শতবর্ষের মাইলফলক পেরোলেন আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার হিসেবে পরিচিত মাহাথির মোহাম্মদ। আজ বৃহস্পতিবার ছিল তাঁর শততম জন্মদিন। দীর্ঘ এই জীবনে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে তিনি সাফল্যের এক অনুপ্রেরণা। শততম জন্মদিনেও তাই থামতে নারাজ মালয়েশিয়ার সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। তাঁর মতে—‘অবসর মানে আপনি কিছুই করছেন না।’
মাহাথির ২৪ বছর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। প্রথমে ১৯৮১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত—টানা ২২ বছর। পরের দুই বছর ছিল ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত। মালয়েশিয়ার অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন এনেছিলেন তিনি। অবকাঠামোগত নজিরবিহীন পরিবর্তন এসেছিল তাঁর হাত ধরে। তবে মাহাথিরের বিরোধী মত দমন, মানবাধিকার রক্ষা নিয়ে সীমিত অঙ্গীকার নিয়েও কম আলোচনা হয়নি।
মাহাথিরের জন্ম ১৯২৫ সালের ১০ জুলাই, মালয়েশিয়ার কেদাহ রাজ্যের প্রধান শহর আলোর সেতারে। তাঁর দাদা ভারতের কেরালা থেকে সেখানে অভিবাসী হন। বাবা মোহাম্মদ ইস্কান্দার ছিলেন একটি ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলের প্রধান শিক্ষক। মাহাথির চল্লিশের দশকে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়াশোনা করেন। সেখানে তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় সিতি হাসমাহর। পরিচয় থেকে পরিণয়। এরপর বিয়ে।
গাইনোকোলজিতে এমবিবিএস শেষ করে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন মাহাথির। শুরু করেন চিকিৎসাসেবা। একসময় তাঁর মধ্যে ধারণা আসে, বিপুল মানুষের সেবা করতে হলে রাজনীতির বিকল্প নেই। সেই চিন্তা থেকে রাজনীতির ময়দানে পা রাখেন। ১৯৮১ সালে ইউনাইটেড মালয় ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (ইউএমএনও) থেকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন মাহথির মোহাম্মদ।
আশির দশকে ‘লুক ইস্ট পলিসি’ বা পূর্বকে অনুসরণ করার নীতি গ্রহণ করেন মাহাথির। অর্থনীতির পশ্চিমা মডেলের ওপর নির্ভরশীলতা কমান। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মাহাথিরের প্রথম ২২ বছরে মালয়েশিয়ায় পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার, এক্সপ্রেসওয়ে, বিমানবন্দরসহ নানা অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। ১৯৯৭ সালের অর্থনৈতিক সংকটও দক্ষতার সঙ্গে সামাল দেন তিনি।
শততম জন্মদিনেও শারীরিক ও মানসিকভাবে এখনো সক্রিয় মাহাথির। আজ মালয়েশিয়ার পুত্রজায়া শহরে নিজ অফিসে পরিচিত সাফারি স্যুট পরে সকাল সকাল হাজির হন তিনি। জন্মদিন উপলক্ষে এক পডকাস্টে মাহাথির বলেন, ‘আমি সব সময় কাজকর্মের মধ্যে থাকি। মানুষ কেন বিশ্রাম নিতে চায়, তা আমি বুঝি না। বলতে চাচ্ছি যে আপনি অবকাশের জন্য ছুটি নিতে চান, তার মানে আপনি কিছু করছেন। অবকাশযাপনও একটি কাজ। তবে কিছু মানুষ অবসর নিতে চান এবং বিশ্রাম করতে চান। বিশ্রামের অর্থ কী? আপনি কিছুই করছেন না।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দুই দেশের হয়ে টেস্ট খেলা পিটার মুরের অবসর
বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়ে ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলা শুরু হয়েছিল পিটার মুরের। এবার আর সেই ক্রিকেটারকে দেখা যাবে না জাতীয় দলের জার্সিতে। ৩৫ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে জিম্বাবুয়ে ও আয়ারল্যান্ডের হয়ে খেলেছেন এই উইকেটকিপার ব্যাটার।
জিম্বাবুয়ের হারারেতে জন্ম নেওয়া মুরের আন্তর্জাতিক যাত্রা শুরু হয় ২০১৪ সালের নভেম্বরে, বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়ে। এরপর আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি (২০১৬) ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে (২০১৬)
টেস্ট অভিষেক। জিম্বাবুয়ের হয়ে আটটি টেস্ট খেলেছেন তিনি। তার ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির সব ম্যাচও তাদের সঙ্গে।
পরবর্তীতে আয়ারল্যান্ডের হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। দাদির সূত্রে আইরিশ পাসপোর্ট পাওয়া মুর ২০২২ সালের অক্টোবরে জাতীয় দলে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেন। ২০২৩ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে সফরে আয়ারল্যান্ডের টেস্ট দলে প্রথম ডাক পান। সবমিলিয়ে আয়ারল্যান্ডের হয়ে খেলেছেন ৭টি টেস্ট।
তবে নতুন দেশের হয়ে মুর ততটা উজ্জ্বল হতে পারেননি। যেখানে জিম্বাবুয়ের হয়ে ৩৫.৫৩ গড়ে করেছিলেন পাঁচটি হাফ সেঞ্চুরি। সেখানে আয়ারল্যান্ডের হয়ে ১৪.৩৫ গড়ে আসে কেবল একটি হাফ সেঞ্চুরি, সেটিও নিজের জন্মভূমি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে বুলাওয়েতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচটাই হয়ে রইল তার শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ।
এতেই মুর হয়ে গেলেন ইতিহাসের ১৭তম ক্রিকেটার, যিনি দুই দেশের হয়ে টেস্ট খেলেছেন।