ট্র-চীন সমঝোতার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধে ৯০ দিনের বিরতি দেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, উভয় দেশই উচ্চ শুল্কের পথ থেকে ফিরে আসবে। শুল্ক ও পাল্টা শুল্কের এই খেলায় বিশ্বের প্রধান দুই অর্থনীতির মধ্যে বাণিজ্য প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্র-চীনের শুল্কযুদ্ধে এই নাটকীয় বিরতি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক অন্তত গত এক মাসের পরিস্থিতি বিবেচনায়। এ সমঝোতা ওয়াল স্ট্রিটে আশাবাদ সঞ্চার করেছে। আশা জাগিয়েছে, শুল্ককেন্দ্রিক দুঃস্বপ্ন হয়তো এড়ানো সম্ভব হবে।
অর্থনীতিবিদেরা অবশ্য বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি পুরোপুরি বিপদমুক্ত—এ কথা এখনই বলা যাবে না। মন্দার ঝুঁকি এখনো রয়ে গেছে, যদিও অর্থনৈতিক পতনের আশঙ্কা কিছুটা কমেছে।
শুল্ক এখনো বেশি। গত কয়েক দশকে এমন উচ্চ শুল্ক ছিল না। অনিশ্চয়তা এর চেয়ে বেশি। আস্থা ও বাণিজ্যপ্রবাহের যে ক্ষতি হয়েছে, তা রাতারাতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়।
এ ছাড়া ভবিষ্যতে কী ঘটবে, তা নিয়ে নির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। এত অল্প সময়ে একের পর এক অর্থনৈতিক ধাক্কার পর কোনো আধুনিক অর্থনীতি কীভাবে তা সামাল দেয়, তার নজির নেই।
আমেরিকান অ্যাকশন ফোরামের প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকানদের সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ডগলাস হোল্টজ-ইকিন বলেন, ‘আমরা এখনো বিপদ কাটিয়ে উঠিনি।’ অনেকে বলছেন, ট্রাম্প উল্টো পথে হাঁটতে শুরু করেছেন, কিন্তু তিনি তা করেননি। এখনো যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্বহার শতবছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। শুল্ক অনেকটাই বাড়ানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে চীনের পণ্যে যে ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল, তা ছিল একেবারে অস্বাভাবিক। এটা কার্যত চীনের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একপ্রকার নিষেধাজ্ঞা আরোপের মতো। সরবরাহব্যবস্থা–বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছিলেন, এতে দোকানের তাক খালি হয়ে যাওয়ার মতো গুরুতর সমস্যা হতে পারে।
বিশ্লেষকে বলেন, ট্রাম্পের এই ফিরে আসা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে বড় বিপর্যয়ের হাত থেকে আপাতত রক্ষা করেছে। তাঁরা মনে করেন, ট্রাম্প প্রশাসন যখন ১৪৫ শতাংশ শুল্ক থেকে সরে আসে, তখন বোঝা যায় যে তারা উপলব্ধি করেছে, এই হারে শুল্ক থাকলে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হবে।
ট্রাম্প বেশ কিছু ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন, যেমন প্রশ্ন তুলেছেন, ‘শিশুদের আসলে কতগুলো পুতুল দরকার?’ তারপরও দোকানের তাক খালি হয়ে যাওয়া বা বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া নিয়ে যথেষ্ট সচেতন ছিলেন তিনি। ট্রাম্প প্রশাসনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এ কথা জানিয়েছেন।
‘শেষ পর্যন্ত উভয় পক্ষই সৌভাগ্যক্রমে ক্রিসমাসটা বাঁচানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে’ বলে মনে করেন ব্লিকলি ফিন্যান্সিয়াল গ্রুপের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা পিটার বুকভার। তাঁর মতে, ‘ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কে যুক্তরাষ্ট্রের ছোট ব্যবসাগুলো হুমকির মুখে পড়ে যাচ্ছিল’; শেষমেশ ট্রাম্প তা শুনেছেন এবং গুরুত্ব দিয়েছেন।
সোমবার শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্তের পরও চীনের পণ্যে এখনো ৩০ শতাংশ করা হলেও—কমপক্ষে ৯০ দিনের জন্য—এই হার এখনো চলতি বছরের শুরুর তুলনায় অনেক বেশি।
