‘মব সন্ত্রাসের’ বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭১ শিক্ষকের বিবৃতি
Published: 10th, July 2025 GMT
‘মব সন্ত্রাস’–এর ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭১ জন শিক্ষক। তাঁরা ‘মব সন্ত্রাস’ নিরসনে দ্রুত কার্যকর ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে শিক্ষকেরা এ দাবি জানান। বিবৃতিতে বলা হয়, গত কয়েক মাস থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘মব সন্ত্রাস’ থাবা বিস্তার করেছে এবং ক্রমেই তা উদ্বেগজনক হারে বেড়েই চলেছে। এতে দেশের মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিসরে দেশের মর্যাদা ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
মবাক্রান্ত মানুষেরা শুধু শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও অপদস্থ হচ্ছেন তা–ই নয়, বরং গণপিটুনির শিকার হয়ে অনেকে ইতিমধ্যে মারা গেছেন, নারীরা তাঁদের সম্ভ্রম হারিয়েছেন; এমনকি মবের শিকার হয়ে অনেক অবুঝ শিশুর ভবিষ্যৎ জীবনও বিপর্যস্ত হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আইন-আদালত, গণমাধ্যম, ব্যবসাকেন্দ্র, আবাসিক ভবন, ঐতিহাসিক স্থাপনা, ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন থেকে শুরু করে সামাজিক অনুষ্ঠান পর্যন্ত মব সন্ত্রাসের কালো থাবা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। দেশি-বিদেশি সংবাদপত্র, টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ বিষয়ে বিস্তারিত খবর ও প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ‘মব’ নিরসনে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বললেও বাস্তবে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা দৃশ্যমান হচ্ছে না এবং আগ্রাসী মবকে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘কোনো কোনো দায়িত্বশীল মহল কর্তৃক “মবকে” “প্রেশার গ্রুপ” বলে সংজ্ঞায়িত করায় পর্যায়ক্রমে “মব সন্ত্রাস” অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে মব সংস্কৃতির রূপ পরিগ্রহ করছে এবং মব সন্ত্রাসীরা আরও বেপরোয়া ও বেসামাল হচ্ছে। দেশের মুক্তবুদ্ধিচর্চার সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে আমরা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনের এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় খুবই উদ্বিগ্ন, ক্ষুব্ধ ও বেদনাহত।’
শিক্ষকদের বিবৃতিতে বলা হয়, কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তা দেশের প্রচলিত আইনে বিচার হওয়া কাম্য। কিন্তু কোনোভাবেই আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে দেশটাকে ‘মবের মুল্লুক’-এ পরিণত করা কোনো স্থিতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হতে পারে না। তাই রাষ্ট্রের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সব মহলের কাছে উদাত্ত আহ্বান, সার্বিকভাবে আইনের সঠিক প্রয়োগ, সামাজিক ন্যায়বিচার ও নাগরিক সমাজের জন্য যথাযথ নিরাপত্তা ও সুশাসন নিশ্চিত করুন এবং দেশের গণমানুষের সামগ্রিক স্বার্থে অবিলম্বে এই ‘মব সন্ত্রাস' নিরসনে কার্যকর ও দৃশ্যমান ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম (রফিক শাহরিয়ার), অধ্যাপক তৌহিদা রশীদ, অধ্যাপক জামিলা এ চৌধুরী, শবনম আযীম, অধ্যাপক আবু সারা শামসুর রউফ, অধ্যাপক সমীর কুমার শীল, অধ্যাপক ফিরোজ আহমেদ, অধ্যাপক মো.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গোমতীর পানি বাড়ছেই
ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও টানা বৃষ্টির কারণে কুমিল্লার গোমতী নদীর পানি বাড়ছেই। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় গোমতীর পানি বিপৎসীমার ১ দশমিক ৩৮ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
এ দিকে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় গোমতী চর থেকে লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ে এবং কেউ কেউ বাধে আশ্রয় নিয়েছেন।
কুমিল্লার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, বুধবার রাতভর ভারতের ত্রিপুরা ও কুমিল্লা অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম থাকায় নদীতে পানি কম বেড়েছে। তবে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আবারো বৃষ্টি শুরু হয়েছে। তাই গোমতী নদীতে পানি বাড়ছে।
পাউবো সূত্র আরও জানায়, কুমিল্লা অঞ্চলের চেয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে গত ২ দিন ধরে বেশী বৃষ্টিপাত হয়। তবে বুধবার রাতে বৃষ্টি কম হয়। রাত ১২টার দিকে গোমতীতে পানির প্রবাহ ছিল ৯ দশমিক ৪২ মিটারে। গত ৬ ঘণ্টায় পানি বেড়েছে ২৩ সেন্টিমিটার। গোমতী নদীর এখনও বিপৎসীমার ১ দশমিক ৩৮ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গোমতী নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আদর্শ সদর, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, দেবিদ্বার, মুরাদনগর, তিতাস ও দাউদকান্দি উপজেলার বেশ কিছু গ্রামের লোকজনের মধ্যে বাঁধ ভাঙার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। চরের লোকজন ছুটছেন নিরাপদ আশ্রয়ে।
পাউবো কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মো. ওয়ালিউজ্জামান আজ সকালে সমকালকে বলেন, ‘টানা বর্ষণ আর উজানের ঢলে গোমতী নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। খবর পেয়েছি, ত্রিপুরায় বৃষ্টি কমে গেছে। কিন্তু আবারও বৃষ্টি শুরু হলে গোমতীর প্রতিরক্ষা বাঁধের জন্য হুমকি হতে পারে। জেলা ও স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় বাঁধ এলাকায় সার্বক্ষণিক নজরদারি চালানো হচ্ছে।’