চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে কেন তোমরা বাদ দিয়ে দিলে? সাকিব আল হাসান দেশে যেতে পারছেন না কেন? মাশরাফি বিন মুর্তজাও দেশের বাইরে নাকি! মোহাম্মদ আশরাফুল কি এখনো ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেন?
এখানে আসার পর থেকে দেখছি বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কানদের আগ্রহ ঘুরেফিরে এসব বিষয়েই। গলের পর কলম্বোতেও কয়েক দিন ধরে প্রেসবক্স আর প্রেসবক্সের বাইরে ইত্যাকার প্রশ্নে স্থানীয়দের কৌতূহল মেটাতে হয়েছে। সেদিন শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটেরই একজন আফসোস করে বলছিলেন, ‘আশরাফুলের মতো ক্রিকেটারের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার মাত্র ২৮ বছর বয়সেই শেষ! দুঃখজনক।’
সে তুলনায় বাংলাদেশের সিরিজ খেলতে আসা দলটা নিয়ে আগ্রহ তেমন দেখিনি এখানে। শ্রীলঙ্কায় এখনো বাংলাদেশের সাবেকদেরই জয়জয়কার। বর্তমান ক্রিকেটারদের বেশির ভাগেরই নামের সঙ্গে চেহারা পুরোপুরি মিলিয়ে উঠতে পারেনি এ দেশের ক্রিকেট জনতা।
তবে কাল রাতটা ভিন্ন রকম গেল। সাপ্তাহিক ছুটির প্রথম দিনে রানাসিংহে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের ভরা গ্যালারি দেখে গেল বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের ক্রিকেটারদের ম্যাচ জেতার ক্ষুধা। এই একটি জয়ই হয়তো তাদের সামর্থ্যের সত্যিকারের প্রকাশ নয়। এর চেয়ে কম বা বেশিও হতে পারে। তবে জয়ের ক্ষুধাটা যে আছে, তা তো বোঝা গেছে।
আরও পড়ুনরেকর্ড গড়ে মিরাজকে কৃতজ্ঞতা জানালেন তানভীর১১ ঘণ্টা আগেনইলে জানিথ লিয়ানাগের ও রকম ব্যাটিংয়ের মধ্যেও কীভাবে আশা ধরে রাখলেন ক্রিকেটাররা? তানভীর ইসলামের পিঠ চাপড়ে অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ তো এমনি এমনি সাহস দিয়ে বলেননি, ‘বোলাররাই মার খায়। নেগেটিভ বোলিং করিস না। উইকেট নেওয়ার বোলিং কর।’
অধিনায়কের মন্ত্রে উজ্জীবিত তানভীর সেটাই করলেন। প্রথম ২ ওভারে ২২ রান দিয়েও শেষ পর্যন্ত ৩৯ রানে ৫ উইকেট। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডেতেই ‘ফাইফার’ নিয়ে জানিয়ে দিলেন, বাংলাদেশ এখনো বাঁহাতি স্পিনারদের উর্বর ভূমি। শুধু একটু পরিচর্যা প্রয়োজন।
শামীম হোসেনের বোলিংও ছিল চোখে আটকে থাকার মতো। দর্শকদের চোখে এবং শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানদের চোখেও। টানা ভালো জায়গায় বল করে যাওয়ার পুরস্কার তাঁর চারিত আসালাঙ্কার উইকেটটি। প্রেমাদাসায় লঙ্কান অধিনায়কের ধারাবাহিক সাফল্যে ছেদ পড়ল তাতে।
সাকিব, মাশরাফি, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ ও তামিমদের নিয়েই শ্রীলঙ্কান দর্শকদের যত আগ্রহ.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্প আর পাগলা তত্ত্ব
