‘নতুন মেসি’ ইয়ামাল কত বেতন পাবেন বার্সায়, মেসিকে ছুঁতে কত দেরি
Published: 23rd, May 2025 GMT
পেশাদার ফুটবলে অভিষেকের পর থেকেই লামিনে ইয়ামালকে তুলনা করা হচ্ছে লিওনেল মেসির সঙ্গে। বার্সার হয়ে লিগসহ একাধিক শিরোপা জিতে এবং ব্যক্তিগত কিছু রেকর্ড গড়ে সেই তুলনার মানও রেখেছেন ইয়ামাল।
যে কারণে কিছুদিন আগেও তাঁকে বার্সার ভবিষ্যৎ ভাবা হলেও তিনিই এখন দলটির বর্তমান। আগামী মৌসুমে মেসির আইকনিক ১০ নম্বর জার্সিটাও উঠবে ইয়ামালের গায়ে।
সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত মেসি হওয়ার পথে ইয়ামাল যে ঠিকঠাক হেঁটে চলেছেন, সেটা বলাই যায়। প্রশ্ন হচ্ছে, পারফরম্যান্স ও অর্জনে তো মেসি হওয়ার পথে এগোচ্ছেন, কিন্তু আয়ের দিক থেকে ইয়ামালের অবস্থান এখন কোথায়?
আরও পড়ুন১৭ বছর বয়সী ইয়ামালের সঙ্গে টক্কর শুধু পেলের, মেসি–রোনালদো অনেক পেছনে০২ মে ২০২৫শেষ হতে যাওয়া মৌসুমে লা লিগা, স্প্যানিশ সুপার কাপ এবং কোপা দেল রের শিরোপা জিতেছেন ইয়ামাল। তাঁর নাম সম্ভাব্য ব্যালন ডি’অরজয়ীর তালিকায়ও আছে আলোচনায়।
লিওনেল মেসি ও লামিনে ইয়ামাল.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শুধু বাহবা নয়, কাঠামো দিন নারীদের ফুটবলে
বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের এশিয়ান কাপের মূল পর্বে জায়গা করে নেওয়া শুধু ক্রীড়াক্ষেত্রে একটি বড় অর্জন নয়, এটি নারী জাগরণের প্রতীকও। এই জয় প্রমাণ করে, চেষ্টা থাকলে বাংলাদেশের মেয়েরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কতটা দাপট দেখাতে পারেন। বাহরাইনের মতো ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ৩৬ ধাপ এগিয়ে থাকা দলকে ৭ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। ৭৩ ধাপ এগিয়ে থাকা মিয়ানমারকে তাদেরই মাঠে ২-১ গোলে হারিয়ে নারী এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে গড়েছে ইতিহাস। নিজেদের চেয়ে পেছনে থাকা তুর্কমেনিস্তানকেও গুঁড়িয়ে দিয়েছে ৭ গোলে। তিন ম্যাচে ১৬ গোল করে মাত্র একটি হজম—এই পরিসংখ্যান শুধু বিজয়ের নয়; মাঠে প্রতিপক্ষকে শাসনেরও।
দক্ষিণ এশিয়ার গণ্ডি পেরিয়ে বাংলাদেশকে প্রথমবার এশিয়ার শীর্ষ মঞ্চে নিয়ে গেছেন মেয়েরা। আগামী বছরের মার্চে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে ১২ দলের এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্ব। সেখানে সেরা ছয়ে থাকলে ২০২৭ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপে খেলার জন্য সরাসরি সুযোগ মিলবে। সেরা আটে থাকলে থাকবে আন্তমহাদেশীয় প্লে-অফে খেলার সুযোগ। বলা চলে, বিশ্বকাপের হাতছানিতে এখন বাংলাদেশ।
