নাটকীয় ম্যাচে ডর্টমুন্ডকে হারিয়ে সেমিতে রিয়াল
Published: 6th, July 2025 GMT
ক্লাব বিশ্বকাপে এক রোমাঞ্চকর ম্যাচে শেষ মুহূর্তে নাটকীয়তায় ভর করে সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করেছে রিয়াল মাদ্রিদ। বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে নির্ধারিত ৯০ মিনিটে রিয়াল এগিয়ে ছিল ২-০ গোলে। সহজ ম্যাচটা কঠিন হয়ে যায় ইনজুরি টাইমে। তারা ২ গোল ফেরালেও শেষ হাসিটা রিয়ালের। পাঁচ গোলের এই ম্যাচে ৩-২ ব্যবধানে জিতে শেষ চারে পা রেখেছে ১০ জনের রিয়াল। লস ব্লাঙ্কোসদের হয়ে একটি করে গোল গনসালো গার্সিয়া,ফ্রান গার্সিয়া ও কিলিয়ান এমবাপ্পে। এ নিয়ে ক্লাব বিশ্বকাপে ৪ গোল হয়ে গেল ‘নতুন রাউল’খ্যাত গনসালো গার্সিয়ার।
এদিন ম্যাচের শুরু থেকেই প্রাধান্য ছিল রিয়ালের। ১০ মিনিটে আরদা গুলারের দারুণ ক্রস থেকে ভলিতে লক্ষ্যভেদ করেন গনসালো গার্সিয়া। ২০ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ফ্রান গার্সিয়া, তার গোল আসে ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার-আর্নল্ডের ক্রস থেকে। এরপর প্রায় ৭০ মিনিট কোনো গোল না এলেও ইনজুরি টাইমে জমে ওঠে আসল উত্তেজনা। ইনজুরি টাইমের দ্বিতীয় মিনিটে রুডিগারের দুর্বল ক্লিয়ারেন্সে ডি বক্সের কাছে বল পেয়ে জালে বল ঠেলে দেন বেইয়ার। থিবো কোর্তয়া ডান দিকে ঝাপিয়ে পড়েও বল ফ্লিয়ার করতে পারেননি।
এর দুই মিনিট পরই গুলেরের পাসে অ্যাক্রোবেটিক ওভারহেড কিকে রিয়ালকে ৩-১ গোলে এগিয়ে দেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। কিক অফের পরপর ষষ্ঠ মিনিটে পেনাল্টি পায় ডর্টমুন্ড। হুইসেন মাদ্রিদের বক্সে গুইরাসিকে থামাতে গেলে ফাউল করে লাল কার্ড দেখেন। অষ্টম মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করেন গুইরাসি। স্কোর হয় ৩-২। ম্যাচের সমতায় ফেরার আগে আরও একবার ভয় জাগান ডর্টমুন্ড মিডফিল্ডার স্যাবিটাইজার। তার নেওয়া জোরালো শট ডানহাতে ঠেকিয়ে ম্যাচ বাঁচান রিয়াল গোলকিপার থিবো কোর্তোয়া।
ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে রিয়াল মুখোমুখি হবে বর্তমান ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন পিএসজির। অন্য সেমিফাইনালে ফ্লুমিনেন্সের বিপক্ষে খেলবে চেলসি।
ম্যাচ শেষে রিয়াল কোচ জাবি আলোনসো বলেন, 'পিএসজি ম্যাচ চ্যালেঞ্জিং হতে যাচ্ছে। আপাতত আমরা এই ম্যাচ থেকে ইতিবাচক দিক নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চাই।'
তিনি আরও বলেন, 'সবকিছু নিয়ন্ত্রণে ছিল, ফলও। কোনও গোল খাইনি। শেষ ১০ মিনিট ছিল অদ্ভুত।'
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক ল ব ব শ বক প
এছাড়াও পড়ুন:
এই অপচয় রোধে প্রয়োজন টেকসই পদক্ষেপ
প্রতিবছরের মতো এবার যে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সাড়ম্বর আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন ছিল না, এটা ভালো দৃষ্টান্ত। অতীতে এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ নিয়ে আনুষ্ঠানিকতার নামে সরকারের মাহাত্ম্য প্রচার করা হতো।
তবে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল খুবই হতাশাজনক। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩১০ জন পরীক্ষার্থী। পাস করেছে ১০ লাখ ৬ হাজার ৫৫৪ জন। অকৃতকার্য হয়েছে ৪ লাখ ৭২ হাজার ৪৪৬ জন। পাসের হার ৬৮ দশমিক শূন্য ৪; যা গতবার ছিল ৮৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড যুক্ত করলে অকৃতকার্য শিক্ষার্থী ৬ লাখের বেশি।
