চীন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে স্বার্থের একটি সমন্বয় দেখা যাচ্ছে, যা ভারতের নিরাপত্তার জন্য প্রভাব ফেলতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের প্রতিরক্ষা সর্বাধিনায়ক জেনারেল অনিল চৌহান।

তিনি বলেছেন, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক সংকট ঋণ-কূটনীতির সুযোগ তৈরি করেছে এবং বিশ্ব একটি রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রও অস্থিরতা বাড়াচ্ছে।

দ্য ইকোনমিক টাইমস লিখেছে, স্বাধীন বৈশ্বিক চিন্তক প্রতিষ্ঠান অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ) আয়োজনে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন জেনারেল চৌহান।

আরো পড়ুন:

পাকিস্তানের হামলায় ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করলো ভারত

অবশেষে পাকিস্তানের হামলায় যুদ্ধবিমান ধ্বংসের কথা স্বীকার করলো ভারত

ধিরুভাই আম্বানি পরিবারের প্রতিষ্ঠিত ওআরএফের প্রধান কার্যালয় দিল্লিতে। সংস্থাটির মুম্বাই, চেন্নাই ও কলকাতাতেও কার্যালয় রয়েছে। ভারতের বৈদেশিক সম্পর্কসহ বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম করে থাকে ওআরএফ।

দিল্লির অনুষ্ঠানে জেনারেল চৌহান অবশ্য বলেছেন, “অপারেশন সিঁদুর’-এর সময় চীনের সঙ্গে সীমান্তে কোনো অস্বাভাবিক কার্যকলাপ লক্ষ্য করা যায়নি। ভারত-পাকিস্তানের চার দিনের সংঘাতের সময় চীনের কতটা রাষ্ট্রীয় সহায়তা পেয়েছে পাকিস্তান, তা নির্ধারণ করা খুব কঠিন।”

“বাস্তবতা হলো, পাকিস্তান তার বেশিরভাগ অস্ত্রই চীন থেকে আমদানি করে। চীনা মূল উৎপাদনকারী সংস্থাগুলোর অনেক দায় রয়েছে, তাই এমন অনেকেই থাকবে যারা এসব দায় মেটাতে চেষ্টা করবে; তারা উপস্থিত থাকবেই। এটা সব জায়গাতেই হয়; অনেক চীনা কোম্পানিও বাণিজ্যিক উপগ্রহ চিত্র নিয়ে কাজ করছে। যেমন মার্ক্সার ও প্ল্যানেট ল্যাবস । আপনি চীন বা যুক্তরাষ্ট্র, দু’দিকেই যেতে পারেন। এর মধ্যে কতটুকু রাষ্ট্রীয় সহায়তা, সেটা নির্ধারণ করা খুব কঠিন,” বলেন জেনারেল চৌহান।

অপারেশন সিঁদুর প্রসঙ্গে ভারতের প্রতিরক্ষা সর্বাধিক বলেন, “সংঘাতের সময় প্রচলিত যুদ্ধের জন্য যথেষ্ট পরিসর ছিল এবং ভারতের লক্ষ্য ছিল সন্ত্রাসী অবকাঠামো।”

তিনি বলেন, “এই সংঘাত পুরনো সেই মতবাদকে ভুল প্রমাণ করেছে, যেখানে মনে করা হতো পারমাণবিক অস্ত্র প্রচলিত যুদ্ধকে ঠেকিয়ে দেবে।”

দ্য ইকোনমিক টাইমস লিখেছে, জেনারেল চৌহান জোর দিয়ে বলেন, এই অভিযান এখনো শেষ হয়নি; বর্তমানে এটি সাময়িক বিরতিতে রয়েছে। প্রয়োজনে প্রচলিত যুদ্ধ পরিচালনার পরিসর আরো বিস্তৃত রয়েছে।

জেনারেল চৌহান অপারেশন সিঁদুরকে একটি ‘নন-কন্টাক্ট ওয়ারফেয়ার’ বা অপ্রত্যক্ষ যুদ্ধ হিসেবে বর্ণনা করেন।

ঢাকা/রাসেল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রামে বছর শেষে বাড়ছে ডেঙ্গু, কমেছে চিকুনগুনিয়া

চট্টগ্রামে বছরের শেষে এসে আবারও বাড়ছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ। চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম দুই দিনেই ৮৭ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। গতকাল রোববার বেলা একটা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪১ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। গত বছরও এই সময়ে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেড়েছিল। এদিকে বছরের শেষ দিকে এসে চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ কমেছে। গতকাল ২৪ ঘণ্টায় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল শূন্য।

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া—দুটিই মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ। দুটিই এডিস মশার কামড়ে হয়। এডিসের বংশ বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখে বৃষ্টি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, নভেম্বরের শুরুতে লঘুচাপের কারণে বৃষ্টি হতে পারে। ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