এই কৃতিত্ব মেয়েদের। নানা সীমাবদ্ধতা জয় করে তাঁরা এ পর্যায়ে পৌঁছেছেন। মিয়ানমার যাওয়ার আগে তাঁদের ঝুলিতে ছিল টানা দুটি সাফ শিরোপা। এখন যোগ হয়েছে তার চেয়েও বড় অর্জন। অথচ বিস্ময়কর হলেও সত্য, দেশে মেয়েদের জন্য কোনো টুর্নামেন্ট নেই। নিয়মিত লিগ হয় না। সর্বশেষ লিগ হয়েছে ১৩ মাস আগে, সেটিও নামমাত্র। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে (বাফুফে) কোনোমতে ধরেবেঁধে কয়েকটা দল এনে লিগ করতে হয়। বড় বড় ক্লাব নারী ফুটবলে আগ্রহী নয়।
মেয়েরা একে একে সাফল্য দিলেও দেশে নারী ফুটবলের কোনো কাঠামোই গড়ে ওঠেনি। শুধু বাফুফে ভবনে দীর্ঘমেয়াদি অনুশীলন ক্যাম্পেই তাঁদের পথচলা। কয়েক বছর আগে এই ক্যাম্পে খেলোয়াড়ের সংখ্যা ছিল ৩০ জনের মতো, এখন সেটা ৭০ ছুঁয়েছে। কিন্তু ভবনের আবাসনব্যবস্থা বাড়েনি। উন্নত আবাসন এখন জরুরি।
মেয়েদের আর্থিক দিকটিও রয়ে গেছে ভঙ্গুর। ২০২২ সাফজয়ী দলকে দেড় কোটি টাকা আর্থিক প্রণোদনা দিয়েছিল প্রথম আলো। মেয়েরা তখন মাসিক বেতনের আওতায় এলেও প্রায়ই তা বকেয়া পড়েছে। এখনো শীর্ষ নারী ফুটবলারদের মাসিক বেতন সর্বোচ্চ ৫৫ হাজার টাকা। মেয়েরা ম্যাচ ফি পাওয়ার কথা, সেটাও বকেয়া থাকে মাসের পর মাস।
২০২৩ সালে আর্থিক সংকটের অজুহাতে মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাইয়ে মেয়েদের পাঠায়নি বাফুফে। গত বছর অক্টোবরে সাফ শিরোপা ধরে রেখে ঢাকায় ফেরার পর মেয়েদের জন্য বাফুফে দেড় কোটি টাকার বোনাস ঘোষণা করলেও আট মাসেও তা দেওয়া হয়নি। এমনকি রোববার মধ্যরাতে মেয়েরা দেশে ফেরার পর রাত তিনটায় হাতিরঝিলে যে জমকালো সংবর্ধনা দেওয়া হয়, তাতে হাজারো দর্শকের উচ্ছ্বাস, ডিজিটাল আয়োজন, কর্মকর্তাদের ভাষণ—সব থাকলেও ছিল না শুধু আর্থিক পুরস্কার বা তার ঘোষণা।
বাফুফের উচিত শুধু বকেয়া বোনাস পরিশোধ নয়, মেয়েদের জন্য নতুন আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থা করা। লিগ দ্রুত আয়োজন করতে হবে। প্রয়োজন টুর্নামেন্ট এবং শক্তিশালী প্রতিপক্ষের সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচ। শুধু মুখে বাহবা নয়, বাস্তব পরিকল্পনা ও পদক্ষেপে নারী ফুটবলের পাশে দাঁড়ানো এখন বাফুফের দায়িত্ব। খাবারের মান বাড়ানো, সময়মতো বেতন ও ম্যাচ ফি পরিশোধ করতে হবে। উন্নতির জন্য আরও বিদেশি কোচ আনাও জরুরি।
এই মেয়েরা যদি এত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও এশিয়ার শীর্ষ স্তরে পৌঁছাতে পারেন, তাহলে কাঠামোগত সহায়তা পেলে তাঁদের বিশ্বমঞ্চে পৌঁছানো সময়ের ব্যাপার। যতবার তাঁরা মাঠে ইতিহাস গড়েছেন, ততবারই দেশের ফুটবলে সাংগঠনিক নড়বড়ে ছবি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এখন দরকার নারী ফুটবলারদের প্রতিশ্রুত ভবিষ্যৎ গড়া।