গত মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে যখন জানতে চাওয়া হয়েছিল-তিনি ইরানে আক্রমণ চালাতে ইসরায়েলের সাথে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন কিনা। ট্রাম্প জবাবে বলেছিলেন, “আমি এটা করতে পারি। আমি এটা নাও করতে পারি। কেউ জানে না আমি কী করতে যাচ্ছি।”
তিনি বিশ্বকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করেছিলেন যে, তিনি ইরানকে আলোচনা পুনরায় শুরু করার জন্য দুই সপ্তাহের বিরতিতে সম্মত হয়েছেন। তবে সেই বিশ্বাস ভঙ্গ করে ট্রাম্প বোমা হামলা চালিয়েছেন।
ট্রাম্পের কথাবার্তা ও কাজকর্মের একটি প্যাটার্ন উদ্ভূত হচ্ছে। আর এটি হচ্ছে- ট্রাম্প সম্পর্কে সবচেয়ে অনুমানযোগ্য বিষয় হল তার অনিশ্চয়তা। তিনি তার মতামত পরিবর্তন করেন। তিনি নিজেই নিজের বিরোধিতা করেন। তার আচরণ অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্সের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক পিটার ট্রুবোভিটজ বলেছেন, “ট্রাম্প অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত নীতি নির্ধারণী কার্যক্রম তৈরি করেছেন, সম্ভবত রিচার্ড নিক্সনের পর থেকে-অন্তত পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে কেন্দ্রীভূত। ফলে নীতিগত সিদ্ধান্তগুলোকে ট্রাম্পের চরিত্র, তার পছন্দ, তার মেজাজের উপর আরো নির্ভরশীল করে তোলে।”
ট্রাম্প এটিকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করেছেন; তিনি তার নিজস্ব অসঙ্গতিকে একটি মূল কৌশলগত এবং রাজনৈতিক সম্পদে পরিণত করেছেন। তিনি অনিশ্চয়তাকে একটি মতবাদের মর্যাদায় উন্নীত করেছেন। আর এখন হোয়াইট হাউসে তিনি যে ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য এনেছেন তা বৈদেশিক ও নিরাপত্তা নীতিকে পরিচালিত করছে। এই বিষয়টি বিশ্বের ধরনে পরিবর্তন এনেছে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এটিকে ‘ম্যাডম্যান থিওরি’ পাগলা তত্ত্ব বলে অভিহিত করেন। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, একজন বিশ্বনেতা তার প্রতিপক্ষকে বোঝাতে চান যে তিনি মেজাজের দিক থেকে ছাড় আদায়সহ যেকোনো কিছু করতে সক্ষম। সফলভাবে ব্যবহার করা হলে এটি একধরনের বলপ্রয়োগ হতে পারে এবং ট্রাম্প বিশ্বাস করেন যে, তার এই আচরণে লাভ বয়ে আনছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের যেভাবে চান, সেভাবেই নাচাতে পারেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই পদ্ধতি কি শত্রুদের বেলায় কাজ করবে? এর ত্রুটি কি এই হতে পারে যে প্রতিপক্ষকে বোকা বানানোর হাতিয়ারের পরিবর্তে এটি আসলে সুপ্রতিষ্ঠিত এবং স্পষ্টভাবে নথিভুক্ত চরিত্রগত বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি, যার ফলে ট্রাম্পের আচরণ অনুমান করা সহজ হয়ে যায়?
