‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল’ নামে একটি কমিটির ঘোষণা ঘিরে ফের আলোচনায় এসেছে সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘রাজনীতি মুক্ত’ নীতিমালা। প্রশাসন ইতোমধ্যে এ বিষয়ে নোটিশ জারি করেছে। তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, শুধু দায়সারা নোটিশ নয়, প্রয়োজন বাস্তব পদক্ষেপ। 

জানা যায়, গত ১১ জুন ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, গণ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা’ নামে ১২ সদস্যের একটি কমিটি ঘোষণা করা হয়। তালিকায় সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ও লোগো ব্যবহার করা হয়, যা প্রতিষ্ঠানটির প্রস্পেক্টাস, কনসেপ্ট পেপার ও নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। 

পরে ১৬ জুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এক নোটিশে জানায়, গণ বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতি মুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নাম বা লোগো ব্যবহার করে রাজনৈতিক কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। নীতিমালা লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর আগে গত ১৯ মার্চ এ ধরনের ঘটনা ঘটলে প্রশাসন তখনও সতর্কতা জারি করেছিল। 

আরো পড়ুন:

আইএসইউ শিক্ষার্থীদের বৃক্ষরোপণ ও পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি

আবাসন সংকটসহ ৫ দাবি রাবি গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, ভর্তি হওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের লিখিতভাবে দলীয় রাজনীতি থেকে বিরত থাকার অঙ্গীকার করতে হয়। প্রস্পেক্টাসেও স্পষ্টভাবে বলা আছে, কোনো রাজনৈতিক সংগঠনে সম্পৃক্ত হওয়া যাবে না এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বা লোগো ব্যবহার করে সংগঠন পরিচালনা করা যাবে না। 

আইন বিভাগের শিক্ষার্থী তাওহীদ আহমদ সালেহিন বলেন, “একটি নীতিভঙ্গের পর শুধু নোটিশ দিয়ে দায়িত্ব শেষ করা যায় না। কার্যকর ব্যবস্থা না থাকলে এটা শিক্ষার্থীদের চোখে একপ্রকার উপহাসের মতো লাগে।”

তিনি আরো বলেন, “শিক্ষকরা, এমনকি রেজিস্ট্রার ও উপাচার্য আমাদের কথায় সহমত পোষণ করলেও মাঠে প্রশাসনিক স্তরে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।” 

গবি ছাত্র সংসদের সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক মাহতাবুর রহমান সবুজ বলেন, “ছাত্র সংসদ না থাকায় একটি রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হয়েছে, যা রাজনৈতিক সংগঠনগুলো কাজে লাগাচ্ছে। এখনই যদি ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়া হত, তাহলে রাজনৈতিক সংগঠনের দরকার পড়ত না।” 

তিনি আরো বলেন, “শিক্ষার্থীরা এখানে রাজনীতি করতে আসে না। তারা চায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পড়তে। কিন্তু প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা সেই পরিবেশকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে।”

তবে বিষয়টি নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করে গণ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি মো.

নির্জন বলেন, “৫ আগস্টের ঘটনার পর দেশের রাজনীতিতে নতুন ধারার সূচনা হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় গবি শাখার কমিটি দেওয়া হয়েছে। তবে আমরা কখনো ক্যাম্পাসে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি দেইনি বা স্লোগান দেইনি। শুধু রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ রাখা বৈষম্যমূলক মনে হয়। প্রশাসন যদি পদক্ষেপ নেয়, আমরা কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেব।” 

শাখা ছাত্রশিবিরের কর্মীরা বলেন, “গণ বিশ্ববিদ্যালয় শুরু থেকেই রাজনীতি মুক্ত শিক্ষাঙ্গন হিসেবে পরিচিত। আমরাও এই নীতিমালাকে সম্মান করে চলছি। আমাদের কার্যক্রম সবসময় ক্যাম্পাসের বাইরে। যদি কখনো বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনৈতিক কার্যক্রমের অনুমতি দেয়, তাহলেই আমরা কমিটি ঘোষণা করব, এখন নয়।” 

তারা আরো বলেন, “গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের প্রকাশ্য কমিটি ঘোষণাকে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি ও পরিবেশের পরিপন্থি মনে করি। এখনই সময়, প্রশাসনের উচিত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে সুশৃঙ্খল পরিবেশ নিশ্চিত করা।” 

বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মশিউর রহমান খান রিচার্ড বলেন, “গণ বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের আবেগের জায়গা, এটি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান। উনি নিজেই রাজনীতি মুক্ত নীতিমালা তৈরি করে গেছেন। যারা সেটি লঙ্ঘন করছে, তারা আসলে ডা. জাফরুল্লাহর প্রতি অসম্মান দেখাচ্ছে। প্রশাসনের উচিত, ওই কমিটির কার্যক্রম থেকে সরে আসার আদেশ দেওয়া এবং ছাত্র সংসদের নিয়মিত নির্বাচন দিয়ে নেতৃত্ব চর্চার জায়গা তৈরি করা।”

তিনি আরো বলেন, “ছাত্ররাজনীতি গণতন্ত্র চর্চা ও নেতৃত্ব বিকাশে ভূমিকা রাখে। তবে গবিতে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ, তাই আমরা কখনো কমিটি দেইনি বা দেব না। আমরা চাই, নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন হোক এবং এর মাধ্যমেই নেতৃত্ব আসুক। সুস্থ ধারার রাজনীতি হোক, সেটাই ডা. জাফরুল্লাহর স্বপ্ন।” 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাজনীতির সমালোচনা করে শিক্ষার্থীরা জানান, এটা ডা. জাফরুল্লাহ স্যারের স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান। যেখানে কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রমের স্থান নেই, সেখানে কিছু শিক্ষার্থী নিয়ম ভেঙে রাজনৈতিক কমিটি করছে। অথচ প্রশাসন চোখ বন্ধ করে আছে।

