আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, আতঙ্কে ভুগছেন ব্যবসায়ীরা
Published: 21st, May 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত আট মাসে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কাঙ্ক্ষিত উন্নতি হয়নি; বরং দিন দিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। তাতে ব্যবসায়ীরা সবাই ভয়ে আছেন। এ অবস্থায় ছিনতাই-চাঁদাবাজির আতঙ্ক থেকে মুক্তি চেয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বাণিজ্য সংগঠন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় আজ বুধবার এ কথা বলেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণে উন্নত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখা নিয়ে মতিঝিলে চেম্বার ভবনে এ সভার আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, চাঁদাবাজি ও প্রতারণার মতো অপরাধের দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য একটি কার্যকর অভিযোগ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা গঠন করা প্রয়োজন। এ ছাড়া রাতের বেলা পণ্য পরিবহন নিরাপদ করতে করিডরভিত্তিক মোবাইল টিম সক্রিয় করার পরামর্শ দেন তাঁরা।
স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে অনিরাপদ পরিবেশ, চাঁদাবাজি, প্রতারণামূলক অনলাইন কার্যক্রম, পণ্য পরিবহন ঝুঁকি, জালিয়াতি প্রভৃতি প্রতিবন্ধকতার কারণে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা ও বিনিয়োগে আস্থা হারিয়ে ফেলছেন।
সরকাররে উদ্দেশে তাসকীন আহমেদ বলেন, ‘আপনারা একদিকে বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আসার কথা বলছেন; অন্যদিকে উদ্যোক্তাদের গ্যাস-বিদ্যুৎ দিতে পারছেন না। দেশের আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখতে পারছেন না। সুদহার বাড়িয়ে বসে আছেন। এ কারণে অনেক ছোট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। বিষয়গুলোর নেতিবাচক প্রভাব শেষ পর্যন্ত আমাদের সামাজিক অবক্ষয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে একটাই দাবি, নির্বিঘ্ন ও নিরাপত্তার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনার নিশ্চয়তা।’
সম্প্রতি দাবিদাওয়া নিয়ে শাহবাগসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান অবরুদ্ধ করে আন্দোলনের ঘটনা ঘটছে। এ প্রসঙ্গে তাসকীন আহমেদ বলেন, দাবি আদায় গণতান্ত্রিক কার্যক্রমের অংশ। তবে অর্থনীতির এ কঠিন সন্ধিক্ষণে ব্যবসা পরিচালনার পাশাপাশি জনগণের দৈনন্দিন কার্যক্রম যেন ব্যাহত না হয়, সেদিকেও সবার নজর দেওয়া প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে নির্ধারিত আলোচনায় রাজধানীর বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা কথা বলেন। তাঁদের মধ্যে ঢাকা চেম্বারের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুস সালাম বলেন, ব্যবসায়ীরা নিয়মিত কর-ভ্যাট দিলেও বর্তমানে তাঁরা ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এক কথায় ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে রয়েছেন।
বাংলাদেশ ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মওলা বলেন, স্থলবন্দরের মাধ্যমে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে দালালের মাধ্যমে ট্রাক ভাড়া করতে গিয়ে ব্যবসার ব্যয় বাড়ছে। মৌলভীবাজার এলাকায় অনিয়ন্ত্রিতভাবে ট্রাকস্ট্যান্ড থাকায় বাবুবাজার ব্রিজে তীব্র যানজট হচ্ছে, ফলে ব্যবসায়িক কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। এ ছাড়া পুরান ঢাকায় ব্যবসায়ীদের নগদ টাকা পরিবহনের নিরাপত্তার স্বার্থে সন্ধ্যাকালীন পুলিশি টহল বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো.
