আগের দিন ঢুলির বাড়িতে তারকাঁটার বেড়া, পরদিন খুপরি ঘরে ভাঙচুর-লুটপাট
Published: 4th, February 2025 GMT
টিনের ছাপরার খুপরি ঘরে বয়োজ্যেষ্ঠ মা আঙুর বালা ও বাবা বিশ্বনাথ মণ্ডলকে নিয়ে বাস করেন বিদ্যুৎ মণ্ডল (৩৫)। তারা কুষ্টিয়ার কুমারখালীর পান্টি ইউনিয়নের ভালুকা পূর্বপাড়া এলাকার বাসিন্দা। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ঢোল বাজিয়ে যা আয় করেন, তা দিয়েই চলে সংসার। বসতবাড়ির জমি নিয়ে এক প্রতিবেশীর সঙ্গে আদালতে মামলা চলছে তাঁদের। তবে মামলা চলমান অবস্থায় ওই প্রতিবেশী লোকজন নিয়ে এসে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাদের খুপরি ঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে।
এর আগে গত সোমবার সকালে বাড়ির প্রবেশপথসহ সড়কের ধারে কয়েকশ মিটার তারকাঁটার বেড়া দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে।
তারকাঁটার বেড়া দেওয়ার বিষয়টি স্বীকারও করেছেন অভিযুক্ত প্রতিবেশী অধীর বাড়ই (৬০)। তিনি একই এলাকার মৃত অভিনাশ বাড়ইয়ের ছেলে। তবে তিনি ঘরবাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কয়েক যুগ আগে অভিযুক্ত অধীর বাড়ইয়ের বাবা অভিনাশ বাড়ই প্রায় ৩৩ দশমিক ৫ শতাংশ জমি বিক্রি করেন বিদ্যুতের বাবা বিশ্বনাথ মণ্ডলের কাছে। জমির এককোণে খুপরি ঘরের তারা বসবাস করেন। অবশিষ্ট জমিতে বিভিন্ন ফসলের আবাদ করেন। তবে ওই জমি নিজেদের দাবি করে ২০০২ সালে কুষ্টিয়া আদালতে রেকর্ড সংশোধনীর মামলা করেন অধীর বাড়ই।
বিদ্যুৎ মণ্ডলের পরিবার জানায়, দীর্ঘ শুনানির পর আদালত গত বছরের ২৮ নভেম্বর বিদ্যুৎ মণ্ডলের পক্ষে রায় দিলে অধীর বাড়ই রায়ের বিপক্ষে পুনরায় আপিল করলে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। এর মধ্যেই অধীর তার লোকজন নিয়ে এসে জোর করে গত সোমবার তারকাঁটার বেড়া দিয়েছেন। এছাড়াও মঙ্গলবার সকালে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের কৃষ্টপুর-পূর্বাশা মোড়ে ঢুলি বিদ্যুতের বাড়ি। বাড়ির প্রবেশপথসহ সড়কের ধারে কয়েকশ মিটার তারকাঁটার বেড়া। তার টিনের খুপরি ঘরের চাল ও বেড়া ভাঙা অবস্থায় রয়েছে। সেগুলো পড়ে আছে মাটিতে। আসবাবপত্রগুলো অগোছালো। সুপেয় পানির টিউবওয়েলটিও নেই।
এসময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে আঙুর বালা বলেন, আমরা গরীব ও নিরীহ মানুষ। লোকবল, টাকা পয়সা নেই। আদালতে মামলা চলছে। তবুও অধীর লোকজন নিয়ে এসে রাস্তার ধারে তারের বেড়া দিয়েছে। আজ সকালে লাঠিসোঁটা ও লোহার রড দিয়ে আমাকে মারধর করে ঘরবাড়িতে ভাঙচুর করে স্বর্ণালংকারসহ মালামাল নিয়ে গেছে। কলটাও (টিউবওয়েল) ভেঙে নিয়ে গেছে। আমি এর সঠিক বিচার চাই।
ঢুলি বিদ্যুৎ মণ্ডল বলেন, আমাদের কেনা জমি। তাও অধীর মামলা করেছে। আদালত আমার পক্ষে রায় দিলেও (আজ) পুনরায় আপিল করায় মামলাটি চলমান। তারপরও ক্ষমতা খাঁটিয়ে লোকজন নিয়ে এসে ঘরবাড়ি ভেঙে লুটপাট করেছে। তারের বেড়া দিয়ে ঘিরে রেখেছে আমার বাড়ি। আমি বিচারের আশায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
অভিযুক্ত অধীর বাড়ই বলেন, বিদ্যুৎরা বেশি জমি দখল করে নিয়েছে। সেজন্য আমি তারকাঁটার বেড়া দিয়েছি। তবে ভাঙচুর বা লুটপাট করিনি।
পান্টি ইউনিয়ন পরিষদের এক নম্বরের ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার বীর মুক্তিযোদ্ধা এতেম আলী বলেন, ওই দাগে ৪৮ শতক জমি আছে। তার মধ্যে ৩৪ শতক বিদ্যুতের বাবার কেনা জমি। অবশিষ্ট জমি অধিরের ছোট ভাই আরেকটি পক্ষের কাছে বিক্রি করে ভারতে চলে গেছে। এখন অন্যায়ভাবে অধীর অশান্তি সৃষ্টি করছে। এর একটা সমাধান ও বিচার হওয়া দরকার।
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ল কজন ন য়
এছাড়াও পড়ুন:
দরবেশ হাট ডিসি সড়কে শত শত গর্ত
লোহাগাড়া উপজেলার প্রধান ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দরবেশ হাট ডিসি সড়ক। সড়কটি পার্বত্য বান্দরবান জেলার সঙ্গে সংযুক্ত। ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কের ৫ কিলোমিটার অংশে বৃষ্টির পানি জমে ৫০০ গর্ত তৈরি হয়েছে। সেসব গর্ত মাড়িয়ে যানবাহন চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। বালুভর্তি ট্রাক চলার কারণে সড়কের এ অবস্থা হয়েছে।
