১০৬ বছর পর যুক্তরাষ্ট্রের ঋণমান কমাল মুডিস, কারণ কী
Published: 17th, May 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ঋণমান (ক্রেডিট রেটিং) ১০৬ মধ্যে প্রথমবারের মতো এক ধাপ কমিয়েছে ঋণমান নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান মুডিস। গতকাল শুক্রবার ঋণ মূল্যায়নসংক্রান্ত সংস্থাটি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ ও সুদের খরচ অব্যাহতভাবে বাড়ছে। মূলত এই কারণেই দেশটির ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা বা ঋণমান কমানো হয়েছে।
মুডিসের এই সিদ্ধান্ত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কর কাটছাঁট প্রচেষ্টাকে জটিল করতে এবং বিশ্ববাজারে প্রভাব ফেলতে পারে। সংস্থাটির তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ঋণ ৩৬ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
মুডিসের বিভিন্ন ঋণমানের মধ্যে ‘এএএ’ সবচেয়ে ভালো। যুক্তরাষ্ট্রকে ১৯১৯ সালে সর্বপ্রথম এই রেটিং দিয়েছিল সংস্থাটি। প্রথমবারের মতো এবার তা এক ধাপ কমিয়ে ‘এএ১’-এ নামিয়ে আনা হয়েছে। সেই হিসেবে ১০৬ বছর পর যুক্তরাষ্ট্রের ঋণমান প্রথমবারের মতো কমাল মুডিস।
মুডিসের আগে আরও দুটি বিখ্যাত ঋণ মূল্যায়নসংক্রান্ত সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রের ঋণমান কমিয়েছিল। ২০১১ সালে এসঅ্যান্ডপি এবং ২০২৩ সালে ফিচ যুক্তরাষ্ট্রের ঋণমান কমিয়েছিল।
২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে নিজেরা যে পূর্বাভাস (আউটলুক) দিয়েছিল, তাতেও পরিবর্তন এনেছে মুডিস। তখন যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে মুডিসের পূর্বাভাস ছিল ‘নেতিবাচক’ ক্যাটাগরিভুক্ত। এবার তারা দেশটির ঋণমান কমালেও পূর্বাভাস একধাপ বাড়িয়ে ‘স্থিতিশীল’ ক্যাটাগরিতে নিয়ে এসেছে।
মুডিস বলেছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রে পরপর কয়েকটি প্রশাসন ও কংগ্রেস বড় ঘাটতি ও সুদের ব্যয় কমাতে ব্যর্থ হয়েছে।’ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠরা মুডিসের ঋণমান কমানোর সিদ্ধান্তকে ‘অযৌক্তিক’ বলে মন্তব্য করেছেন।
# মুডিসের বিভিন্ন ঋণমানের মধ্যে ‘এএএ’ সবচেয়ে ভালো। যুক্তরাষ্ট্রকে ১৯১৯ সালে সর্বপ্রথম এই রেটিং দিয়েছিল সংস্থাটি। প্রথমবারের মতো এবার তা এক ধাপ কমিয়ে ‘এএ১’-এ নামিয়ে আনা হয়েছে। # ‘যুক্তরাষ্ট্রের পরপর কয়েকটি প্রশাসন ও কংগ্রেস বড় ঘাটতি ও সুদের ব্যয় কমাতে ব্যর্থ হয়েছে।’ট্রাম্পের সাবেক জ্যেষ্ঠ অর্থনৈতিক উপদেষ্টা এবং হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের অর্থনীতিবিদ স্টিফেন মুর মুডিসের যুক্তরাষ্ট্রের ঋণমান কমানোর সিদ্ধান্তকে ‘অপমানজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি রয়টার্সকে বলেছেন, ‘যদি যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি বন্ড ট্রিপল-এ (এএএ) সম্পদ না হয়, তাহলে কারটি হবে?’
হোয়াইট হাউসের যোগাযোগ পরিচালক স্টিভেন চিউং মুডিসের ঋণমান কমানো নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। ঋণমান কমানোর জন্য তিনি মুডিসের অর্থনীতিবিদ মার্ক জান্ডির সমালোচনা করেন এবং তাঁকে ট্রাম্পের রাজনৈতিক বিরোধী হিসেবে উল্লেখ করেন।
স্টিভেন চিউংয়ের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় কিছু বলতে রাজি হননি মার্ক জান্ডি। তিনি মুডিস অ্যানালিটিকসের প্রধান অর্থনীতিবিদ, যার সঙ্গে মুডিস ঋণমানের সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই।
‘যদি যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি বন্ড ট্রিপল-এ (এএএ) সম্পদ না হয়, তাহলে কারটি হবে?’স্টিফেন মুর, ট্রাম্পের সাবেক জ্যেষ্ঠ অর্থনৈতিক উপদেষ্টাগত ২০ জানুয়ারি হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর থেকে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি বাজেট সমন্বয় করবেন অর্থাৎ আয়ের এবং খরচের মধ্যে ভারসাম্য রাখবেন। আর তার ট্রেজারি সেক্রেটারি (অর্থ সচিব) স্কট বেসেন্ট বারবার বলেছেন, বর্তমান প্রশাসনের লক্ষ্য হলো যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অর্থায়নের খরচ কমানো। অর্থাৎ তারা সরকারের ঋণ নেওয়ার খরচ বা অর্থ সংগ্রহের খরচ কমাতে কাজ করছে।
ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে বলে আসছেন, তিনি বাজেট সমন্বয় করবেন। অর্থাৎ আয় এবং খরচের মধ্যে ভারসাম্য রাখবেন। তবে তাঁর ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট বারবার বলেছেন, বর্তমান প্রশাসন সরকারের অর্থায়নের খরচ কমাতে কাজ করছে। এ অর্থ হলো, তাঁরা সরকারের ঋণ নেওয়ার খরচ বা অর্থ সংগ্রহের খরচ কমাতে কাজ করছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের খরচ কমাতে ধনকুবের ইলন মাস্ককে প্রধান করে ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি (ডিওজিই) গঠন করেছেন ট্রাম্প। তবে সেই লক্ষ্য পূরণ হয়নি।
রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করতে ট্রাম্প বিশ্বের প্রায় সব দেশের ওপর নতুন শুল্ক ঘোষণা করেছে। এতে বিশ্ববাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মুডিসের যুক্তরাষ্ট্রের ঋণমান কমানোর সিদ্ধান্ত পুঁজিবাজারে প্রভাব ফেলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোববার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় তা বোঝা যাবে না। তবে সোমবার বাজার খুললে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব দেখা যেতে পারে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র খরচ কম ত র সরক র সরক র র র অর থ বল ছ ন ক জ কর
এছাড়াও পড়ুন:
ভিডিও ভাইরাল: ২১ বছর ধরে কারাবন্দী বারগুতিকে হুমকি দিয়ে এলেন বেন–গভির
ইসরায়েলের কারাগারে গিয়ে সুপরিচিত ফিলিস্তিনি বন্দী মারওয়ান বারগুতিকে হুমকি দিচ্ছেন ইসরায়েলি জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন–গভির। প্রকাশিত একটি ভিডিওতে এ দৃশ্য দেখা গেছে।
ইসরায়েলি কারাগারের এ ভিডিওতে বেন–গভিরকে বলতে শোনা যায়, ‘ইসরায়েলের বিরোধিতা করলে যে কেউ “ধ্বংস” হয়ে যাবে।’
এ ভিডিওর মধ্য দিয়ে অনেক বছর পর বারগুতিকে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে দেখা গেল। ভিডিওতে তাঁকে বয়সের ভারে ক্ষীণ হয়ে পড়া, সাদা স্যান্ডো গেঞ্জি পরা একজন ব্যক্তি ও প্রায় অচেনারূপে দেখা যায়।
যে-ই ইসরায়েলের জনগণের সঙ্গে ঝামেলা করবে, আমাদের সন্তানদের হত্যা করবে, আমাদের নারীদের হত্যা করবে, তাঁকে আমরা ধ্বংস করে দেব। আমাদের হারাতে পারবে না।ইতামার বেন–গভির, ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রীগত বৃহস্পতিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ওই ভিডিও। তাতে দেখা যায়, বেন–গভির বারগুতিকে বলছেন, ‘যে–ই ইসরায়েলের জনগণের সঙ্গে ঝামেলা করবে, আমাদের সন্তানদের হত্যা করবে, আমাদের নারীদের হত্যা করবে, তাঁকে আমরা ধ্বংস করে দেব। আমাদের হারাতে পারবে না।’
২০০৪ সাল থেকে কারাগারে আছেন ফিলিস্তিনি নেতা মারওয়ান বারগুতি। ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের (পিএ) নিয়ন্ত্রণকারী দল ফাতাহর একজন শীর্ষ নেতা তিনি। ২০০০–২০০৫ সালে ফিলিস্তিনিদের দ্বিতীয় ইন্তিফাদায় (গণ–অভ্যুত্থান) নেতৃত্ব দেওয়ায় ও জনগণের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণে তাঁকে নিশানা করে ইসরায়েল।
মারওয়ানের ছেলে কাসেম বারগুতি মিডল ইস্ট আইকে বলেন, ভিডিও প্রকাশের পর পরিবার গভীরভাবে তাঁর জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত।
কাসেম বলেন, ‘দুই বছর ধরে তাঁকে (মারওয়ান) হুমকি ও আক্রমণের একটি ধারাবাহিকতা চলছে। (গাজায়) যুদ্ধ শুরুর পর প্রথমবার তাঁকে দুই বছর আগে আক্রমণ করা হয় এবং তিনি আহত হন।’
২০০৪ সাল থেকে কারাগারে আছেন ফিলিস্তিনি নেতা মারওয়ান বারগুতি। ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের (পিএ) নিয়ন্ত্রণকারী দল ফাতাহর একজন শীর্ষ নেতা তিনি। ২০০০-২০০৫ সালে ফিলিস্তিনিদের দ্বিতীয় ইন্তিফাদায় নেতৃত্ব দেওয়ায় ও জনগণের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণে তাঁকে নিশানা করে ইসরায়েল।মারওয়ান বারগুতির ছেলে আরও বলেন, ‘আজ পরিষ্কার হয়ে গেছে যে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী বেন–গভির, যিনি ইসরায়েলের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নেতৃত্বের প্রতিনিধি, তাঁর জীবনকে সরাসরি হুমকির মুখে ফেলেছেন।’
কাসেমের মতে, ‘স্পষ্টভাবে বলা যায় যে তাঁকে (মারওয়ান) তাঁর সেলের ভেতরে হত্যা করার সরাসরি হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ফিলিস্তিনি বন্দীদের ওপর নির্যাতন করা ও নিশানা বানানো আসলে গাজায় ইসরায়েলের চালানো গণহত্যারই অংশ।’
ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানিয়েছে, বেন–গভির কারা কমিশনার কোবি ইয়াকোবির সঙ্গে তেল আবিবের গানোট কারাগারে যান। সেখানে ‘বন্দী সন্ত্রাসী’দের পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার বিষয়টি কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করেন তাঁরা।
কারাগারে মারওয়ান বারগুতিকে বেন–গভিরের হুমকি দেওয়ার একটি দৃশ্য