মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী জামায়াতে ইসলামী নতুন নতুন মত নিয়ে হাজির হয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ।

আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত এক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন হাফিজ উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘এই যে দল জামায়াতে ইসলামী, তারা সেদিন বলেছে যে জাতীয় ঘোষণাপত্রে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠাকে অত্যন্ত গৌরবের সঙ্গে উপস্থাপন করা হয়নি। তারা ভেবেছে যে বাংলাদেশের মানুষের স্মরণশক্তি খুবই দুর্বল। তারা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। এখন তারা নতুন নতুন মত নিয়ে হাজির হয়।’

জুলাই ২৪ গণ–অভ্যুত্থানের ‘বর্ষপূর্তিতে দ্রুত বিচার সম্পন্ন, মৌলিক সংস্কার ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে অগ্নিসেনা সোশাল ফাউন্ডেশন ও আমাদের নতুন বাংলাদেশ।

নির্বাচন বিলম্বিত হয় কিংবা নির্বাচন যাতে না হয়, এমন পরিবেশ সৃষ্টি করা কাম্য নয় উল্লেখ করে হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘তবে বিচারের ভার জনগণের কাছে। গণতন্ত্রে প্রত্যেকে নিজেদের বক্তব্য দেওয়ার অধিকার আছে।’

আগামী সংসদ নির্বাচনে যারা ক্ষমতায় আসবে, তারাই সংস্কার নিয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করেন হাফিজ উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ এত দিন ভোট দিতে পারেনি। কিন্তু কিছু দল ধরে নিয়েছে, নির্বাচন হলে তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে, তারা নির্বাচনকে বিলম্বিত করতে পিআর সিস্টেমের কথা বলে। আমি মনে করি, আগামী নির্বাচন বিদ্যমান পদ্ধতিতে আয়োজন করা উচিত, যাতে মানুষ পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে।’

ইভিএম প্রসঙ্গে হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, দেশের মানুষ এখনো ইভিএমের সঙ্গেও পরিচিত নয়। জনগণ এখনো সচেতন হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলোও এখনো এতটা পরিপক্বতার পরিচয় দিতে পরেনি যে একটি প্রতীকে ভোট দিলে তাদের অবস্থার পরিবর্তন হবে। বরং মানুষ এখনো স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছে সব সুখ–দুঃখ নিয়ে হাজির হন।

বর্তমান সরকারের কাছে পুলিশ বাহিনীর সংস্কার অন্যতম আকাঙ্ক্ষা ছিল উল্লেখ করে হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, বিগত সময়ে দেশে পুলিশ বাহিনী একটি পেটোয়া বাহিনীতে পরিণত হয়েছিল। বাংলাদেশ একটি পুলিশ স্টেটে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু একটি বছর পার হলেও পুলিশ বাহিনীর কোনো সংস্কার করা হয়নি। এই বাহিনী সঠিকভাবে একটি নির্বাচন করতে পারবে কি না, তা নিয়ে জনগণের যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, র‍্যাবকে নির্বাচনে ব্যবহার করা যাবে না, তাহলে এই বাহিনীকে রাখা হলো কেন?

সভায় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, বাংলাদেশের বিদ্যমান ব্যবস্থা নিজেই একটি স্বৈরাচারী ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থার মধ্যে যে–ই ক্ষমতায় যায়, তাকেই স্বৈরাচারী বানিয়ে দেয়।

চব্বিশের অভ্যুত্থান বড় ঘটনা উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, গণ–অভ্যুত্থানপরবর্তী বাংলাদেশে যারা নিজেদের বদলাতে পারবে না, আগামী দিনে তারা আর প্রাসঙ্গিক থাকবে না। নতুন ব্যবস্থার জন্ম এখন একটা অনিবার্য ঘটনা। এটা ঘটতেই হবে। কাজেই নতুন ব্যবস্থার সঙ্গে যারা নিজেদের পরিবর্তন করতে পারবে, তারাই আগামী দিনে প্রাসঙ্গিক থাকবে।

গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক বলেন, গণ–অভ্যুত্থানপরবর্তী সময়েও এই পুলিশ ও প্রশাসনের তেমন পরিবর্তন হয়নি। বরং বিভিন্ন দলকে ব্যবহার করে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা প্রশাসনে পুনর্বাসিত হচ্ছেন।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারকাজ শেষ হতে সর্বোচ্চ ছয় মাস সময় লাগার কথা। কিন্তু আমরা দেখেছি, বিভিন্ন ধরনের ইস্যু সামনে টেনে নিয়ে আসা হলো। সংস্কার আগে নাকি নির্বাচন আগে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে নাকি জাতীয় নির্বাচন আগে। বিচার আগে নাকি নির্বাচন আগে। পর্যায়ক্রমে একেক সময় একেক ইস্যু সামনে আনছে।’

অগ্নিসেনা সোশাল ফাউন্ডেশনের সভাপতি জহিরুল হক সভায় সভাপতিত্ব করেন। আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রেজাবুদ্দৌলা চৌধুরী, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সহসভাপতি গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী, জাতীয় নাগরিক ফোরামে চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

সরকার একটি মিশ্র রেকর্ড নিয়ে আছে

৮ আগস্ট ২০২৪-এ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন দায়িত্বভার গ্রহণ করে, তখন দেশের মানুষ এক নতুন আশায় বুক বেঁধেছিল। দীর্ঘদিনের স্বৈরাচারী শাসন থেকে মুক্তিলাভের পর জনগণের মনে যে আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত হয়েছিল, তা ছিল এক ন্যায়ভিত্তিক, বৈষম্যহীন এবং সুস্থ প্রতিযোগিতার সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। এ চাওয়া ১৯৭১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত জাতীয় আকাঙ্ক্ষার ধারাবাহিক মূল সুরেরই প্রতিফলন। একটি সুষ্ঠু সমাজ, যেখানে অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও সামাজিক জীবনের সঠিক বিকাশ ঘটবে—এমনটাই ছিল মানুষের স্বাভাবিক চাওয়া। কিন্তু দেড় যুগের অত্যাচারী, কর্তৃত্ববাদী শাসন মানুষের এই চাওয়াকে রুদ্ধ করে রেখেছিল।

সরকার যখন ক্ষমতা গ্রহণ করে, তখন নানা ধরনের পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। একটি লাইনচ্যুত রাষ্ট্র, সমাজ ও অর্থনীতিকে সঠিক প্রক্রিয়ায় ফিরিয়ে আনার এই প্রত্যাশা ছিল প্রবল। দ্বিতীয়ত, একটি বৈরী ভূরাজনৈতিক পরিবেশ ছিল। তাই সরকারের সামনে ছিল নিজেদের সংহত রাখা এবং এই বৈরী পরিবেশ মোকাবিলা করার চ্যালেঞ্জ। তৃতীয়ত, রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে ঐক্য ছিল বটে, কিন্তু তাদের বিভাজন ও ঐক্যের জায়গাগুলো ওই মুহূর্তে স্পষ্ট ছিল না। তরুণদের যারা এই পরিবর্তনে বড় ভূমিকা রেখেছিল, তাদেরও নতুন রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা ছিল। সরকার তাদের এই আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন জানালেও বাস্তবায়ন কতটা হয়েছে, তা এক বছরের মাথায় দেখার বিষয়।

