জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, নিরাপত্তা বাহিনী ও রাষ্ট্র-সমর্থিত গোষ্ঠী দ্বারা বিক্ষোভকারীদের মাথা লক্ষ্য করে পরিকল্পিতভাবে গুলি (হেডশট) করা হয়েছিল। এই কৌশলের উদ্দেশ্য ছিল জনগণের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করে আন্দোলন দমন করা।

মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা প্ল্যাটফর্ম সপ্রানের (সকল প্রাণের নিরাপত্তা) এক গবেষণায় এ কথা বলা হয়েছে। বুধবার বিকেলে রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ভবনে ‘দ্য অ্যানাটমি অব হেডশট: স্টেট-স্পনসরড ভায়োলেন্স অ্যান্ড দ্য লিথাল সাপ্রেশন অব প্রোটেস্টারস ডিউরিং দ্য জুলাই আপরাইজিং’ শীর্ষক আলোচনা সভায় গবেষণা প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন সপ্রানের গবেষক জেবা সাজিদা সারাফ।

‘দে এইমড অ্যাট আওয়ার হেডস: অ্যানাটমি অব টার্গেটেড হেডশটস অ্যান্ড স্টেট-স্পনসরড ভায়োলেন্স ইন বাংলাদেশ’স ২০২৪ মাস আপরাইজিং’ শীর্ষক ওই প্রবন্ধে জুলাই অভ্যুত্থানে সংঘটিত ৫৪টি হেডশটের ঘটনা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

এসব ঘটনার ৩১টিই পুলিশের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে বলে প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে। বাকিগুলোর মধ্যে র‍্যাবের দ্বারা তিনটি, সেনাবাহিনীর দ্বারা একটি এবং আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের সশস্ত্র কর্মীর দ্বারা আটটি হেডশটের ঘটনা ঘটেছে। বাকি ১১টি হেডশটের সঙ্গে কারা জড়িত, সে বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে সেগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা আওয়ামী লীগের স্থানীয় সশস্ত্র কর্মীদের দ্বারা হতে পারে ধারণা করা হচ্ছে বলে প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

এই হত্যাকাণ্ডগুলোর ৫১টিই ঘটেছে ঢাকা বিভাগে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে দুটি এবং রাজশাহী বিভাগে একটি ঘটনা সংঘটিত হওয়ার কথা গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ডের অধিকাংশই সংঘটিত হয়েছে ১৯ জুলাই ও ৫ আগস্ট। প্রাণঘাতী অস্ত্রের পাশাপাশি ছররা গুলির মাধ্যমেও হেডশটের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

প্রবন্ধে বলা হয়েছে, মাথায় গুলিবিদ্ধ হওয়া ৫৪ জনের মধ্যে ১৬ জন ছিলেন পথচারী বা কৌতূহলী দর্শক। তাঁদের খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনাগুলো ছিল নিরাপত্তা বাহিনীর একটি পরিকল্পিত কৌশলের অংশ, যার উদ্দেশ্য ছিল জনগণের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করা।

প্রবন্ধে সপ্রানের পক্ষ থেকে মানবাধিকার কমিশনের ক্ষমতা ও স্বাধীনতা বাড়ানো, ঔপনিবেশিক পুলিশ আইন ও নিয়মাবলি বাতিল ও সংস্কার করা, প্রতিটি জেলায় ‘নাগরিক-পুলিশ জোট’ গঠনসহ ১১টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

পুলিশ নিয়ে ভাবতে হবে

সভায় বিগত সরকারের বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনার চিত্র তুলে ধরেন ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের (আইইউবি) অধ্যাপক বখতিয়ার আহমেদ। তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে আক্ষরিক অর্থে কোনো পুলিশ ছিল না। কমিউনিটিগুলো সে সময় নিজেরাই নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। ফলে পুলিশকে কোথায়, কখন, কোন ভূমিকায় রাখা দরকার, তা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম বলেন, রাষ্ট্র মাথা লক্ষ্য করে গুলি করার মাধ্যমে শুধু ব্যক্তির মৃত্যু নিশ্চিত করে না, বরং এর মাধ্যমে রাষ্ট্র ব্যক্তির চিন্তাচেতনা ও আদর্শকে খুন করতে চায়।

গত বছরের জুলাইয়ে সংবিধান ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন হয়েছে বলে মনে করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক সাদমান রিজওয়ান। তিনি বলেন, রাষ্ট্র তার জনগণকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করেছে।

সভার শুরুতে জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের একটি ভিডিও দেখানো হয়। আলোচনা সভায় জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ মো.

