বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি, কিন্তু আমার লক্ষ্য কি?
Published: 9th, July 2025 GMT
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিনে ওরিয়েন্টেশন ক্লাসে সবাই নিজের ভবিষ্যতের স্বপ্নের কথা বলছিল। কেউ বলছিল শিক্ষক হবে, কেউ বিসিএস ক্যাডার, কেউবা উদ্যোক্তা। চারপাশে আত্মবিশ্বাস আর লক্ষ্যভরা কণ্ঠ। আমিও তখন ভেবেছিলাম—পড়াশোনা শেষ করে ভালো কিছু করব, হয়তো বাকিদের মতোই বড় হব।
কিন্তু সময় গড়িয়ে গেছে। আজ স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শেষপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আমি নিজেকে জিজ্ঞেস করি—আমি কী হতে চাই? উত্তরটা এখনো আমার অজানা। দেখতে দেখতে ২ বছর শেষ। প্রেজেন্টেশন, অ্যাসাইনমেন্ট, একাডেমিক পরীক্ষা, ভাইভা—সবকিছুতেই অংশ নিয়েছি। তবুও মাঝে মাঝে মনে হয়, কী জন্য করছি এসব? এগুলো কি আমার ভবিষ্যৎ জীবনে কাজে লাগবে?
একবার ভাবি—এগুলো তো কোনো কাজেই দেবে না। কারণ, আমাদের দেশে চাকরির পড়াশোনা সম্পূর্ণ আলাদা। আর আমি তো পড়ছি বিবিএ, যার জন্য দেশে সরকারি চাকরিতে নির্দিষ্ট সুযোগ খুবই সীমিত। প্রতি কোর্সে এত প্রেজেন্টেশন, মৌখিক পরীক্ষা, গবেষণা, প্রজেক্ট জমা দিয়ে কী লাভ? এত চাপে থেকে জীবন পার করছি যে, না পারছি ভালোভাবে চাকরির প্রস্তুতি নিতে, না পারছি কোনো বিষয়ে দক্ষতা বাড়াতে।
আরো পড়ুন:
গবিতে ছাত্রদলের কমিটি: ‘রাজনীতি মুক্ত’ নীতির কার্যকারিতা নিয়ে বিতর্ক
আইএসইউ শিক্ষার্থীদের বৃক্ষরোপণ ও পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি
আবার বিবিএ তে দ্রুত সেমিস্টার শেষ করতে হয়, কারণ অনার্সের পর ইন্টার্নশিপ করতে হয়। তার ওপর বর্তমান যুগ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই)। এখন অনেকেই তাদের ক্লাসের প্রেজেন্টেশন, রিপোর্ট, প্রজেক্ট এসব এআই এর মাধ্যমেই তৈরি করে। তাহলে আমাদের মেধার বিকাশ কোথায় হচ্ছে? সবই তো হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায়।
আমরা কি সঠিক দক্ষতা অর্জন করছি? আমার উত্তর—না। এজন্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী জানেই না, সে কী হতে চায়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতি বছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী স্নাতক শেষ করে বের হয়। কিন্তু তাদের একটি বড় অংশ কর্মসংস্থানের সুযোগ পায় না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েটদের প্রায় ৪০–৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পড়াশোনা শেষে সরাসরি বেকার থেকে যায়। তারা বিসিএস, ব্যাংকসহ বিভিন্ন সরকারি চাকরির জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করে। কিন্তু বিকল্প পথে হাঁটার সাহস বা দিকনির্দেশনা পায় না। চাকরির বাজারে যেমন চাহিদা, আমাদের পাঠ্যক্রম তার সঙ্গে তাল মেলায় না।
এই ব্যবধানই শিক্ষিত তরুণদের সবচেয়ে বড় সংকটে ফেলে দিচ্ছে। এসব যখন পত্রিকায় দেখি, চাকরির প্রস্তুতি নিতেও ভয় হয়। ভাবি, আমি কি পারবো?
