ফ্যাসিবাদ উৎখাতে ভূমিকা রাখা সব পক্ষকে দায়িত্বশীল ও সতর্ক আচরণ করার আহ্বান জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। তিনি বলেছেন, জুলাইয়ের রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের ফলে জাতির সামনে রাষ্ট্রের নীতিগত, প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রশাসনিক সংস্কারের যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, কোনোভাবেই সে সুযোগ নষ্ট করা যাবে না।

আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে এক বৈঠকে দলের আমির এ কথাগুলো বলেন। দলের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সৈয়দ রেজাউল করীম বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর চাওয়া-পাওয়ার বিষয় আছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপে ফেলে দাবিদাওয়া আদায়ের রাজনীতি ও পরস্পরবিরোধী রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে সরে আসতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে উত্তরবঙ্গের নির্ধারিত কর্মসূচি বাদ দিয়ে ঢাকায় ফ্যাসিবাদবিরোধী পাঁচটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে অংশ নিয়ে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দৃঢ় সমর্থনের কথা জানিয়েছেন।

এরই ধারাবাহিকতায় আজ প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানিয়ে ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, ‘অভ্যুত্থান–পরবর্তী দেশের মানুষের অভূতপূর্ব অকুণ্ঠ সমর্থনে আপনাকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আপনার দায় শহীদদের রক্ত ও আহত ব্যক্তিদের বেদনার প্রতি। তাঁদের রক্ত ও জীবন উৎসর্গকে সার্থক করতে সংস্কারের গুরুদায়িত্ব আপনাকে পালন করতেই হবে। কোনো দল বা ব্যক্তিবিশেষের চাপ, অসহযোগিতা, বাধাকে উপেক্ষা করুন। ১৮ কোটি জনতার দেওয়া দায়িত্ব আপনি অবিচল থেকে পালন করুন। দেশবাসী আপনার পাশে ছিল, আছে এবং থাকবে, ইনশা আল্লাহ।’

সৈয়দ রেজাউল করীম আরও বলেন, নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ, সশস্ত্র বাহিনীসহ রাষ্ট্রের সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব-কর্তব্য ও কর্মপরিধি সুনির্দিষ্টভাবে বলা আছে। কোনোভাবেই এর ব্যত্যয় ঘটানো যাবে না। এতে রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে। তাই রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে নিজ কর্মপরিধির মধ্যে সতর্ক ও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ক র আম র ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

কিছু উপদেষ্টার ভূমিকায় উদ্বিগ্ন বিএনপি

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টার ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন দলটির নেতারা। তাঁরা মনে করছেন, সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টার বক্তব্য, তৎপরতা ও প্রশাসনিক পদায়নে পক্ষপাতমূলক আচরণের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, যা সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করছে।

গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির এই সভায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সরকারের কিছু উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা সভায় মূল আলোচ্য বিষয় ছিল বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে।

এ ছাড়া দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর, প্রশাসনিক রদবদল ও নির্বাচনী প্রস্তুতিসহ আরও কিছু বিষয়ে আলোচনা হয়।

সভায় উপস্থিত একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এ পরিস্থিতিতে শিগগিরই প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎ করবে। এ বিষয়গুলো প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করার পাশাপাশি তাঁদের উদ্বেগের কথাও জানাবেন।

ওই সূত্রগুলো জানায়, সরকারের কিছু উপদেষ্টার সাম্প্রতিক মন্তব্য ও কর্মকাণ্ড নিয়ে বৈঠকে একাধিক সদস্য উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাঁদের বক্তব্যে উঠে আসে—যাঁরা নিরপেক্ষ থাকার কথা, তাঁরা এমন কিছু আচরণ করছেন, যাতে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার যথেষ্ট কারণ তৈরি হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে উদাহরণ টেনে কয়েকজন নেতা বলেন, ৫ আগস্টের পর প্রশাসনে যেসব রদবদল বা নতুন পদায়ন হয়েছে, সেখানে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। মাঠপর্যায়ে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরিতেও ওই দলের প্রভাব দেখা যাচ্ছে। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে বিতর্কও তত বাড়ছে।

আরও পড়ুনকোন কোন উপদেষ্টা ষড়যন্ত্রে, তাঁদের নাম ও কণ্ঠ রেকর্ড আছে: জামায়াত নেতা তাহের৯ ঘণ্টা আগে

সভায় বিএনপির নেতারা অভিমত ব্যক্ত করেন, সরকারের এখনই উচিত নিজেদের চরিত্র এমনভাবে দাঁড় করানো, যাতে জনগণ এবং সব দল আশ্বস্ত হয়—এ সরকার সত্যিকার অর্থেই তত্ত্বাবধায়ক ধাঁচের নিরপেক্ষ সরকার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চাই না, এই সরকার তাদের নিরপেক্ষতা হারিয়ে ফেলুক। তবে কিছু উপদেষ্টার আচরণে মানুষ সন্দিহান হচ্ছে। একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সরকারের উচিত প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা দৃশ্যমানভাবে প্রদর্শন করা।’

সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ১৭ অক্টোবর সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল অংশ নেবে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বিএনপির পক্ষে সনদে সই করবেন।

এ ছাড়া স্থায়ী কমিটির সভায় দলীয় গণসংযোগ ও প্রচারণা জোরদারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। মাঠপর্যায়ে দলের বার্তা পৌঁছাতে মিডিয়া সেল ও কমিউনিকেশন সেলকে আরও সক্রিয় করার নির্দেশ দেওয়া হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিএনপির বিরুদ্ধে যে ‘অপপ্রচার’ চলছে, তার মোকাবিলায় বিকল্প বয়ান বা পাল্টা কৌশল গ্রহণের পরামর্শ দেন একাধিক সদস্য।

বৈঠকে প্রার্থী মনোনয়ন প্রসঙ্গে লম্বা আলোচনা না হলেও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই দায়িত্ব ইতিমধ্যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপর অর্পণ করা হয়েছে। তিনি মাঠপর্যায়ের মতামত বিশ্লেষণ করে শিগগিরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

আরও পড়ুন‘উপদেষ্টাদের অনেকেই সেফ এক্সিটের কথা ভাবতেছে’, নাহিদ ইসলামের এ বক্তব্য নিয়ে আলোচনা০৫ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভোটার তালিকা নিয়ে অভিযোগ ছাত্রদলের, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে শিবির
  • কিছু উপদেষ্টার ভূমিকায় উদ্বিগ্ন বিএনপি