আতিকুর রহমানের ভাই মো. সোলাইমান তপু ও শহীদ সাজিদুর রহমানের ভাই সিরাজুল ইসলাম জুলাই অভ্যুত্থানের স্মৃতিচারণা করেন।

সভায় আরও বক্তব্য দেন সপ্রানের গবেষণা পরিচালক মো. জারিফ রহমান, ডেইলি স্টারের সাংবাদিক জিনা তাসরিন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সপ্রানের গবেষক নুসরাত জাহান।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রবন ধ র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

কুবির ২ বিভাগে র‍্যাগিংয়ের ঘটনায় পৃথক তদন্ত কমিটি, ক্লাস-পরীক্ষা

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) নৃবিজ্ঞান ও বাংলা বিভাগের র‍্যাগিংয়ের ঘটনায় চার সদস্য বিশিষ্ট পৃথক দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত অভিযুক্ত ব্যাচ দুইটির সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।

সোমবার (৭ জুলাই) দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো: আবদুল হাকিম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নৃবিজ্ঞান বিভাগের র‍্যাগিংয়ের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে আছেন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সোহরাব উদ্দীন এবং সদস্য সচিব হিসেবে আছেন ডেপুটি রেজিস্ট্রার বিপ্লব মজুমদার। তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন–নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাসেনা বেগম ও সহকারী প্রক্টর মাহমুদুল হাসান।

আরো পড়ুন:

জুলাই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচার দাবিতে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে গণস্বাক্ষর

ইবিতে স্নাতক পাসের ১ বছর পরও মিলছে না নম্বরপত্র

বাংলা বিভাগের র‍্যাগিংয়ের ঘটনায় তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে আছেন কলা ও মানবিক অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. বনানী বিশ্বাস এবং সদস্য সচিব হিসেবে আছেন সহকারী রেজিস্ট্রার মোঃ মনিরুজ্জামান। তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন– বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: মোকাদ্দেস-উল-ইসলাম ও সহকারী প্রক্টর ড. মুতাসিম বিল্লাহ।

এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুল হাকিম বলেন, “আমরা তদন্ত কমিটির অনুমোদনের জন্য রেজিস্ট্রার দপ্তরে সুপারিশ পাঠিয়েছি। উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্য স্বাক্ষর করলে এই কমিটি কার্যক্রমের জন্য অনুমোদন হবে। অনুমোদনের সাত কার্যদিবসের মধ্যে কমিটি তদন্ত রিপোর্ট প্রদান করবে। এ সাতদিন অভিযুক্ত ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।”

গত ৫ জুলাই রাতে কুবির নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের এক নবীন শিক্ষার্থী বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের দ্বারা র‍্যাগিংয়ের শিকার হয়ে ক্যাম্পাস ছেড়ে যান। এ সংক্রান্ত একটি স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

পরে ভুক্তভোগী এবং তার সহপাঠীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী নৃবিজ্ঞান বিভাগের নবীন শিক্ষার্থীদের বেঞ্চে দাঁড় করিয়ে রাখা, ধূমপান করার জন্য চাপ দেয়া এবং সিনিয়র আপুকে প্রপোজ করার জন্য চাপর দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া হলে ডেকে নিয়ে মানসিক নির্যাতন এবং রাতের আঁধারে ক্যাম্পাসের দূরবর্তী তালতলা নামক স্থানে নিয়ে গিয়ে ভুক্তভোগীকে মানসিক নির্যাতন করাও অভিযোগও পাওয়া গেছে।

ভুক্তভোগী ও তার সহপাঠীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী র‍্যাগিংয়ে অভিযুক্তরা হলেন- মুনতাসীর, ওলিউল্ল্যাহ, তিশা মনি, অরবিন্দু সরকার, রাফি ও হাসান।

অপরদিকে, বাংলা বিভাগের নবীন শিক্ষার্থীদের (২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার ছাদে নিয়ে র‍্যাগিংয়ের সময় প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা উপস্থিত হন। পরে ভুক্তভোগী ও অভিযুক্ত ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বিষয়টি অস্বীকার করেন।

ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আলিয়ার কোটি টাকা ‘চুরি’, ব্যক্তিগত সহকারী গ্রেপ্তার
  • নমিনির কাছে হস্তান্তর হবে মনোস্পুলের প্রয়াত উদ্যোক্তার শেয়ার
  • খুলনা মেডিক্যালের এমবিবিএস পরীক্ষার ফল প্রকাশ ও বিএসসি ইন নার্সিং পরীক্ষা নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত
  • আসাদুজ্জামান নূর নীলফামারীর ৪ মামলায় গ্রেপ্তার
  • সৌদি আরবে এক দশকে মাদক পাচারের অপরাধে ৬০০ জনের মৃত্যুদণ্ড, অধিকাংশই বিদেশি
  • লোহিত সাগরে হামলা চালিয়ে মালবাহী জাহাজ ডোবানোর দাবি হুতিদের
  • গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের ১০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা
  • আওয়ামী লীগ বাদে ৫০ দলকে ইসির চিঠি
  • কুবির ২ বিভাগে র‍্যাগিংয়ের ঘটনায় পৃথক তদন্ত কমিটি, ক্লাস-পরীক্ষা