অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন। এ অবস্থায়  ‘শেখ হাসিনা-পরবর্তী’ বাংলাদেশকে একটি বড় ধরনের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে বলে মনে করেন দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান।

দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান মার্কিন সাময়িকী ফরেন পলিসি-র সাউথ এশিয়া ব্রিফে লিখেছেন,  ‘বাংলাদেশ দীর্ঘদিন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন থেকে বঞ্চিত হয়েছে, আর আগামী বছরের নির্বাচন হবে হাসিনা-পরবর্তী বাংলাদেশের জন্য একটি বড় পরীক্ষা।’

গত মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষণা করেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে দেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পরের দিন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে নির্বাচন কমিশনে পাঠানো এক চিঠিতে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে অনুরোধ জানানো হয়। এই চিঠির মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজনের জন্য কমিশনের প্রতি সরকারের অনুরোধের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।

নির্বাচন কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমদের কাছে পাঠানো চিঠিতে প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিঞা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রত্যাশিত মানসম্পন্ন একটি ‘অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর’ জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানান।

জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্ণ হয়েছে মঙ্গলবার। এদিন ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গেল বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে চলে গেছেন।

কুগেলম্যান লেখেন, ‘ছাত্র-নেতৃত্বাধীন কয়েক সপ্তাহব্যাপী আন্দোলনের পর হাসিনার পদত্যাগের খবর আসে। তাঁর কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনী কঠোর দমন-পীড়ন চালায়, যাতে প্রাণ হারান ১ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি।’ তিনি আরও লেখেন, ‘হাসিনার বিদায়ের ব্যাপক রাজনৈতিক প্রভাব পড়েছে এমন এক দেশে, যেটি টানা ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে তাঁর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের শাসনে ছিল।’ কুগেলম্যান আরও লেখেন, ‘আজ বাংলাদেশের মানুষ সাধারণভাবে আগের চেয়ে বেশি সুখী ও স্বাধীন। তবে বিপ্লব-পরবর্তী মধুচন্দ্রিমা এখন অনেকটাই অতীত।’

নোবেলজয়ী অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অর্থনীতি স্থিতিশীল করা ও আইনশৃঙ্খলা জোরদারে সংগ্রাম করছে বলেও কুগেলম্যান উল্লেখ করেন। তিনি আরও লেখেন, ‘এদিকে, ফরেন পলিসিতে সলিল ত্রিপাঠি লিখেছেন, দেশে প্রতিশোধপরায়ণ রাজনৈতিক চক্র এখনো অব্যাহত রয়েছে।’

আন্দোলনের সময় নেতৃত্ব দেওয়া অনেকেই, যাঁরা পরে অন্তর্বর্তী সরকারে যোগ দিয়েছিলেন, চলতি বছরের শুরুতে পদত্যাগ করে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। কুগেলম্যান লেখেন, তাঁরা এখনো হাসিনার পতনের পর দেওয়া উচ্চাভিলাষী কাঠামোগত সংস্কারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সচেষ্ট।‘তবে অগ্রগতি থমকে আছে, এবং এতে অনেক বাংলাদেশি হতাশ’, বলেন তিনি।

মঙ্গলবার টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘নির্বাচন সামনে। আপনি যদি নিজের নির্বাচনী এলাকার বাইরে থাকেন, এখন থেকেই নিয়মিত যাতায়াত শুরু করুন। যোগ্যতম প্রার্থীকে বিজয়ী করতে নিজেকে প্রস্তুত করুন।’তিনি বলেন, ‘ভোট দেওয়ার সময় যেন তাঁদের মুখ চোখের সামনে ভেসে ওঠে, যাঁদের তাজা রক্ত আমাদের এই পবিত্র অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে।’

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি বেশি দূরে নয়। প্রস্তুতির দিনগুলো দ্রুত পেরিয়ে যাবে, আর খুব শিগগিরই আসবে ভোটের দিন।’তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত থাকার পর এবার সবাই ভোট দেবেন, কেউ পেছনে পড়ে থাকবেন না।’

অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, ‘চলুন সবাই গর্ব করে বলি: নতুন বাংলাদেশ গড়ার যাত্রায় আমি ভোট দিয়েছি। আর এই ভোটেই দেশ সেই পথে এগিয়ে গেছে’, ।প্রধান উপদেষ্টা দেশের প্রতিটি নাগরিকের প্রতি আহ্বান জানান, ‘চলুন, নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে প্রথম বড় পরীক্ষাটি আমরা সবাই মিলে সফলভাবে উতরে যাই।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পরবর ত পর ক ষ বছর র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সোভিয়েত–পরবর্তী দুনিয়ায় জেমস বন্ডের অভিযোজন

ব্রিটিশ সিক্রেট এজেন্ট জেমস বন্ডের স্রষ্টা ইয়ান ফ্লেমিংয়ের (১৯০৮-৬৪) বহুদিন থেকেই একটা ডিটেকটিভ উপন্যাস লেখার শখ। সময়, সুযোগ বা উদ্যমের অভাবে যা এত দিন হয়ে ওঠেনি, তাই তিনি করতে পারলেন ১৯৫২ সালে। কিছুটা বাধ্য হয়েই বলা যায়। প্রেমিকা এয়ান কার্টেরিস তখন গর্ভবতী। এরই মধ্যে চলছে তাঁদের বিয়ের আয়োজন। এত শোরগোল ভালো লাগছিল না আর। তিক্তবিরক্ত হয়ে সমস্ত কিছু থেকে দূরে গিয়ে লিখতে বসে গেলেন তাঁর কাঙ্ক্ষিত সেই ডিটেকটিভ উপন্যাস। প্রথম দিনেই লিখে ফেললেন দুই হাজার শব্দ। সম্পূর্ণ পাণ্ডুলিপি তৈরি হয়ে গেল এক মাসে। নাম দিলেন ‘ক্যাসিনো রয়্যাল’।

জেমস বন্ডের স্রষ্টা ইয়ান ফ্লেমিং (১৯০৮-৬৪)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সোভিয়েত–পরবর্তী দুনিয়ায় জেমস বন্ডের অভিযোজন