অভিনেত্রী রাফিয়াত রশিদ মিথিলার স্বামী ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় পরিচালক সৃজিত মুখার্জি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। শুক্রবার রাতে শরীরে অস্বস্তি বোধ করায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার জানিয়েছে, মাথা ঘোরার পাশাপাশি শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল পরিচালকের। আজ শনিবার সকাল থেকে নানা রকমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। তবে ঠিক কী হয়েছে, এখনো জানা যায়নি।

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। পরীক্ষা চলছে, সব পরীক্ষার ফল হাতে এলেই বলা যাবে। তবে সৃজিতকে কয়েক দিন হাসপাতালে থাকতে হবে। পরিচালকের শারীরিক অবস্থা এখন স্থিতিশীল রয়েছে।

পহেলা বৈশাখে মুক্তি পেয়েছে সৃজিতের নতুন ছবি ‘কিলবিল সোসাইটি’। ‘হেমলক সোসাইটি’র সিক্যুয়েলে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, কৌশানী মুখোপাধ্যায়, বিশ্বনাথ বসুর অভিনয় ইতোমধ্যেই প্রশংসিত হয়েছে। ছবিটি দেখতে দর্শক ভিড় জমাচ্ছেন প্রেক্ষাগৃহে।

বর্তমানে সৃজিতের কাঁধে একাধিক ছবি ও সিরিজ তৈরির দায়িত্ব। শুক্রবারই তিনি জানিয়েছেন, তার পরবর্তী ছবি রানা সরকার প্রযোজিত ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’।

২০২০ সালে ছবির কথা যৌথভাবে প্রথম ঘোষণা করেছিলেন প্রযোজক-পরিচালক। নানা কারণে সেই ছবির কাজ শুরু হতে চলেছে এ বছর। এতে নামভূমিকায় দেখা যাবে দিব্যজ্যোতি দত্তকে। নটি বিনোদিনীর চরিত্রে থাকবে শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

শখ থেকে স্বপ্ন পূরণে সোনালী হরিণের খামার

ফরিদপুর শহরতলীর পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের শ্যামসুন্দরপুর গ্রামে এক অনন্য উদ্যোগের জন্ম হয়েছে, যা এখন সারা জেলায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। এই উদ্যোগের কেন্দ্রে রয়েছেন মো. ফরিদ শেখ, একজন মাদ্রাসা পরিচালক। যিনি শখের বশে শুরু করা হরিণ পালনকে একটি সমৃদ্ধ বাণিজ্যিক উদ্যোগে রূপান্তর করেছেন। 

তার এই প্রচেষ্টা শুধু আয়ের নতুন পথই খোলেনি বরং এতিম শিশুদের জন্য একটি আশ্রয়স্থলও গড়ে তুলেছে। ‘ফরিদাবাদ শেখ ফেলু দাখিল মাদ্রাসা ও এতিমখানা’র পাশে অবস্থিত ফরিদ শেখের হরিণের খামার এখন ফরিদপুরের গর্ব।

শখ থেকে বাণিজ্যিক সাফল্য 

২০১৭ সালে মাত্র দেড় লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে ফরিদ শেখ ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে দুটি হরিণ কেনেন। শুরুটা ছিল কেবল শখ দিয়ে। তবে আড়াই মাসের মধ্যেই হরিণ দুটি থেকে জন্ম নেয় একটি শাবক। ধীরে ধীরে তার খামারে হরিণের সংখ্যা বাড়তে থাকে। যখন হরিণের সংখ্যা ১২টিতে পৌঁছায়, তিনি শৌখিন লাইসেন্সকে বাণিজ্যিক লাইসেন্সে রূপান্তর করেন। 

এখন পর্যন্ত তিনি প্রায় ৫০টি হরিণ বিক্রি করেছেন, যার প্রতিটির দাম এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা। এই আয় সরাসরি মাদ্রাসার তহবিলে যোগ হয়। যা দিয়ে এতিম শিশুদের পড়াশোনা ও থাকা-খাওয়ার খরচ মেটানো হয়।

