মধ্যপ্রাচ্যে কি আরেক মিত্রকে হারাতে যাচ্ছে রাশিয়া
Published: 18th, June 2025 GMT
ইসরায়েল ইরানে ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নাম দিয়ে হামলা শুরুর পর রাশিয়ার কর্মকর্তারা বিষয়টিকে মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনাকে ‘উদ্বেগজনক’ ও ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন।
এরপর রাশিয়ার গণমাধ্যমগুলো দ্রুত মস্কোর জন্য সম্ভাব্য ইতিবাচক দিকগুলোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছিল। মস্কোর জন্য সম্ভাব্য ইতিবাচক দিকগুলোর মধ্যে ছিল, বিশ্বব্যাপী তেলের দাম বাড়ার কারণে রাশিয়ার কোষাগার বৃদ্ধি পাবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ থেকে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি সরে যাবে। এ নিয়ে মস্কোভস্কি কোমসোমোলেৎসের একটি শিরোনাম ছিল, ‘কিয়েভকে ভুলে গেছে’।
আর যদি এই সংঘাতে ক্রেমলিনের মধ্যস্থতার প্রস্তাব গৃহীত হয়, তাহলে রাশিয়া ইউক্রেনে যুদ্ধ চলা সত্ত্বেও মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ শক্তি ও শান্তির দূত হিসেবে তুলে ধরতে পারবে।
তবে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান যত দীর্ঘায়িত হচ্ছে ততই স্পষ্ট হচ্ছে, চলমান ঘটনা থেকে রাশিয়ার হারানোর অনেক কিছুই আছে।
গত সোমবার বাণিজ্য বিষয়ক দৈনিক পত্রিকা কমারসান্টে রাশিয়ার রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আন্দ্রেই কর্তুনভ লিখেছেন, ‘সংঘাতের উত্তেজনা বৃদ্ধি মস্কোর জন্য গুরুতর ঝুঁকি ও সম্ভাব্য ক্ষতির বার্তা বহন করে।’ তিনি আরও লিখেছেন, মাত্র পাঁচ মাস আগে রাশিয়া একটি দেশের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। অথচ ওই দেশের ওপর ইসরায়েলের ব্যাপক হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে রাশিয়া।
আন্দ্রেই কর্তুনভ লিখেছেন, ‘স্পষ্টভাবে বলা যায়, মস্কো শুধু ইসরায়েলের নিন্দা জানিয়ে রাজনৈতিক বিবৃতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে চায়। তারা ইরানকে সামরিক সহায়তা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত নয়।’
ভ্লাদিমির পুতিন ও প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান যে রুশ-ইরান কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তিতে চলতি বছরের শুরুতে স্বাক্ষর করেছেন, সেটি কোনো সামরিক জোট নয়। এই চুক্তির আওতায় তেহরানের প্রতিরক্ষায় আসতে মস্কো বাধ্য নয়। যদিও সে সময় বিষয়টি নিয়ে মস্কো আলোচনা করেছিল।
রিয়া নোভোস্তি সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন, চুক্তিটিতে ‘আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে শান্তি ও নিরাপত্তার স্বার্থে সমন্বয় জোরদারের ওপর বিশেষ গুরুত্ব’ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মস্কো ও তেহরানের মধ্যে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা খাতে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার আকাঙ্ক্ষার কথাও উঠে এসেছে।
গত ছয় মাসে মধ্যপ্রাচ্যে মস্কো ইতিমধ্যে তাদের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র বাশার আল-আসাদকে হারিয়েছে। গত ডিসেম্বর সিরিয়ার এই নেতা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তাঁকে রাশিয়ায় আশ্রয় দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। ইরানে শাসনব্যবস্থার পরিবর্তনের সম্ভাবনা এ অঞ্চলে আরেকজন কৌশলগত মিত্রকে হারানোর শঙ্কা—মস্কোর জন্য একটি বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
গতকাল মঙ্গলবার মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে মস্কোভস্কি কোমসোমোলেত্স শেষে বলেছে, ‘বর্তমানে বৈশ্বিক রাজনীতিতে বাস্তবেই ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে, যা আমাদের দেশে সরাসরি অথবা পরোক্ষভাবে প্রভাব ফেলবে।’
ভ্লাদিমির পুতিন চলতি সপ্তাহের অধিকাংশ সময় সেন্ট পিটার্সবার্গে কাটাবেন। এই শহরে বার্ষিক আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরামের আয়োজন করা হয়েছে। একসময় এই অনুষ্ঠানকে ‘রাশিয়ার দাভোস’ বলা হলেও এখন আর সেই উপাধি তেমনভাবে প্রযোজ্য নয়।