চীন ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যচুক্তির কাঠামো অনুযায়ী মুডিজ অ্যানালিটিকস হিসাব করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের কার্যকর শুল্কহার ২১ দশমিক ৩ শতাংশ কমে ১৩ দশমিক ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। তারপরও এই হার এখনো ১৯১০ সালের পর সর্বোচ্চ।
মুডিজ অ্যানালিটিকসের প্রধান অর্থনীতিবিদ মার্ক জান্ডি সিএনএনকে বলেন, এ হারে শুল্ক থাকলে আগামী এক বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির হার ১ শতাংশের বেশি বাড়তে পারে। শুধু তা–ই নয়, মোট দেশজ উৎপাদনও (জিডিপি) একই হারে কমতে পারে।
কমেছে মন্দার আশঙ্কা
মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ কিছুটা প্রশমিত হওয়ায় মন্দার আশঙ্কা কিছুটা কমেছে বলে মনে করে আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা মুডিস। মুডিজ অ্যানালিটিকসের প্রধান অর্থনীতিবিদ মার্ক জান্ডি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে চলতি বছরে মন্দার আশঙ্কা ৪৫ শতাংশ, যদিও তা আগে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছিল।
জান্ডি আরও বলেন, ‘অর্থনীতির জন্য বছরটা কঠিন হবে, যদিও মন্দা এড়ানো সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে। তবে এটাও ঠিক, অর্থনীতি এখন যেকোনো নতুন ধাক্কায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।’ অর্থাৎ বাণিজ্যযুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ‘ভুল করার অবকাশ’ বা সহনশীলতা অনেক কমিয়ে ফেলেছে।
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক জাস্টিন উলফার্স এক্সে লেখেন, ‘এটা ঠিক, আজকের দিনে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যনীতি ও অর্থনীতির সম্ভাবনা আগের গত কয়েক দিন আগের তুলনায় অনেক ভালো দেখাচ্ছে।’ আবারও এটাও ঠিক, ‘বর্তমান পরিস্থিতি এখনো ট্রাম্পের অভিষেক দিবসের চেয়ে অনেক খারাপ।’ এই দ্রুত পরিবর্তন আর অস্থিরতাই ট্রাম্প ২.০ যুগের বৈশিষ্ট্য।
কিন্তু অনিশ্চয়তা শেষ হচ্ছে না। ট্রাম্প নিজেও স্বীকার করেছেন, চীনের পণ্যে শুল্ক আবার বাড়তে পারে। ৯০ দিনের মধ্যে চুক্তি না হলে শুল্ক আবার ১৪৫ শতাংশে ফিরে যাবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘না, তবে অনেকটাই বেড়ে যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, শেষ পর্যন্ত চুক্তি একটা হবেই।’
সংবাদে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি, যদিও উত্তেজনা কিছুটা কমেছে। খাতভিত্তিক শুল্ক (যেমন কাঠ, সেমিকন্ডাক্টর, ওষুধ, খনিজ ইত্যাদি) আরোপের সম্ভাবনা এখনো আছে। সাম্প্রতিক কিছু পদক্ষেপ, যেমন বিমান ও যন্ত্রাংশ আমদানির ওপর নিরাপত্তা তদন্ত ভবিষ্যতে আরও শুল্ক আরোপের ইঙ্গিত দেয় বলেই মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
এসব অনিশ্চয়তার কারণে অর্থনীতিবিদ জো ব্রুসুয়েলাস আগামী এক বছরে মন্দার ঝুঁকি দেখছেন ৫৫ শতাংশ। ডয়েচে ব্যাংকের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যনীতি কিছুটা নমনীয় হয়েছে। ফলে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা কিছুটা বেড়েছে। কমেছে বাণিজ্যযুদ্ধজনিত অনিশ্চয়তা।
অভূতপূর্ব অনিশ্চয়তা
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পারস্পরিক শুল্ক হ্রাস কিছুটা স্বস্তি আনলেও বাণিজ্য নীতিগত অনিশ্চয়তা সম্প্রতি রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদপত্রে বলা হচ্ছে, ১৯৬০-এর দশকের পর এই অনিশ্চয়তা সর্বোচ্চ। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, এটা ‘অচল করে দেওয়ার মতো অনিশ্চয়তা’।
বিশেষজ্ঞ মহল বলছে, এটা সম্পূর্ণ কৃত্রিম বা তৈরি করা সংকট। ব্যবসা ও বিনিয়োগ মহলে এখনো আতঙ্ক রয়ে গেছে—পরবর্তী ধাক্কা কবে আসবে, তা নিয়ে। শুল্কনীতিতে ট্রাম্প প্রশাসনের আকস্মিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতা বাজারে স্থায়ীভাবে আস্থার অভাব তৈরি করেছে। এখন সবার প্রশ্ন, এই অস্থিরতা কি সাময়িক, নাকি নতুন কোনো অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত সামনে আসছে?