একাডেমিক পারফরম্যান্স ভালো না, চাকরির পূর্ণ প্রস্তুতিও নিতে পারি না। প্রতিদিন ক্লাস করি, পরীক্ষায় বসি, অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিই। বাইরে থেকে মনে হয়, জীবন ঠিকঠাক চলছে। অথচ ভেতরে একটা গভীর শূন্যতা। আমি কী শিখছি, কেন শিখছি, কী কাজে লাগবে—এর কিছুই ঠিকমতো জানি না। আমার পাশে যে বন্ধুটি আছে, সেও যেন একই অচেনা দিশায় হাঁটছে। মুখে বলি- সব ঠিক আছে, বাস্তবে কিছুই ঠিক নেই।
হয়তো আমার মতো অনেকেই দিশাহীন। কিন্তু একদিন না একদিন থামতে হবে, নিজেকে জানতে হবে। শুধু নোট পড়ে, ভালো সিজিপিএ নিয়ে চাকরির আশায় বাঁচলে জীবন পার হবে না। নিজের ভিতরের কণ্ঠকে গুরুত্ব দিতে হবে। তাই এখন থেকেই আমি চেষ্টা করছি নিজের ইচ্ছেগুলোকে গুরুত্ব দিতে। যা ভালো লাগে, সেটা শেখার চেষ্টা করছি। তাতে হয়তো সময় লাগবে, তবুও সেটা হবে আমার পথ। বর্তমান সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
নিজের দক্ষতা অর্জনই বাড়াতে পারে ভবিষ্যতে জীবন গড়ার আত্মবিশ্বাস। তাহলেই খুঁজে পাবো—আমি কী হবো, তার উত্তর।
সবাই বলে, ‘পড়ালেখা শেষ করো, তারপর ঠিক হয়ে যাবে।’ কিন্তু আমি বলি—নিজেকে না চিনে গেলে, পড়ালেখা শেষ হলেও কিছুই ঠিক হবে না। আমি এখনো জানি না, আমি কী হতে চাই। এর জন্য দায়ী কী শুধু আমি? জানি না। কিন্তু এটুকু জানি, নিজেকে খুঁজে না পেলে, যা-ই হই, সেটা আসলে আমি হব না।
জানি না, স্নাতক করতে করতে আদৌ এর সঠিক উত্তর পাবো কিনা। তবুও বিশ্বাস করি, স্নাতকের শেষ ২ বছরের পরিশ্রমই বলে দেবে— আমি ভবিষ্যতে কোথায় যেতে পারি।
(লেখক: শিক্ষার্থী, দ্বিতীয় বর্ষ, ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস্ বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়)
ঢাকা/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চ কর চ কর র প শ ষ কর
এছাড়াও পড়ুন:
ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রামের বিএইটিইর স্বীকৃতি অর্জন
ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির বিএসসি ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রামটি দ্য ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের (আইইবি) বোর্ড অব অ্যাক্রিডিটেশন ফর ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনিক্যাল এডুকেশনের (বিএইটিই) আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেয়েছে। এর ফলে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের স্নাতকেরা বিশ্বব্যাপী পেশাদার প্রকৌশলী হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন।
ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, এই অর্জনকে উদ্যাপন করতে গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অধ্যাপক মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগকে অভিনন্দন জানানো হয়। প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক শামস রহমান, সহ-উপাচার্য অধ্যাপক এম আশিক মোসাদ্দিক এবং বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক আহমেদ ওয়াসিফ রেজা।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারপারসন মো. নাইমুল হক এবং বিভাগের অন্য শিক্ষকেরা অতিথিদের স্বাগত জানান। তাঁদের মতে, এই স্বীকৃতি বিশ্বমানের প্রকৌশল শিক্ষা প্রদানে এবং শিক্ষার্থীদের বৈশ্বিক পরিবেশে নিজেদের উৎকর্ষ সাধনে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির অবদানকে তুলে ধরবে।