তবে সামষ্টিক অর্থনীতির এই সাফল্যের বিপরীতে সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক চাওয়া-পাওয়া কতটুকু পূরণ হয়েছে, তা দেখার বিষয়।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল বিপর্যস্ত। ব্যাংকিং খাত ছিল ধ্বংসপ্রায়, রিজার্ভ ছিল নিম্নমুখী এবং নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যানের অভাব ছিল। অর্থনৈতিক ঝুঁকি ছিল প্রবল। সরকার এই সমস্যা সমাধানে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় এবং দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। এ ক্ষেত্রে তারা অনেকটা সফল হয়েছে। ব্যাংকিং খাতের মাধ্যমে দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের পথগুলো অনেকাংশে রুদ্ধ করা গেছে। রিজার্ভ স্থিতিশীল হয়েছে এবং ডলারের মূল্য নিয়ন্ত্রণে এসেছে। জনগণের আস্থা ফিরে আসায় রেমিট্যান্সপ্রবাহও বেড়েছে। সামষ্টিক অর্থনীতির ঝুঁকি কমানোর এই সাফল্য নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তবে সামষ্টিক অর্থনীতির এই সাফল্যের বিপরীতে সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক চাওয়া-পাওয়া কতটুকু পূরণ হয়েছে, তা দেখার বিষয়।

অন্যান্য ক্ষেত্রে সরকারের অগ্রগতি কেমন ছিল, তা বিশ্লেষণ করলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সামনে আসে। এই এক বছরে সরকারের অন্যতম একটি কাজ ছিল লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা। জনগণের আকাঙ্ক্ষা ছিল ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, দৈনন্দিন জীবনে স্বস্তি, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং স্বৈরাচারের অনুষঙ্গগুলো থেকে মুক্তি। স্বৈরাচারী শাসনের অনুষঙ্গগুলোর মধ্যে ছিল হয়রানিমূলক মামলা, আইনশৃঙ্খলার অনুপস্থিতি ও পুলিশের নেতিবাচক ভাবমূর্তি। এই আকাঙ্ক্ষাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার কিছু দৃঢ় পদক্ষেপ নিলেও বাস্তবায়নের জায়গায় কৌশলগত অবস্থান ছিল ভুল। পরিবর্তনটি এসেছিল জনগণের সম্মিলিত অংশগ্রহণে, কিন্তু নির্মাণের কাজটিতে তারা জনগণের পরিবর্তে আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থার ওপর অতিমাত্রায় নির্ভর হয়ে উঠল।

এই কৌশলগত ত্রুটির ফলে আমলাতান্ত্রিক শাসনকে অতিমাত্রায় ক্ষমতায়িত করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা, কমিউনিটি পর্যায়ের অংশগ্রহণ এবং স্থানীয় সরকারের মতো বিষয়গুলোকে কৌশলগতভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে। সরকার হয়তো এটিকে একটি সাময়িক দুর্যোগকালীন ব্যবস্থা হিসেবে দেখেছিল, কিন্তু এক বছর পর দেখা যাচ্ছে, আমলাতন্ত্র নিজেদের সুযোগ-সুবিধা আদায়ের দিকেই বেশি মনোযোগী হয়ে উঠেছে। এর ফলে জনগণের অংশগ্রহণের যে প্রত্যাশা ছিল, তা অনেকাংশে ব্যাহত হয়েছে।

সরকারের আরেকটি বড় উদ্যোগ ছিল রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর সংস্কার। কার্যকারিতার দৃষ্টিকোণ থেকে ধ্বংসপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোকে ঠিক করার জন্য তারা অনেকগুলো কমিশন গঠন করে। এসব কমিশন কিছু প্রতিবেদনও জমা দিয়েছে, কিন্তু সার্বিকভাবে সংস্কার কার্যক্রমে আমলাতান্ত্রিক ও এলিট পর্যায়ের আলোচনার প্রাধান্য দেখা দিয়েছে। কমিশনগুলোর বেশির ভাগ সুপারিশ তারা আমলে নেয়নি। সংবিধান কমিশন এবং নির্বাচনসংক্রান্ত কিছু বিষয় ছাড়া পুলিশ, স্থানীয় সরকার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এমনকি প্রশাসনিক সংস্কারের কোনো সুপারিশই তারা গ্রহণ করেনি। এর কারণ সম্ভবত তারা সংস্কারের একটি সীমিত এজেন্ডার মধ্যেই নিজেদের শক্তি ব্যয় করতে চেয়েছিল। স্থানীয় সরকারের মতো যে প্রতিষ্ঠানের ওপর সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি নির্ভর করে, সেটির সংস্কার বা শক্তিশালীকরণের বিষয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি।

