যৌথবাহিনী বন্ধ করল জনতার বাজার, তাৎক্ষণিক জমে উঠল মেলার বাজার
Published: 5th, July 2025 GMT
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের জনতার বাজারে পশুরহাট শনিবার বসতে দেয়নি আইনশৃংখলা বাহিনী। জনতার বাজার বন্ধ ঘোষণার পরপরই বাজার রক্ষার জন্য ‘দিনারপুর পরগনাবাসী’ ব্যানারে একটি মানববন্ধন করা হয়।
জনতার বাজার বন্ধ হয়ে গেলে হাজীগঞ্জ মেলার বাজারে তাৎক্ষণিক বসানো হয় গরুর হাট। জনতার বাজার থেকে ওই বাজারটি ৫০০ থেকে ১ হাজার ফুট দূরে।
শনিবার সকালে সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশের বিশেষ টিম জনতার বাজারের আশপাশে অবস্থান নেয়। এই বাজারে আসা লোকজন ও ব্যবসায়ীদের গরু নিয়ে বাজার ত্যাগ করার জন্য মাইকিং করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এতে বিপাকে পড়েন বাজারে আসা হাজারো গরু ব্যবসায়ী। পরে তারা নিরূপায় হয়ে পাশের হাজীগঞ্জ মেলার বাজারে গরু নিয়ে ওঠেন। মুহুর্তের মধ্যে সেখানে কয়েক হাজার গরু জমায়েত হলে পুরো বাজারটি জমে ওঠে।
জনতার বাজার পরিচালনা কমিটি বলছে, আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে প্রশাসন তাদের বাজার বন্ধ করে দিয়েছে এই অভিযোগে দিনারপুর পরগনাবাসী নামে মানববন্ধন করেছে। মানববন্ধন শেষে প্রতিবাদ সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জনতার বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী তোফায়েল আহমদ। সঞ্চালনা করেন সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম। বক্তব্য দেন ডা.
জানা গেছে, ২০২৫ সালের ৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফরিদুর রহমান হাটটিকে অবৈধ ঘোষণা করে ৩১ জানুয়ারির পর হাট বন্ধের নির্দেশ দেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে মাইকিং ও নোটিশও টাঙানো হয়। নির্দেশনায় উল্লেখ ছিল, মহাসড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি বা অনুমোদনহীন হাট পরিচালনা করলে হাট-বাজার আইন ২০২৩ এবং মহাসড়ক আইন ২০২১ অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ হবে। তবে এসব নির্দেশনার বিরুদ্ধে জনতার বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী তোফায়েল আহমদ হাইকোর্টে রিট করেন। তখন জেলা প্রশাসনের আদেশ হাইকোর্ট স্থগিত করে রুল জারি করেন। এর পর থেকে বাজারটি থেকে কোনো রাজস্ব আদায় করা হচ্ছে না। ফলে বাজার পরিচালনা কমিটি প্রত্যয়নপত্রের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জনত র ব জ র
এছাড়াও পড়ুন:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০ জন শিক্ষক-কর্মকর্তাকে বরখাস্ত ও ৩৩ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ১৯ জন শিক্ষক ও ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ৩৩ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও তাঁদের সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭১তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে জড়িত অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। গতকাল শনিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মনজুরুল হক প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিপরীতে ভূমিকা নেওয়া শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করতে গত ১৫ মার্চ আল-হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আকতার হোসেনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ, তথ্যচিত্র, ভিডিও ও পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কমিটি ওই শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের জুলাই-আগস্ট বিপ্লববিরোধী ও দমনমূলক কার্যকলাপে সংশ্লিষ্টতা পায়। পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। সর্বশেষ কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সিন্ডিকেট সভায় তাঁদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মনজুরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এখনো রেজল্যুশন আকারে হয়নি। কাউকে চিঠিও দেওয়া হয়নি। রেজল্যুশন হলে, চিঠি দেওয়া হলে অফিসিয়ালি জানাতে পারব।’
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আকতার হোসেন বলেন, ‘উপাচার্য জুলাই গণ-অভ্যুত্থানবিরোধী ভূমিকা চিহ্নিত করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। আমাকে আহ্বায়ক করেন। সে অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্পিত দায়িত্ব পালন করে তদন্ত শুরু করি। বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তর থেকে তথ্য-উপাত্ত চাওয়া হয়। লিখিত অভিযোগ, পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত ছবি ও প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আমরা সর্বশেষ প্রতিবেদন তৈরি করতে সক্ষম হই।’
উপাচার্য অধ্যাপক নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে বিতর্কিত ভূমিকার জন্য শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে আরও একটি কমিটি গঠন করা হবে। সেই কমিটি বিবেচনা করবে, কাকে কতটুকু শাস্তি দেওয়া যায়। তবে ফ্যাসিস্টের প্রশ্নে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’
এদিকে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানবিরোধী ভূমিকায় থাকা আইন বিভাগের দুই শিক্ষক শাহজাহান মণ্ডল ও রেবা মণ্ডলকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। গতকাল বেলা একটার দিকে প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে ‘অযৌক্তিক’ দাবি করে তাঁরা মানববন্ধন করেন। পরে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দেন।
ইংরেজি, ল অ্যান্ড ল্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, আল-ফিকহ অ্যান্ড ল–সহ কয়েকটি বিভাগের শিক্ষার্থীরাও তাঁদের শিক্ষকদের পক্ষে আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা করছেন বলে জানা গেছে।
মানববন্ধনে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা তদন্ত কমিটির কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বলেন, ‘তদন্ত কমিটি পক্ষপাতিত্ব করে রাঘববোয়ালদের বাদ দিয়ে চুনোপুঁটিদের ধরায় ব্যস্ত। সিদ্ধান্তটি পক্ষপাতমূলক ও অযৌক্তিক।’
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মির্জা আল শাহরিয়ার বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনের সময় আমি ১২ দিন জেলে ছিলাম। তখন রেবা মণ্ডল ছিলেন বিভাগের চেয়ারম্যান, আর সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন শাহজাহান মণ্ডল। আন্দোলনের সময় আমাদের বিভাগ থেকে কাউকে যেতে নিষেধ করা হয়নি। এই দুজন শিক্ষক সব সময় রাজনীতির ঊর্ধ্বে থেকে শিক্ষার্থীবান্ধব কাজ করেছেন। আমরা তাঁদের শ্রেণিকক্ষে ফেরত চাই।’