চর্যাপদের গানের পুনর্জাগরণের এক যুগ পূর্তি উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী ‘চর্যাপদ পুনর্জাগরণ উৎসব ২০২৫’ শুরু হয়েছে আজ। দ্বিতীয়বারের মতো উৎসবটি আয়োজন করছে ভাবনগর ফাউন্ডেশন। আজ বিকেলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠানের শুরুতে ভাবনগর সাধুসঙ্গের শিল্পীরা সমবেতভাবে লুইপার রচিত চর্যাপদের প্রথম পদটি পরিবেশন করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ফ্রান্স থেকে আসা লালনপন্থী সাধক ফকির দেবোরাহ জান্নাত। তিনি বলেন, ‘আদি সংস্কৃতির মধ্যেই মানবের মুক্তি। চর্যাপদের গানে তার নির্দেশনা রয়েছে। আজকের সাধকেরা যে চর্যাপদের গানের পুনর্জাগরণ করেছেন, তা এ দেশের প্রাচীন সাধনার সঙ্গে আমাদের সংযোগ স্থাপন করে দিচ্ছে। নিজের হৃদয়ের কাছে পৌঁছানোর জন্য চর্যাগান থেকে লালন সাঁইয়ের গানের কাছে, জ্ঞানের কাছে ফিরতে হয়।’ বক্তব্যের পাশাপাশি তিনি চর্যাপদের ৬ নম্বর গান পরিবেশন করেন।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন আমেরিকার হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির গবেষক-শিক্ষক কিথ ই কান্তু। তিনি বলেন, ‘চর্যাপদের গান বাংলাদেশের প্রাচীন ইতিহাসের অংশ। এই গানের পুনর্জাগরণের মাধ্যমে বাংলাদেশের সাধকেরা তাঁদের যে সৃজনশীলতার পরিচয় দিয়েছেন, তা প্রশংসনীয়।’ অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলাদেশের চর্যাপদের গানের সুরকার, শিল্পী ও প্রশিক্ষক সাধিকা সৃজনী তানিয়া এবং ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার থেকে আসা চর্যাপদের গানের পুনর্জাগরণের শিল্পী বাবুল আক্তার। স্বাগত বক্তব্য দেন গবেষক সাইমন জাকারিয়া।

তিন দিনব্যাপী উৎসবটি চলবে শুক্রবার পর্যন্ত.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

স্বর্ণ জয়ের লক্ষ্যে অস্ট্রেলিয়ায়

বিশ্বসেরার মঞ্চে মেধার লড়াইয়ে স্বর্ণ জয়ের লক্ষ্য নিয়ে অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছে দেশের ছয় নবীন গণিতবিদ। ১৪ জুলাই অস্ট্রেলিয়ার সানশাইন কোস্ট শহরে উদ্বোধনী পর্বের মাধ্যমে শুরু হচ্ছে ৬৬তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড (আইএমও)। শেষ হবে ১৯ জুলাই।

‘গণিত অলিম্পিয়াড’ আমাদের দেশে স্কুল-কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কাছে গণিতের ভয় কাটিয়ে একটি আনন্দঘন উৎসবে পরিণত হয়েছে। ২৩ বছর ধরে ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো এই গণিত উৎসব আয়োজন করে আসছে। এবারের আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিতে যাওয়া বাংলাদেশ দলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে গতকাল বুধবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ লিখিত বক্তব্যে বিগত বছরগুলোতে গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের সাফল্য ও এবারের বাংলাদেশ দলের সদস্যদের পরিচিতি তুলে ধরেন।

মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, প্রথম আলোর বিজ্ঞান প্রজন্ম পাতায় ২০০১ সালে শুরু হওয়া ‘নিউরনে অনুরণন’ পরে গণিত অলিম্পিয়াডে পরিণত হয়। আইএমওর সদস্যপদ পাওয়া যায় ২০০৪ সালে। পরের বছর ২০০৫ সাল থেকে বাংলাদেশ অংশ নিচ্ছে এই অলিম্পিয়াডে। আমাদের দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে এখন পর্যন্ত ১টি স্বর্ণ, ৭টি রৌপ্যপদক, ৩৭টি ব্রোঞ্জপদক ও ৪৪টি সম্মানজনক স্বীকৃতি লাভ করেছে। তিনি এবারের দলের সাফল্য কামনা করেন।

ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এহতেশামুল হক খান বলেন, তারা ইতিমধ্যে দেশসেরা হয়ে একটা বিজয় অর্জন করেছে। চূড়ান্ত পরীক্ষায় তাদের কোনো মানসিক চাপ না নিয়ে ধীরস্থিরভাবে পরীক্ষা দেওয়ার পরামর্শ দেন। প্রথম আলোর সঙ্গে এই আয়োজনে থাকতে পেরে তাঁরা আনন্দিত বলে মন্তব্য করেন।

প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘তোমাদের সাফল্যে দেশ গৌরবান্বিত হয়। যেখানেই থাকো, দেশের কথা স্মরণে রাখবে সব সময়।’

বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান জানান, ‘শতাধিক দেশ অংশগ্রহণ করে, এমন কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ কেবল গণিত অলিম্পিয়াড থেকেই স্বর্ণপদক জয় করেছে। এটা আমাদের দেশের তরুণ গণিতবিদদের যেমন অসামান্য অর্জন, তেমনি দেশের জন্যও অনন্য গৌরব।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন গণিত অলিম্পিয়াডের সহসভাপতি অধ্যাপক আবদুল হাকিম খান, সদস্য অধ্যাপক উজ্জ্বল কুমার দেব ও আজমত ইকবাল।

এই দলে রয়েছে ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এসএসসি পরীক্ষার্থী মনামী জামান, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এসএসসি পরীক্ষার্থী জাওয়াদ হামীম চৌধুরী, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী এম জামিউল হোসেন, চট্টগ্রাম বাকলিয়া সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী জিতেন্দ্র বড়ুয়া, চট্টগ্রাম কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. রায়হান সিদ্দিকী এবং ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থী তাহসিন খান।

বাংলাদেশ দল এবার ২১তম বারের মতো আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিচ্ছে। দলনেতা বাংলাদেশ গণিত দলের কোচ মাহবুবুল আলম মজুমদার গতকাল অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। উপদলনেতা মুনির হাসান এবং পর্যবেক্ষক বায়েজিদ ভূঁইয়া ছয় প্রতিযোগীকে সঙ্গে নিয়ে ১২ জুলাই মধ্যরাতে রওনা দেবেন।

এ বছর আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশসহ ১০০টির বেশি দেশের প্রায় ৬০০ প্রতিযোগী অংশ নিচ্ছে। অলিম্পিয়াডে প্রাক্-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়ুয়াদের পরপর দুই দিনে ছয়টি অঙ্ক করতে দেওয়া হয়। এই ছয় অঙ্ক হয় একেবারে মৌলিক ও নতুন। বিজয়ীদের মেধা অনুসারে সোনা, রুপা ও ব্রোঞ্জের মেডেল দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়।

আয়োজকেরা জানান, এবার গণিত অলিম্পিয়াডের জন্য সারা দেশের ১৮ হাজারের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৭৫ হাজার ৫৯৬ শিক্ষার্থী অনলাইনে নিবন্ধন করে। তাদের নিয়ে প্রথমে অনলাইনে বাছাই অলিম্পিয়াড হয়। বাছাই থেকে বিজয়ীদের নিয়ে ১৫টি শহরে আঞ্চলিক গণিত উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। আঞ্চলিক গণিত অলিম্পিয়াডের বিজয়ী ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থীকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় গণিত উৎসব। এতে বিজয়ী হয় ৮৫ জন। সেখান থেকে সেরা ৪১ জন নিয়ে প্রথমে জাতীয় গণিত ক্যাম্প আয়োজন করা হয়। পরে এশিয়ান-প্যাসিফিক ম্যাথমেটিক্যাল অলিম্পিয়াড ও আইএমও নির্বাচনী পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ৬৬তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের জন্য বাংলাদেশ গণিত দলের ছয় সদস্যের দল নির্বাচন করে গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • স্বর্ণ জয়ের লক্ষ্যে অস্ট্রেলিয়ায়
  • বিএআরএফের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত
  • নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে চলছে তারুণ্যের উৎসব
  • লাঙ্গলবন্দে মন্দিরের কমিটি দখলে সন্ত্রাসী হামলা, মামলায় আসামী ১৭
  • ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও দগদগে ব্রাজিলের সেই ক্ষত
  • একুশ বছরে বাতিঘর, উৎসবে সাজবে কাল