যারা মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার টুটি চেপে ধরতে চায় তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে বলে জানিয়েছেন ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। বুধবার দুপুরে রাজধানীর আইডিইবি মিলনায়তনে ‘টেকসই উন্নয়নে আলিয়া মাদরাসা শিক্ষা ধারা: চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ মাদরাসা ছাত্রকল্যাণ পরিষদ এ সেমিনার আয়োজন করে।

উপদেষ্টা বলেন, মাদরাসা শিক্ষা একটি বিশেষায়িত শিক্ষাব্যবস্থা। এটিকে ধরে রাখতে হবে। অতি আধুনিকতার নামে এ শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে পতিত হতে দেওয়া যাবে না। এ শিক্ষাব্যবস্থার স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে হবে। মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে।

তিনি বলেন, আলিয়া মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা যুগযুগ ধরে সমগ্র ভারত উপমহাদেশে ইসলামি জ্ঞানচর্চা, মূল্যবোধের বিকাশ ও ইসলামি চিন্তাধারা প্রসারে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে আসছে। কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলেও এ শিক্ষাব্যবস্থার অবদান বিশাল। কলকাতা আলিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেওবন্দ মাদরাসা প্রতিষ্ঠার পূর্ব পর্যন্ত মধ্যবর্তী ৮৬ বছর আলিয়া মাদরাসা শিক্ষায় শিক্ষিত আলেম-ওলামারাই ভারতে জ্ঞানের মশাল জ্বেলেছিলেন। এখনো আলিয়া মাদরাসা থেকে শিক্ষা অর্জন করে অনেক আলেম-ওলামা সমাজের বিভিন্ন স্তরে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন। তিনি হীনম্মন্যতাবোধ থেকে বের হয়ে আসতে সবাইকে অনুরোধ জানান।

খালিদ হোসেন বলেন, মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার টুটি যারা চেপে ধরতে চায় তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। ফ্যাসিবাদ যেন পুনরায় সৃষ্টি হতে পারে সেই বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি মাদরাসা শিক্ষার্থীদের হতাশাগ্রস্ত না হয়ে আশাবাদী হতে পরামর্শ দেন।

মাদরাসা শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে ড.

খালিদ বলেন, বিগত ১৬ বছর মাদরাসা শিক্ষাকে অবদমিত করে রাখা হয়েছিল। সাধারণ কোনো বিষয়ে অনার্স চালু করার ক্ষেত্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ইতিবাচক, কিন্তু ইসলামিক স্টাডিজ, আরবি সাহিত্য, ইসলামের ইতিহাস প্রভৃতি বিষয়ের ক্ষেত্রে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল নেতিবাচক। এই ধারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলে দেওয়া হয়েছে। এখন মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা উন্নত হবে।

বাংলাদেশ মাদরাসা ছাত্রকল্যাণ পরিষদের উপদেষ্টা অধ্যক্ষ মাওলানা যাইনুল আবেদীনের সভাপতিত্বে এ সেমিনারে প্রধান আলোচক ছিলেন ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শামসুল আলম। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ ড. মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ। সেমিনারে শতাধিক ইসলামি পণ্ডিত, আলেম-ওলামা ও মাদরাসা শিক্ষার্থী অংশ নেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ ক ষ ব যবস থ শ ক ষ ব যবস থ র উপদ ষ ট ম দর স ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্প-নেতানিয়াহু দ্বিতীয় বৈঠকের পরও যুদ্ধবিরতি আলোচনা স্থগিত

গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি চুক্তি নিয়ে কাতারে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে নতুন করে শুরু হওয়া আলোচনা স্থগিত হয়ে গেছে। তিন দিন ধরে এ পরোক্ষ আলোচনা চলে। এতে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রত্যাশা তৈরি হলেও শেষ পর্যন্ত তা আর বাস্তবতার মুখ দেখেনি। সংশ্লিষ্টরা জানান, যুদ্ধবিরতিকালে কীভাবে ত্রাণ বিতরণ করা হবে এবং উপত্যকা থেকে ইসরায়েলের সেনা প্রত্যাহার নিয়ে মতানৈক্য ছিল শেষ মুহূর্তে আলোচনার কেন্দ্রে। 