হুমকি আর কৌশলে প্রতিপক্ষকে বশ
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ওভাল অফিসে ট্রাম্প এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্সের কাছে অপমানিত হয়েছিলেন। পরে তিনি ইউক্রেনীয় খনিজ সম্পদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে লাভজনক অধিকার প্রদানে সম্মত হন।
অন্যদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন স্পষ্টতই ট্রাম্পের আকর্ষণ এবং হুমকির ধরাছোয়ার বাইরে রয়ে গেছেন। বৃহস্পতিবার একটি টেলিফোন কলের পর, ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি ‘হতাশ’ যে পুতিন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শেষ করতে প্রস্তুত নন।
আর ইরান? ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তিনি মধ্যপ্রাচ্যের ‘চিরকালের যুদ্ধে’ আমেরিকান সম্পৃক্ততা শেষ করবেন। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত সম্ভবত তার দ্বিতীয় মেয়াদের সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত নীতিগত সিদ্ধান্ত ছিল। প্রশ্ন হচ্ছে, তার এই কাজের কাঙ্ক্ষিত প্রভাব পড়বে কিনা।
সাবেক ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হেগ যুক্তি দিয়ে বলেছেন, আদতে এটি ঠিক বিপরীত কাজ করবে: এটি ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টা করার সম্ভাবনা কমিয়ে দেবে না বরং আরো বেশি করে তুলবে।
নটরডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক মাইকেল ডেস বলেন, “আমি মনে করি এখন ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই আমি অবাক হব না যদি তারা চুপ করে থাকে এবং পূর্ণ জ্বালানি চক্র সম্পন্ন করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে এবং (পারমাণবিক) পরীক্ষা চালায়। আমি মনে করি সাদ্দাম হোসেন এবং মুয়াম্মার গাদ্দাফির শিক্ষা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সম্ভাব্য শাসন পরিবর্তনের মুখোমুখি অন্যান্য স্বৈরশাসকরা ভুলে যাননি। তাই ইরানিরা চূড়ান্ত প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করবে এবং তারা সাদ্দাম ও গাদ্দাফিকে নেতিবাচক উদাহরণ হিসেবে এবং উত্তর কোরিয়ার কিম জং উনকে ইতিবাচক উদাহরণ হিসেবে দেখবে।”
আলোচনায় আস্থা হারানো?
সামনের দিকে তাকালে, শত্রুদের বেলায় অনিশ্চয়তা কাজ নাও করতে পারে, তবে মিত্রদের মধ্যে সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলো টিকিয়ে রাখা সম্ভব কিনা তা স্পষ্ট নয়। এমন উদ্বেগ থাকতে পারে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে একটি অবিশ্বস্ত মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দেখা যেতে পারে।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের রাজনীতির অধ্যাপক জুলি নরম্যান বলেন, “মানুষ যদি আলোচনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বাস না করে, যদি তারা নিশ্চিত না হয় যে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের পাশে দাঁড়াবে, তাহলে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ব্যবসা করতে চাইবে না।”
জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ সাফ বলেছেন, ইউরোপকে এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের থেকে কার্যকরীভাবে স্বাধীন হতে হবে।
লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্সের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক পিটার ট্রুবোভিটজের মতে, “চ্যান্সেলরের মন্তব্যের গুরুত্ব হল এটি একটি স্বীকৃতি যে মার্কিন কৌশলগত অগ্রাধিকারগুলো পরিবর্তিত হচ্ছে। ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের আগে তারা যে অবস্থায় ছিল, সেখানে আর ফিরে যাবে না। ইউরোপকে আরো কার্যকরীভাবে স্বাধীন হতে হবে।”
এর জন্য ইউরোপীয় দেশগুলোকে আরো বৃহত্তর প্রতিরক্ষা শিল্প গড়ে তুলতে হবে, যেখানে কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছেই রয়েছে এমন অস্ত্র এবং সক্ষমতা নিজেদের অর্জন করতে হবে। এই সবকিছু অর্জন করতে বছরের পর বছর সময় লাগবে।
অনিশ্চয়তার অর্থ হল যার নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। তাই সম্প্রতি ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে অনুচ্ছেদ ৫-এর প্রতি ট্রাম্প তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করলেও তার ওপর আস্থা রাখা মুশকিল। ইউরোপীয় মিত্ররা হয়তো মেনে নিয়েছে যে, তাদের প্রতিরক্ষার প্রতি ঐতিহাসিক প্রতিশ্রুতি পালনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর তারা আর নির্ভর করতে পারবে না।
ইউরোপীয় মিত্ররা হয়তো সন্তুষ্ট হতে পারে যে তোষামোদ এবং বাস্তব নীতি পরিবর্তনের মাধ্যমে তারা ট্রাম্পকে ব্যাপকভাবে পাশে রেখেছে; সর্বোপরি, তিনি । কিন্তু অনির্দেশ্যতার অর্থ হল এর নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না - এবং তারা মনে হচ্ছে মেনে নিয়েছে যে তারা আর আত্মতুষ্টিতে তাদের প্রতিরক্ষার প্রতি ঐতিহাসিক প্রতিশ্রুতি পালনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভর করতে পারবে না।
ঢাকা/শাহেদ