রূপগঞ্জে ফিরোজ মিয়া নামে এক মৎস্য খামারির পিকআপসহ মাছ লুট ও চালককে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করেছে সন্ত্রাসী রুবেল, রাসেল, শ্রাবণ নাঈম ও আল-আমীনসহ তার সহযোগীরা।

বুধবার সকালে তারাব পৌরসভার হাটিপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে দুপুরে ভুক্তভোগী ফিরোজ মিয়া বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে পুলিশ পিকআপসহ চালককে উদ্ধার করে।  

স্থানীয়রা জানান, সন্ত্রাসী রুবেল এলাকায় কুত্তা রুবেল হিসেবে পরিচিত। সে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মূল হোতা ছিলো। সে বিশাল বাহিনী গড়ে তুলে এলাকায় মাদক ব্যবসা, জুয়ার আসর পরিচালনাসহ বীর দর্পে কায়েম করে ত্রাসের রাজত্ব।

তার বাহিনীর অন্যতম সদস্য হচ্ছে রাসেল, শ্রাবণ নাঈম ও আল-আমীন। এরা প্রত্যেকেই একাধিকবার র‌্যাব ও পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে। এ বাহিনীর অধিকাংশেরই বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, মাদকসহ ছিনতাই, মারামারি, লুটসহ বিভিন্ন আইনে একাধিক মামলা রয়েছে।

ভুক্তভোগী ফিরোজ মিয়া লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, তারাব  পৌরসভার হাটিপাড়া এলাকায় বাড়ির আশপাশের লোকজনের কাছ থেকে পুকুর লিজ নিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করিয়া ব্যবসা করে আসছেন। বুধবার ভোরে আড়ৎদার মনির হোসেনের কাছে বিভিন্ন প্রজাতির ২ লাখ টাকা মূল্যের ১ টন মাছ বিক্রি করেন। 

মনির হোসেন একটি পিকআপ ভর্তি করে মাছ নিয়ে যাত্রাবাড়ীর উদ্দেশে রওনার সময় তারাব দক্ষিণ পাড়া এলাকার রুবেল, রাসেল, শ্রাবণ নাঈম, আল-আমীনসহ আরও ৪/৫ জন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পিকআপটির গতিরোধ করে।

এ সময় তারা মনিরের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে ২ লক্ষ টাকা দিতে বলেন। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে সন্ত্রাসীরা ফিরোজকে এলোপাতাড়িভাবে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেন। একপর্যায়ে সন্ত্রাসী ফিরোজের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে মাছভর্তি পিকআপসহ পিকআপ ড্রাইভার রাসেলকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। 

পিকআপ ও চালক রাসেলকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য ৫০ হাজার টাকা টাকা মুক্তিপণ দাবি করছে সন্ত্রাসীরা। 

এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার ওসি লিয়াকত আলী বলেন, এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। পিকআপসহ চালককে উদ্ধার করা হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে পুলিশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: র পগঞ জ ন র য়ণগঞ জ অপহরণ র পগঞ জ এল ক য়

এছাড়াও পড়ুন:

নাফ নদীতে আরাকান আর্মির হাতে ৬ রোহিঙ্গা জেলেকে আটক

কক্সবাজারের টেকনাফে মাছ ধরে ফেরার পথে জলসীমা অতিক্রম করায় ট্রলারসহ ছয় রোহিঙ্গা জেলেকে আটক করেছে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় শাহপরীর দ্বীপের বদরমোকাম চ্যানেলে এ ঘটনা ঘটে। ছয় রোহিঙ্গা জেলের সবাই টেকনাফের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের বাসিন্দা বলে জানা গেছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত তাঁদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন টেকনাফ পৌরসভা কায়ুকখালীঘাট ট্রলারমালিক সমিতির সভাপতি সাজেদ আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় টেকনাফের বাসিন্দা আবদুল মতলবের মালিকানাধীন ট্রলারটি সাগর থেকে মাছ ধরে ঘাটে ফিরছিল। শাহপরীর দ্বীপের বদরমোকাম চ্যানেলে (সাগর ও নদীর মোহনা) পৌঁছালে এর ইঞ্জিন বিকল হয়ে পানিতে ভাসতে ভাসতে মিয়ানমারের নাফ নদীর জলসীমানা অতিক্রম করে নাইক্ষ্যংদিয়ার (রাখাইন রাজ্যের গ্রাম) দিকে যেতে থাকে। এরপর আরাকান আর্মি ছয় জেলেসহ ট্রলারটি জিম্মি করে নাইক্ষ্যংদিয়া ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। ট্রলারসহ জেলেরা কোথায় আছেন জানা যায়নি।

সাজেদ আহমেদ বলেন, ‘ছয় জেলে রোহিঙ্গা নাগরিক। পরিচয় গোপন করে তাঁরা মাছ ধরার কাজে নেমেছিলেন। তাঁরা হলেন, মো. ইয়াছিন, মো. আয়াছ, আতাউর রহমান, জিয়াউর রহমান, কেফায়েত উল্লাহ ও রশিদ উল্লাহ।’

এদিকে এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকে টেকনাফের জেলেদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন ট্রলারমালিকেরা। নিষেধাজ্ঞা শেষ করে অন্যান্য এলাকার জেলেরা বঙ্গোপসাগরে ইলিশ আহরণ নামলেও টেকনাফের জালিয়াপাড়া ও শাহপরীর দ্বীপের কয়েক শ ট্রলার ঘাটেই নোঙর করে রয়েছে।

জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘ট্রলারসহ ছয় রোহিঙ্গা জেলেকে আরাকান আর্মি ধরে নিয়ে গেছে, এমন খবর তিনি শুনেছেন। রোহিঙ্গারা যেন আশ্রয়শিবির থেকে কাজের সন্ধানে বের হতে না পারেন, সে বিষয়ে নজরদারি রাখা হচ্ছে।’

উল্লেখ্য, নাফ নদী থেকে জেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম নয়। এর আগে ২৭ অক্টোবর নাফ নদীর বদরমোকাম এলাকা থেকে বাংলাদেশি চার জেলে ও ২৮ অক্টোবর সাত জেলেসহ আরেকটি ট্রলার অপহরণ করেছিল আরাকান আর্মি।

ট্রলারমালিক ও বিজিবির দেওয়া তথ্য মতে, গত ১১ মাসে (গত বছর ডিসেম্বর থেকে) আরাকান আর্মি নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগর থেকে ৩২৮ জন জেলেকে অপহরণ করেছে। বিজিবির প্রচেষ্টায় কয়েক দফায় ১৮৯ জন জেলেসহ ২৭টি ট্রলার ফেরত আনা সম্ভব হলেও আরও ১৮টি ট্রলার ও ১৩৯ জন জেলে রাখাইন রাজ্যের কারাগারে আটকা রয়েছেন।

সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, দীর্ঘ ১১ মাসের যুদ্ধের পর মিয়ানমারের সরকারি জান্তা বাহিনীকে হটিয়ে ২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর রাখাইন রাজ্যের মংডুটাউনশিপসহ ৮০ শতাংশ এলাকার (২৭১ কিলোমিটার সীমান্ত) দখলে নেয় আরাকান আর্মি। এখনো সীমান্তে সংঘাত চলছে। অপহরণ ও গুলি আতঙ্কে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন রুটে জাহাজ চলাচলও বন্ধ রাখা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নাফ নদীতে আরাকান আর্মির হাতে ৬ রোহিঙ্গা জেলেকে আটক