দেশে সাইবার ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে সাইবার সহিংসতার শিকার হওয়াদের মধ্যে ৯৭ শতাংশই নারী ও শিশু। আজ বুধবার ‘সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন অ্যান্ড চিলড্রেন প্ল্যাটফর্ম’-এর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত সারা দেশে ঘটে যাওয়া নারী ও শিশুর প্রতি সাইবার সহিংসতার ২৯টি ঘটনা বিশ্লেষণ করে প্ল্যাটফর্মটি এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এসব ঘটনা বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যম এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো প্রকাশ করেছে।

সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন অ্যান্ড চিলড্রেন প্ল্যাটফর্ম অনলাইনে সংঘটিত নারী ও শিশু সহিংসতার প্রতিকার ও প্রতিরোধে সম্মিলিতভাবে কাজ করে আসছে। বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) উদ্যোগে গঠিত এই প্ল্যাটফর্মে ব্র্যাক, নারীপক্ষ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনসহ (সিক্যাফ) মোট ১৪টি সংগঠন রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে সাইবার সহিংসতার শিকার হওয়াদের মধ্যে ৪১ দশমিক ৩ শতাংশই শিক্ষার্থী। গৃহিণী ২০ দশমিক ৭ শতাংশ। এ ছাড়া বিক্রয়কর্মী, বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) কর্মী ও ব্যবসায়ী ১০ দশমিক ৫ শতাংশ। এটি ইঙ্গিত করে, সামাজিকভাবে তুলনামূলক দুর্বল গোষ্ঠীই অনলাইন সহিংসতার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। বাকি ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ ভুক্তভোগীর পেশা জানা যায়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে এপ্রিল মাসে সবচেয়ে বেশি ১০টি নারী ও শিশু সাইবার সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে আর মার্চে ঘটেছে ৯টি। এই দুই মাসে মোট ঘটনার ৬৫ শতাংশের বেশি ঘটনা ঘটেছে। অঞ্চল হিসেবে সবচেয়ে বেশি ১৩টি ঘটনা ঘটেছে ঢাকা শহরে। রাজধানী হিসেবে ঢাকা ডিজিটাল অপরাধের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে। ভুক্তভোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৭৬ শতাংশ নারী, ২১ শতাংশ অপ্রাপ্তবয়স্ক কন্যাশিশু আর ৩ শতাংশ পুরুষ।

সহিংসতার ধরন তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, নারী ও শিশুদের নিয়ে ছড়ানো সাইবার সহিংসতার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্ল্যাকমেল, ধর্ষণ, পর্নোগ্রাফি কনটেন্ট ছড়ানো এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে নগ্ন ছবি তৈরি করে ব্ল্যাকমেল করার মতো ঘটনা রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেল করার ঘটনাও ঘটেছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, অধিকাংশ ঘটনার মধ্যে একাধিক ধরনের নির্যাতনের উপস্থিতি ছিল। ৭০ শতাংশের বেশি ঘটনায় একই সঙ্গে ধর্ষণ, ভিডিও ধারণ, ব্ল্যাকমেল ও ডিজিটাল কনটেন্ট ছড়ানোর মতো অপরাধ করা হয়েছে।

এ ছাড়া অন্তত একটি ঘটনায় এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভুয়া নগ্ন ছবি তৈরি করা হয়েছে। এ ধরনের প্রযুক্তিনির্ভর সহিংসতা শুধু ভুক্তভোগীদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নয়, বরং সামগ্রিক সামাজিক নৈতিকতা ও মানসিক স্বাস্থ্যকেও বিপর্যস্ত করছে। এ ধরনের ঘটনাকে ভবিষ্যতের জন্য একটি বিপজ্জনক ইঙ্গিত বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

সাইবার সহিংসতা প্রতিরোধের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, সমাজে নারীদের ডিজিটাল নিরাপত্তা এখন আর বিলাসিতা নয়, এটি একটি জরুরি অধিকার। এআই প্রযুক্তি যেমন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করছে, তেমনি তা অপরাধীদের জন্য এক ভয়ংকর অস্ত্র হয়ে উঠেছে। এ ধরনের ঘটনা রোধে সরকার, সামাজিক সংগঠন ও প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্মগুলোকে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

একই সঙ্গে সাইবার এবং লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা, ভুক্তভোগীদের ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা ও সুরক্ষা প্রদানে কার্যকর নীতি গ্রহণ ও তার বাস্তবায়ন এবং জনসচেতনতা কার্যক্রম জোরদারের দাবি জানিয়েছে সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন অ্যান্ড চিলড্রেন প্ল্যাটফর্ম।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প ল য টফর ম ব ল য কম ল ধরন র বছর র র ঘটন দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

শেখ হাসিনার মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ ‘ট্রেলারমাত্র’: তাজুল ইসলাম

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আন্দোলনকারীদের হত্যা করতে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়ার যে অডিও রেকর্ড নিয়ে বিবিসি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সেটি ‘ট্রেলারমাত্র’ বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

বুধবার বিকেলে বিবিসির ওই প্রতিবেদন ফেসবুকে জুড়ে দিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তাজুল ইসলাম লেখেন, ‘মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। নিজের চোখেই দেখে নিন। এই কল রেকর্ড উদ্ধার করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিশেষ তদন্তকারী কর্মকর্তা। এটা ট্রেলারমাত্র। অনেক কিছু এখনো বাকি। অপেক্ষায় থাকুন।’

এদিকে সন্ধ্যায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের খবর সংগ্রহকারী প্রতিবেদকদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় এই অডিও রেকর্ড নিয়ে কথা বলেছেন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম। সেখানে তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্তকালে শেখ হাসিনার কয়েকটি অডিও রেকর্ড জব্দ করে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সেসব রেকর্ড যাচাই করে ফরেনসিক রিপোর্ট গ্রহণ করে। 

তিনি আরও বলেন, রিপোর্টে দেখা যায়, শেখ হাসিনা আন্দোলন চলাকালে লেথাল উইপন (মারণাস্ত্র) ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের হত্যার নির্দেশ প্রদান করেছিলেন। তদন্ত সংস্থা তদন্ত প্রতিবেদনের সঙ্গে সেই অডিও রেকর্ডসহ অন্যান্য ডকুমেন্ট প্রসিকিউশনের কাছে হস্তান্তর করে। প্রসিকিউশন এটিকে বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনালে ইতিমধ্যে দাখিল করেছে।

গাজী মোনাওয়ার হুসাইন বলেন, বিবিসি শেখ হাসিনার সেই অডিও রেকর্ডটি তাদের মতো করে অনুসন্ধান করে তারও সত্যতা পেয়েছে। বিবিসি নিশ্চিত করেছে, সেই অডিও রেকর্ড সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। প্রসিকিউশন মনে করে, বিবিসির সেই প্রতিবেদনের কারণে ট্রাইব্যুনালের বিচারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল।

এই প্রসিকিউটর জানান, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আদেশ দেওয়ার দিন ধার্য আছে বৃহস্পতিবার। তিনি বলেন, আগামীকাল যদি ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গঠন করেন, তাহলে আন্দোলন চলাকালে শেখ হাসিনা যে মারণাস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের হত্যার নির্দেশ প্রদান করেছিলেন, সেই অডিও রেকর্ডটি সাক্ষ্য হিসেবে উপস্থাপন করবেন তারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