নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী শত ব্যস্ততার মধ্যেও দক্ষতার সঙ্গে একাই পরিচালনা করছেন সদর উপজেলার ২৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা।

একইসাথে বক্তাবলী ইউনিয়নের প্রশাসকের দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি।গত ১১ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ইউএনও জাফর সাদিক অনিয়ম ও দুর্নীতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। 

পূর্ববর্তী সভাপতিদের আমলে যে দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্য ও কোচিং নির্ভরতা ছিল, তা নির্মূল করে শিক্ষার পরিবেশ ফেরাতে নিরলস কাজ করছেন তিনি।

তিনি ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নীতিমালা-২০২৩’ বাধ্যতামূলকভাবে প্রয়োগ করেন। অনিয়ম তদন্তে গঠন করেন ভিন্ন ভিন্ন কমিটি। ফান্ডের অর্থ অপব্যবহার ঠেকাতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

পুনর্জন্ম পেয়েছে পাগলা উচ্চ বিদ্যালয়

পূর্বে সাবেক এমপি শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠদের দ্বারা পরিচালিত পাগলা উচ্চ বিদ্যালয়ে দুর্নীতি, ৮ মাসের শিক্ষক বেতন বকেয়া, জমির রেজিস্ট্রি জটিলতা ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে গত বছর ১৫ আগস্ট শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন।

ইউএনও জাফর সাদিক যোগদানের পর মাত্র ছয় মাসে ১৭টি সভা করে ফান্ড স্বচ্ছতা, শিক্ষক বেতন পরিশোধ, প্রভিডেন্ট ফান্ড ঋণ শোধ, জমির রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে নেতৃত্ব দেন।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সেলিনা সুলতানা বলেন, “স্যার দুইবার বিদ্যালয় পরিদর্শন করে বাস্তব পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছেন। এখন নিয়মিত বেতন হচ্ছে, ড্রেন নির্মাণ চলছে।”

দখলদার উচ্ছেদ ও অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযান

ফতুল্লা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে সাবেক প্রধান শিক্ষক ও কর্মচারীর আর্থিক অনিয়মের তদন্তে সরাসরি মাঠে নামেন ইউএনও। বিদ্যালয়ের ২০ শতক জমি দখলমুক্ত করে ইটের দেয়াল অপসারণের নির্দেশ দেন। ঘুষের মাধ্যমে দেয়া পুকুর ইজারাও বাতিল করেন।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আফরোজা বলেন, “ইউএনও স্যারের উদ্যোগে জমি উদ্ধার ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার হয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনও প্রক্রিয়াধীন।”
বক্তাবলীর কানাইনগর সোবহানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের জমি দখলমুক্ত করতেও সরাসরি পুলিশি সহায়তায় দখলদার উচ্ছেদ করেন ইউএনও।

শিক্ষা সফর ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে নতুন প্রাণ

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা শিক্ষা সফর, বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পুনরায় চালু করে শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন উদ্দীপনা তৈরি করেছেন ইউএনও জাফর সাদিক। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য বিনা বেতনে ও অর্ধ-বেতনে পড়ার সুযোগও তৈরি করেছেন।

প্রশংসিত হচ্ছেন সর্বত্র

সদর উপজেলার ৫১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগের সভাপতির দায়িত্বে থেকে ইউএনও জাফর সাদিক যে স্বচ্ছতা, দৃঢ়তা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছেন, তা এলাকায় প্রশংসিত হচ্ছে। সচেতন মহলের মতে, যেখানে পূর্ববর্তী সভাপতিরা শিক্ষা ফান্ডের অর্থ আত্মসাতে ব্যস্ত ছিলেন, সেখানে কোনো আর্থিক সুবিধা ছাড়াই এতগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দক্ষভাবে পরিচালনা একজন প্রকৃত কর্মবীরের পরিচয় বহন করে।

ইউএনও নির্বাহী অফিসার জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায় যোগদানের পর থেকেই নিজ দায়িত্বের পাশাপাশি উপজেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছি।

নিজ কাজের অতিরিক্ত এতগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালনে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে এটা যেমন সত্যি, তেমনি নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনে আমি অঙ্গীকারবদ্ধ। সরকার যখন যে দায়িত্ব আমাকে অর্পণ করবেন সেটাকেই জনকল্যাণমুখী করে ভবিষ্যতেও কাজ করে যেতে চাই।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ইউএনও সদর উপজ ল পর চ ল করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

কক্সবাজারে বন্যার পানি নামছে, বাড়ছে দুর্ভোগ

কক্সবাজারে বৃষ্টি থামায় নামতে শুরু করেছে বন্যার পানি। সদর উপজেলার কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা থাকলেও পাঁচ উপজেলার শতাধিক গ্রাম থেকে পানি নামছে বলে জানা গেছে। ঘরে পানি ওঠায় দুর্ভোগ বেড়েছে দুর্গত এলাকার মানুষজনের। প্রশাসন থেকে কিছু এলাকায় শুকনা খাবার পৌঁছালেও পানির কারণে অনেক বাড়িতেই চুলা জ্বলেনি।

