বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিনে ওরিয়েন্টেশন ক্লাসে সবাই নিজের ভবিষ্যতের স্বপ্নের কথা বলছিল। কেউ বলছিল শিক্ষক হবে, কেউ বিসিএস ক্যাডার, কেউবা উদ্যোক্তা। চারপাশে আত্মবিশ্বাস আর লক্ষ্যভরা কণ্ঠ। আমিও তখন ভেবেছিলাম—পড়াশোনা শেষ করে ভালো কিছু করব, হয়তো বাকিদের মতোই বড় হব।

কিন্তু সময় গড়িয়ে গেছে। আজ স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শেষপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আমি নিজেকে জিজ্ঞেস করি—আমি কী হতে চাই? উত্তরটা এখনো আমার অজানা। দেখতে দেখতে ২ বছর শেষ। প্রেজেন্টেশন, অ্যাসাইনমেন্ট, একাডেমিক পরীক্ষা, ভাইভা—সবকিছুতেই অংশ নিয়েছি। তবুও মাঝে মাঝে মনে হয়, কী জন্য করছি এসব? এগুলো কি আমার ভবিষ্যৎ জীবনে কাজে লাগবে? 

একবার ভাবি—এগুলো তো কোনো কাজেই দেবে না। কারণ, আমাদের দেশে চাকরির পড়াশোনা সম্পূর্ণ আলাদা। আর আমি তো পড়ছি বিবিএ, যার জন্য দেশে সরকারি চাকরিতে নির্দিষ্ট সুযোগ খুবই সীমিত। প্রতি কোর্সে এত প্রেজেন্টেশন, মৌখিক পরীক্ষা, গবেষণা, প্রজেক্ট জমা দিয়ে কী লাভ? এত চাপে থেকে জীবন পার করছি যে, না পারছি ভালোভাবে চাকরির প্রস্তুতি নিতে, না পারছি কোনো বিষয়ে দক্ষতা বাড়াতে।

আরো পড়ুন:

গবিতে ছাত্রদলের কমিটি: ‘রাজনীতি মুক্ত’ নীতির কার্যকারিতা নিয়ে বিতর্ক

আইএসইউ শিক্ষার্থীদের বৃক্ষরোপণ ও পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি

আবার বিবিএ তে দ্রুত সেমিস্টার শেষ করতে হয়, কারণ অনার্সের পর ইন্টার্নশিপ করতে হয়। তার ওপর বর্তমান যুগ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই)। এখন অনেকেই তাদের ক্লাসের প্রেজেন্টেশন, রিপোর্ট, প্রজেক্ট এসব এআই এর মাধ্যমেই তৈরি করে। তাহলে আমাদের মেধার বিকাশ কোথায় হচ্ছে? সবই তো হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায়।

আমরা কি সঠিক দক্ষতা অর্জন করছি? আমার উত্তর—না। এজন্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী জানেই না, সে কী হতে চায়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতি বছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী স্নাতক শেষ করে বের হয়। কিন্তু তাদের একটি বড় অংশ কর্মসংস্থানের সুযোগ পায় না।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েটদের প্রায় ৪০–৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পড়াশোনা শেষে সরাসরি বেকার থেকে যায়। তারা বিসিএস, ব্যাংকসহ বিভিন্ন সরকারি চাকরির জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করে। কিন্তু বিকল্প পথে হাঁটার সাহস বা দিকনির্দেশনা পায় না। চাকরির বাজারে যেমন চাহিদা, আমাদের পাঠ্যক্রম তার সঙ্গে তাল মেলায় না।

এই ব্যবধানই শিক্ষিত তরুণদের সবচেয়ে বড় সংকটে ফেলে দিচ্ছে। এসব যখন পত্রিকায় দেখি, চাকরির প্রস্তুতি নিতেও ভয় হয়। ভাবি, আমি কি পারবো?

একাডেমিক পারফরম্যান্স ভালো না, চাকরির পূর্ণ প্রস্তুতিও নিতে পারি না। প্রতিদিন ক্লাস করি, পরীক্ষায় বসি, অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিই। বাইরে থেকে মনে হয়, জীবন ঠিকঠাক চলছে। অথচ ভেতরে একটা গভীর শূন্যতা। আমি কী শিখছি, কেন শিখছি, কী কাজে লাগবে—এর কিছুই ঠিকমতো জানি না। আমার পাশে যে বন্ধুটি আছে, সেও যেন একই অচেনা দিশায় হাঁটছে। মুখে বলি- সব ঠিক আছে, বাস্তবে কিছুই ঠিক নেই।