পুটিবিলা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. ইকবাল বলেন, ‘দরবেশ হাট ডিসি সড়কের দুরবস্থার কথা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানিয়েছি, তিনি বলেছেন শিগগিরই সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু হবে।’
সরেজিমন দেখা গেছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বটতলী স্টেশনের মাঝখান দিয়ে পূর্ব দিকে চলে গেছে দরবেশ হাট ডিসি সড়ক। সড়কটি এখন ক্ষতবিক্ষত। বৃষ্টি হলেই জমে থাকে পানি। এ অবস্থায় সড়কে যান চলাচলও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক থেকে ডিসি সড়কে ঢোকার মুখে দুই পাশের বহুতল ভবনের দোকানদাররা নালা দখল করেছেন। ফলে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিদিন শতাধিক বালুভর্তি ট্রাক চলে এ সড়কে। গাছ, বাঁশের ট্রাকও চলে এ সড়কে। সড়কের পাশে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি ইটভাটা। বড় ট্রাকে করে ইট, কংক্রিট ও মাটি পরিবহন করা হয় এই সড়কে। ধারণক্ষমতার চেয়ে গাড়ির লোড বেশি হওয়ায় সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
পুটিবিলার বাসিন্দা ও ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব মো. জাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘সড়কটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও রোগীদের বেশি সমস্যা হচ্ছে। সড়কটি দ্রুত সময়ে সংস্কার করা জরুরি।’
সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার লোহাগাড়া সদর থেকে পুটিবিলা ইউনিয়নের হাসনাপাড়া বাজার পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার সড়কজুড়ে অসংখ্য খানাখন্দ। কোথাও কোথাও দুই থেকে ৭ ফুট পর্যন্ত গর্ত তৈরি হয়েছে। বেশ কিছু জায়গায় উঠে গেছে পিচ, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ইট-পাথরের খোয়া।
এমচর হাট বাজার, মাস্টারপাড়া টার্নিং, গৌড়স্থান লাকী পাড়ার আগে ও পরে, নয়াবাজার, গজালিয়া দিঘির পাড়, মনিরের টেক ও হাসনা ভিটা পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার অংশে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এই অংশ যান চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কয়েক গজ পরপর সড়কে বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। সে গর্তে জমেছে বৃষ্টির পানি। অনেক জায়গায় যাত্রীদের যানবাহন থেকে নেমে হেঁটে
যেতে হচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ১০ বছর আগে সড়কটি পাকা করা হয়। কিন্তু নিম্নমানের কাজের কারণে বছর দুই বছর পর সড়ক খারাপ হতে শুরু করে। সিএনজি অটোরিকশাচালক জাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘দিনের পর দিন গর্তের জন্য গাড়ি চালাতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে, কিছু অংশ সংস্কার করা হলেও ভারী ট্রাক চলার কারণে সেটা আগের অবস্থায় ফিরে গেছে।’
গৌড়স্থান উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক, কবি সোলাইমান বলেন, ‘সড়কটি এতই খারাপ যে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চলাচলে চরম ভোগান্তি পেতে হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজনে রোগী কিংবা গর্ভবতী নারীদের উপজেলা সদরে নিতে হলে সমস্যায় পড়তে হয়। বৃষ্টি হলে বড় গর্তে পানি জমে, ফলে যানবাহন চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়ে।’
জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী ইফরাত বিন মুনির বলেন, ‘এমচর হাট বাজার থেকে হাসনাভিটা সেতু পর্যন্ত সড়ক সংস্কার কাজের টেন্ডার হয়েছে, ঠিকাদারকে কার্যাদেশও দেওয়া হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে দ্রুত কাজ শুরুর ব্যবস্থা করে হবে।’