বরিশালে তিন দিনের টানা বর্ষণে জনজীবন বিপর্যস্ত, জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগ
Published: 9th, July 2025 GMT
বরিশালে তিন দিনের টানা বর্ষণে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। এতে নগরের বেশ কয়েকটি এলাকায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। সড়কে হাঁটুপানি জমে যানবাহন চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। ভোগান্তির কথা ভেবে নগরের বাসিন্দারা জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছেন না। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন শ্রমজীবীরা। জলাবদ্ধতার কারণে অনেক বিদ্যালয়ে বুধবার ছুটি ঘোষণা করা হয়।
বরিশাল আবহাওয়া বিভাগের তথ্যানুযায়ী, মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালে ১৬৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আরও কয়েক দিন এই বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে।
টানা বর্ষণের কারণে বরিশাল নগরের মেজর এম এ জলিল সড়ক (নবগ্রাম রোড), জীবনানন্দ দাশ সড়ক (বগুড়া রোড), করিম কুটির, ব্রাউন কম্পাউন্ডসহ বেশ কয়েকটি সড়ক ও অলিগলিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, নগরের মেজর এম এ জলিল সড়কের বটতলা থেকে চৌমাথা পর্যন্ত পুরো সড়কে হাঁটুপানি। জীবনানন্দ দাশ সড়কের সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের এলাকা, অক্সফোর্ড মিশন এলাকা, মুনশির গ্যারেজ এলাকায় জলাবব্ধতার কারণে দুর্ভোগে আছেন বাসিন্দারা। তিন দিন ধরে টানা বর্ষণের কারণে বরিশাল অঞ্চলজুড়েই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করায় জনজীবন বিপর্যস্ত। সাধারণ মানুষ তেমন একটা ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলো ফাঁকা।
বুধবার দুপুরে নগরের বাংলাবাজার এলাকায় রিকশা নিয়ে সড়কে দাঁড়িয়ে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন আলমগীর হোসেন নামে একজন রিকশাচালক। ভোর থেকে টানা বৃষ্টিতে ভিজে একাকার এই চালক বললেন, ‘বেইন্নাহালে রাস্তায় নামছি, এহন বাজে একটা। মাত্র ৮০ টাহা কামাই অইছে। ৩০০ টাহা মালিকরে জমা (ভাড়া) দিতে হইবো। হ্যারপর বাজারসদাই। চাউল, বাজারসদাই তো দূরের কথা, মোনে অয় না আইজ জমা টাহা ওঠবে। তিন দিন ধইর্যাই এইরহম অবস্থা।’
টানা বর্ষণে জলাবদ্ধতায় বিপাকে পড়েছে মানুষ। বুধবার দুপুরে বরিশাল নগরের মেজর এম জলিল সড়কে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ফুটবলার প্রতিমা এগিয়ে যাচ্ছেন, পাশে আছে কিশোর আলোসহ অনেকে
একটি পরিবারের ওপর নেমে আসা অপ্রত্যাশিত চাপ আর হতাশাকে দূর করেছে একটি সংবাদ। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৫ ও অনূর্ধ্ব-১৭ জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড় প্রতিমা মুন্ডার পড়াশোনা ও খেলাধুলা থমকে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল মাত্র ৪৭ হাজার টাকার জন্য। প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশের পর মিলেছে সহযোগিতা, পরিশোধ হয়ে গেছে বিকেএসপির বকেয়া।
এতে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন প্রতিমার মা সুনিতা মুন্ডা। তাঁদের ওপর থেকে নেমে গেছে বড় ধরনের আর্থিক চাপ।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেএসপি প্রতিমার অভিভাবককে পাঠানো চিঠিতে জানিয়েছিল, তাঁদের মেয়ের বকেয়া বেতন ৪৬ হাজার ৮৪০ টাকা। সেই চিঠিতেই সতর্ক করে বলা হয়, ছয় মাসের বেশি বেতন বকেয়া থাকলে চূড়ান্ত সতর্কীকরণ, আর ১২ মাসের বেশি বকেয়া থাকলে বহিষ্কারের বিধান আছে। অর্থাভাবে যখন অনিশ্চিত হয়ে উঠেছিল প্রতিমার ভবিষ্যৎ, ঠিক সেই সময় ১১ অক্টোবর প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয় তাঁদের পরিবারের সংগ্রামের গল্প।
আরও পড়ুনবকেয়া বেতন চেয়ে বিকেএসপির চিঠি, ফুটবলার প্রতিমার পড়াশোনা বন্ধের পথে ১১ অক্টোবর ২০২৫প্রতিবেদনটি পাঠকের হৃদয়ে নাড়া দেয়। কিশোর আলোর পক্ষ থেকে প্রতিমার বকেয়া পরিশোধের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই দিনই বিকেলে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে গিয়ে প্রথম আলোর সাতক্ষীরার নিজস্ব প্রতিবেদক কল্যাণ ব্যানার্জি প্রতিমা ও তাঁর মা সুনিতা মুন্ডার হাতে ৫০ হাজার টাকা তুলে দেন। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগরের সৌজন্যে নেওয়া হয় এই উদ্যোগ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যবসায়ী সহায়তা করেন আরও ১০ হাজার টাকা। তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপা রানী সরকার দেন পাঁচ হাজার টাকা ও একটি ফুটবল।
সহায়তা পেয়ে স্বস্তি ফিরেছে পরিবারে। মুঠোফোনে প্রতিমা বলেন, ‘এখন আর কোনো অনিশ্চয়তা নেই। বিকেএসপির পাওনা ৪৬ হাজার ৮৪০ টাকা পরিশোধ করে দিয়েছি। আমি ভালো আছি, মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা আর অনুশীলন করছি।’
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার প্রতিমা মুন্ডা ও তাঁর মা সুনিতা মুন্ডার হাতে কিশোর আলোর পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগরের সৌজন্যে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়