সাবেক শিক্ষার্থীরা জানান, ভর্তির সময় যেটা লিখে নেওয়া হয়েছে, আজ সেই চুক্তি কেউ মানছে না। এটা মেনে নেওয়া যায় না। আজ ছাত্রদল করলো, কাল অন্যরা করবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন বলেন, “ছাত্রদলের কমিটির বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা ব্যারিস্টারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রাথমিক নোটিশ জারি করেছি। পরিস্থিতি বিবেচনায় পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” 

তিনি আরো বলেন, “নোটিশ সত্ত্বেও কেউ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/সানজিদা/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত রদল

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্প-নেতানিয়াহু দ্বিতীয় বৈঠকের পরও যুদ্ধবিরতি আলোচনা স্থগিত

গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি চুক্তি নিয়ে কাতারে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে নতুন করে শুরু হওয়া আলোচনা স্থগিত হয়ে গেছে। তিন দিন ধরে এ পরোক্ষ আলোচনা চলে। এতে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রত্যাশা তৈরি হলেও শেষ পর্যন্ত তা আর বাস্তবতার মুখ দেখেনি। সংশ্লিষ্টরা জানান, যুদ্ধবিরতিকালে কীভাবে ত্রাণ বিতরণ করা হবে এবং উপত্যকা থেকে ইসরায়েলের সেনা প্রত্যাহার নিয়ে মতানৈক্য ছিল শেষ মুহূর্তে আলোচনার কেন্দ্রে। 

গতকাল বুধবার ফিলিস্তিনের এক কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে বিবিসি এসব তথ্য জানায়। এমন একসময়ে এ আলোচনা স্থগিত হলো, যখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্র সফর করছেন। স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর দ্বিতীয় অনির্ধারিত বৈঠক হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বলেন, দোহা আলোচনায় তারা এখন ‘একটি’ অমীমাংসিত বিষয়ে আলোচনা করছেন। তবে তিনি চলতি সপ্তাহের শেষ নাগাদ ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির বিষয়ে চুক্তির আশা করছেন।

ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর মধ্যে বৈঠকের চিত্র দেখে মনে হয়েছে, তারা গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির দিকে এগোচ্ছেন। গতকাল বুধবার সকালে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জানান, তাদের সর্বশেষ বৈঠকে ‘জিম্মি মুক্তির প্রচেষ্টার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল’। তিনি বলেন, ‘আমরা একমুহূর্তের জন্যও পিছু হটছি না। আমাদের বীর সেনাদের সামরিক চাপের কারণে এটি সম্ভব হয়েছে।’

ইসরায়েল বলছে, গাজায় এখনও হামাসের হাতে ৫০ জিম্মি বন্দি আছেন, যাদের মধ্যে ২০ জন এখনও জীবিত বলে মনে করা হচ্ছে। উইটকফ জানান, ইসরায়েল ও হামাস এমন বিষয়গুলোর ব্যবধান কমিয়ে আনছে, যা আগে তাদের একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে বাধা হয়েছিল। মঙ্গলবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এখন ঘনিষ্ঠ আলোচনায় আছি। আমাদের অনেকের চারটি বিষয় ছিল। এখন একটিতে নেমে এসেছি। সুতরাং আমরা আশাবাদী, এ সপ্তাহের শেষ নাগাদ একটি চুক্তিতে পৌঁছাব, যা হবে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি।’ তবে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ফিলিস্তিনের এক কর্মকর্তা বুধবার বিবিসিকে বলেন, আলোচনা এখন স্থগিত রয়েছে। তিনি বলেন, জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে গাজায় মানবিক সহায়তা অবাধে প্রবেশের অনুমতি দিতে ইসরায়েলের প্রতিনিধি দলের অস্বীকৃতির কারণেই এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। 
ইসরায়েল ত্রাণ বিতরণের ‘চলমান অপমানজনক প্রক্রিয়া’ বজায় রাখার জন্য জোর দিচ্ছে। তারা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত কথিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) মাধ্যমে ত্রাণ দিতে চান। সশস্ত্র জিএইচএফকে স্বীকৃতি দেয়নি জাতিসংঘ। গত ২৭ মের পর এ পর্যন্ত তারা গুলি করে ত্রাণ নিতে আসা ৭৭৩ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। আহত হয়েছেন ৫ হাজার ১০১ জন।

রক্তক্ষয়ী দিনে শতাধিক নিহত 

গতকাল বুধবার ছিল গাজায় অত্যন্ত ভয়ংকর একটি দিন। আলজাজিরা জানায়, এদিন ইসরায়েলের হামলায় ১০৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন; আহত হয়েছেন ৫৩০ জন। নিহতদের মধ্যে আট ত্রাণপ্রত্যাশীও আছেন। গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর এ পর্যন্ত ৫৭ হাজার ৬৮০ জন নিহত ও ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪০৯ জন আহত হয়েছেন। 

জ্বালানি সংকটে হাসপাতালে মৃত্যু

গাজায় জ্বালানি প্রবেশ করতে না দেওয়ায় হাসপাতালে আহতদের নিয়মিত মৃত্যু ঘটছে। তাদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনীয় ওষুধ নেই বললেই চলে। এ অবস্থায় গাজায় জ্বালানি সরবরাহ স্বাভাবিক করার দাবি জানিয়েছে জাতিসংঘ। গাজার একটি হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মারওয়ান আল-হামস বলেন, অবরোধ অব্যাহত থাকলে ও জ্বালানি না এলে শত শত রোগীর মৃত্যু হতে পারে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