এই যে জীবনের প্রথম পাবলিক পরীক্ষায় প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হলো, এর জন্য তাদের দায়ী করা যায় না। দায়ী হলেন শিক্ষার অভিভাবক বা রক্ষকেরা। বাংলাদেশে যখন যেই সরকার আসে, তাদের মতো করে একটি শিক্ষানীতি বা কমিশন করে। কিন্তু সেই শিক্ষানীতি বা কমিশন শিক্ষার মানোন্নয়নে আদৌ ভূমিকা রাখছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখা হয় না।
এবার এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার কম হওয়ার জন্য শিক্ষার অভিভাবকেরা যেসব কারণ চিহ্নিত করেছেন, তাকে ‘ঐচ্ছিক’ হিসেবে ধরে নেওয়া যায়। মূল কারণ তাঁরা এড়িয়ে গেছেন। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, ‘আমাদের কোনো টার্গেট ছিল না যে পাসের হার এত করব, বাড়াব, নাকি কমাব। আমাদের মিশন ছিল পরীক্ষা সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা।’
সুন্দরভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন করা শিক্ষা বোর্ড তথা সংশ্লিষ্ট সবার দায়িত্ব। এতে কৃতিত্ব নেওয়ার কিছু নেই। মূল কথা হলো নীতিনির্ধারকেরা শিক্ষার সমস্যাটি কীভাবে দেখেছেন এবং তার প্রতিকারে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন। করোনার কারণে দুই বছর ঠিকমতো বিদ্যালয়ে পাঠদান হয়নি, এটা সত্য; কিন্তু তার আগে কিংবা পরেও পাঠদান সুচারুভাবে সম্পন্ন হয়েছে, এ কথা জোর দিয়ে বলা যায় না। প্রতিটি শ্রেণিতে শিক্ষার্থীর মান যাচাই করার কথা থাকলেও সেটা হয় না। এ কারণেই এসএসসিতে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী অকার্যকর হয়।
আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করেছি, শ্রেণিকক্ষের চেয়ে কোচিং করতে শিক্ষার্থীদের বেশি উৎসাহিত করা হয়। আগে কোচিং সেন্টার ছিল শহরাঞ্চলে, এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলেও প্রসারিত হয়েছে। কোচিং মানে শিক্ষা নয়, পরীক্ষায় কী প্রশ্ন আসবে, কী উত্তর হবে; সেটা শিক্ষার্থীকে জানিয়ে দেওয়া। বহু বছরের কু–অভ্যাসে আমরা শিক্ষাকে এই স্তরে নিয়ে এসেছি।
প্রতিটি দেশের একটি শিক্ষা–দর্শন থাকে, যার উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশ ও ভবিষ্যতে তাকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা। আমাদের শিক্ষার নীতিনির্ধারকেরা এর ওপর কখনো জোর দেননি। অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের অনেকের পড়াশোনা চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। বিশেষ করে মেয়েশিক্ষার্থীদের। এটা কেবল পরিবার বা রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি নয়, মানবসম্পদেরও অপচয়।
শিক্ষা খাতের প্রতি পূর্বাপর সব সরকারই উদাসীনতা দেখিয়ে আসছে। এমনকি গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আসা সরকারও শিক্ষার প্রতি যথেষ্ট মনোযোগ দেয়নি। শিক্ষার মানোন্নয়নে সর্বস্তরে মেধাবী শিক্ষকদের নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে, সময়মতো পাঠ্যবইসহ শিক্ষার সব উপকরণ শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে হবে। আর মেধাবীরা তখনই এই পেশায় আসবেন, যখন সম্মানজনক বেতন–ভাতা পাবেন।
এসএসসি পরীক্ষায় বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর অকৃতকার্য হওয়া ঠেকাতে সরকারকে শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি ঠকমতো পাঠদান ও মান যাচাই হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে তদারকি জোরদার করার বিকল্প নেই।