হরিণ পালন সহজ ও লাভজনক

মো. ফরিদ শেখ বলেন, “হরিণ তৃণভোজী প্রাণি। নেপিয়ার ঘাস, কলমি, ছোলা, ভুসি, বাঁধাকপি, মিষ্টি কুমড়া ও লাউ খেতে দেই হরিণদের। প্রতিটি হরিণের পেছনে দৈনিক খরচ মাত্র ১০০-১৫০ টাকা। অন্যান্য প্রাণির তুলনায় হরিণের রোগবালাই কম, তাই ওষুধ বা ভ্যাকসিনের খরচও প্রায় নেই।” 

এই সহজ পদ্ধতি এবং কম খরচই তার উদ্যোগকে লাভজনক করে তুলেছে।

বন অধিদপ্তরের নিয়মকানুন 

হরিণ পালনের জন্য বন অধিদপ্তর থেকে শৌখিন এবং বাণিজ্যিক লাইসেন্স দেওয়া হয়। শৌখিন লাইসেন্সের জন্য বিভাগীয় বন অফিসে আবেদন করতে হয়। বন বিভাগ সরেজমিনে পরিদর্শন করে জায়গার উপযুক্ততা যাচাই করে অনুমতি দেয়। হরিণের সংখ্যা ১১টির বেশি হলে বাণিজ্যিক লাইসেন্স প্রয়োজন হয়। যার জন্য আগারগাঁও বন অফিসে আবেদন করতে হয়। এই লাইসেন্সে প্রতিটি হরিণের জন্য বছরে ১২০০ টাকা ভ্যাট দিতে হয়।

হরিণ ছাড়াও এ খামারে আছে বৈচিত্র্য

ফরিদ শেখের উদ্যোগ শুধু হরিণ পালনেই সীমাবদ্ধ নয়। তার গরু, দুম্বা এবং বিশাল একটি মাছের খামারও রয়েছে। যেখান থেকে তিনি প্রতি বছর মোটা অঙ্কের টাকা উপার্জন করেন। খামারগুলোতে ৩০ জনেরও বেশি শ্রমিক কাজ করেন, যা স্থানীয় বেকার যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে।

খামার যখন পর্যটন কেন্দ্র 

ফরিদপুরে হরিণ পালনের এমন উদ্যোগ আর কোথাও নেই। ফরিদ শেখের খামার এখন শুধু ব্যবসা নয়, একটি পর্যটন কেন্দ্রও। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন এই সোনালী হরিণগুলো দেখতে। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা হরিণদের লাফালাফি দেখে আনন্দ পায় এবং সময় পেলে তাদেরকে খাবারও খঅওয়ায়। 

মাদ্রাসার শিক্ষকরা জানান, এই খামার মাদ্রাসার পরিচিতি বাড়িয়েছে। দর্শনার্থীরা হরিণ দেখতে এসে ছবি তোলেন, খেলেন এবং এতিম শিশুদের সঙ্গে সময় কাটান। এই খামার মাদ্রাসাটিকে ফরিদপুরের একটি অনন্য স্থানে পরিণত করেছে।

ফরিদ শেখের বক্তব্য

মো. ফরিদ শেখ বলেন, “আমার শখের শুরু ছিল এই হরিণ পালন। কিন্তু এটি এখন আমার জীবনের একটি বড় অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই খামার থেকে আয় দিয়ে আমি এতিম শিশুদের শিক্ষা ও জীবিকার ব্যবস্থা করছি। আমি বিশ্বাস করি, দৃঢ় ইচ্ছা আর পরিশ্রম থাকলে যেকোনো শখকেও সফল ব্যবসায় রূপান্তর করা সম্ভব। আমি চাই, আমার এই উদ্যোগ অন্য তরুণদেরও অনুপ্রাণিত করুক।”

ঢাকা/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