স্বৈরাচারী শাসনের অনুষঙ্গগুলোর মধ্যে ছিল হয়রানিমূলক মামলা, আইনশৃঙ্খলার অনুপস্থিতি ও পুলিশের নেতিবাচক ভাবমূর্তি। এই আকাঙ্ক্ষাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার কিছু দৃঢ় পদক্ষেপ নিলেও বাস্তবায়নের জায়গায় কৌশলগত অবস্থান ছিল ভুল।

সবচেয়ে বড় যে প্রয়োজন ছিল, তা হলো বিদ্যমান শাসনের দৃঢ়তা। অর্থাৎ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে একটি সুস্পষ্ট এবং সমন্বিত বার্তা দেওয়া। কিন্তু এই জায়গায় সরকার দুর্বলতা দেখিয়েছে। বিভিন্ন বিশৃঙ্খলার ঘটনা, যেমন মব ভায়োলেন্স, হামলা, ভাঙচুর ইত্যাদি সঠিকভাবে মোকাবিলা করা হয়নি। সরকারের বক্তব্য ছিল ঘোষণাভিত্তিক, কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ এবং একে অপরের সঙ্গে সমন্বয়হীন। এর ফলে সামগ্রিকভাবে দৈনন্দিন শাসন এবং স্বস্তির পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব হয়নি।

একেকজন উপদেষ্টার বক্তব্য থেকে আসা ভিন্ন ভিন্ন বার্তা প্রশাসনের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করে। ফলে তারা অনেক ক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয় থেকেছে। সরকার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঘোষণার ওপরই বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। কিন্তু ঘোষণা ও মাঠপর্যায়ের বাস্তবায়নের মধ্যে একটি বড় দূরত্ব তৈরি হয়েছে। জনগণ প্রথমে ঘোষণা শুনে উৎসাহিত হলেও কাজের বাস্তবায়ন না দেখে তাদের উৎসাহ কমে গেছে।

সরকারের বক্তব্যে বারবার প্রকাশ পায়, স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদের ফিরে আসার পথ রাখা হবে না। কিন্তু স্বৈরাচারী ব্যবস্থার মূল স্তম্ভগুলো হলো: ১. অতি ক্ষমতায়িত প্রধান নির্বাহী বা প্রধানমন্ত্রী; ২. দেশজুড়ে প্রতিটি সংসদীয় আসনে ‘এমপি রাজ’ বা মিনি স্বৈরাচার; ৩. পুলিশ ও প্রশাসনের চেইন অব কমান্ড ভেঙে দেওয়া; ৪. বিচারব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেওয়া; এবং ৫. স্থানীয় সরকারকে নিরন্তর দুর্বল করা। অন্তর্বর্তী সরকার শুধু অতি ক্ষমতায়িত প্রধান নির্বাহীর বিষয়টির দিকে মনোযোগ দিয়েছে। অন্য গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভগুলোকে উপেক্ষা করেছে। ফলে স্বৈরাচার ফিরে আসার পথ খোলাই থাকছে।

নির্বাচনের সময় ঘোষণা একধরনের স্বস্তি এনেছে। এখন নির্বাচন করার চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, যে রাষ্ট্রযন্ত্র বিদ্যমান আছে সেটিকে সঠিকভাবে দিকনির্দেশনার মাধ্যমে দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করতে হবে। ঘোষণা ও বাস্তবায়নের মধ্যে বিশাল ফাঁক দূর করতে হবে।

