গবিতে ছাত্রদলের কমিটি: ‘রাজনীতি মুক্ত’ নীতির কার্যকারিতা নিয়ে বিতর্ক
Published: 9th, July 2025 GMT
‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল’ নামে একটি কমিটির ঘোষণা ঘিরে ফের আলোচনায় এসেছে সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘রাজনীতি মুক্ত’ নীতিমালা। প্রশাসন ইতোমধ্যে এ বিষয়ে নোটিশ জারি করেছে। তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, শুধু দায়সারা নোটিশ নয়, প্রয়োজন বাস্তব পদক্ষেপ।
জানা যায়, গত ১১ জুন ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, গণ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা’ নামে ১২ সদস্যের একটি কমিটি ঘোষণা করা হয়। তালিকায় সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ও লোগো ব্যবহার করা হয়, যা প্রতিষ্ঠানটির প্রস্পেক্টাস, কনসেপ্ট পেপার ও নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
পরে ১৬ জুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এক নোটিশে জানায়, গণ বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতি মুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নাম বা লোগো ব্যবহার করে রাজনৈতিক কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। নীতিমালা লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর আগে গত ১৯ মার্চ এ ধরনের ঘটনা ঘটলে প্রশাসন তখনও সতর্কতা জারি করেছিল।
আরো পড়ুন:
আইএসইউ শিক্ষার্থীদের বৃক্ষরোপণ ও পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি
আবাসন সংকটসহ ৫ দাবি রাবি গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, ভর্তি হওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের লিখিতভাবে দলীয় রাজনীতি থেকে বিরত থাকার অঙ্গীকার করতে হয়। প্রস্পেক্টাসেও স্পষ্টভাবে বলা আছে, কোনো রাজনৈতিক সংগঠনে সম্পৃক্ত হওয়া যাবে না এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বা লোগো ব্যবহার করে সংগঠন পরিচালনা করা যাবে না।
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী তাওহীদ আহমদ সালেহিন বলেন, “একটি নীতিভঙ্গের পর শুধু নোটিশ দিয়ে দায়িত্ব শেষ করা যায় না। কার্যকর ব্যবস্থা না থাকলে এটা শিক্ষার্থীদের চোখে একপ্রকার উপহাসের মতো লাগে।”
তিনি আরো বলেন, “শিক্ষকরা, এমনকি রেজিস্ট্রার ও উপাচার্য আমাদের কথায় সহমত পোষণ করলেও মাঠে প্রশাসনিক স্তরে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।”
গবি ছাত্র সংসদের সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক মাহতাবুর রহমান সবুজ বলেন, “ছাত্র সংসদ না থাকায় একটি রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হয়েছে, যা রাজনৈতিক সংগঠনগুলো কাজে লাগাচ্ছে। এখনই যদি ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়া হত, তাহলে রাজনৈতিক সংগঠনের দরকার পড়ত না।”
তিনি আরো বলেন, “শিক্ষার্থীরা এখানে রাজনীতি করতে আসে না। তারা চায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পড়তে। কিন্তু প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা সেই পরিবেশকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে।”
তবে বিষয়টি নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করে গণ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি মো.
শাখা ছাত্রশিবিরের কর্মীরা বলেন, “গণ বিশ্ববিদ্যালয় শুরু থেকেই রাজনীতি মুক্ত শিক্ষাঙ্গন হিসেবে পরিচিত। আমরাও এই নীতিমালাকে সম্মান করে চলছি। আমাদের কার্যক্রম সবসময় ক্যাম্পাসের বাইরে। যদি কখনো বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনৈতিক কার্যক্রমের অনুমতি দেয়, তাহলেই আমরা কমিটি ঘোষণা করব, এখন নয়।”
তারা আরো বলেন, “গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের প্রকাশ্য কমিটি ঘোষণাকে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি ও পরিবেশের পরিপন্থি মনে করি। এখনই সময়, প্রশাসনের উচিত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে সুশৃঙ্খল পরিবেশ নিশ্চিত করা।”
বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মশিউর রহমান খান রিচার্ড বলেন, “গণ বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের আবেগের জায়গা, এটি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান। উনি নিজেই রাজনীতি মুক্ত নীতিমালা তৈরি করে গেছেন। যারা সেটি লঙ্ঘন করছে, তারা আসলে ডা. জাফরুল্লাহর প্রতি অসম্মান দেখাচ্ছে। প্রশাসনের উচিত, ওই কমিটির কার্যক্রম থেকে সরে আসার আদেশ দেওয়া এবং ছাত্র সংসদের নিয়মিত নির্বাচন দিয়ে নেতৃত্ব চর্চার জায়গা তৈরি করা।”
তিনি আরো বলেন, “ছাত্ররাজনীতি গণতন্ত্র চর্চা ও নেতৃত্ব বিকাশে ভূমিকা রাখে। তবে গবিতে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ, তাই আমরা কখনো কমিটি দেইনি বা দেব না। আমরা চাই, নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন হোক এবং এর মাধ্যমেই নেতৃত্ব আসুক। সুস্থ ধারার রাজনীতি হোক, সেটাই ডা. জাফরুল্লাহর স্বপ্ন।”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাজনীতির সমালোচনা করে শিক্ষার্থীরা জানান, এটা ডা. জাফরুল্লাহ স্যারের স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান। যেখানে কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রমের স্থান নেই, সেখানে কিছু শিক্ষার্থী নিয়ম ভেঙে রাজনৈতিক কমিটি করছে। অথচ প্রশাসন চোখ বন্ধ করে আছে।
সাবেক শিক্ষার্থীরা জানান, ভর্তির সময় যেটা লিখে নেওয়া হয়েছে, আজ সেই চুক্তি কেউ মানছে না। এটা মেনে নেওয়া যায় না। আজ ছাত্রদল করলো, কাল অন্যরা করবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন বলেন, “ছাত্রদলের কমিটির বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা ব্যারিস্টারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রাথমিক নোটিশ জারি করেছি। পরিস্থিতি বিবেচনায় পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি আরো বলেন, “নোটিশ সত্ত্বেও কেউ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঢাকা/সানজিদা/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
উৎসব ঘুরে প্রেক্ষাগৃহে ‘বাড়ির নাম শাহানা’
কৈশোর পেরোনোর আগেই শাহানাবাড়ির মেয়ে দীপার বিয়ে হয়ে যায়। স্বামীর নির্যাতনের জাল ছিঁড়ে নিজের মতো করে বাঁচতে চেয়েছেন তিনি। নব্বইয়ের দশকের পটভূমিতে দীপার বেঁচে থাকার লড়াইয়ের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে বাড়ির নাম শাহানা।
সত্য কাহিনি অবলম্বনে নির্মিত বাড়ির নাম শাহানায় দীপা চরিত্রে অভিনয় করেছেন আনান সিদ্দিকা। ছবিটি যৌথভাবে প্রযোজনা করেছে কমলা কালেক্টিভ ও গুপী বাঘা প্রোডাকশন্স লিমিটেড।
নির্মাণের বাইরে লীসা গাজী লেখক, নাট্যকর্মী হিসেবে পরিচিত