মোহাম্মদপুর টাউন হল কাঁচাবাজার বণিক সমিতির সভাপতি লুৎফুর রহমান বলেন, মোহাম্মদপুরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। এখানে ছিনতাইকারীরা পুলিশের সামনেই ঘুরে বেড়ায়। অভিযোগ দিলেও পুলিশ কাউকে আটক করে না।
বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি নেসার উদ্দিন বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের নৈরাজ্যে এখন জনজীবনের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
এ ছাড়া সভায় অন্যদের মধ্যে ঢাকা চেম্বারের সাবেক সহসভাপতি এম আবু হোরায়রাহ, মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজি সৈয়দ মোহাম্মদ বশির উদ্দিন, বাংলাদেশ মনিহারি বণিক সমিতির সহসভাপতি হাজি ফয়েজউদ্দিন, ধামরাই ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, ঢাকা চেম্বারের পরিচালক এনামুল হক পাটোয়ারী, মতিঝিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মহায়মেনুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর স থ ত র ব যবস য় র ছ নত ই আতঙ ক
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচন, করিডোর, বন্দর ও মব নিয়ে যা বললেন সেনাপ্রধান
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত বলে মনে করেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
বুধবার (২১ মে) ঢাকা সেনানিবাসের সেনা প্রাঙ্গণে অফিসার্স অ্যাড্রেসে সেনাপ্রধান এ কথা বলেন।
ঢাকায় অবস্থানরত সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে অংশ নেন। অনেক কর্মকর্তা ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন। অনুষ্ঠানে নির্বাচন ছাড়াও করিডর, বন্দর, সংস্কারসহ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে।
আরো পড়ুন:
আইনশৃঙ্খলা নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক
স্থিতিশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতি বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ প্রধান উপদেষ্টার
সেনানিবাস ঘিরে ‘নাশকতার পরিকল্পনা’, বরখাস্ত সৈনিকসহ গ্রেপ্তার ৩
নির্বাচন প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলেছেন, এ বিষয়ে তার অবস্থান আগের মতোই। দেশের ভবিষ্যৎ পথ নির্ধারণের অধিকার একটি নির্বাচিত সরকারেরই রয়েছে।
করিডর প্রসঙ্গ
সেনাপ্রধান মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডর-সংক্রান্ত আলোচনার বিষয়েও কথা বলেন। এ-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডর বিষয়ে সিদ্ধান্ত একটি নির্বাচিত সরকার থেকেই আসতে হবে এবং তা বৈধ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই হতে হবে। এখানে জাতীয় স্বার্থ দেখতে হবে। যা করার জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করেই করতে হবে। যা-ই করা হোক না কেন,পলিটিক্যাল কনসেনসাসের (রাজনৈতিক ঐকমত্য) মাধ্যমে সেটা হতে হবে।”
বন্দর প্রসঙ্গ
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশিদের হাতে দেওয়া নিয়ে সাম্প্রতিক আলোচনা ও বিতর্কের বিষয়েও কথা বলেছেন সেনাপ্রধান। এ-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “এখানে স্থানীয় মানুষ ও রাজনৈতিক নেতাদের মতামত প্রয়োজন হবে। রাজনৈতিক সরকারের মাধ্যমে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।”
‘মব ভায়োলেন্স’
‘মব ভায়োলেন্স’ বা উচ্ছৃঙ্খল জনতার সংঘবদ্ধ বিশৃঙ্খলা বা আক্রমণের বিরুদ্ধেও কঠোর বার্তা দিয়েছেন জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি বলেন, “আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সেনাবাহিনী এখন আরো কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে। সংঘবদ্ধ জনতার নামে বিশৃঙ্খলা বা সহিংসতা আর সহ্য করা হবে না।”
সংস্কার ইস্যু
সংস্কার প্রসঙ্গে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, “কী সংস্কার হচ্ছে, কীভাবে হচ্ছে, এ বিষয়ে তার কিছু জানা নেই। এ বিষয়ে তার সঙ্গে কোনো পরামর্শ বা আলোচনা করা হয়নি।”
সামনে ঈদুল আজহা; মানুষ যেন নিরাপদে ও উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদ উদ্যাপন করতে পারে, সে ব্যাপারে সহযোগিতা করতে বলেছেন জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
সেনাপ্রধান তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কখনোই এমন কোনো কার্যকলাপে যুক্ত হবে না, যা জাতীয় সার্বভৌমত্বের জন্য ক্ষতিকর। তিনি সব পর্যায়ের সেনা সদস্যদের নিরপেক্ষ থাকার এবং ভবিষ্যতে নির্বাচনী দায়িত্ব সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালনের নির্দেশ দেন।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পালনের জন্য সেনাপ্রধান সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। পাশাপাশি বলেছেন, “অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা সহযোগিতা করছি। সহযোগিতা করে যাব।”
ঢাকা/হাসান/রাসেল