জেলায় আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে ভারী বর্ষণ হচ্ছে না। টানা চার দিনের বর্ষণ ও পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে এখনো কক্সবাজার সদর, রামু, উখিয়া, টেকনাফ ও চকরিয়া উপজেলার শতাধিক গ্রামের অন্তত ৮০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছিলেন। এর মধ্যে কেবল টেকনাফের অন্তত ৫০টি গ্রামে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছিল। তবে ওই সব এলাকা থেকে এখন পানি নামছে।

কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান বলেন, আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৮৮ মিলিমিটার। এর মধ্যে সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ১১ মিলিমিটার। ৭ জুলাই বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছিল ১৫৭ এবং ৬ জুলাই ১৪৬ মিলিমিটার। ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে। এর ফলে ভূমিধসেরও আশঙ্কা করছে আবহাওয়া বিভাগ।

এদিকে বাঁকখালী ও মাতামুহুরী নদীর পানি বঙ্গোপসাগরে নেমে যাওয়ায় চকরিয়া, পেকুয়া, রামু, কক্সবাজার সদর উপজেলার জলাবদ্ধতা কমে গেছে। ঘরবাড়ি থেকে বন্যার পানি নামতে শুরু করলেও মানুষের দুর্ভোগ-ভোগান্তি কমছে না। বন্যার পানিতে এসব উপজেলায় অন্তত দুই হাজার ঘরবাড়ি নিমজ্জিত হয়েছিল।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, বৃষ্টিপাত কমায় পানি নামছে। ঘরবাড়ি থেকেও পানি সরে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে চাল ও শুকনা খাবার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

টেকনাফে দুর্ভোগ-ভোগান্তি

গত চার দিনের ভারী বর্ষণে টেকনাফের পাঁচটি ইউনিয়নের অন্তত ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছিল। তাতে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী ছিলেন। আজ সকাল থেকে বৃষ্টি কম হওয়ায় টেকনাফ পৌরসভার কলেজপাড়া, শীলবুনিয়াপাড়া, ডেইলপাড়া, জালিয়াপাড়া, খানকারডেইল, চৌধুরীপাড়া, কেকেপাড়া থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। অন্যদিকে হ্নীলা ও হোয়াইক্যং ইউনিয়নের জালিয়াপাড়া, সাইটপাড়া, ফুলের ডেইল, আলী আকবরপাড়া, রঙ্গিখালী লামার পাড়া, আলীখালী, চৌধুরীপাড়া, পূর্ব পানখালী, মৌলভীবাজার, লামার পাড়া, ওয়াব্রাং, সুলিশপাড়া ও পূর্ব সিকদারপাড়া থেকেও বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। পাহাড়ধসের ঝুঁকি থাকায় কয়েক শ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে এনেছে উপজেলা প্রশাসন।

টেকনাফের পুরান পল্লানপাড়ার মায়মুনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন দুই শতাধিক নারী-পুরুষ। তাঁদের একজন লায়লা খাতুন (৪৫) বলেন, ‘পাহাড়ধসের আশঙ্কায় চার সন্তান নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে এসেছি। এখানে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হলেও নারীদের সমস্যা অনেক। বিভিন্ন বয়সের মানুষকে একসঙ্গে রাখায় নারীদের ভোগান্তি বাড়ছে।’

আরেক নারী ছমুদা বেগম (২৩) বলেন, নেটং পাহাড়ের ঢালুতে তাঁর বাড়ি। স্বামী-সন্তান নিয়ে থাকেন চার বছর ধরে। ভারী বর্ষণ শুরু হলে আতঙ্ক বাড়ে। সন্তানদের কথা মাথায় রেখে ঘরবাড়ি ফেলে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন। এভাবে কত দিন থাকতে হয় জানা নেই।

গতকাল সোমবার রাত আটটার দিকে মায়মুনা বিদ্যালয় কেন্দ্রে আশ্রিতদের দেখতে যান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। ভারী বর্ষণে পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে থাকা কারও জন্য নিরাপদ নয় জানিয়ে তিনি আশ্রিতদের বলেন, পাহাড়ে থেকে যাওয়া অন্য লোকজনকেও আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে আনতে হবে।

এ সময় সঙ্গে ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাকিবুল হাসান চৌধুরী। ইউএনও শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, পানিবন্দী ও পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে থাকা ২৫০ পরিবারকে ১৫ মেট্রিক টন চাল ও এক হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। পাহাড়ে থেকে লোকজনকে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে।

কক্সবাজার শহরের কালুরদোকান এলাকার একটি সড়কে পানি জমে আছে। আজ সকালে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত
  • পাবনায় তীব্র নদী ভাঙনে বিলীনের ‍মুখে ফেরি ঘাট
  • ফেনীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৪ স্থানে ভাঙন, পানির নিচে ৩০ গ্রাম
  • ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের মৃত্যু, রেলপথ অবরোধ
  • ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকোর স্থলে হচ্ছে কাঠের সেতু
  • নবজাতক  শিশুকে চারাগাছ উপহার দিয়ে শুভেচ্ছা জানালেন ইউএনও ফারজানা
  • কক্সবাজারে বন্যার পানি নামছে, বাড়ছে দুর্ভোগ
  • হবিগঞ্জে দুই গ্রামের বাসিন্দাদের সংঘর্ষে নিহত ১
  • সাতক্ষীরায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলায় ৩২ জনের জামিন