বলতে হবে এক বছর পর সরকার একটি মিশ্র রেকর্ড নিয়ে আছে। সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের মধ্যে অস্পষ্টতা, স্ববিরোধিতা এবং পক্ষপাতিত্ব পরিলক্ষিত হয়, বিশেষ করে নির্বাচন-সংক্রান্ত বিষয়ে। সম্প্রতি নির্বাচনের সময়কালের বিষয়টি নির্দিষ্ট করেছে সরকার। কিন্তু এর মাধ্যমে সব অনিশ্চয়তা দূর হয়নি। কারণ, সরকারের আরেকটি বড় দায়িত্ব ছিল জাতির ঐক্যকে সংহত করা। যে ঐক্যের মাধ্যমে পরিবর্তন এসেছিল, সেই ঐক্যের জায়গাটি দুর্বল হয়ে গেছে। নির্মাণের কাজটি সরকার, আমলা ও কিছু রাজনৈতিক দলের কাজে পরিণত হয়েছে। এখানে ‘মানুষ কোথায়?’এই প্রশ্ন এখনো বড় হয়ে আছে।

জাতীয় ঐক্য একাধারে একটি রাজনৈতিক বিষয়, আবার মনস্তাত্ত্বিক, আবেগপ্রবণ ও দার্শনিক বিষয়ও বটে। দুঃখজনকভাবে বৃহত্তর অর্থে জাতীয় ঐক্য সংহত করার অন্তরায় হয়েছে প্রতিশোধস্পৃহার একধরনের প্রাধান্য পাওয়া। নির্বাচনের সময় ঘোষণা একধরনের স্বস্তি এনেছে। এখন নির্বাচন করার চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, যে রাষ্ট্রযন্ত্র বিদ্যমান আছে সেটিকে সঠিকভাবে দিকনির্দেশনার মাধ্যমে দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করতে হবে। ঘোষণা ও বাস্তবায়নের মধ্যে বিশাল ফাঁক দূর করতে হবে।

এখন যেহেতু নির্বাচনী অঙ্গন রোডম্যাপ পেয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের এজেন্ডা নিয়ে মাঠে নামবে। কিন্তু জনগণের চাওয়াকে তারা কতটা তুলে ধরতে পারবে, সেটাই দেখার বিষয়। তরুণদের কর্মসংস্থান নিয়ে আন্দোলন হয়েছিল, কিন্তু এখন পর্যন্ত নতুন কর্মসংস্থানবান্ধব উন্নয়ন কৌশলের কোনো জোরালো চিন্তা দেখা যায়নি। আমাদের উন্নয়ন কৌশলে মানবসম্পদ উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। বর্তমানে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে, কিন্তু তা মানবসম্পদ তৈরি করছে না। এই ঘাটতিগুলো সামনে বড় সংকট তৈরি করবে।

এই এক বছরের মাথায় তিনটি বিষয় জরুরি: প্রথমত, জনগণের মনে যে পরিবর্তনের স্মৃতি আছে, তাকে নতুন করে লালন করা। দ্বিতীয়ত, অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ডের একটি নির্মোহ খতিয়ান তৈরি করা, যা তাদের সফলতা ও ব্যর্থতাগুলো স্পষ্ট করবে। তৃতীয়ত, ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে একটি কার্যকর রোডম্যাপ তৈরি করা, যেখানে নাগরিক সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকবে। অন্তর্বর্তী সরকার মানুষের অংশগ্রহণের জায়গাগুলোকে সংকুচিত করে ফেললেও ভবিষ্যতে এই জায়গাগুলো আবার উন্মুক্ত করতে হবে।

হোসেন জিল্লুর রহমান: সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সরকার একটি মিশ্র রেকর্ড নিয়ে আছে
  • গুমের শিকার ব্যক্তিদের পুনর্বাসনে তহবিল গঠনের দাবি
  • নির্বাচনের আগে দৃশ্যমান সংস্কার ও বিচার দেখতে চায় খেলাফত মজলিস
  • এক নীতির বাংলাদেশ হবে, বিদেশি কোনো প্রভু থাকবে না: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • নির্বাচন নিয়ে দোদুল্যমানতা কেটে গেছে: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • আনন্দ মিছিলে যোগ দেওয়া হলো না যুবদল নেতা মোস্তাকের 
  • এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের প্রাথমিক স্কোয়াড ঘোষণা
  • নতুনভাবে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টাকারীদের প্রত‌্যাখ‌্যা‌নের আহ্
  • জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে শহরে খেলাফত মজলিসের গণমিছিল