ওয়াসার এমডি ও স্থানীয় সরকার পরিচালক পদে নতুন কর্মকর্তা
Published: 9th, July 2025 GMT
ছয় দপ্তর প্রধানের দায়িত্ব থেকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে খুলনার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মো. হুসাইন শওকতকে। সমকালে সংবাদ প্রকাশের পর খুলনা বিভাগের স্থানীয় সরকার পরিচালক ও খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে উপ-সচিব আবু সায়েদ মো. মনজুর আলম অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বুধবার থেকে তিনি কাজ শুরু করেছেন।
গত ১০ মাস ধরে খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক, খুলনা জেলা পরিষদের প্রশাসক, নৌপরিবহন মালিক গ্রুপের প্রশাসক, খুলনার স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক এবং জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রশাসক ও অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন হুসাইন শওকত। একই সঙ্গে ছয় দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে তিনি কোথাও পর্যাপ্ত সময় দিতে পারছিলেন না। এক দপ্তরের ফাইল নিয়ে ছুটতে হচ্ছিল অন্য দপ্তরে। নিয়মিত সব অফিসে যেতে না পারায় দপ্তরগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে কাজে ফাঁকি, ধীরগতিসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়।
বিষয়গুলো তুলে ধরে গত ৪ জুলাই ‘ছয় দপ্তরের দায়িত্বভার একজনের কাঁধে’ শিরোনামে সমকালে সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপরই বিষয়টি সমাধানে কাজ শুরু করেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো.
বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে জানা গেছে, মঙ্গলবার খুলনার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) আবু সায়েদ মো. মনজুর আলমকে স্থানীয় সরকার পরিচালকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পদাধিকার বলে তিনি খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। বুধবার দুটি দায়িত্বই তিনি বুঝে নিয়েছেন।
খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. ফিরোজ সরকার বলেন, ছয় দপ্তরের দায়িত্ব একজনের পক্ষে পালন করা কষ্টকর। তার দায়িত্ব কিছু কমানো হয়েছে। স্থানীয় সরকার পরিচালক পদে স্থায়ী কর্মকর্তা পদায়নের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। নতুন কাউকে পদায়ন করার আগ পর্যন্ত অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) দুটি পদে দায়িত্ব পালন করবেন।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ঠিকাদার উধাও, থমকে গেছে হাই-টেক পার্ক নির্মাণকাজ
ময়মনসিংহ হাই-টেক পার্কের নির্মাণকাজ থমকে গেছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর উধাও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লার্সেন অ্যান্ড টুব্রু (এলঅ্যান্ডটি) ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ভয়েন্টস সলিউশন প্রাইভেট লিমিটেড। এখনও বাকি প্রায় ৪৫ শতাংশ কাজ।
ময়মনসিংহ নগরের কিসমত এলাকায় ৬ দশমিক ১ একর জমির ওপর নির্মাণাধীন হাই-টেক পার্কটি দেশের তথ্য প্রযুক্তি খাতে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচনের স্বপ্ন দেখাচ্ছিল। ২০১৭ সালে দরপত্র আহ্বান করা হলেও ২০২২ সালের জুন মাসে কাজ শুরু হয়। যা শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৪ সালের জুনে। পরে প্রকল্পের মেয়াদ আরও ১ বছর বাড়ানো হয়। সে অনুযায়ী ২০২৫ সালের জুনেও কাজ শেষ করতে না পেরে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেছে ভারতীয় কোম্পানিটি।
সরেজমিন দেখা গেছে, প্রকল্পের ৫৫ শতাংশ কাজ শেষ হওয়ার পর হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায় নির্মাণকাজ। যে স্থানে একসময় প্রায় আড়াইশ শ্রমিকের কর্মব্যস্ততা ছিল, সেখানে এখন বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রীসহ ভারী যন্ত্রপাতি পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। রোদে-বৃষ্টিতে উন্মুক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা এসব মূল্যবান নির্মাণসামগ্রী প্রকল্পের ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়িয়ে তুলছে। তাছাড়া পুরো প্রকল্পে কাজ করছেন মাত্র ৩০-৪০ জন শ্রমিক। অথচ দ্রুতগতিতে কাজ শেষ করার জন্য প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ শ্রমিক প্রয়োজন।
