পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক কিশোরী ও নারীদের দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান বিষয়ে বান্দরবান জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জাগো ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের ‘স্বপ্নের সারথি’ প্রকল্পের বিশেষ সমন্বয় সভা হয়েছে।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এই সভায় উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আরো বেশি সমন্বয় বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেন জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “বান্দরবানের রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি উপজেলার মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলে আরো কাজ করার জন্য আমি জাগো ফাউন্ডেশন ট্রাস্টকে আহ্বান জানাচ্ছি। দেশের প্রতিষ্ঠান হিসেবে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজগুলো করতে হবে।”

জাগো ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের ‘স্বপ্নের সারথি’ প্রকল্পের এই সভার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল প্রকল্পের চলমান অগ্রগতি, ভবিষ্যৎ কার্যক্রমসহ প্রকল্পের সার্বিক বিষয়াদি সম্পর্কে বান্দরবান জেলার সরকারি ও বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের অবহিত করা এবং প্রান্তিক ও পিছিয়ে পড়া কিশোরী ও নারীদের দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানে সহযোগিতার আহ্বান জানানো। 

বান্দরবান ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের পরিচালক নু ক্রাচিং মার্মা বলেন, ‘‘বান্দরবানের নারীরা সাধারণত পুরুষ অপেক্ষা অধিক পরিশ্রমী হয়ে থাকে তবুও কর্মক্ষেত্রে তারা পিছিয়ে আছে। তাদের উপযুক্ত দক্ষতামূলক প্রশিক্ষণ দেয়ার মাধ্যমে সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করা যেতে পারে।”

স্বপ্নের সারথি প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক শোয়ে ওয়াই চিং বলেন, “সরকারি ও বেসরকারি সীমাবদ্ধতা ও প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে স্বপ্নের সারথি প্রকল্প ১৩-২৪ বছর বয়সী জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে দক্ষতা উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। আমরা সকল অংশীদারদের থেকে সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।”

সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবু তালেব, বান্দরবান যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক এনায়েত করিম, সরকারি ও বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।  

ঢাকা/চাইমং/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ন দরব ন প রকল প র ব সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

হজ, কলেরা ও কোয়ারেন্টিন

হজ পবিত্র ধর্মীয় আচার হলেও ইতিহাসে এটি বারবার মহামারির কারণে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আরব উপদ্বীপের হেজাজ অঞ্চল, বিশেষ করে মক্কা ও মদিনায়, বিভিন্ন সময়ে সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে, যার মধ্যে কলেরা ছিল অন্যতম। এই মহামারিগুলো রোধে কোয়ারেন্টিন বা সঙ্গনিরোধ ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

মক্কায় মহামারি

মক্কায় মহামারির প্রথম লিখিত বিবরণ পাওয়া যায় ইবনে কাসিরের আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থে। ৯৬৮ সালে ‘আল-মাশরি’ নামক একটি মহামারি মক্কায় আঘাত হানে, যার ফলে অসংখ্য হজযাত্রী এবং তাঁদের বহনকারী উটের মৃত্যু হয়। এমনকি যাঁরা হজ পালন করতে সক্ষম হয়েছিলেন, তাঁরাও অল্প সময়ের মধ্যে মারা যান। এ ঘটনা মক্কার ইতিহাসে মহামারির প্রাথমিক প্রভাবের একটি উদাহরণ।

কলেরার প্রাদুর্ভাব

ঊনবিংশ শতাব্দীতে বিজ্ঞান ও যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতির ফলে হজযাত্রা আরও সহজ ও ব্যাপক হয়। বাষ্পীয় জাহাজের প্রচলনের কারণে অধিক সংখ্যক হজযাত্রী স্বল্প সময়ে মক্কায় পৌঁছাতে শুরু করেন। তবে এটি সংক্রামক রোগের দ্রুত বিস্তারের সুযোগও তৈরি করে। এই সময়ে কলেরা বিশ্বব্যাপী মহামারি হিসেবে আবির্ভূত হয়, এবং হেজাজ অঞ্চলও এর প্রভাব থেকে মুক্ত ছিল না।

