বড়লেখায় তিন ইউনিয়নকে জামায়াত নেতা ‘পাকিস্তান খ্যাত’ বলায় আলোচনা-সমালোচনা, প্রতিবাদ
Published: 9th, July 2025 GMT
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারির একটি বক্তব্যের ভিডিও নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। ওই বক্তব্যে উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মো. আব্দুল বাছিত বড়লেখার তিনটি ইউনিয়নকে ‘পাকিস্তান খ্যাত’ বলে উল্লেখ করেন। তাঁর এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ, নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা।
আব্দুল বাছিতকে বলতে শোনা যায়, ‘.
দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ৫ জুলাই বড়লেখার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের নয়াবাজারে মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা-জুড়ী) আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা আমিনুল ইসলামের সমর্থনে একটি মতবিনিময় সভা হয়। সভায় উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মো. আব্দুল বাছিত বক্তব্য দেন। দীর্ঘ বক্তব্যের একপর্যায়ে তিনি তিনটি ইউনিয়নকে ‘পাকিস্তান খ্যাত’ বলে উল্লেখ করেন। তাঁর এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়দের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
এ বিষয়ে জামায়াত নেতা মো. আব্দুল বাছিত প্রথম আলোকে বলেন, ৫ জুলাই মাগরিবের নামাজের পর উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের নয়াবাজারে জামায়াতের সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা আমিনুল ইসলামের সমর্থনে একটি মতবিনিময় সভায় তিনি বক্তব্য দেন। তখন প্রসঙ্গক্রমে তিনি কথাগুলো বলেন। তিনি বলেন, ‘মতবিনিময় সভায় বক্তব্য লম্বা ছিল। কারা সেখান থেকে ২৭ সেকেন্ডের একটা ভিডিও আপলোড করেছে। বক্তব্যের বিষয় ছিল, গত ১৫ থেকে ১৭ বছরে সরকারবিরোধী আন্দোলনে এই তিনটি ইউনিয়নে জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের বড় ভূমিকা ছিল। আন্দোলনে জামায়াত-শিবিরের বড় ভূমিকা থাকায় পুলিশ প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংগঠন জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত এই তিনটা ইউনিয়নকে পাকিস্তান আখ্যা দিত। পুলিশ প্রশাসন বলত, এই ইউনিয়নগুলোকে তোমরা পাকিস্তান বানিয়ে ফেলছ। ২০১৮ সালে পুলিশ যখন আমাকে গ্রেপ্তার করে, তখনো এ শব্দটা ব্যবহার করেছে। আন্দোলনে ইউনিয়ন তিনটির বেশি ভূমিকা ও ওটা (পুলিশের মন্তব্য) বোঝাতে গিয়ে পাকিস্তান খ্যাত কথাটা বলেছি।’
ওই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয় ছাত্রদলের উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়ন শাখা। শাখা সভাপতি শাহিন আহমদ ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমানের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ছাত্রদল শাহবাজপুর ইউনিয়ন শাখা গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ করছে, মুক্তিযুদ্ধে বিতর্কিত ভূমিকা রাখা সংগঠন জামায়াতের উপজেলা সেক্রেটারি সম্প্রতি তাঁদের দলের একটি সভায় উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নসহ উপজেলার তিনটি ইউনিয়নকে পাকিস্তান ঘোষণা করার মতো একটি গর্হিত ও হঠকারী স্টেটমেন্ট দিয়েছেন। এটি একটি বক্তব্যই নয় শুধু, বরং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের স্পষ্ট লঙ্ঘন।’ তাঁরা ওই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ব্যক্তি ও দলকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
ছাত্রদল নেতা শাহিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই বক্তব্যে এলাকায় মানুষের মনের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক মানুষ আলোচনা-সমালোচনা করছেন। ওই দিন প্রার্থীর (জামায়াত মনোনীত প্রার্থী) পক্ষে মতবিনিময় সভায় এই বক্তব্য দেওয়া হয়েছে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ছ ত রদল বড়ল খ উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
দুদককে চিঠি দেওয়ার বিষয়টিকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব
বিটিসিএলের ৫জি রেডিনেস প্রকল্প চালিয়ে নিতে দুদককে চিঠি দেওয়ার বিষয়টিকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার টেলিযোগাযোগ বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি বলেছেন, ব্যক্তিস্বার্থে নয়, দেশের স্বার্থেই দুদকের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। কারণ প্রকল্পটি থমকে গেলে সরকারের ৬০০ কোটি টাকা গচ্চা যাবে।
আজ সোমবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় ফয়েজ তৈয়্যব বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের বিশেষ সুবিধায় টেলিকম ব্যবসায়ীরা ১২ বছরে ৮ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি করেছে। তিনি বলেন, নতুন টেলিযোগাযোগ লাইসেন্স নীতিমালা নিয়ে স্বার্থান্বেষী ব্যবসায়ীদের রোষানলে পড়েছেন। দেশি কোম্পানি বন্ধ হবে বলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, আইসিটি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. জহিরুল ইসলাম।
দেশের স্বার্থেই এই উদ্যোগ
সংবাদ সম্মেলনে ফয়েজ তৈয়্যব বলেন, বিটিসিএল ফাইবার নেটওয়ার্ক বাড়ানোর প্রকল্পটি গত সরকারের আমলের। সে সময়ই দরপ্রক্রিয়া প্রভাবিত করা হয়েছে এবং একটা এলসিও করা হয়েছিল। আমি এবং নাহিদ ইসলাম দায়িত্ব নেওয়ার আগে সেই এলসির ২৯০ কোটি পরিশোধ করা হয়ে গেছে। এই সব কিছু আমলে নিয়ে আমরা দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি নিজে ওনার অফিসে গিয়েছি। আমি বলেছি, যেহেতু ২৯০ কোটি টাকা চলে গেছে তাই প্রকল্পটি চালিয়ে নেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া বিটিসিএলের সক্ষমতা বৃদ্ধির আরও একটি ৩০০ কোটি টাকার প্রকল্প শেষ হয়েছে। ৫জি রেডিনেস প্রকল্পটি শেষ না হলে ওই প্রকল্পটি কাজে লাগানো যাচ্ছে না। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত না হলে বিটিসিএল দুর্বল হয়ে মার্কেট আউট হয়ে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা আছে। প্রতিদ্বন্দ্বী বেসরকারি কোম্পানিগুলো এটাই চাইছে। তাই দেশের স্বার্থে বিটিসিএলের প্রকল্প এগিয়ে নিতে বলিষ্ঠ উদ্যোগ নিয়েছি।
কারো লাইসেন্স কেড়ে নেওয়া হবে না
নতুন টেলিযোগাযোগ নীতিমালা কার্যকর হলে আইসিএক্স, আইজিডব্লিউসহ দেশীয় বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে দাবি করা হচ্ছে- এ প্রশ্নের জবাবে বিশেষ সহকারী বলেন, এটা সম্পূর্ণ একটা অপব্যাখ্যা। আমরা বলেছি, কারো লাইসেন্স কেড়ে নেওয়া হবে না। যেটা হবে, যেহেতু এই লাইসেন্সগুলো আন্তর্জাতিক স্তরের বা আন্তর্জাতিক স্বীকৃত নেই। আর এত স্তর থাকার জন্য গ্রাহকের প্রতি কলে খরচ বেড়ে যায়। নতুন লাইসেন্স ব্যবস্থায় এ গুলো আর থাকবে না। তাদের নতুন বিনিয়োগের মাধ্যমে লাইসেন্স নিয়ে নতুনভাবে ব্যবসা করতে হবে। এক্ষেত্রে পুরনো উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এর বাইরে যেসব আইসিএক্স, আইজিডব্লিউর লাইসেন্স ২০২৭ সালের দিকে শেষ হবে; তারা চাইলে আউটসোর্সিং হিসেবে বিদ্যমান লাইসেন্সে কাজ করার সুযোগ পাবে। সুতরাং এটা সম্পূর্ণ অপব্যাখ্যা যে দেশীয়দের ব্যবস্থা বন্ধ করা হচ্ছে।
সরকারের ক্ষতি ৮ হাজার কোটি টাকা
টেলিযোগাযোগ খাতে বিগত সরকারের অনিয়ম দুর্নীতির উল্লেখ করে ফয়েজ তৈয়্যব বলেন, ‘২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক কল টার্মিনেশন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বে সাতটি আইজিডব্লিউ অপারেটর আইওএফ নামে একটি সংগঠন গঠন করে। বিটিআরসি এবং টেলিযোগাযোগ বিভাগ আইওএফকে বৈধতা দিতে এর পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চালু করে, যা প্রায় ১২ বছরব্যাপী পরীক্ষামূলকই ছিল। মোবাইল অপারেটরদের সরাসরি আন্তর্জাতিক কল আনতে নিষিদ্ধ করা হয়। এদিকে আইওএফ প্রতি মিনিটে ০.০৩ ডলারে কল টার্মিনেট করলেও রাজস্ব ঘোষণা করত মাত্র ০.০০৬ ডলার। ২০২৪ সাল নাগাদ প্রকৃত আন্তর্জাতিক টার্মিনেশন রেট ০.০০১ ডলারে নেমে এলেও আইওএফ প্রতি মিনিটে মাত্র ০.০০০৪ ডলারই ঘোষণা করতে থাকে। এইভাবে গত ১২ বছরে সরকারের ৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব ক্ষতির কারণ হয়েছে। এ বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতির পুরোটাই সালমান এফ রহমান গংদের পকেটে ঢুকেছে।