গবেষণায় শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করাই আমাদের অগ্রাধিকার: জবি উপাচার্য
Published: 27th, October 2025 GMT
গবেষণার প্রতিটি ধাপে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করাই এখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অগ্রাধিকার বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম।
তিনি বলেছেন, “গবেষণার প্রতিটি ধাপে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করা আমাদের লক্ষ্য। কারণ, একাডেমিক উৎকর্ষের মূল চালিকাশক্তি হলো গবেষণা।”
আরো পড়ুন:
দীর্ঘ ২ দশক পর জকসু সংবিধি পাস
টিউশনিতে গিয়ে শ্লীলতাহানির শিকার জবি ছাত্রী, অভিযুক্ত পলাতক
সোমবার (২৭ অক্টোবর) নানা আয়োজনে পালিত হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস ২০২৫। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল— ‘ঐক্যবদ্ধ জবিয়ান, স্বপ্ন জয়ে অটল প্রাণ’। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিজ্ঞান ভবন প্রাঙ্গণে আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন উপাচার্য।
অধ্যাপক রেজাউল করিম বলেন, “২০০৫ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার হাত ধরে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তার সুফল আজ আমরা পাচ্ছি। জগন্নাথ এখন শিক্ষা ও গবেষণার প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমরা দায়িত্ব নেওয়ার সময় শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট বাজেট ছিল অত্যন্ত সীমিত। বর্তমানে সেই বাজেট উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। শিক্ষা ও গবেষণায় মানোন্নয়ন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”
গবেষণার সুযোগ সম্প্রসারণের বিষয়ে উপাচার্য ঘোষণা দিয়ে বলেন, “শিগগিরই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গবেষণা সপ্তাহ’ আয়োজন করা হবে। এতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়েই গবেষণায় অংশ নেওয়ার অনুপ্রেরণা পাবেন। শিক্ষকদের গবেষণায় শিক্ষার্থীদের সহকারী হিসেবে যুক্ত করা হচ্ছে, যাতে তারা বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে।”
উপাচার্য আরো বলেন, “নিয়মিত ক্লাস মনিটরিং অব্যাহত থাকবে এবং ফলাফল প্রকাশে যেন অযথা বিলম্ব না হয়, সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি থাকবে। শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট সমাধানে আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করছি। আশা করছি, আগামী বছরের মধ্যে এর আংশিক সমাধান সম্ভব হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতিতে সম্মিলিত প্রয়াসের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতি ও মর্যাদা রক্ষায় আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপ হবে আন্তরিকতার সঙ্গে। এই প্রয়াসে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী—সবার সম্মিলিত সহযোগিতাই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।”
জবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড.
এর আগে, সকালে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে জাতীয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন, বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে দিবসের উদ্বোধন করেন উপাচার্য। এরপর র্যালি, চারুকলা ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী, দোয়া মাহফিলসহ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
ঢাকা/লিমন/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপ চ র য আম দ র ক ত কর
এছাড়াও পড়ুন:
ঐকমত্য কমিশনের শেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত, সুপারিশ পেশ মঙ্গলবার
সরকারের কাছে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় সম্পর্কিত সুপারিশ দিতে যাচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে এই সুপারিশ হস্তান্তর করা হবে।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে কমিশনের সমাপনী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আরো পড়ুন:
জাতিসংঘকে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে: অধ্যাপক ইউনূস
অগ্নিনিরাপত্তা পরিদর্শন সপ্তাহ পালনের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
এতে উপস্থিত ছিলেন ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি প্রফেসর আলী রীয়াজ, কমিশন সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
