নোয়াখালী জেলার ৯ উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীনে সড়ক আছে ৯ হাজার ৭৯ কিলোমিটার। এর মধ্যে পাকা সড়ক ৩ হাজার ৫০৯ কিলোমিটার, ইট বিছানো ২০৯ কিলোমিটার এবং কাঁচা মাটির সড়ক ৫ হাজার ৩১০ কিলোমিটার। পাকা সড়কের মধ্যে গত অর্থবছরে ১০৯ কোটি টাকায় ১৮০ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার হয়েছে মাত্র। অন্তত আরও দেড় হাজার কিলোমিটার সড়কের বেহাল অবস্থা। এসব সড়ক সংস্কারে ৬০০ কোটি টাকা প্রয়োজন।  
এলজিইডি, নোয়াখালী কার্যালায় বলছে, এসব সড়ক সংস্কারের জন্য প্রতিবছর প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ চেয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়। তবে চাহিদার এক তৃতীয়াংশেরও কম বরাদ্দ পাওয়া যায়। ফলে অনেক জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক মেরামত করা যায় না। 
গত বছর আগস্টের ভয়াবহ বন্যায় জেলার হাতিয়া উপজেলা ছাড়া বাকি ৮ উপজেলার সড়কের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বেশির ভাগ সড়ক সংস্কার না হওয়ায় যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
সরেজমিন যেসব সড়কের বেহাল দশা দেখা গেছে সেগুলো হলো– কচুয়া-সাহাপুর-বটতলী সড়ক, চাটখিল-মনোহরপুর ভায়া পাল্লা বাজার সড়ক, খিলপাড়া-দেলিয়াই সড়ক, দশঘরিয়া- সাহাপুর সড়ক, খিলপাড়া-আবিরপাড়া সড়ক, কাচারী বাজার-বারইপাড়া সড়ক, বেগমগঞ্জ উপজেলার বাংলা বাজার-পদিপাড়া সড়ক, আমিশা পাড়া-পদিপাড়া সড়ক, রাজগঞ্জ-বাংলা বাজার সড়ক, সদর উপজেলার বাহাদুরপুর-গোপিনাথপুর সড়ক, কৃষ্ণরামপুর বোর্ড অফিস সড়ক, সেনবাগ উপজেলার ছাতার পাইয়া ইউনিয়নের  ছাতার পাইয়া-ডুমুরিয়া সড়ক। এসব সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, পিচ উঠে গিয়ে  বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গর্তে পড়ে প্রায় যানবাহন উল্টে যায়। সদর উপজেলার কাদির হানিফ ইউনিয়নের কৃষ্ণরাপুর-ভোট অফিস সড়কটি জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সড়কটি চলাচলের অনপোযোগী হয়ে পড়েছে। সড়কে কিছু গর্ত ছোট ডোবার মতো হয়ে গেছে। বৃষ্টি হলে সড়ক কাদায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। নালা না থাকায় সড়কে বৃষ্টির পানি জমে থাকে। 
ইসলামীয়া সড়কের বাসিন্দা ও নোয়াখালী সিটি কলেজের শিক্ষার্থী প্রান্ত চন্দ্র সূত্রধর, সুমাইয়া তাবাসুম, রাত্রি, মো.

বেলাল হোসেন বলেন, ‘দুর্ভোগের আরেক নাম কৃষ্ণরামপুর-ভোট অফিস সড়ক। প্রতিদিন এই পথে চলতে গিয়ে কষ্ট পাচ্ছি। সড়কে রিকশাও যেতে চায় না। গেলেও ২০-৩০ টাকার ভাড়া ৬০-৭০ টাকা নেন। সেনবাগের ছাতারপাইয়া এলাকার বাসিন্দা প্রবাসী এনামুল হক, ব্যবসায়ী আমির হোসেন, শিক্ষিকা হাসিনা খানম, 

মাহবুবা আক্তার বলেন, ‘ছাতারপাইয়া-ডুমুরিয়া সড়কের ওপর দিয়ে চলাচলের সময় সর্বদা আতঙ্কে থাকি কখন গাড়ি উল্টে যায়।’ শিক্ষক আতাউর রহমান বলেন, ‘রাস্তা খারাপের অজুহাত দেখিয়ে সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকরা ২-৩ গুণ বেশি ভাড়া নেন।’
কাদির হানিফ ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রহিম, ছাতারপাইয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রহমান, বদলকোর্ট ইউপি চেয়ারম্যান সোলায়মান শেখ, রাজগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান সেলিম জানান, তাদের ইউনিয়নের রাস্তাঘাট দীর্ঘদিন ধরে ভাঙ্গা অবস্থায় পড়ে রয়েছে। অনেকগুলো একযুগ ধরে সংষ্কার হয়নি। মেতামতের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দীর্ঘদিন ধরে আবেদন নিবেদন করা হলেও কোন কাজ হয়নি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ মাহফুজুল হক হোসাইন বলেন, ‘বন্যা ও বৃষ্টির পানি কারণে জেলার অধিকাংশ সড়ক চলাচলের অনপুযোগী হয়ে পড়েছে। সড়কের পাশের খাল ও নালা ভরাট করে স্থাপনা নির্মানের কারণে বৃষ্টির পানি নিষ্কাষণ হতে পারে না। ফলে প্রতিনিয়ত রাস্তা নষ্ট হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্থ সড়ক মেরামতের জন্য ৬০০ কোটি টাকা প্রয়োজন। বরাদ্দ চেয়ে উপরে চিঠি লেখা হয়েছে।’
জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে থাকা ৯টি উপজেলার কাঁচা, পাকা খারাপ সড়কগুলো আর্থিক সংকটের কারণে মেরামত করা যাচ্ছে না। আমরা সভা করে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের চাহিদাপত্র অধিদপ্তরে পাঠিয়েছি।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সড়ক সড়ক স স ক র ম ট র সড়ক সড়ক র ব উপজ ল র র জন য বর দ দ