হয়তো আমার মতো অনেকেই দিশাহীন। কিন্তু একদিন না একদিন থামতে হবে, নিজেকে জানতে হবে। শুধু নোট পড়ে, ভালো সিজিপিএ নিয়ে চাকরির আশায় বাঁচলে জীবন পার হবে না। নিজের ভিতরের কণ্ঠকে গুরুত্ব দিতে হবে। তাই এখন থেকেই আমি চেষ্টা করছি নিজের ইচ্ছেগুলোকে গুরুত্ব দিতে। যা ভালো লাগে, সেটা শেখার চেষ্টা করছি। তাতে হয়তো সময় লাগবে, তবুও সেটা হবে আমার পথ। বর্তমান সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

নিজের দক্ষতা অর্জনই বাড়াতে পারে ভবিষ্যতে জীবন গড়ার আত্মবিশ্বাস। তাহলেই খুঁজে পাবো—আমি কী হবো, তার উত্তর।

সবাই বলে, ‘পড়ালেখা শেষ করো, তারপর ঠিক হয়ে যাবে।’ কিন্তু আমি বলি—নিজেকে না চিনে গেলে, পড়ালেখা শেষ হলেও কিছুই ঠিক হবে না। আমি এখনো জানি না, আমি কী হতে চাই। এর জন্য দায়ী কী শুধু আমি? জানি না। কিন্তু এটুকু জানি, নিজেকে খুঁজে না পেলে, যা-ই হই, সেটা আসলে আমি হব না।

জানি না, স্নাতক করতে করতে আদৌ এর সঠিক উত্তর পাবো কিনা। তবুও বিশ্বাস করি, স্নাতকের শেষ ২ বছরের পরিশ্রমই বলে দেবে— আমি ভবিষ্যতে কোথায় যেতে পারি।

(লেখক: শিক্ষার্থী, দ্বিতীয় বর্ষ, ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস্ বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়)

ঢাকা/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চ কর চ কর র প শ ষ কর

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকায় জামায়াতসহ ৭ দলের বিক্ষোভ আজ, কোথায়, কখন, কোন দল

ফেব্রুয়ারিতে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ কয়েক দফা দাবিতে রাজধানী ঢাকায় আজ বৃহস্পতিবার একযোগে বিক্ষোভ মিছিল করবে জামায়াতে ইসলামীসহ সাতটি দল।

বিক্ষোভের আগে বায়তুল মোকাররম, জাতীয় প্রেসক্লাবসহ আশপাশের এলাকায় দলগুলো সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করবে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব কর্মসূচি চলবে।

প্রায় অভিন্ন দাবিতে সাতটি দল তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আজ প্রথম দিনে রাজধানী ঢাকায়, আগামীকাল শুক্রবার বিভাগীয় শহরে এবং ২৬ সেপ্টেম্বর সব জেলা ও উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি রয়েছে দলগুলোর।

জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) এই কর্মসূচি পালন করবে। সাতটি দলের কেউ ৫ দফা, কেউ ৬ দফা, কেউ ৭ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করলেও সবার মূল দাবি প্রায় অভিন্ন। দাবিগুলো হচ্ছে

জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এবং তার ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান, জাতীয় সংসদের উভয় কক্ষে (কেউ কেউ উচ্চকক্ষে) সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতি চালু করা

অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা

বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।

সাড়ে চারটায় জামায়াত

আজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ ফটকের সামনে সমাবেশের পর বিক্ষোভ মিছিল করবে জামায়াত। সমাবেশে দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির নেতারা বক্তব্য দেবেন। জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।

জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটক থেকে মিছিল বের হয়ে পুরানা পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব ও মৎস্য ভবনের পাশ দিয়ে শাহবাগ পর্যন্ত যেতে পারে।

বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটক থেকে মিছিল বের হয়ে পুরানা পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব ও মৎস্য ভবনের পাশ দিয়ে শাহবাগ পর্যন্ত যেতে পারে।জোহরের পর ইসলামী আন্দোলন

জোহর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তরে প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। মিছিলে নেতৃত্ব দেবেন দলের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম। ইসলামী আন্দোলনের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা যৌথভাবে এ কর্মসূচির আয়োজন করেছে।

জোহর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তরে প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।আসরের পর বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস

আসর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ফটকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল এক বিবৃতিতে দলের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ কর্মসূচিতে সবাইকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

এ ছাড়া খেলাফত মজলিস বেলা তিনটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে। এতে দলের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন।

একই সময়ে, একই জায়গায় মিছিল করবে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনও। বিকেল চারটায় একই জায়গায় বিক্ষোভ করবে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি।

আসর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ফটকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস।

জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) বিকেল সাড়ে চারটায় বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রাজধানীর মধ্য এলাকায় একযোগে সাতটি দলের বিক্ষোভের কর্মসূচি ঘিরে নেতা-কর্মীদের সমাগমে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হতে পারে। এ জন্য নগরবাসী দুর্ভোগের সম্মুখীন হতে পারেন। যদিও আজ ও আগামীকাল সকালে বিসিএস পরীক্ষা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের জন্য এই সাত দল কর্মসূচি বিকেলে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) বিকেল সাড়ে চারটায় বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