সমাপনী বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠনের পর থেকে চূড়ান্ত সুপারিশ প্রদান পর্যন্ত সমস্ত ডকুমেন্ট, আলোচনার ভিডিও, অডিও ও ছবি সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “এগুলো মহামূল্যবান সম্পদ। জাতি হিসেবে আমরা কোন প্রেক্ষাপটে কী প্রক্রিয়ায় কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছালাম, তা সকলের জন্য দীর্ঘমেয়াদে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং উন্মুক্ত থাকা দরকার। যত বৈঠক হয়েছে সেগুলোর ছবি ও ভিডিও, যত চিঠি চালাচালি হয়েছে সমস্ত ডকুমেন্ট সংরক্ষণ করতে হবে এবং ক্যাটাগরি করে রাখতে হবে। টেলিভিশনে যেসব আলোচনা লাইভ প্রচার হয়েছে, সেগুলো খণ্ড খণ্ড আকারে সংরক্ষণ করতে হবে। কারণ, এগুলো হবে ইতিহাসের চিরজীবন্ত দলিল। যারা গবেষণা করতে চায়, তারা যেন এগুলো দেখে কাজে লাগাতে পারে। প্রজন্মের পর প্রজন্মে এই ডকুমেন্ট থেকে যাবে। এই দলিলগুলোই ভবিষ্যতের রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে।”
এ সময় রাজনৈতিক দল, ঐকমত্য কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী, গবেষক ও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান প্রধান উপদেষ্টা।
সমাপনী বৈঠকে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা চূড়ান্ত করার পাশাপাশি অন্য সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়নেও সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কমিশন সদস্যরা।
‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বাংলাদেশে একটি স্থায়ী জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপনের জন্য কাজ করেছে’ উল্লেখ করে কমিশনের সহ-সভাপতি প্রফেসর আলী রীয়াজ বলেন, “রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি আইন বিশেষজ্ঞ, বিচারপতি, শিক্ষাবিদসহ নাগরিক সমাজের বিশিষ্টজনের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ চূড়ান্ত করা হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের তিনটি মূল দায়িত্বের (বিচার, সংস্কার, নির্বাচন) একটি কাঠামোগত সংস্কার। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রধান দায়িত্ব ছিল সংস্কারের একটি রূপরেখা তৈরি করা। মিল-অমিল সত্ত্বেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা দৃশ্যমান ছিল। তারা বরাবরই আমাদের সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন। দিনের পর দিন অত্যন্ত ধৈর্য ও বিচক্ষণতার সাথে সংলাপে অংশ নিয়েছেন।”
প্রফেসর আলী রীয়াজ বলেন, “চব্বিশে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণ-অভ্যুত্থান আমাদের যে সুযোগ দিয়েছে, সেটা যেন হারিয়ে না ফেলি। কমিশন সংস্কারকেই অগ্রাধিকার দিয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে জনগণ কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন দেখতে পারে। কমিশন দায়িত্ব শেষ করল। আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর হবে। কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে ৩১ অক্টোবর। এরপরেও সরকারের প্রয়োজন হলে এ দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতা প্রদানের চেষ্টা করব।”
নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান ও কমিশন সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে সবাই সরকারের নিবিষ্টতা ও সাহসিকতা প্রত্যাশা করে। গণঅভ্যুত্থানে এত তাজা প্রাণ ঝরে গেল, এত মানুষ আহত হলো—এটা স্মরণে রেখে প্রয়োজনীয় সংস্কার যাতে নিশ্চিত হয়। এই সুযোগ যেন না হারাই।”
কমিশন সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক বলেন, “গণঅভ্যুত্থানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে ঐক্য ছিল, একইরকম আন্তরিকতার প্রতিফলন ছিল কমিশনের বৈঠকগুলোতে। এটা খুবই ইতিবাচক দিক।”
পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান ও কমিশন সদস্য সফর রাজ হোসেন বলেন, “প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দলগুলো বসে ধৈর্যের সাথে আলোচনা করেছে। ভবিষ্যতেও যেন এ ধরনের সৌহার্দ্যতা থাকে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।”
দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ও কমিশন সদস্য ড. ইফতেখারুজ্জামান জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পাশাপাশি দুদক সংস্কারেও সরকারকে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার বলেন, “যতগুলো শহীদ পরিবারের সাথে আমরা কথা বলেছি, তারা প্রত্যেকে আমাদের জানিয়েছে সংস্কার নিশ্চিত করা না হলে তাদের সন্তানদের জীবন উৎসর্গ করা বৃথা যাবে বলে তারা মনে করেন। যারা জুলাইয়ে জীবন দিল তারাই এর মূল ভিত্তি।”
মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় সম্পর্কিত সুপারিশ হস্তান্তর করবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
ঢাকা/আসাদ/সাইফ