কলেরা প্রথম ১৮১৭ সালে বাংলার যশোর অঞ্চলে (বর্তমান বাংলাদেশ) দেখা দেয় এবং দ্রুত ভারত, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারে ছড়িয়ে পড়ে। ১৮৩৩ সালের মধ্যে এটি এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও আমেরিকায় মহামারি হিসেবে প্রভাব ফেলে, যার ফলে বিপুলসংখ্যক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। আরব উপদ্বীপে কলেরার প্রথম প্রাদুর্ভাব ঘটে ১৮২১ সালে। ১৮৩১ সালে মক্কায় এই রোগ প্রথম আঘাত হানে, যার ফলে প্রায় তিন-চতুর্থাংশ বা অন্তত ২০ হাজার হজযাত্রীর মৃত্যু হয়। এই মহামারি ভারতীয় হজযাত্রীদের মাধ্যমে মক্কায় ছড়ায় এবং অভূতপূর্ব দ্রুতগতিতে বিস্তার লাভ করে। পরবর্তী সময়ে ১৮৪১, ১৮৪৭, ১৮৫১, ১৮৫৬-৫৭ ও ১৮৫৯ সালে কলেরা মক্কায় বহু হজযাত্রীর প্রাণ কেড়ে নেয়।

আরও পড়ুনবদর যুদ্ধক্ষেত্রে একটি দিন২০ জুলাই ২০২৩

কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা

তৎকালীন ওসমানিয়া সাম্রাজ্য, যারা হেজাজ অঞ্চলের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে ছিল, কলেরার বিস্তার রোধে ১৮৪০ সাল থেকে কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা প্রয়োগ শুরু করে। হেজাজের সীমান্ত এবং মক্কা ও মদিনার বিভিন্ন স্থানে কোয়ারেন্টিন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে হজযাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হতো এবং সংক্রমণের ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা করা হতো।

ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে আগত হজযাত্রীদের জন্য কোয়ারেন্টিন প্রক্রিয়া বিশেষভাবে কঠোর ছিল। এডেনে যাত্রাবিরতির পর, হজযাত্রীদের ইয়েমেনের উপকূলীয় কামারান দ্বীপে কোয়ারেন্টিন ক্যাম্পে নামানো হতো। স্বাস্থ্য পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে কোয়ারেন্টিনের সময়সীমা এক সপ্তাহ থেকে এক মাস পর্যন্ত হতে পারত। কোয়ারেন্টিন শেষে জাহাজ জেদ্দায় পৌঁছাত এবং পথে ইয়ালামলাম নামক স্থানে হজযাত্রীরা ইহরাম বাঁধতেন, যা ভারতীয় উপমহাদেশের মিকাত (হজের নিয়ত ও ইহরাম বাঁধার নির্ধারিত স্থান) হিসেবে পরিচিত।

আন্তর্জাতিক কলেরা সম্মেলন

কলেরা মহামারির বিশ্বব্যাপী বিস্তার এবং ব্যাপক প্রাণহানির প্রেক্ষাপটে ১৮৬৬ সালে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো একটি আন্তর্জাতিক স্যানিটারি কনফারেন্সের আয়োজন করে, যা পরে ‘কলেরা কনফারেন্স’ নামে পরিচিত হয়। এই কনফারেন্সে ভারতীয় উপমহাদেশকে কলেরার উৎস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই সিদ্ধান্তের ফলে ভারত থেকে আগত হজযাত্রীদের ওপর কঠোর স্বাস্থ্য নজরদারি ও কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা আরোপ করা হয়।

ঊনবিংশ শতাব্দীতে কলেরা মক্কায় ব্যাপক প্রাণহানির কারণ হলেও ওসমানীয় সালতানাতের কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এই মহামারি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভারতীয় উপমহাদেশের হজযাত্রীদের মাধ্যমে কলেরার বিস্তার হলেও কোয়ারেন্টিন ক্যাম্প এবং স্বাস্থ্যবিধি প্রয়োগের মাধ্যমে এর প্রভাব কমানোর চেষ্টা করা হয়।

আরও পড়ুনবিরে শিফা: একটি অলৌকিক কুয়ার গল্প০৫ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