গতকাল বুধবার ফিলিস্তিনের এক কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে বিবিসি এসব তথ্য জানায়। এমন একসময়ে এ আলোচনা স্থগিত হলো, যখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্র সফর করছেন। স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর দ্বিতীয় অনির্ধারিত বৈঠক হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বলেন, দোহা আলোচনায় তারা এখন ‘একটি’ অমীমাংসিত বিষয়ে আলোচনা করছেন। তবে তিনি চলতি সপ্তাহের শেষ নাগাদ ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির বিষয়ে চুক্তির আশা করছেন।

ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর মধ্যে বৈঠকের চিত্র দেখে মনে হয়েছে, তারা গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির দিকে এগোচ্ছেন। গতকাল বুধবার সকালে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জানান, তাদের সর্বশেষ বৈঠকে ‘জিম্মি মুক্তির প্রচেষ্টার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল’। তিনি বলেন, ‘আমরা একমুহূর্তের জন্যও পিছু হটছি না। আমাদের বীর সেনাদের সামরিক চাপের কারণে এটি সম্ভব হয়েছে।’

ইসরায়েল বলছে, গাজায় এখনও হামাসের হাতে ৫০ জিম্মি বন্দি আছেন, যাদের মধ্যে ২০ জন এখনও জীবিত বলে মনে করা হচ্ছে। উইটকফ জানান, ইসরায়েল ও হামাস এমন বিষয়গুলোর ব্যবধান কমিয়ে আনছে, যা আগে তাদের একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে বাধা হয়েছিল। মঙ্গলবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এখন ঘনিষ্ঠ আলোচনায় আছি। আমাদের অনেকের চারটি বিষয় ছিল। এখন একটিতে নেমে এসেছি। সুতরাং আমরা আশাবাদী, এ সপ্তাহের শেষ নাগাদ একটি চুক্তিতে পৌঁছাব, যা হবে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি।’ তবে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ফিলিস্তিনের এক কর্মকর্তা বুধবার বিবিসিকে বলেন, আলোচনা এখন স্থগিত রয়েছে। তিনি বলেন, জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে গাজায় মানবিক সহায়তা অবাধে প্রবেশের অনুমতি দিতে ইসরায়েলের প্রতিনিধি দলের অস্বীকৃতির কারণেই এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। 
ইসরায়েল ত্রাণ বিতরণের ‘চলমান অপমানজনক প্রক্রিয়া’ বজায় রাখার জন্য জোর দিচ্ছে। তারা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত কথিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) মাধ্যমে ত্রাণ দিতে চান। সশস্ত্র জিএইচএফকে স্বীকৃতি দেয়নি জাতিসংঘ। গত ২৭ মের পর এ পর্যন্ত তারা গুলি করে ত্রাণ নিতে আসা ৭৭৩ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। আহত হয়েছেন ৫ হাজার ১০১ জন।

রক্তক্ষয়ী দিনে শতাধিক নিহত 

গতকাল বুধবার ছিল গাজায় অত্যন্ত ভয়ংকর একটি দিন। আলজাজিরা জানায়, এদিন ইসরায়েলের হামলায় ১০৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন; আহত হয়েছেন ৫৩০ জন। নিহতদের মধ্যে আট ত্রাণপ্রত্যাশীও আছেন। গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর এ পর্যন্ত ৫৭ হাজার ৬৮০ জন নিহত ও ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪০৯ জন আহত হয়েছেন। 

জ্বালানি সংকটে হাসপাতালে মৃত্যু

গাজায় জ্বালানি প্রবেশ করতে না দেওয়ায় হাসপাতালে আহতদের নিয়মিত মৃত্যু ঘটছে। তাদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনীয় ওষুধ নেই বললেই চলে। এ অবস্থায় গাজায় জ্বালানি সরবরাহ স্বাভাবিক করার দাবি জানিয়েছে জাতিসংঘ। গাজার একটি হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মারওয়ান আল-হামস বলেন, অবরোধ অব্যাহত থাকলে ও জ্বালানি না এলে শত শত রোগীর মৃত্যু হতে পারে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