কাজ থমকে যাওয়ার কারণ খুঁজতে গিয়ে কথা হয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিনিধি এবং প্রকল্প দেখভালের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, গত বছরের ৫ আগস্টের পর ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘ভীতসন্ত্রস্ত’ হয়ে চলে যাওয়ায় পুরো প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ছয়-সাত মাস কাজ বন্ধ থাকার পর এখন আবার অল্প কিছু শ্রমিক কাজ করছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বছর সময় পেলে কাজ সম্পন্ন করে হস্তান্তর করতে পারব।’
এই অচলাবস্থা কেবল প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের নয়, স্থানীয় বাসিন্দা ও বিশেষজ্ঞদের মধ্যেও উদ্বেগ তৈরি করেছে। স্থানীয় বাসিন্দা ইঞ্জিনিয়ার শহিদুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর হাই-টেক পার্কের কাজ বন্ধ রয়েছে। আমরা চাই দ্রুত পার্কটি বাস্তবায়িত হোক। এটি চালু হলে আমাদের এলাকার চিত্র বদলে যাবে।’
কথা হয় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী স্বরুপ কুমার পালের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আইটি বিভাগের একজন ছাত্র হিসেবে আইটি পার্কে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিতে পারতাম। এ ছাড়া পার্কটি চালু হলে এখানে বিভিন্ন ধরনের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হতো।’
একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মো. সাহিদুজ্জামান উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, প্রকল্পটি চালু করতে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। প্রয়োজনে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে হলেও কাজটি শেষ করা দরকার। আইটি খাতে তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য এই প্রকল্প দ্রুত শেষ করা অপরিহার্য।
কাবে নাগাদ কাজ শেষ হতে পারে তা জানতে যোগাযোগ করা হয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের যুগ্ম সচিব ও ১২ আইটির প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল মুমিন খানের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, গত বছরের ৫ আগস্টের পর ঠিকাদার ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ভারতে চলে যাওয়ায় কাজে স্থবিরতা নেমে আসে। ১ বছর সময় বাড়লে কাজটি শেষ করতে পারবেন বলে আশা তাঁর। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। তারাও কাজে ফিরতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। মাত্র একজন উপসহকারী প্রকৌশলী (ইলেকট্রিক্যাল) দিয়ে ১৫৩ কোটি টাকার প্রকল্প দেখভাল করানোর বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে, নতুন লোক নিয়োগ দেওয়া হবে।
জানা গেছে, দেশের ১২টি জেলায় ১২টি আইটি পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেয় বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। অন্যান্য জেলার কাজ ধীরগতিতে এগোলেও সিলেট, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লার কাজ ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে।
তৎকালীন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ঘোষণা দিয়েছিলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে ৩০ লাখ বেকার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। এর মাধ্যমে ৫ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আসবে বাংলাদেশে। সাততলা এই ভবনে প্লাগ অ্যান্ড পে, ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবিশন, স্টার্টআপ ফ্লোরসহ বেশ কয়েকটি ফ্লোর থাকবে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এলঅ্যান্ডটির বাংলাদেশি প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমি এই প্রকল্পে নতুন এসেছি। আমার আগে যিনি ছিলেন তিনি ভারতে চলে গেছেন। এই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য কথাবার্তা চলছে। অনেক দিন নির্মাণকাজ বন্ধ ছিল। পুনরায় ধাপে ধাপে কাজ শুরু হয়েছে। পুরোদমে ১ বছর কাজ হলে শেষ হয়ে যাবে বলে আশা রাখি।’