জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে আলোচনার আহ্বান জোনায়েদ সাকির
Published: 16th, May 2025 GMT
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র, শ্রমিক ও জনতা সব পক্ষের অংশগ্রহণ ছিল। কিন্তু উপদেষ্টাদের আন্দোলন ন্যায্য আর অন্যদের আন্দোলন অন্যায্য—এই নীতি চলতে পারে না। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘সমস্যা সমাধানে আগের ফ্যাসিবাদের মতো দীর্ঘসূত্রতা কেন? অবিলম্বে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি মেনে আলোচনায় বসুন।’
আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত সমাবেশে এ কথাগুলো বলেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।
ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চের ৫০ বছর উপলক্ষে এই সমাবেশের আয়োজন করে গণসংহতি আন্দোলন।
সমাবেশে বক্তারা ভারতের নদী আগ্রাসন প্রতিহত এবং নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের দাবিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
নদী রক্ষা না করলে সভ্যতা টিকে থাকবে না উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘নদীতে বাঁধ দিয়ে ভারত তার আধিপত্যবাদী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। কিন্তু বাংলাদেশে একের পর এক সরকার এলেও তারা নদীর পানির ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে পারেনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভারতকে আমরা আগেও বলেছি, এই দেশের জনগণের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে। বন্ধুত্ব করতে হলে সমতা ও মর্যাদার ভিত্তিতে সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। কারও অধিকার হরণ করে বন্ধুত্ব করা যায় না। এটাকে দাসত্ব বলে।’
দেশে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের প্রয়োজন উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, এই বন্দোবস্ত হবে গণতান্ত্রিক। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘জনগণের দাবি অনুযায়ী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করুন। আপনাদের কোনো ভূমিকা যাতে জনগণের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি না করে, আমরা সেটার নিশ্চয়তা চাই। আমরা সংস্কারের স্পষ্ট রোডম্যাপ চাই।’
সমাবেশে বক্তব্য দেন গণসংহতি আন্দোলন ঢাকা মহানগরের কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব মাহবুব রতন, আশুলিয়া গণসংহতি আন্দোলনের আহ্বায়ক নুরুল ইসলাম, গাজীপুর জেলার আহ্বায়ক আমজাদ হোসেন, বাঞ্ছারামপুর থানার সংগঠক শামীম শিবলী, কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দিপক রায়, আলীফ দেওয়ান ও বাচ্চু ভুঁইয়া।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কারও দল গোছানো জন্য নির্বাচন বিলম্বিত হতে পারে না: নজরুল ইসলাম খান
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, কারও দল গোছানোর জন্য সময় দরকার হতে পারে। কারও বন্ধু জোগাড় করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু সে কারণে জনগণের ভোট দেওয়ার যে মৌলিক মানবাধিকার বিলম্বিত হবে, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে বাংলাদেশ লেবার পার্টি আয়োজিত ‘শোষণমুক্ত সমাজ গঠনে মাওলানা মতিনের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় নজরুল ইসলাম খান এ কথাগুলো বলেন।
গত আগস্টে ঘোষিত এক দফা আন্দোলনের একটি ধাপ ফ্যাসিবাদের পতনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে বলে উল্লেখ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। তিনি বলেন, এখন মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে তাদের দাবির অবশিষ্ট অংশ পূরণের আশায়। দীর্ঘ ১৬-১৭ বছর ধরে মানুষ তাঁদের মৌলিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। অনেক তরুণ আছে, যাঁদের বয়স কম, কিন্তু ভোটার হয়েছেন বহু বছর আগে, তবু আজ পর্যন্ত ভোট দিতে পারেননি। তাঁরা চান, এই অধিকার প্রয়োগ করতে, রাষ্ট্র পরিচালনায় নিজেদের মতামত জানাতে। এটি তাদের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক অধিকার। এই অধিকার আদায়ের জন্যই হাজার হাজার মানুষ কারাবরণ করেছে, প্রাণ দিয়েছে, নিপীড়নের শিকার হয়েছে।
এখন গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে নানা মহলে আলোচনা চলছে বলে উল্লেখ করেন নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, তাঁরা বলেছেন, লেবার পার্টি বলেছে, ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হোক। তাহলে প্রশ্ন, যাঁরা এর বিরোধিতা করছেন, তাঁরা বলুক, কোন যুক্তিতে ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন হওয়া উচিত? কারণটা কী?
নজরুল ইসলাম খান বলেন, নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে বলেছে, তারা জুন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারবে। ফলে ডিসেম্বরের মধ্যে ভোট গ্রহণে কোনো বাধা নেই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘অনেকে বলছেন, আগে সংস্কার করতে হবে। প্রশ্ন হলো, আপনারা কবে থেকে সংস্কারের কথা বলছেন?’
সংস্কারের ধারাবাহিকতা তুলে ধরে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ১৯৭৬-৭৭ সালেই জিয়াউর রহমান ১৯ দফা সংস্কার কর্মসূচি দিয়েছিলেন। ২০১৬ সালে খালেদা জিয়া দিয়েছেন ২০৩০ ভিশন, যা ছিল একটি পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাব। এরপর ২০২২ সালে তারেক রহমান ২৭ দফা, আর ২০২৩ সালে আন্দোলনে যুক্ত সব পক্ষের অংশগ্রহণে ৩১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা সংস্কারের বিপক্ষে না, বরং শতভাগ সংস্কারের পক্ষে। তবে সংস্কার একটি প্রক্রিয়া। পরিবর্তনের দুটি পথ—একটি বিপ্লব, অন্যটি সংস্কার। বিপ্লব ঘটে হঠাৎ করে, আর সংস্কার হয় সবার সম্মতিতে, ধাপে ধাপে।’
নজরুল ইসলাম খান বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের একটি প্রস্তাবের কথা শোনা যাচ্ছে, যেখানে মে মাসের মধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে বোঝাপড়ায় পৌঁছানো সম্ভব। সে ক্ষেত্রে জুনের মধ্যেই একটি সনদ তৈরি হতে পারে, যেটিতে সব দল স্বাক্ষর করবে। তাৎক্ষণিক যেসব সংস্কার সম্ভব, তা আইনের মাধ্যমে কার্যকর হবে। সংবিধান সংশোধন দরকার—এমন বিষয়গুলো নতুন সংসদে তোলা হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘এই পুরো কাজ যদি জুনেও শেষ না হয়, জুলাইয়ের মধ্যেও হতে পারে। তাহলে প্রশ্ন থেকেই যায়, ডিসেম্বরে নির্বাচন করতে অসুবিধাটা কোথায়?’
জনগণের নির্বাচিত সরকারের চেয়ে ভালো পদ্ধতি এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে আবিষ্কৃত হয়নি বলে মন্তব্য করেন নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘জনগণের নির্বাচিত সরকার ধীর হতে পারে, ভুল করতেও পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর চেয়ে ভালো পদ্ধতি পৃথিবীতে আবিষ্কৃত হয়নি। তাই গণতন্ত্রই আমাদের একমাত্র পথ। আমাদের সহযোদ্ধারা জীবন দিয়েছেন এই গণতন্ত্রের জন্য, জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য, ফ্যাসিবাদ উৎখাতের জন্য। সেই পরিবর্তনের পথেই আমাদের এগোতে হবে।’
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, বাংলাদেশ লেবার পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান খান ইরান, মহাসচিব খন্দকার মিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।