গত কয়েক বছরে, বিশেষ করে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনের পর থেকে পশ্চিমা বড় বড় কোম্পানির প্রধান নির্বাহীরা এই ফোরাম এড়িয়ে চলেছেন। তবু আয়োজকেরা দাবি করছেন, চলতি বছর এই ফোরামে ১৪০টির বেশি দেশ ও অঞ্চলের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন।
ইউক্রেন যুদ্ধকে ঘিরে রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে—এই বার্তা দিতে রুশ কর্তৃপক্ষ নিঃসন্দেহে এই আয়োজনকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে। যদিও এটি একটি অর্থনৈতিক ফোরাম, তবু ভূরাজনীতির প্রভাব এখানে পড়বে।
আরও পড়ুনইউক্রেনে ১০ লাখ সেনা হারিয়ে রাশিয়া এখন কী করবে১৩ জুন ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউক র ন
এছাড়াও পড়ুন:
তথ্য এখন জাতীয় নিরাপত্তার কৌশলগত অস্ত্র: পরিবেশ উপদেষ্টা
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, “জাতীয় নিরাপত্তা এখন কেবল অস্ত্রের ওপর নির্ভর করে না, এটি জনমতের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বিভ্রান্তিকর তথ্য একটি মনস্তাত্ত্বিক অস্ত্র; এটি মোকাবিলায় চাই সত্য, আস্থা এবং তথ্যভিত্তিক সচেতনতা।”
বুধবার (১৮ জুন) মিরপুরের ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজে (এনডিসি) অনুষ্ঠিত ‘অ্যাডভান্সিং ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট: ইউজ অফ ইনফরমেশন এজ এ পাওয়ারফুল স্ট্রাটেজিক টুল’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
সেমিনারটি যৌথভাবে আয়োজন করে এনডিসি এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ (বিপিএসএস)।
আরো পড়ুন:
বন্যপ্রাণি সংরক্ষণে অবদানের জন্য পুরস্কার পাচ্ছে ৪ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনে পরিবেশ উপদেষ্টা
উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধ আমাদের ইতিহাসে এক ট্র্যাজেডি। ৫০ হাজার সৈন্য নিয়ে পরাজয়ের অন্যতম কারণ ছিল ভুল তথ্য ও ষড়যন্ত্র। আজকের দিনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো গুজব ঠিক তেমনি জাতীয় নিরাপত্তা ও উন্নয়নকে হুমকির মুখে ফেলছে।”
তিনি বলেন, “তথ্যের স্বপ্রণোদিত প্রকাশ নিশ্চিত না হলে জনগণ সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, ফলে গুজবই সমাজে চালিকা শক্তি হয়ে ওঠে। রাষ্ট্রের প্রকল্পের খরচ জনগণের টাকায়। তাই জনগণের উচিত সেই প্রকল্প সম্পর্কে জানার অধিকার থাকা।”
উপদেষ্টা জলবায়ু সংকটকে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করে বলেন, “বৈশ্বিক উষ্ণতা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি আমাদের এক-তৃতীয়াংশ ভূখণ্ডকে ডুবিয়ে দিতে পারে। তথ্য শুধু প্রযুক্তি দিয়ে নয়, লোকজ জ্ঞান দিয়েও গঠিত। অনেক ক্ষেত্রে গ্রামের মানুষদের পূর্বাভাস মডেলের চেয়েও বেশি কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।
উপদেষ্টা জানান, যুক্তরাজ্য বাংলাদেশকে স্যাটেলাইটভিত্তিক তথ্য ও প্রশিক্ষণ সহায়তা দিতে প্রস্তুত। এখন প্রয়োজন সেই তথ্য বিশ্লেষণের সক্ষমতা গড়ে তোলা এবং তা সাধারণ মানুষের কাছে সহজভাবে পৌঁছে দেওয়া।
তিনি বলেন, “তথ্য যদি গোপন রাখা হয়, সত্য যদি দমন করা হয়, তাহলে আমরা টেকসই উন্নয়ন ও নিরাপত্তা দুটোই হারাব। এই আলোচনার মাধ্যমে আমরা যেন একটি তথ্যভিত্তিক, সুরক্ষিত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গড়ার পথে আরও একধাপ এগিয়ে যেতে পারি।”
অন্যদের মাঝে বক্তব্য দেন, ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের কমান্ড্যান্ট লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ শাহীনুল হক। এছাড়া চারজন অংশগ্রহণকারী মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
এতে ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা, কূটনীতিক, শিক্ষাবিদ, অংশগ্রহণকারী এবং উন্নয়ন পেশাদাররা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/মেহেদী