কেউ হতে চান আইনজীবী, কেউ চিকিৎসক, কেউ সাংবাদিক, কেউ সরকারি চাকরিজীবী, কেউবা উদ্যোক্তা। কিন্তু সবার স্বপ্ন কি পূরণ হয়? হয় না। এমন অনেকের স্বপ্ন হারিয়ে যায় বাল্যবিবাহের কারণে। মফস্‌সলে প্রজননস্বাস্থ্য বিষয়ে সঠিক ও পর্যাপ্ত শিক্ষার সুযোগও সীমিত। তরুণদের বেড়ে ওঠার পথে বাধা দূর করতে চাই সঠিক নেতৃত্ব।

আজ শনিবার সৈয়দপুরের ড্রিম প্লাস কমিউনিটি সেন্টারে দিনব্যাপী যুব সম্মেলনে অংশ নেন রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত শতাধিক তরুণ-তরুণী। যৌথভাবে এ আয়োজন করে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ও প্রথম আলো। অনুষ্ঠান আয়োজনে সহযোগিতায় ছিল সৈয়দপুর বন্ধুসভা।

সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ডিরেক্টর (ইনফ্লুয়েন্সিং, ক্যাম্পেইনস ও কমিউনিকেশনস) নিশাত সুলতানা। তিনি বলেন, তরুণেরাই ইতিবাচক পরিবর্তন আনবেন। এখন সময় তারুণ্যের। যদি তরুণদের ইতিবাচক শক্তিকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায়, তাহলে বদলে যাবে বাংলাদেশ।

নিশাত সুলতানা আরও বলেন, ‘পরিবর্তনের জন্য একযোগে কাজ করতে হবে। জ্ঞান–বিজ্ঞানে এগিয়ে যেতে হবে, মেধায় যোগ্যতায় আত্মবিশ্বাসী হতে হবে, সত্য ও ন্যায়ের পথে থাকতে হবে, কুসংস্কার ও সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করে যেতে হবে। নিশ্চয়ই আমরা বিজয়ী হব।’

অনুষ্ঠানের শুরুতে অনলাইনে যুক্ত হয়ে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের সুরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা রেজানুল হক অনুষ্ঠানে আগত তরুণদের ‘সুরক্ষা নীতিমালা’ বিষয়ে ধারণা দিয়ে বলেন, ‘দিনব্যাপী প্রশিক্ষণে ধর্ম–বর্ণ-জেন্ডারনির্বিশেষ সবার সঙ্গে একই ধরনের আচরণ করব এবং তা হবে সম্মান ও মর্যাদাপূর্ণ।’

সম্মেলনে ‘তরুণ নেতৃত্ব’ বিষয়ে একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ পর্ব পরিচালনা করেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) আউটরিচ ও কমিউনিকেশন বিভাগের ডেপুটি কো–অর্ডিনেটর জাফর সাদিক। তিনি বলেন, ১০ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে দেখতে চাই, নিজের স্বপ্ন কী, তা ঠিক করতে হবে। মই বা সিঁড়িতে ওঠার মতো ধাপে ধাপে সে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। নিজের প্রস্তুতির জন্য এখন থেকেই বিতর্ক, আবৃত্তি ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করা জরুরি।

সৈয়দপুর যুব সম্মেলনে প্রজননস্বাস্থ্য বিষয়ে একটি প্রশিক্ষণ সেশন পরিচালনা করেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের পরামর্শক সৈয়দ মো.

নূরউদ্দিন।

মফস্‌সল ও গ্রামে বাল্যবিবাহের প্রভাব এবং এ থেকে উত্তরণের পথ নিয়ে আয়োজন করা হয় আলাদা সেশন। সেশনটি পরিচালনা করেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের অ্যাডভোকেসি ও ক্যাম্পেইন ম্যানেজার জারফিশা আলম।

দিনব্যাপী সম্মেলনে সংগীত পরিবেশন করেন সৈয়দপুর বন্ধুসভার তাপস, সৃষ্টি ও লাবিব।

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যান্ড ‘টঙের গান’–এর সংগীত পরিবেশনা তরুণদের উচ্ছ্বাসে মাতিয়ে রাখে।

যুব সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সৈয়দপুর প্রতিনিধি এম আর আলম।

সম্মেলনে সমাপনী বক্তব্য ও অংশগ্রহণকারী তরুণদের ধন্যবাদ দেন প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরী।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সীতাকুণ্ডে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ মনোনয়নবঞ্চিত বিএনপি নেতার সমর্থকদের

চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ায় তাঁর বিক্ষুব্ধ কর্মী-সমর্থকেরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। সোমবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারী শহীদ মিনার এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করেন তাঁরা।

এ সময় বিক্ষোভকারীরা টায়ার জ্বালিয়ে স্লোগান দেন। এ ছাড়া মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করার খবর পাওয়া গেছে। রাত সাড়ে আটটার দিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করে মিছিল করছিলেন বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা।

এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ২৩৭ আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের নাম ঘোষণা করা হয়। বাদ পড়েন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী।

এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ২৩৭ আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে আসলাম চৌধুরীর কর্মী-সমর্থকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে দেন। এ সময় তাঁরা ‘দুর্দিনের আসলাম ভাই, আমরা তোমায় ভুলি নাই’ ‘আসলাম ভাইয়ের ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ এমন স্লোগান দেওয়া হয়।

বিক্ষুব্ধ বিএনপি নেতা-কর্মীরা বলছেন, আসলাম চৌধুরী দলের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ করেছেন। তিনি দলের জন্য কাজ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের রোষানলে পড়ে কারাবন্দী হন। দীর্ঘ সময় তিনি জেল-জুলুম অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করেছেন। অথচ এখন সুসময়ে দল তাঁকে বঞ্চিত করছে। তাঁরা দলের এ সিদ্ধান্ত মানেন না। তাই প্রতিবাদে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছেন তাঁরা।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি মো. মোরসালীন প্রথম আলোকে বলেন, আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রার্থী ঘোষণার পর বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা আবেগ ধরে রাখতে পারেননি। তাঁরা যে যাঁর জায়গা থেকে মহাসড়কে উঠে প্রতিবাদ শুরু করেন। তাঁরা অন্তত সীতাকুণ্ডের ৩০টি স্থানে মহাসড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।

ঘোষিত প্রার্থী কাজী মুহাম্মদ সালাউদ্দিন উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব কাজী মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের ছোট ভাই। একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম তাঁকে যোগ্য মনে করেছেন বিধায় তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে। তিনি দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন করতে চান। এর আগে ২০১৪ সালে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছিলেন।

ফৌজদারহাট পুলিশ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, ফৌজদারহাট-বন্দর সংযোগ সড়কের মাথা, ফৌজদারহাট, জলিল গেইট, ভাটিয়ারী, মাদামবিবিরহাট, কদমরসুল এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করেছেন বিএনপির নেতা–কর্মীরা। এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ রয়েছে। ফলে উভয় দিকে যান চলাচল বন্ধ। পুলিশ বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের সরাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