পাঁচ বোলার নিয়েও আপত্তি নেই হাবিবুলের
Published: 22nd, June 2025 GMT
গলে প্রথম ইনিংসে ফাইফার, দ্বিতীয় ইনিংসে এক উইকেট—বিদেশের মাটিতে প্রথমবার বোলিং করার সুযোগ পেয়ে বাজিমাত করেছেন নাঈম হাসান। অথচ তার খেলার সুযোগ হতো কি না, সেটাই ছিল বিরাট প্রশ্ন। মেহেদী হাসান মিরাজ জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় গলে খেলতে পারেননি। কলম্বোতে তার ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে। মিরাজ ফিরলে একাদশের বাইরে যেতে হবে নাঈমকে? সেই প্রশ্নই উঁকি দিচ্ছে সর্বত্র।
কলম্বোতে কেমন একাদশ হতে পারে? সাবেক অধিনায়ক ও নির্বাচক হাবিবুল বাশার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানালেন, সিংহলিজ ক্রিকেট গ্রাউন্ডে পাঁচ বোলার নিয়ে খেলতে পারে বাংলাদেশ। সেক্ষেত্রে নাঈম ও মিরাজ দুজনকেই একাদশে রাখা সম্ভব। বাড়তি একজন ব্যাটসম্যানকে বাইরে রেখে বোলিং শক্তি বাড়ানোর পক্ষে তিনি।
মিরপুরে তিনি বলেছেন, “মিরাজ ফিরে আসলে আমরা পাঁচজন বোলার নিয়ে খেলতে পারি। এসএসসিতে পরের ম্যাচ। প্রথম দিনের পর ওখানে উইকেট ফ্ল্যাট হয়ে যায়, যেখানে তিনজন ফাস্ট বোলার নিয়ে খেলে না আসলে। আমি জানি না উইকেট কেমন হবে, উইকেটের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। মিরাজ ফিরে আসলে পাঁচজন বোলার নিয়ে যেতেই পারি। সেক্ষেত্রে একজন ব্যাটসম্যান বসাতে হবে। সেটা সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কারণ সে ব্যাটিং-বোলিং দুই দিকেই ক্যাপাবল।”
আরো পড়ুন:
দুঃসময়ে পাশে থাকার আর্জি
টেস্ট ক্রিকেটকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্বাগত জানাচ্ছে: বুলবুল
দেশের মাটিতে দুই ডানহাতি অফস্পিনার খেলানোর চিন্তা করতে পারে টিম ম্যানেজমেন্ট। মিরাজ ও নাঈম একসঙ্গে খেলতে পারেন। তবে দেশের বাইরে সেই পরিকল্পনা থেকে সরে আসে দল। ব্যাটিংয়ে এগিয়ে থাকায় মিরাজ হয়ে যান ‘অটোমেটিক চয়েস’। ফলে নাঈমকে থাকতে হয় ডাগআউটে, সুযোগের অপেক্ষায়। জুটি বেঁধে তারা কলম্বোতে একসঙ্গে হাত ঘোরাতে পারেন কি না, সেটাই দেখার বিষয়।
ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
মাগুরায় ‘রেডি টু কুক ফিশ’ প্রযুক্তিতে সফল উদ্যোক্তা লিজা
মাগুরা সদরের পারনান্দুয়ালী বেপারী পাড়ার গৃহবধূ লিজা এখন একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত। পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) অর্থায়নে এবং অলটারনেটিভ ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের (এডিআই) বাস্তবায়নে মাগুরায় প্রথমবারের মতো তিনি চালু করেছেন ‘রেডি টু কুক ফিশ’ প্রযুক্তিভিত্তিক মাছ প্রক্রিয়াজাত ও বিক্রয় কার্যক্রম।
২০২৪ সালের ২৮ জুন শুরু হওয়া এই ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগের আওতায় লিজা পেয়েছেন ডিপ ফ্রিজ, দোকান উন্নয়ন খাতে নগদ সহায়তা, মাছ সংগ্রহে অর্থ সহায়তা, প্রচারের জন্য লিফলেট ও সাইনবোর্ড। ঘরের পাশে ছোট দোকানে বসেই তিনি এই কার্যক্রম চালাচ্ছেন। তার স্বামী জাকির হোসেনও তাকে সার্বিক সহায়তা দিচ্ছেন।
এই উদ্যোগের মাধ্যমে নদী, সাগর, ঘের ও পুকুরের দেশি ও সামুদ্রিক মাছ সংগ্রহ করে সেগুলোকে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে ধুয়ে, কেটে, বেছে প্যাকেটজাত করে বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে ভোক্তারা অফলাইনে দোকান থেকে এবং অনলাইনে ঘরে বসেই পাচ্ছেন ঝামেলাহীন, পরিচ্ছন্ন ও রান্নার জন্য প্রস্তুত মাছ।