এছাড়াও পড়ুন:

২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসের মানবাধিকার পরিস্থিতি হতাশাজনক

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসের মানবাধিকার পরিস্থিতি হতাশাজনক বলে এক পর্যবেক্ষণ জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)। এ সময়ের বিভিন্ন ঘটনায় মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। সোমবার এইচআরএসএসের নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলামের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে।  

এতে বলা হয়, ‘স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও বাংলাদেশে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। দেশের মানুষ এখনও স্বাধীনতার প্রকৃত সুফল পায়নি। স্বাধীনতার পর ২০২৪ সালে মানবাধিকার পরিস্থিতি ছিল সবচেয়ে ভীতিকর ও চরম উদ্বেগজনক। গত আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ছাত্র-জনতার মাঝে স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ আস্বাদনের আকাঙ্খা  সৃষ্টি হলেও তার প্রতিফলন মূলত ঘটেনি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও সংশ্লিষ্টরা এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সফলতা দেখাতে পারেনি। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসেও মানবাধিকার পরিস্থিতির প্রকৃত অবস্থা হতাশাজনক। নতুন বছরে মানবাধিকার পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়নের প্রত্যাশা থাকলেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের পূর্বের ধারা অব্যাহত থাকার পাশাপাশি এতে নতুন কিছু বিষয়ও যুক্ত হয়েছে। রমজান মাসে বিগত বছরগুলোর তুলনায় দ্রব্যমূল্য ও দুই ঈদযাত্রা কিছুটা স্বস্তিদায়ক হলেও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি হয়নি। ’

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, রাজনৈতিক সহিংসতায় মৃত্যু, গণপিটুনিতে নির্যাতন ও হত্যা, নারী নিপীড়ন ও ধর্ষণ, শিশু নির্যাতন ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে ও নির্যাতনে মৃত্যু, শ্রমিকদের ওপর হামলা, সংখ্যালঘু নির্যাতন, মাজারে হামলা ও ভাঙচুর, কারাগারে মৃত্যু, সভা-সমাবেশে বাধা প্রদান, আন্দোলনরত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর পুলিশের হামলার মতো ঘটনা ঘটেছে। এ সময় চাঁদাবাজি, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি ও হত্যাসহ বেশ কিছু সামাজিক অপরাধ ঘটেছে যা জনমনে ভয় ও আতঙ্ক তৈরি করেছে। শেখ হাসিনার বক্তব্য নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে প্রচারের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ৫, ৬ ও ৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে অবস্থিত শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি, শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদন এবং সারা দেশে বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের অফিস ও নেতাদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।  জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারের রায় ঘোষণার পর বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সাথে শাহবাগ বিরোধী ঐক্যের উত্তেজনা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গত ১২ মে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গত বছরের আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সব সংগঠনের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।’

এতে আরও বলা হয়েছে, ‘দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে উত্তেজনা ও সংঘর্ষ শিক্ষার্থীদের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। রাজধানীতে বিভিন্ন দাবি আদায়ে রাস্তা বন্ধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। আদালত ও কারা ফটকে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা; থানা ও পুলিশের ওপর হামলা করে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টদের আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে, যেখানে রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে । দেশে সন্ত্রাসবাদ দমন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামে ও বিশেষ অভিযানে বেশ কিছু অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া, ভারত সীমান্তে সংঘর্ষ, উত্তেজনা, বিএসএফের আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে বেড়া নির্মাণ, উসকানি, বাংলাভাষী মানুষদেরকে পুশইন করা, এমনকি নিরীহ বাংলাদেশিকে হত্যা, আহত ও গ্রেপ্তার এবং মিয়ানমারের আরাকান আর্মি কতৃক বাংলাদেশি জাহাজ আটক, সীমান্তে গুলি, মাইন ও মর্টারশেল বিস্ফোরণের মত বিভিন্ন ঘটনা মানবাধিকার পরিস্থিতির বিষয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