চট্টগ্রামে বছরের শুরু থেকে গতকাল বেলা একটা পর্যন্ত ৩ হাজার ৫৯২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে গত অক্টোবর মাসে। পুরো জেলায় ওই মাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৯৯০ জন। এর আগের মাসে অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ৯৩৫। চলতি নভেম্বর মাসে এ সংখ্যা নির্ভর করছে বৃষ্টির ওপর। কারণ, শীত শুরু হলে এডিসের বংশবৃদ্ধির আশঙ্কা কম। তবে বৃষ্টি হলে সেটি বাড়তে পারে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে সর্বশেষ মৃত্যু গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এদিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয় তারা (১৬) নামের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নিহতের সংখ্যা ২০।

এদিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লেও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত কমেছে। গতকাল পর্যন্ত জেলায় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৬৬৯। তবে চিকুনগুনিয়ায় মাসভিত্তিক তথ্য দেয়নি সিভিল সার্জন কার্যালয়। যদিও প্রতিদিনের আক্রান্তের হিসাব দেয় তারা। প্রাথমিক হিসাবে, গত সেপ্টেম্বর মাসে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭০৪। গত অক্টোবর মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১২১ জন। এ মাসে কেবল একজন।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে সর্বশেষ মৃত্যু গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এদিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয় তারা (১৬) নামের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নিহতের সংখ্যা ২০।

এদিকে গত বছরের তুলনায় এ বছর হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের অবস্থা গুরুতর। তাঁদের উপসর্গগুলোও কিছুটা ভিন্ন বলে জানা গেছে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত ৪১ জন রোগী জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিতে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ১৩ জন ভর্তি হয়েছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) এবং ১২ জন ভর্তি হয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

আমাদের হাসপাতালে ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। ডায়রিয়া ও বমি হলো ডেঙ্গু ওয়ার্নিং সাইন (সতর্ক সংকেত)। এগুলো দেখলে বোঝা যায় রোগীর অবস্থা গুরুতর হচ্ছে।এ এস এম লুৎফুল কবির, মেডিসিন বিভাগের প্রধান, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা গেছে। তবে এ বছর যাঁরা আসছেন, তাঁদের মধ্যে শক সিনড্রোম বেশি। পাশাপাশি ডায়রিয়ার উপসর্গও আছে। শক সিনড্রোম হলে রোগীর রক্তচাপ বোঝা যায় না। এই দুটি উপসর্গ গুরুতর। কারণ, সময়মতো ফ্লুইড (তরল খাবার) না পেলে রোগীর অবস্থা আরও গুরুতর হতে পারে।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান এ এস এম লুৎফুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। ডায়রিয়া ও বমি হলো ডেঙ্গু ওয়ার্নিং সাইন (সতর্ক সংকেত)। এগুলো দেখলে বোঝা যায় রোগীর অবস্থা গুরুতর হচ্ছে।’

চলতি বছর এপ্রিল থেকে মোটামুটি বৃষ্টি হচ্ছে। জুনে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হলেও পরের মাসগুলোয় স্বাভাবিক বৃষ্টি হয়। আর থেমে থেমে বৃষ্টির সঙ্গে গরম কিন্তু কমেনি। এই বৃষ্টি ও উচ্চ তাপমাত্রা চলতি বছর ডেঙ্গুর বিস্তারে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন কীটতত্ত্ববিদেরা। তবে সংক্রমণ কমাতে সিভিল সার্জন কার্যালয় ও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

নগরের ২৫টি এলাকাকে ডেঙ্গু ও ২৫টি এলাকাকে চিকুনগুনিয়ার জন্য হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। এর মধ্যে বন্দর, ইপিজেড, হালিশহর, কোতোয়ালি, বায়েজিদ, পাহাড়তলী, কাট্টলী, খুলশী, ডবলমুরিং, লালখান বাজার, আগ্রাবাদ, চান্দগাঁও, দেওয়ানহাট, আন্দরকিল্লা, মুরাদপুর, সদরঘাট—এসব এলাকায় ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এসব এলাকায় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।

সিটি করপোরেশনের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা সরফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বিশেষ দল করা হয়েছে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার জন্য। নিয়ম করে এলাকা ভাগ করে রুটিন অনুযায়ী ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।’

চট্টগ্রামের ডেপুটি সিভিল সার্জন মোহাম্মদ তৌহিদুল আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত বৃষ্টি হওয়ার ২৮ দিন পর্যন্ত মশার প্রকোপ থাকে বলে ধারণা করা হয়। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে শঙ্কা থেকে যাচ্ছে। এ মাসে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। এতে ডেঙ্গু বাড়তে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