আরো পড়ুন:
কাপ্তাই হ্রদ: মৎস্য আহরণের প্রথম দিন রাজস্ব আয় ২০ লাখ টাকা
‘অ্যান্টিবায়োটিক গুরুতর হুমকি হয়ে উঠছে’
‘রেডি টু কুক ফিশ’ সেবাটি শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী ও স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তারা অল্প দামে অল্প পরিমাণে মাছ কিনে ঘরে বসে রান্না করতে পারছেন, যা সময় ও পরিশ্রম- দুটোই বাঁচাচ্ছে।
মাগুরা ওয়ার্ল্ড নার্সিং কলেজে শিক্ষার্থী সুফিয়া খাতুন বলেন, “আমি একজন শিক্ষার্থী। আমি হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করি। বেশিরভাগ সময় আমাকে কলেজ ও পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। এ কারণে বাজারে যাওয়া এবং বাজার থেকে মাছ কিনে এনে কেটে রান্না করা খুবই কষ্টসাধ্য। হঠাৎ সন্ধান পেলাম রেডি টু কুক ফিশ অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। এরপর থেকে আমি প্রয়োজন অনুযায়ী অনলাইনে অর্ডার দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করা মাছ ক্রয় করে রান্না করি। এতে করে আমার সময় বেঁচে যাচ্ছে এবং আমিষের চাহিদা পূর্ণ হচ্ছে।”
স্কুল শিক্ষিকা মারুফা সুওলতানা বলেন, “আমি একজন কর্মজীবী নারী। দিনের বেশিরভাগ সময় আমাকে অফিসে থাকতে হয়। কাটাকাটির ঝামেলায় মাছ খাওয়া প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছিল আমাদের পরিবারে। কিন্তু বর্তমানে রেডি টু কুক ফিশ পাওয়া যাচ্ছে। ফলে দিনে-রাতে যেকোনো সময় অর্ডার দিয়ে সহজেই পরিবারের মাছের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে।”
লিজার ব্যবসার মাধ্যমে ইতোমধ্যে দুজন নারীর কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিন তারা মাছ পরিষ্কার, কাটা এবং প্যাকেটজাত করার কাজ করেন। এভাবে একজন নারী হিসেবে লিজা নিজে স্বাবলম্বী হয়ে অন্য নারীদের জন্যও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করছেন।
মাছ প্রক্রিয়াজাত কাজে যুক্ত থাকা সকিনা খাতুন বলেন, “আগে শুধু নিজের ঘরে কাজ করেই সময় পার করতাম। কিন্তু বর্তমানে লিজা আপুর প্রতিষ্ঠানে মাছ কাটা, ধোয়া এবং প্যাকেট জাতের কাজ করি। এতে করে আমার মাসে আয় হচ্ছে প্রায় ৪-৫ হাজার টাকা। এই টাকায় আমার সন্তানদের পড়াশোনার খরচ চালাতে সুবিধা হচ্ছে।”
লিজা অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও তার পণ্য বিক্রি করছেন। ধীরে ধীরে তৈরি করেছেন একটি নিজস্ব গ্রাহকভিত্তি। তিনি বলেন, “ছোটবেলা থেকেই নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন ছিল। সংসারের চাপে সেটা সম্ভব হয়নি। অনেক চিন্তা করে মাথায় এল, মাছ ধোয়া, কাটা, বাছাইয়ের ঝামেলা থেকে মানুষকে মুক্তি দিলে ভালো সাড়া পাওয়া যাবে। আমি সেটাই করলাম, আর মানুষ সেটা গ্রহণ করেছে। পরিবার ও স্বামীর সহযোগিতায় আমি আমার ব্যবসা বড় করতে চাই। একদিন আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হব, আশা করি।”
এডিআই এর মৎস্য কর্মকর্তা সামিউর রহমান বলেন, “লিজার মতো উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে আমরা চাই, নারীরা প্রযুক্তি নির্ভর উদ্যোগে এগিয়ে আসুক। এ উদ্যোগটি মডেল হিসেবে কাজ করবে।”
সম্প্রতি মাগুরা সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম শাহজাহান সিরাজ সরেজমিনে লিজার দোকান পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, “এডিআই এর এই উদ্যোগ শুধু একজন নারীকে নয়, পুরো সমাজকে উপকারে আনবে। আমরা এ ধরনের কাজের পাশে আছি।”
ঢাকা/শাহীন/মেহেদী